আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও দেশপ্রেম আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও দেশপ্রেম
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া
দেশ ও সমাজকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়, যাতে সমাজে বা দেশে কোন বিশৃঙ্খলা দেখা না দেয়। একটি সমাজ, রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থা টিকে থাকে তার আইন ও শাসন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। যে সমাজে বা দেশে আইন যথাযথভাবে মানা হয় সেখানে শান্তি ও কল্যাণ বিদ্যমান থাকে। পক্ষান্তরে যে সমাজে বা দেশে আইন ভঙ্গ করা হয় সেখানে সৃষ্টি হয় অনাচার, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা। সুতরাং আইন যথাযথভাবে বাস্তাবায়ন ও প্রয়োগে পূর্বশত হচ্ছে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। আইনে যা করতে বলা হয়েছে তা যথাযথভাবে মানা আর করতে নিষেধ হয়েছে তা না করাই হচ্ছে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি আপনাদের কাছে আরও সুস্পষ্টীকরণ করা যায়।
যেমন আপনারা জানেন যে, শিশু বিবাহ একটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যে বা যারা এই শিশু বিবাহের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের প্রত্যেকের এক হাজার টাকা করে জরিমানা এবং একমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হবে। আইনের এই শাস্তিমূলক ধারা জেনেও যারা স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর শিশু বিবাহ দেবার ব্যবস্থা করবেন তারা মুলত: আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নহেন। উল্লেখ্য যে, এখানে শিশু বিবাহ বলতে ১৮ বছরের নিচের মেয়ে এবং ২১ বছরের নিচের ছেলের বিবাহকে ‘শিশু বিবাহ’ আইন বলা হয়েছে। কাজেই এইরকম আরও অনেক আইন আছে, সেগুলো জেনে তা যথাযথভাবে মানাই হচ্ছে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
আমাদের সকলেরই মনে রাখা উচিত যে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নই। সবাইকেই আইন মেনে চলতে হয় এবং আইনের আওতাভুক্ত থাকতে হয়। তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা সবার জন্যই বাধ্যতামূলক। তেমনি কর্মক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন বা কোম্পানীর নিজস্ব কিছু বিধিবিধান আছে যা অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের মেনে চলতে হয়। সুতরাং আপনাদের উচিত শিক্ষা জীবন থেকেই বিদ্যালয় তথা পরিবার বা দেশের আইন কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। তাহলে আপনারা আপনাদের ক্যারিয়ার আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবেন।
দেশপ্রেম
আমরা সবাই ‘মা’ কে খুব ভালবাসি তাই নয় কী? নিশ্চয়ই আপনারাও ‘মা’ কে খুব পছন্দ করেন। মা কে ভালবাসা আর মাটিকে ভালবাসা একই কথা। ‘মা ও মাটি’ আমাদের সবচেয়ে আপন। ‘মা’ যেমন আমাদের পরিচয় (Identity) তেমনি দেশও আমাদের একমাত্র পরিচয়। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা বিশ্বের মানচিত্রে একটি নুতন দেশ ও একটি নতুন পতাকা পেয়েছি। এ দেশ একান্ত আমাদের, আমরাও এদেশের। তাই দেশকে গভীরভাবে অনুভব করা ও দেশের জন্য ভাল কিছু করা এবং দেশের জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করাই হচ্ছে দেশপ্রেম। মায়ের প্রতি আমরা দায়িত্বশীল, তেমনি দেশের প্রতি প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বশীল হওয়াই হচ্ছে দেশপ্রেম।
৩. দেশ প্রেমিকের গুণাবলি
- নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা অর্জন
- নতুন কিছু সৃষ্টির করার দক্ষতা
- নিজ নিজ পেশায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন
- সমস্যা সমাধান দক্ষতা
- সবার আগে দেশকে প্রাধান্য দেয়া
- ব্যক্তির চেয়ে দল এবং দলের চেয়ে দেশকে বড় ভাবা
- নাগরিকের দায়িত্ববোধ ও সামাজিক দক্ষতা থাকা
- দেশের উন্নয়ন ভাবনা ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া
- দেশের গোপন তথ্য, অন্য দেশে প্রচার না করা
- দেশের সুনাম নষ্ট হয় এমন কাজ না করা
- দেশের জন্য সদা প্রস্তুত থাকা
- দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসা
- দেশের উন্নয়নের জন্য গবেষণা পরিচালনা এবং জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন
- সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে যোগ্যতা অর্জন করা ।

সারসংক্ষেপ
দেশ ও সমাজকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য যে বিধি-বিধান প্রণয়ন করা হয় তাই আইন। সমাজ ও রাষ্ট্র সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য আইন প্রণয়ন এবং তা প্রয়োগের বিকল্প নাই। আমাদের সকলেরই মনে রাখা উচিত যে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নই। সবাইকেই আইন মেনে চলতে হয়। তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা সবার জন্যই বাধ্যতামূলক। তেমনি কর্মক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন বা কোম্পানীর নিজস্ব কিছু বিধিবিধান আছে যা অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের মেনে চলতে হয়। পাশাপাশি স্বদেশকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসা এবং দেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা সবার জন্য অপরিহার্য। দেশকে ভালবেসে, দেশ দশের সেবার মানসে আপন ক্যারিয়ারের বিকাশ ঘটানোর মানসিকতা সবারই থাকা উচিত।
আরও পড়ুন….