উপস্থাপনের দক্ষতা ও বাচনভঙ্গি

উপস্থাপনের দক্ষতা ও বাচনভঙ্গি আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “ক্যারিয়ার গঠনে সংযোগ স্থাপন ও আচরণ” ইউনিট ৩ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

উপস্থাপনের দক্ষতা ও বাচনভঙ্গি

 

সুন্দর করে কথা বলা একটি আর্ট বা শিল্প। এ কাজটি কেউ ভালোভাবে পারে, কেউ আবার ভালোভাবে পারে না। সুন্দর করে কথা বলার ধরন আয়ত্ত করতে হয়। বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে এই সুন্দর করে কথা বলার ধরন রপ্ত করা যায়। কখনো কখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের কথা বলতে হয় বা বক্তৃতা রাখতে হয় বা অনুষ্ঠান পরিচালনাও করতে হয়, এটাকে বলা হয় উপস্থাপনা। আসলে এই উপস্থাপনা যে বা যিনি উত্তমরুপে করতে পারেন তাকে বলা হয় ভালো উপস্থাপক। উপস্থাপনের সময় বাচনভঙ্গি সুন্দর করাও অত্যন্ত জরুরি। এই পাঠে আমরা কীভাবে দক্ষতার সাথে উপস্থাপন করা যায় এবং বাচনভঙ্গি সুন্দর করা যায় সেসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করব।

পর্ব-ক : উপস্থাপন দক্ষতা

একক কাজঃ উপস্থাপন দক্ষতা কী নিজে নিজে চিন্তা করে লিখুন।

উপস্থাপন দক্ষতা উপস্থাপনের দক্ষতা ও বাচনভঙ্গি

পর্ব-খঃ উপস্থাপন দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব

জোড়ায় কাজঃ আপনারা দুইজনে আলোচনা করে উপস্থাপন দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব /প্রয়োজনীতা ক্রমান্বয়ে নিচের ছকে লিখুন ।

অর্জনের গুরুত্ব উপস্থাপনের দক্ষতা ও বাচনভঙ্গি

উত্তম উপস্থাপকের গুণাবলি

দলগত কাজ

আপনারা ৫/৬ জন মিলে একটি দল তৈরি করুন এবং একজন উত্তম উপস্থাপকের কী কী যোগ্যতা ও গুণ থাকা প্রয়োজন বলে আপনারা মনে করেন তা নিচের ছকে লিখুন ।

দলগত কাজ উপস্থাপনের দক্ষতা ও বাচনভঙ্গি

উপস্থাপনের দক্ষতা

পূর্বেই বলা হয়েছে সুন্দর করে কথা বলা একটি আর্ট বা শিল্প। যারা এ কাজটি ভালোভাবে পারেন তারা সর্বত্রই সম্মান পান, সবাই তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে, মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনে এবং মুগ্ধ হয়। মানুষের এই দক্ষতাকেই উপস্থাপনের দক্ষতা বলা হয়। উপস্থাপনের দক্ষতা হলো প্রমিত উচ্চারণে ও সাবলীলভাবে কথা বলার মাধ্যমে অন্যের সাথে অর্থপূর্ণ যোগাযোগ করা, শ্রোতাগণ যাতে সহজে বুঝতে পারেন। আর এ জন্য সচেতনভাবে প্রতিনিয়ত প্রমিত উচ্চারণে কথা বলার চর্চা অব্যাহত রাখা দরকার। তাছাড়া উপস্থাপনের দক্ষতা অর্জনের জন্য নিম্নোক্ত কৌশলসমূহ অবলম্বন করা দরকার:

১) প্রশ্নের উত্তর বলা;

২) ছবি দেখে বিশ্লেষণ করা;

৩) ছবি দেখে গল্প তৈরি করা;

৪) ধারাবাহিক গল্প বলা;

৫) অন্যের কাছে শোনা এবং গল্প পুণঃ বলা;

৬) নিজের ভাষায় গল্প / কবিতার মূল বক্তব্য বলা

৭) কোন বিষয় নিয়ে নিজের মতো করে বলা; ;

৮) পরিচিত গল্প বা কাহিনী সুন্দরভাবে বলে যাওয়া;

৯) ছড়া/কবিতা আবৃত্তি করা ।

১০) যতি চিহ্ন ব্যবহার করে এবং বিষয়বস্তুর ভাবকে অনুধাবন করে জানা এবং ছড়া, কবিতা বা গদ্যধর্মী কোনো পাঠ সম্পর্কে বলা ।

১১) জোড়ায় একে অন্যের উপস্থাপনা মূল্যায়ন করা।

১২) ধারা বর্ণনা করা

১৩) উপস্থিত বক্তৃতা দেওয়া

১৪) টেলিফোনে কথোপকথন করা

১৫) দলে কোনো পাঠ ধরে প্রশ্ন-উত্তর করা

১৬) আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার অনুশীলন করা ।

 

উপস্থাপনের দক্ষতা

 

ফলপ্রসূ উপস্থাপনের উপায়

  • সুন্দর বাচনভঙ্গিতে সহজভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
  • হাসি মুখে উপস্থাপন করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে উপস্থাপন করতে হবে।
  • হাস্যরসাত্নবোধ ব্যবহার করতে হবে।
  • তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই পরিমিতবোধ থাকতে হবে।
  • উপস্থাপন সহজবোধ্য হবে।
  • আলোচিত বিষয়কে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে।
  • সংগঠিতভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
  • কী উদ্দেশ্যে আলোচনা করা হচ্ছে তা সুষ্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
  • উপস্থাপনের বিষয়বস্তু দর্শকের আগ্রহ ও চাহিদাভিত্তিক হতে হবে।
  • উপস্থাপন আনন্দায়ক হবে।
  • উপস্থাপন পদ্ধতি ও কৌশল সহজ হবে।
  • উপস্থাপনের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য দল, জায়গা / স্থান ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকতে হবে।
  • নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপস্থাপন শুরু ও শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পূর্বেই অনুশীলন করে নিতে হবে।
  • সঠিক পোশাক পরিধান ও সাজসজ্জা করতে হবে।
  • উপস্থাপনের পূর্বে প্রয়োজনীয় অনুশীলন করে নিতে হবে।
  • এতে উপস্থাপনার দক্ষতা বাড়বে। বিষয়বস্তু মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই ।

এছাড়াও উপস্থাপনের ক্ষেত্রে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে:

  • নোট থেকে পড়ে পড়ে উপস্থাপন করবেন না ।
  • দর্শকদের দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন, স্লাইড এর সাথে নয়।
  • মাইক্রোফোন ব্যবহার করলে সেটি থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে কথা বলবেন।
  • শিক্ষার্থীদের সাথে দৃষ্টি সংযোগ (eye contact) রক্ষা করবেন, তবে কেবলমাত্র একজন/ দু’জনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবেন না ।
  • নার্ভাস হবেন না ।
  • মুখে হাসি রেখে উপস্থাপন করবেন।
  • খুব দ্রুত বা অতি ধীরে বক্তব্য উপস্থাপনের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
  • আলোচনার শুরুতে নিজের নাতিদীর্ঘ পরিচয় প্রদান করতে হবে এবং আগ্রহের সাথে দর্শনার্থীদের পরিচয় জেনে নিতে হবে যাতে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হয়।

 

ক্যারিয়ার ও এর বিকাশ উপস্থাপনের দক্ষতা ও বাচনভঙ্গি

 

বাচনভঙ্গি

বাচনভঙ্গি বলতে একজন উপস্থাপকের কথা বলার ভঙ্গিমা, বা স্টাইল কে বুঝানো হয়। উপস্থাপন করার সময় তার মুখাবয়ব, মাথা নাড়ানো, হাত নাড়ানোর সঙ্গে পুরো শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের মুভমেন্ট কে উপস্থাপকের বাচনভঙ্গি বলা হয়ে থাকে । উপস্থাপনার সময় বাচনভঙ্গি সুন্দর করার জন্য নিম্নের বিষয়গুলো মাথায় রাখা প্রয়োজন:

  • প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে উপস্থাপন করতে হবে।
  • মার্জিত, পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি পোশাক পরিধান করতে হবে।
  • ধীরস্থির হতে হবে।
  • নার্ভাসনেস ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে।
  • পকেটে বা পেছনে হাত রাখা যাবে না ।
  • সহজবোধ্য মৌখিক অবয়ব থাকতে হবে।
  • হাস্য রসাত্মবোধভাব থাকতে হবে।
  • দৃষ্টি সংযোগ (eye contact) থাকবে।
  • মাইক্রোফোন ব্যবহারে হ্যান্ডসেটটি নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখতে হবে।
  • মাইক্রোফোন ‘ফু’ দেয়া যাবে না বরং আঙ্গুল দিয়ে ক্লিক বা টোকা দিয়ে মাইক্রোফোন টেস্ট করা যেতে পারে।

 

Google news logo উপস্থাপনের দক্ষতা ও বাচনভঙ্গি
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

সারসংক্ষেপ

সুন্দর উপস্থাপনা মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। ক্যারিয়ারের বিকাশের জন্য সুন্দর উপস্থাপনের দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি বাচনভঙ্গি সুন্দর করা প্রয়োজন। সুন্দর উপস্থাপনার জন্য ছবি দেখে বিশ্লেষণ করা, ছবি দেখে গল্প তৈরি করা, ধারাবাহিক গল্প বলা, অন্যের কাছে শোনা এবং পুণরায় বলা, নিজের ভাষায় গল্প/ কবিতার মূল বক্তব্য বলা, কোন বিষয় নিয়ে নিজের মতো করে বলা, পরিচিত গল্প বা কাহিনী সুন্দরভাবে বলে যাওয়া, ছড়া/কবিতা আবৃত্তি করা, ধারা বর্ণনা করা ইত্যাদি কৌশল অবলম্বন করা দরকার।

বাচনভঙ্গি সুন্দর করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে উপস্থাপন করা, মার্জিত, পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি পোশাক পরিধান করা, উপস্থাপনে ধীরস্থির হওয়া, নার্ভাসনেস ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা, পকেটে বা পেছনে হাত না রাখা, সহজবোধ মৌখিক অবয়ব সৃষ্টি করা, হাস্য রসাত্মবোধ ভাব করা, eye contact রাখা, মাইক্রোফোন ব্যবহারে হ্যান্ডসেটটি নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখা ইত্যাদি নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন ।

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment