আত্ম সমালোচনা, আত্মশুদ্ধি ও অক্ষমতা মেনে নেওয়া আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর “ক্যারিয়ার গঠনে সংযোগ স্থাপন ও আচরণ” ইউনিট ৩ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
আত্ম সমালোচনা, আত্মশুদ্ধি ও অক্ষমতা মেনে নেওয়া
পেশাক্ষেত্রে কর্ম পরিচালনায় মানুষ যেসব সময় সফল হবে এমন কথা বলা যায় না। পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তার ভুল হতেই পারে। অথবা জগতে সব কাজেই সে দক্ষতার পরিচয় দেবে এমনটিও হয় না। কাজে দুর্বলতা থাকতে পারে। এহেন অবস্থায় মানুষ কাজে ব্যর্থ হয়, হতাশ হয় ও লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে। মানুষ তখন নিজেকে দোষারোপ করে, নিজেকে ধিক্কার দেয় এবং নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রচেষ্টা করে। তবে কোন কোন সময় দুর্বলতা দূর করার পরিবর্তে সে হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এ অবস্থা কখনই কাম্য না ।
কাজ – এক
নিচের কাহিনীটি পড়ুন এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন।
রকিব মাধ্যমিক স্কুলের একজন গণিত শিক্ষক। একজন সার্থক শিক্ষক হিসেবে তার সুনাম আছে। কারণ তিনি শিক্ষার্থীদের দিয়ে শুধু অঙ্ক করান না তাদেরকে অঙ্কের নিয়মকানুন ভালভাবে শিখিয়ে দেন, যেন তারা নিজেরাই সমস্যার সমাধান করতে পারে। ভাল শিক্ষক হিসেবে যেমন তার সুনাম আছে, তেমনি খুব কড়া শিক্ষক হিসেবে তার বদনামও আছে। ক্লাসে শিক্ষার্থীরা তাকে প্রশ্ন করতে ভয় পায়।
কেউ যদি বাড়ির কাজ না করে আনে তিনি তাকে অত্যন্ত কড়া শাস্তি দিয়ে থাকেন। সেদিন একজন ছাত্র ক্লাসে অঙ্ক না করে পাশের ছেলের সাথে গল্প করছিল। রকিব এই দেখে অত্যন্ত রাগান্বিত হন এবং ছেলেটিকে ডেকে একটি চড় মারেন। ছেলেটি ঘুরে বেঞ্চের উপর গিয়ে পড়ে এবং তার মাথার কোণায় কেটে রক্ত বেরিয়ে আসে। পরে ক্লাস ক্যাপটেনের সহযোগিতায় তিনি পরিস্থিতি কিছুটা সামলে নেন।
১. শিক্ষক হিসেবে রকিবের সমস্যা কোথায় ?
২. আপনার কি মনে হয় যে রকিব এ সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবে ?
৩. এ সমস্যার মোকাবেলা করতে রকিবের কি করা উচিত বলে আপনি মনে করেন ?
৪. শারীরিক শাস্তি প্রদান যে একটি গুরতর অপরাধ ও অনৈতিক কাজ তা রকিব কীভাবে উপলব্ধি করবে?
আত্মসমালোচনা
আত্মসমালোচনা অর্থ হল নিজের সমালোচনা করা। আমরা যখন আত্মসমালোচনা করি তখন নিজের সাথে কথা বলি । সে কথাগুলো আমাদের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে। কখনও মুখে উচ্চারণ করি কখনও করি না। মনে মনেই বলি। যেমন, আমরা বলি-
”আমি ভাল কিছুই করতে পারি না।”,
বা ” কী অদ্ভূত লাগছে আমাকে দেখতে!”
বা ”কী হয়েছে আমার? আমি কিছুই করতে পারছি না?”
বা ”আমি এতই বোকা! এ আমি কী করলাম?” ইত্যাদি। এবার নিশ্চই বুঝতে পারছেন আত্মসমালোচনা আমরা কীভাবে করি। সাধারণত আমরা যখন কোন কাজে ভুল করি বা এমন কাজ করি যা লজ্জাজনক বা আমার অক্ষমতা প্রকাশ করে তখনই আমরা নিজের সমালোচনা করি।
যেমন ধরুন, গণিত বই-এর কোন একটি অধ্যায় থেকে অঙ্ক করার সময় দেখা গেল আপনি একটি অঙ্কও মেলাতে পারছেন না। বার বার চেষ্টা করেও পাছেন না। এ অবস্থায় আপনি কী করবেন? নিজেকে দোষারোপ করবেন তো? এটিই আত্মসমালোচনা। আমরা কোন কাজে ভুল করি বা ব্যর্থ হই তখনই যখন আমরা কাজটি মনোযোগ দিয়ে করি না, বা নিয়ম না জেনে কাজ করি ইত্যাদি । অথচ নিজের ভুল স্বীকার না করে অনেক সময়ই আমরা অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাই। আত্মসমালোচনা করলে নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া হয়।
অর্থাৎ নিজে যে ভুল করেছি তা বুঝতে পারি ও নিজের কাছে স্বীকার করি। আত্মসমালোচনা করলে মানুষ নিজের লজ্জা, দুঃখবোধ, ক্রোধ, হতাশা, নিজেকে দোষারোপ করা এসব নিজের কাছে প্রকাশ করতে পারে । তবে কঠোরভাবে আত্মসমালোচনা করলে মানুষ নিজেকে ঐভাবেই চিনতে শুরু করে। ফলে তার আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায় এবং তার দ্বারা কোন কাজে উন্নতি করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। যারা খুব কঠিনভাবে নিজেকে দোষারোপ করে, যেমন, নাহ্ আমার দ্বারা এ কাজ কিছুতেই হবে না ।
আমি একটা লক্ষ্মীছাড়া! ইত্যাদি। তারা হতাশ হয়ে পড়ে ও ধীরে ধীরে একা হয়ে যায়। বেয়ার (Bear) আত্মসমালোচনাকে দু’ভাবে ভাগ করেছেন: গঠনমূলক আত্মসমালোচনা ও অগঠনমূলক আত্মসমালোচনা ।
গঠনমূলক আত্মসমালোচনা: এ ধরনের আত্মসমালোচনায় মানুষ কোন কাজ ঠিকমত সম্পন্ন না করতে পারলে সে নিজের ভুল দেখতে পায় এবং কী করলে পরবর্তীতে এ ভুলটি আর হবে না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। দেখা যায় একজন বিবেচনাসম্পন্ন মানুষ এধরনের আত্মসমালোচনা করেন। ফলে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয় না ।
অগঠনমূলক আত্মসমালোচনাঃ এ ধরনের আত্মসমালোচনায় মানুষ কোন কাজ ঠিকমত সম্পন্ন না করতে পারলে ভুল খুঁজে বের করার পরিবর্তে নিজেকে কঠিনভাবে দোষারোপ করে। নিজের প্রতি সে অন্যায় করে এবং নিজেকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এবার আসুন দেখি আপনি কী প্রকার আত্মসমালোচনা করেন। আত্মসমালোচনা করার জন্য নিজের চিন্তার প্রতি মনোযোগ দিন এবং নিচের বিষয়গুলো লিখুন।
- প্রতিটি চিন্তা বা ভাবনার সময় ও তারিখ
- আপনার চিন্তাটির উৎপত্তি কোথা থেকে, অর্থাৎ কোন পরিস্থিতিতে আপনি এমন কথা ভাবছেন এবং কী বিষয়ে আপনি আত্মসমালোচনা করছেন। যেমন, ব্যাপারটা কী হচ্ছে বা পরিস্থিতিটা কী? সেটার সাথে আপনার কোন চিন্তা বা কোন অনুভূতি বা আচরণ জড়িত?
- নির্দিষ্টভাবে আপনার আত্মসমালোচনামূলক ভাবনা। অর্থাৎ আপনি নিজেকে কী বলেছেন তা লিখুন ।
- নিজেকে সমালোচনা করার পর কী করলেন? আপনি কী শুধুই বলেছেন নাকি নিজেকে আঘাত করেছেন? অথবা নিজের দোষটি ঢাকবার জন্য অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন।
- ঘটনাটি ঘটার সময় যে আপনার সাথে ছিল এমন কোন বন্ধু বা সহকর্মীকে এ ব্যাপারে আপনি কী বলেছেন।
উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখেছেন? এবার ভাবুন আপনার উদ্দেশ্য কী ? লক্ষ্যে পৌঁছানো। তাইতো? তাহলে উত্তরগুলো পড়ে দেখুন তো আপনি কী নিজের প্রতি সুবিচার করেছেন? নাকি নিজেকে নির্দয়ভাবে দোষারোপ করেছেন যাতে আপনার মনোবল ভেঙে পড়ে, কাজে আর এগোনো যাবে না? অথবা নিজের কোন ত্রুটি না দেখে পরিবেশ বা তার কোন উপাদান বা অন্য কারও উপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন। না একাজ করলে কখনই আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছোনো সম্ভব হবে না। আপনি জানেন এটি একটি অপরাধমূলক কাজ।
যদি সুবিচার করে থাকেন তবে গঠনমূলক সমালোচনা হয়েছে এবং নিজের দোষত্রুটি আপনার নিজের কাছেই ধরা পড়বে। আপনি সেগুলো শোধরানোর চেষ্টা করবেন এবং তখন আপনি দেখবেন যে, আপনি একজন সুখী মানুষ। নিজেকে আপনি ভালবাসেন। আপনি এক সময় ঠিকই লক্ষ্যে পৌছাতে পারবেন।
সুতরাং অগঠনমূলক সমালোচনা আমরা নিজের প্রতি করব না এবং এমন কথা কখনও নিজেকে বলব না যা আমাকে হতাশ করে দেবে, আমার দ্বারা আর কোন কাজ করা সম্ভব হবে না ।
আত্মশুদ্ধি
নিজের দোষ বা ত্রুটি নিজের কাছে ধরা পড়ার পর সেগুলো শোধরানোর বিষয়টি এসে পড়ে। এ শোধরানোকে আত্মশুদ্ধি বলে। আমরা যখন এমন কোন কাজ করি বা এমন কোন আচরণ করি যার জন্য নিজেকে দোষী মনে হয়, তখন নিজের কাছে নিজে দুঃখ প্রকাশ করি এবং আর কখনও এ রকম কাজ না করার জন্য নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করি।
একে বলে দোষ স্বীকার করা এবং নিজে নিজে শোধরান বা আত্মশুদ্ধি। এ অবস্থায় আমরা মানসিকভাবে দুঃখিত হয়ে পড়ি। এই দুঃখবোধই আমাদের এমন কাজ করতে অনুপ্রেরণা দেয় যাতে আর ভুল হওয়ার বা নতুন কোন দোষে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না । মনের এই অবস্থা আমাদের নতুন পথ দেখায়, যে পথে কাজটি ভালভাবে সম্পন্ন হবে। যেমন, কোন অঙ্ক যদি না মেলাতে পারেন তবে আপনি কী করবেন? নিজেকে দোষ দিয়ে চুপ করে বসে থাকবেন ? নিশ্চয়ই না। বরং কী করবেন আপনি তা ভাবুন এবং খাতায় লিখুন ।
তবে মানুষ যদি শোধরানোর পরিবেশ না পায় সে তার দুঃখবোধ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না এবং মানসিক চাপে সে অবসাদগ্রস্থ হয়। অর্থাৎ তার মন ভেঙে যায়।
আত্মশুদ্ধির কার্যকারিতা
দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ ভুল বা অন্যায় করার জন্য নিজের ইচ্ছায় দুঃখ প্রকাশ করে। আত্মশুদ্ধি এক ধরনের নেতিবাচক অনুভূতি। এখানে মানুষ আগে কোন অন্যায় বা ভুল কাজ করে এবং পরে সে এ কাজ বা আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। এ অনুভূতির পাঁচটি বিশেষ কার্যকারিতা আছে।
১. দুঃখজনক এই পরিস্থিতি মানুষের ভিতর আত্মপলোদ্ধির জন্ম দেয়। সে নিজের অবস্থা বুঝতে পারে এবং এ অবস্থা থেকে সে কী করে বেরিয়ে আসবে অনেক সময় সে বোধও তার ভিতর জন্ম নেয়।
২. ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ সে আর করবে না বলে নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করে। ফলে দেখা যায় তার ভবিষ্যৎ আচরণ সম্বন্ধে সে সচেতন হয়ে যায়। যার কারণে ভবিষ্যতে তার কাজের মাধ্যমে জীবন যাপন অনেক সুন্দর হয়ে যায় ।
৩. আত্মশুদ্ধির ফলে মানুষের ভিতর অন্তদর্শন জন্ম নেয়। নিজেকে সে চিনতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরি করার ব্যাপারে সে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উদ্যোগী হয়।
৪. সমাজের সাথে সে এক ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। নিজেকে যদি একজন শুদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে তৈরি করতে হয় তবে সমাজের মাঝেই তা করা সম্ভব। নিজেকে সমাজের মাঝে ফেলে দেখতে হয় আমি কতটা যোগ্য হয়েছি।
৫. মানুষ তার নিজ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিতে সে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য তার এ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে। ভবিষ্যতে সে যে সব সুযোগ লাভ করবে সেগুলোকে যথাযথ ব্যবহার করার জন্য তার অতিরিক্ত ক্ষমতার প্রয়োজন হবে।
অক্ষমতাকে মেনে নেয়া
মানুষ যখন কোন কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে, অর্থাৎ সে বলে যে “এ কাজটি আমি করতে পারব না” অথবা কোন কাজ করে সে ব্যর্থ হয়, অর্থাৎ কাজটি তার দ্বারা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না তখন ঐ ব্যক্তিকে ঐ কাজের জন্য অক্ষম হিসেবে ধরা হয়। একজন মানুষ জগতে সব কাজ করতে পারবে এটি কখনই সম্ভব না। পৃথিবীতে কোন কোন কাজ থাকবে যা সে করতে অক্ষম হবে। একজন সুস্থ দেহ ও সুস্থ মনসম্পন্ন মানুষের জন্যও এ কথাটি সত্য। যেমন, আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছে যারা পড়তে পারে না। এর অন্যতম কারণ হল তারা পড়তে শেখেনি।
অল্পকিছু সংখ্যক মানুষ আছে যারা অন্ধ, সে কারণে তারা পড়তে পারে না। যে কারণটি হোক না কেন পড়তে না পারা তার অক্ষমতা। আবার অনেক মানুষ আছে যারা অন্য মানুষের সাথে খুব সহজে মিশতে পারে না। অন্তর্মুখী বা নিজেদের নিয়েই থাকতে পছন্দ করে। এমন ধরনের মানুষই সহজে মানুষের সাথে মিশতে পারে না। মানুষের এ ধরনের ব্যর্থতাকে অক্ষমতা বলা হয়।
সাধারণভাবে মানুষ কোন কাজে তার অক্ষমতাকে গ্রহণ বা স্বীকার করতে পারে না। কারণ সে ঐ কাজের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার প্রকৃতি বা তার স্বভাব বা কোন অঙ্গহানি তাকে ঐ কাজে যোগ্য হতে বাধা দেয়। ফলে তার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সে ঐ কাজটি করতে ব্যর্থ হয়। এ কারণে অক্ষমতা সব সময় মানুষের নিজের ইচ্ছেয় ঘটে না।
অনেক সময় সে অক্ষমতাকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও লঙ্ঘণ বা অবহেলা করতে পারে না। এমন অবস্থায় অক্ষমতা তাকে মেনে নিতে হয়। দেখা যায় অক্ষমতার কারণে সে কোন কাজে হাত দিতে পারে না অথবা কাজটি করে সে সফল হতে পারে না। তখন তার এ অক্ষতাকে মেনে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
অক্ষতাকে মেনে নেয়া
অনেকেই মনে করেন অক্ষমতা মেনে নেয়া যায় না বরং তা শোধরাতে হয়। কিন্তু যদি শোধরানো না যায় তবে? যেমন, যিনি অন্ধ, পড়তে পারেন না, তার জন্য সে অক্ষমতা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় কী? এ কারণে অক্ষমতা যখন মানুষের নিজের ইচ্ছেয় ঘটে না তখন তা মেনে নিতে হয়। তবে সবক্ষেত্রে অক্ষমতা মেনে নেয়া যায় না। যেমন মনে করুন, একজন বয়স্ক পেশাজীবী কর্মক্ষেত্রে তার পুরনো দিনের ধ্যান-ধারণাকে ঘিরে কাজ করেন। অর্থাৎ কাজের ক্ষেত্রে পুরোন ধ্যান-ধারণাই প্রয়োগ করেন। ফলে তার কাজ ধীর গতিসম্পন্ন হয়। প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এ ক্ষেত্রে তাকে যতই নতুন যুগের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা দেয়া হোক না কেন তার পক্ষে পুরনো দিনের চিন্তা-ভাবনাকে লঙ্ঘন করা সম্ভব হয় না। কাজের ক্ষেত্রে তিনি তার নিজস্ব ধ্যান-ধারণার প্রয়োগ করেন। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে এ অবস্থাটি মেনে নেয়া যায় না ।
অপরদিকে কোন মানুষের বোধশক্তির যদি ঘাটতি থাকে যার জন্য সে সহজে কোন বিষয় বুঝতে পারে না। তার বিশ্লেষণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম। কর্মক্ষেত্রে সে সবার থেকে পিছিয়ে পড়ে। চাকরিতে সে যে পদে ঢুকেছিল সে পদেই বহুদিন ধরে আছে। তার কোন পদোন্নতি হয়নি। এ অবস্থা তাকে মেনে নিতেই হবে। তাকে এবং তার কর্ম প্রক্রিয়াকে মেনে নেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। অক্ষমতা মেনে নিলে কর্মক্ষেত্রে ও জীবনব্যবস্থায় পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
কাজ – দুই
আপনার পাশের কোন বন্ধুর সাথে বসে এ কাজটি জোড়ায় করতে হবে। এটি সাক্ষাৎকারমূলক কাজ। আপনি আপনার বন্ধুকে প্রশ্ন করবেন। পরে আপনার বন্ধুও আপনাকে প্রশ্ন করবেন। নিচে প্রশ্নের কিছু নমুনা দেয়া হল।
১. আপনার একটি অক্ষমতার কথা বলুন ।
২. এর জন্য আপনি কীভাবে আত্মসমালোচনা করবেন?
৩. আপনার কি আত্মশুদ্ধির কোন পথ আছে?
৪. থাকলে সেটি কী?
৫. আপনার এমন কোন দোষ আছে কি যা আপনি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন?
প্রিয় শিক্ষার্থী, উপরের এ প্রশ্নগুলো ছাড়াও আপনারা সুবিধামত অন্য এক বা একাধিক প্রশ্ন ব্যবহার করে সাক্ষাৎকারটি নিতে পারেন ।

সারসংক্ষেপ
কর্মক্ষেত্রে মানুষের অপারগতা বা অক্ষমতা এমন কোন দোষণীয় ব্যাপার না যে তার জন্য অনুতাপে মানুষ নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে। তার জন্য সে দুঃখ প্রকাশ করতে পারে এবং এ দুঃখবোধ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সে নিজের জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নতি করতে পারে। কিংবা যদি তার অক্ষমতা দূর করা না সম্ভব হয় তবে মেনে নিতে পারে। কিন্তু হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া উচিত না। কারণ হতাশা মানুষকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে তোলে।
আরও পড়ুন….