প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজগুলোর গুরুত্ব

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজগুলোর গুরুত্ব

প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজগুলোর গুরুত্ব

প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজগুলোর গুরুত্ব

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানান ধরনের কাজ থাকে । এর মধ্যে কিছু কাজ একান্ত নিজের আবার কিছু কাজ আছে যা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে সম্পর্কিত। পরিবারের অন্য সদস্যদের এ রকম কাজগুলোও আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় । যেমন : পরিবারের কেউ যদি বাজার না করেন আর কেউ যদি রান্না না করেন তাহলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে । পরিবারের সদস্যরা যদি তাদের কাজগুলো না করেন তাহলে আমাদের জীবন থমকে যাবে ।

পরিবারের বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন করার জন্য পরিবারের একজনকে অন্যজনের উপর নির্ভর করতে হয় ও সহযোগিতা নিতে হয়।
তোমরা সবাই তোমাদের প্রাত্যহিক জীবনে পরিবারের সদস্যরা কী কী কাজ করে থাকে তা নিয়ে চিন্তা কর । এরপর সবাই নিচের টেবিলে প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজগুলো লেখ । তোমাদের বোঝার সুবিধার জন্য তিনটি কাজ লেখা আছে ।

 

প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজগুলোর গুরুত্ব

 

উপরে তোমরা যে কাজগুলোর কথা উল্লেখ করলে এ রকম অনেক কাজ আছে যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় এবং পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত এ কাজগুলো করে থাকেন । তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছ তারা এ কাজগুলো নিয়মিতই করছেন; যদি এ কাজগুলো তারা না করতেন তাহলে পরিবারের অবস্থা কী দাঁড়াত ? যেমন, যে পরিবারে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি রয়েছে সে পরিবারের কেউ যদি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনের কাজটি নিয়মিত না করত, দেখাশোনা না করত তাহলে আমরা এগুলো কোথায় পেতাম?

ছোট ভাই-বোনদের যদি মা-বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দেখাশুনা না করতেন কীভাবে তারা বেড়ে উঠত?  প্রতিদিন যদি কেউ ঘর-দোর-আঙিনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না করত তাহলে কী অবস্থা হতো? পরিবারের বড়রা যদি তোমাদের পড়া দেখিয়ে না দিতেন তাহলে তোমরা কীভাবে পড়া শেষ করতে? পরিবারের সদস্যরা এসব কাজ নিয়মিত করেন বলেই আমরা সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারি ।

তোমরা সবাই জানো তোমাদের কাজ ছাড়াও প্রাত্যহিক জীবনে পরিবারের অন্যদের কাজের গুরুত্ব অনেক । এবার এসো আমরা প্রাত্যহিক জীবনে পরিবারের অন্যদের কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে জানি-

খাদ্যের সংস্থান

পরিবারের সদস্যরা তাদের কাজের মাধ্যমে পরিবারের সব সদস্যের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করেন । বাবা-মা, ভাই-বোন বা পরিবারের অন্যরা বাজার করে, রান্না করে আমাদের প্রতিদিনের সকাল-দুপুর-রাতের খাবারের সংস্থান করেন । তারা এ কাজগুলো না করলে পরিবারের সদস্যদের প্রাত্যহিক জীবনের ভরণ-পোষণ হতো কোথা থেকে? এজন্য আমাদের জীবনে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজের গুরুত্ব অনেক ।

সুন্দর জীবনযাপন

দৈনন্দিন জীবনকে সুন্দর করার জন্য পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত কাজ করে থাকেন । বাড়ির আঙিনা, ঘর পরিচ্ছন্ন রাখা, প্রতিদিন ঘর গোছানো, আসবাবপত্র ও কাপড়-চোপড় পরিষ্কার রাখার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে পরিবারের সদস্যরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকে সুন্দর ও আনন্দময় করে তোলেন । তারা তাদের কাজের মাধ্যমে আমাদেরকে সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবনযাপনে সহায়তা করেন ।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

শিক্ষা

যারা লেখাপড়ায় জড়িত তাদেরকে পরিবারের সদস্যরা প্রতিদিন পড়া দেখিয়ে দেন ও বিদ্যালয়ের কাজ তৈরি করতে সহায়তা করেন । শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাকে নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করার জন্য পরিবারের বাবা-মা, ভাই-বোন বা পরিবারের অন্যরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন। লেখাপড়ার বিভিন্ন উপকরণ তথা খাতা, কলম, পেন্সিল ইত্যাদি তারা সরবরাহ করেন । এজন্য আমাদের জীবনে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজের গুরুত্ব অনেক ।

চিকিৎসা

পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তাকে ডাক্তার দেখানো, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, ওষুধপত্র কেনা, ওষুধ খাওয়ানো ইত্যাদি কাজ পরিবারের অন্য সদস্যরাই করে থাকেন। যদি পরিবারের কেউ হঠাৎ কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তাহলে তার সেবা-শুশ্রূষা করতে সাথে সাথে ডাক্তার বা নার্স পাওয়া সম্ভব হয় না। তখন পরিবারের সদস্যরাই তাকে প্রাথমিক সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে থাকেন এবং পরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। এক্ষেত্রেও পরিবারের অন্যদের কাজের গুরুত্ব অনেক।

গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন

গৃহপালিত বিভিন্ন প্রাণী তথা গরু, ছাগল, মহিষ ও হাঁস-মুরগি থেকে আমরা আমিষ জাতীয় খাবার পেয়ে থাকি । এর মধ্যে দুধ, ডিম, মাংশ ইত্যাদি । আবার এসব প্রাণীর বিষ্ঠা দিয়ে আমরা জৈব সার তৈরি করে থাকি । তাছাড়া বর্তমানে এসব প্রাণীর বিষ্ঠা থেকে জ্বালানি হিসেবে বায়োগ্যাস পাওয়া যায় । উপরোক্ত জিনিসগুলো এসব প্রাণী থেকে পেতে হলে তাদের যথাযথ যত্নের প্রয়োজন হয়, যা পরিবারের সদস্যরা করে থাকেন ।

এছাড়াও প্রাত্যহিক জীবনে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে কাজ করার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, যা আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কাজ করার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের কাছ থেকে যেকোনো কাজ সহজভাবে করার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় ।

প্রাত্যহিক জীবনে পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন কাজ লক্ষ্য করার মাধ্যমে কাজ করার বিভিন্ন উপায় ও কৌশল শেখা যায়। অনেক সময় তারা উপদেশ ও পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেরা কাজ করেন ও হাতেকলমে কাজ করার শিক্ষা দেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাজের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস, আগ্রহ ও উদ্দীপনা লাভ করা যায় ৷

সবাই নিচের ঘটনাটি মনোযোগসহ পড়

করিম ও রহিমা দুই ভাই-বোন । করিমের বয়স ১৪ বছর আর রহিমার বয়স ১২ বছর। তারা দু’জনেই লেখাপড়া করে । করিম অষ্টম শ্রেণি আর রহিমা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তাদের পরিবার একটি দরিদ্র পরিবার । তাদের বাবা নেই । মা সালেহা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার ও তাদের লেখাপড়ার খরচ চালান । প্রতিদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রম শেষে বাজার করে তারপর চুলায় রান্না চড়ান । দিনশেষে তার সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে তিনি সব কষ্ট ভুলে যান । তার সন্তানরা তাকে ঘর গোছানো, গবাদি পশু-পাখি লালন-পালনসহ পারিবারিক বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে ।

 

প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজগুলোর গুরুত্ব

 

একদিন করিম ও রহিমা বিদ্যালয় থেকে ফিরে দেখে তাদের মা ভীষণ অসুস্থ । বাড়িতে সব অগোছালো পড়ে আছে । যেহেতু মা অসুস্থ তাই আজ বাজারও করা হয়নি এবং রান্নাও হয়নি । মায়ের অসুস্থতায় তারা দুজন বেশ অসহায় বোধ করল; তারা কী করবে বুঝে উঠতে পারল না । তারা তাদের মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলো । প্রতিবেশীরাও ডাক্তারের কাছে নেওয়ার পরামর্শ দিল । তাই তারা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মাকে ডাক্তারের নিকট নিয়ে গেল । অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তাদের মা সুস্থ হয়ে উঠল ।

আরও দেখুন : 

Leave a Comment