আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
Table of Contents
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
মানবজীবনে সাফল্যের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি একটি বিশেষ অথচ অদৃশ্য উপাদান । জন্মের পর থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠার সময়ে মানুষের মধ্যে অজান্তেই আদর্শ এবং দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হতে থাকে । পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা, পারিবারিক শিক্ষা ও সামাজিকীকরণের মধ্য দিয়ে এ দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের মনে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে । মানুষ যে কোনো বিষয় বা কাজের ক্ষেত্রে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে ।
একজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে তা নির্ভর করবে সে কেমন শিক্ষা পাচ্ছে, কেমন পরিবেশ বা সমাজে বেড়ে উঠছে এবং কোন সংস্কৃতিকে লালন করছে তার উপর। এজন্য একই বিষয়ে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রভেদে একেক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয় । দৃষ্টিভঙ্গির অর্থ হচ্ছে মনোভাব, মানসিকতা বা চিন্তার ধরন। অর্থাৎ একটি বিষয়কে কে কীভাবে দেখছে বা কীভাবে নিচ্ছে সেটিকে বলা যায় তার দৃষ্টিভঙ্গি ।
দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে মানুষের মনোজাগতিক আদর্শ যার আলোকে সে যে কোনো বিষয়কে বিচার করে। কোনো বিষয়কে ভালোভাবে নেওয়া বা ঐ বিষয়ের প্রতি ভালো মনোভাব পোষণ করা কিংবা বিষয়টিকে ইতিবাচক মানসিকতার মাধ্যমে গ্রহণ করাই হচ্ছে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব
পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে সমাজের সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয় । ইতিবাচক-দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সমাজের সকলের সঙ্গে আন্তরিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মানুষের ব্যক্তিত্বের মধ্যেই তার স্বকীয়তা বিদ্যমান থাকে । যে যত বেশি ব্যক্তিত্ববান সে তত বেশি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় । ইতিবাচক-দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে ।
সমাজে যিনি যত জনপ্রিয় তিনি মানুষের কাছে ততটাই শ্রদ্ধা ও সম্মান পেয়ে থাকেন । ইতিবাচক-দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মানুষের কাছাকাছি অবস্থান করা সহজ হয় এবং এ ধরনের মানুষকে সবাই পছন্দ করে । ফলে সমাজে বিশেষ সম্মান ও শ্রদ্ধার অধিকারী হয় । ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এতে সাফল্যের পথ সুগম হয় ।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির গঠন
বিভিন্নভাবে ইতিবাচক-দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠতে পারে। ইতিবাচক-দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত প্রতিভা ও শক্তিকে জাগ্রত ও প্রস্ফুটিত করে । শিক্ষার সংস্পর্শে এসে মানুষ তার মনন ও চিন্তন দক্ষতাকে শাণিত করতে পারে। এর মাধ্যমে তার চিন্তা করার ধরন ও মনোভাবের পরিবর্তন ও পরিমার্জন ঘটে । ফলে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব তৈরি হয় ।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে । প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকেও লালন করে । এভাবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রভাবের সাথে সাথে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যও পরিলক্ষিত হয় । মানুষের মানসপট গঠিত হয় তার পরিবার ও সমাজ থেকে।
পরিবারের প্রবীণ সদস্যগণ কোন বিষয়কে কীভাবে বিবেচনা করেন সেটি দেখে পরিবারের অন্য সদস্যরা দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করে। অপরদিকে সমাজে বসবাস করার পাশাপাশি মানুষ তার চারপাশের পরিবেশ থেকেও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করে। সামাজিক বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান, পারস্পরিক সম্পর্ক, ধর্মীয় অনুশীলন, বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব পরিশীলিত হয় ।
মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে । নানা রকমের ঘটনা-দুর্ঘটনার প্রভাব মানুষের মনোভাব পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখে । বাস্তব জীবনে কোন ঘটনা থেকে সে কী শিক্ষা পেল এবং তার কোন ধরনের অভিজ্ঞতা হলো এর ওপর ভিত্তি করে তার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। যে কোনো ঘটনার নেতিবাচক দিকের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে এ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা যায় ।
মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও সভ্যতা মানুষকে জীবন চলার পথ নির্দেশ করে । এর মাধ্যমে মানুষের স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্ব পুনর্গঠিত হয় । প্রত্যেক সভ্যতা ও সমাজের নিজস্ব কিছু নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি ও সংস্কার আছে । এসব কৃষ্টি, সংস্কার ও রীতি-নীতি মানুষের মানসিকতাকে বিশেষভাবে নাড়া দেয়। ফলে তার মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয় ।
ক্যারিয়ার গঠনে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ভূমিকা
ব্যক্তিগত জীবনে বা পেশাগত কারণে মানুষকে নানা ধরনের মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে হয়। ইতিবাচক-দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করলে মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করা অনেক সহজ হয়। সম্পর্ক ভালো থাকলে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায় যা ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক । ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক সময় কাউকে কাউকে বেশ চিন্তিত দেখা যায়, যা তার মানসিক অবস্থার উপর অনেক চাপ তৈরি করে ।
ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলে মনের উপর থেকে অনেক চাপ কমে যায় । ফলে মনোযোগ ও দক্ষতার সাথে যেকোনো কাজ সম্পাদন করা যায়। ইতিবাচক-দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবে কাজে উৎসাহ ও মনোযোগ বাড়ে । যারা এ ধরনের মনোভাব পোষণ করে তারা কোনো কাজকে হীন মনে করে না এবং কাজ করার প্রতি তাদের কোনো অবহেলা থাকে না। ফলে তারা ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনার সাথে কাজ করতে পারে।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করলে যেকোনো সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়। অনেকে আছে যারা নেতিবাচক মনোভাবের কারণে সমস্যা সমাধানের পথে না গিয়ে সেটিকে আরো জটিল করে তোলে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যারা সমস্যা সমাধান করতে চায় তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে সমস্যাটির সমাধান এবং সহজেই তারা তা করতে পারে।
আরও দেখুন :