কর্মে সফলতায় মূল্যবোধ আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর “ক্যারিয়ার গঠনে সংযোগ স্থাপন ও আচরণ” ইউনিট ৩ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
কর্মে সফলতায় মূল্যবোধ
প্রতি মানুষই কর্ম জীবনে প্রতিষ্ঠালাভ করতে চায়। সুদীর্ঘ কর্মজীবন ধরে সে জন্য তার চেষ্টার শেষ নেই। বিভিন্নভাবে শিক্ষালাভ করে, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, নানারকম কৌশল প্রয়োগ করে মানুষ চেষ্টা করে একজন সার্থক পেশাজীবী হয়ে উঠতে। অনেক সময় এ উদ্দেশ্যে সত্য-অসত্য, ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ এসব কেউ বিচার করে না । সব ধরনের পথেই সে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। হয়তো এভাবে মানুষ জীবনে প্রতিষ্ঠা পায়। তবে সে প্রতিষ্ঠায় আত্মতৃপ্তি নেই। ফলে একদিকে যেমন তার দুর্নাম হয়, অন্যদিকে সে একজন বিভ্রান্তিময় জীবনের অধিকারী হয়।
দেখা যায় বস্তুগত বহু সুখ তার ভাগ্যে জোটে কিন্তু স্বস্তি সে পায়না। তার অন্যতম কারণ হল ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের জন্য কল্যাণকর সে কিছু করেনি। বরং অনেকক্ষেত্রে ক্ষতি করেছে। তাই পেশাজীবনে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য শুধুই জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগ করলে চলে না, তাকে কৌশলী হতে হয়। পেশাক্ষেত্রে মূল্যবোধ চর্চার প্রয়োগই হল এ কৌশলের প্রধান উপায়। মূল্যবোধসম্পন্ন একজন পেশাজীবী একইসঙ্গে নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের উন্নতি করতে পারেন। সমাজে এ ধরনের মানুষের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।
কাজ – এক
নিচের কাজটি করে আপনি আপনার মূল্যবোধের স্তর সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন। নিচের সমস্যাগুলো আপনার অভিজ্ঞতা থেকে কীভাবে সমাধান করবেন-লিখুন।
মূল্যবোধ কী ?
মানুষ যার উপর আস্থা রাখতে পারে তাকে বিশ্বাস করে। বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে মূল্যবোধ গড়ে ওঠে। মূল্যবোধকে প্রয়োগ করতে হয়। বিশ্বাস যে দিক নির্দেশনা দেয় মানুষ সেখানেই মূল্যবোধ ব্যবহার করে বা প্রয়োগ করে। বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে জীবন পরিচালিত হয়। কিন্তু জীবন পরিচালনার মাধ্যম হল কর্ম। এই কর্মের মধ্য দিয়ে মূল্যবোধ বিকাশলাভ করে।
যেমন, একজন মানুষ মানবিকতায় বিশ্বাস করেন। সে কারণে তিনি জীবজগতের প্রতি মানবিক আচরণ করেন। অর্থাৎ তিনি মানবিক আচরণকে মূল্য দেন। এটাই তার মূল্যবোধ। এখানে আমরা দেখতে পেলাম মানবিক আচরণের মধ্য দিয়ে তিনি তার মূল্যবোধকে প্রয়োগ করেছেন। মূল্যবোধের মধ্য দিয়ে আমরা কি তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বুঝতে পারি? অবশ্যই পারি। মানবিকতা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সুতরাং মানুষের চরিত্র গঠনে মূল্যবোধের বিকাশ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এপ্রসঙ্গে একটি গল্প বলি শুনুন –
একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন লোক তার গৃহ নির্মাণের জন্য ইট, সিমেন্ট ও বালু দিয়ে শক্ত ভিত গঠন করল। অন্যদিকে একজন অসতর্ক লোক শুধুই কাদামাটির উপর নির্মাণ করল তার গৃহ। পরে যখন ঝড় ও বৃষ্টি হল তখন খুব সহজেই অসতর্ক লোকের ঘর ভেঙে পড়ল। কিন্তু সতর্ক লোকের ঘর মজবুত রইল। গল্পটি অত্যন্ত সাধারণ কিন্তু এর অর্থ খুব গুরুত্বপূর্ণ। জীবন পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনি যদি কাঙ্ক্ষিত মূল্যবোধ প্রয়োগ করে চলেন, তবে দেখা যাবে আপনি একজন সার্থক মানুষে পরিণত হয়েছেন। অন্যদিকে দুর্বল মূল্যবোধের প্রয়োগ মানুষের জীবনকে নষ্ট করে দেয়।
এই কাঙ্ক্ষিত মূল্যবোধ কী?
জগতের কল্যাণে যে মূল্যবোধ কাজ করে তাই হল কাঙ্খিত মূল্যবোধ। অর্থাৎ আপনার সেই মূল্যবোধ প্রত্যাশা করা হয় যা একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী সমাজ তথা জগৎ সৃষ্টি করতে পারে। যুগে যুগে মহামানবরা তাদের নৈতিকতায় সমৃদ্ধ মূল্যবোধ প্রয়োগ করে জগতকে কল্যাণের পথে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন। আপনি কি ভাবছেন পেশাক্ষেত্রে মূল্যবোধ কোথায় ও কীভাবে কাজে লাগাবেন?
আপনি একজন পেশাজীবী বা ব্যবসায়ী যাই হোন না কেন, সব ক্ষেত্রেই প্রয়েজনীয় মূল্যবোধ প্রয়োগ করে আপনি সফলতার চূড়ান্তে পৌঁছাতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার করার মত কয়েকটি মূল্যবোধ এখানে দেয়া হল,
- সত্যকে জানা ও বাস্তবক্ষেত্রে তা অনুশীলন করা
- লোভ না করা
- মনোযোগ দিয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করা
- যে কোন ক্ষেত্রে সময়মত উপস্থিত হওয়া
- সততা অবলম্বন করা
- পরশ্রীকাতর না হওয়া
- পরচর্চা ও পরনিন্দা না করা
- নিজের দুর্বলতা গোপন না করা
- প্রয়োজনীয় গোপনীয়তা রক্ষা করা
- সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করা।
পেশাক্ষেত্রে মূল্যবোধের প্রয়োগ
কর্মে কুশলতা আনার জন্য মানুষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। কিন্তু শুধুই দক্ষতা দিয়ে কোন কাজ প্রয়োগ করা যায় না। কাজটি সম্পূর্ণ করে তুলতে কর্মদক্ষতার পাশাপাশি মূল্যবোধেরও প্রয়োগ দরকার। অন্যথায় কাজটি সম্পূর্ণ হবে না। তাই শুধু কর্ম প্রশিক্ষণ না, মূল্যবোধ ও তা প্রয়োগ কৌশল জানার প্রয়োজন আছে। নিচে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য কতগুলো মূল্যবোধ উল্লেখ করা হলো:
বলিষ্ঠ কর্মনীতি: পেশাক্ষেত্রে কর্তাব্যক্তিরা সেইসব পেশাজীবীকে বেশি পছন্দ করেন যারা অনেক পরিশ্রম করতে পারে। শুধু অনেক পরিশ্রম করতে জানলে হবে না, কাজ অনেক পরিচ্ছন্নভাবে করতে জানতে হবে। অর্থাৎ কর্তাব্যক্তিরা দেখেন একজন চাকরিজীবী কত দক্ষতার সাথে, অল্প সময়ে, কত কৌশলে কাজটি শেষ করেছেন।
যেমন, আপনি যখন পরীক্ষা দিতে বসেন তখন আপনাকে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। কিন্তু ঐ সময়ের মধ্যে যেনতেনভাবে পরীক্ষা শেষ করলে কী ভাল পরীক্ষা দেয়া হলো? অবশ্যই না। ভাল পরীক্ষা দিতে হলে আর কী কী করা দরকার, ভাবুন এবং লিখুন। বলিষ্ঠ কর্মনীতি হল একদম সময় নষ্ট না করে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে কোন কাজ শেষ করা।
এখানে মনে রাখতে হবে কাজ করার সময় চাকরির কাজ ছাড়া অন্য কোনভাবে সময় ব্যয় করা চলবে না। একে বলে সময় ব্যবস্থাপনা। অর্থাৎ অল্প সময়ে কাজটি সুষ্ঠুভাবে শেষ করাকে সময় ব্যবস্থাপনা বলা হয়। আধুনিক প্রতিযোগিতার বাজারে কোন কাজ করার জন্য সময়ের সুষ্ঠু ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
দায়িত্বসম্পন্নতা: আপনাকে অফিসের বড়কর্তারা পছন্দ করবেন যদি আপনি সঠিক সময়ে অফিসে উপস্থিত হন। শুধু তাই না আপনাকে কথায় এবং কাজে অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। অর্থাৎ যা বলবেন ও যা করবেন তা যেন নির্ভুল ও পরিচ্ছন্ন হয়। কাটাকাটি, নোংরা, দাগ লাগানো, এমন যেন না হয়। এখানে আর একটি ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ তা হল আপনি যা করবেন ও যা করছেন তা যেন অবশ্যই কর্তাব্যক্তির জানা থাকে। তাকে গোপন করে কোন কাজই করবেন না ।
ইতিবাচক মনোভাব: আপনি অফিসের প্রিয়পাত্র হবেন যদি আপনি কোন কাজের উদ্যোগ নিজেই নেন এবং তা সময়মত শেষ করেন। আমরা আগের পাঠে পড়েছি যে ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষ কাজে উদ্যোগী হয় এবং সময়ের প্রতি সচেতন থাকে । কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ যত বৃদ্ধি পাবে আপনি কাজের পরিবেশকে তত সুন্দর করে তুলতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার মনোভাব ইতিবাচক করুন, দেখবেন কাজ করতে আনন্দ পাচ্ছেন।
সঙ্গতি রাখার ক্ষমতা: যে কোন পরিবেশে বা যে কোন অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া একটি মস্ত বড় গুণ। এমন লোককে সবাই পছন্দ করে। এমনকি কাজের পরিবেশ বদলে গেলেও এমন মানুষের কোন অসুবিধা হয় না। তিনি যথা নিয়মে এবং যথা সময় কাজ সুসম্পন্ন করতে পারেন। অনেক সময় কাজের গতি বৃদ্ধি করার জন্য বা কাজটি সুন্দর করে করার জন্য পরিবেশ বা অবস্থার পরিবর্তন করতে হয়। যে কোন পরিবেশের সঙ্গে যাদের সঙ্গতি রাখার ক্ষমতা আছে তারা এ ধরনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারেন এবং দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারেন।
সততা ও শুদ্ধতা: যারা সততা ও শুদ্ধতাকে মূল্য দেন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তারা সবার উপরে। সমাজের সর্বত্রই তারা সমাদৃত। আমরা জানি বিশ্বাসের উপর পারস্পারিক সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কর্মক্ষেত্রের জন্যেও এ কথা সত্যি।
যারা আপনাকে কাজটি করতে দিয়েছেন তারা আপনার কথা ও কাজ এর উপর কতটা নির্ভর করতে পারেন বা আপনাকে কতটা বিশ্বাস করতে পারেন তা আপনাকে ভাবতে হবে। অর্থাৎ আপনাকে বিশ্বস্ত থাকতে হবে। যা বলবেন তাই করবেন। কথায় ও কাজে যেন অমিল না থাকে। চাকরিক্ষেত্রে যতটা সুযোগ থাকে ততটা সততা ও নৈতিকতাকে ব্যবহার করে কাজ করুন।
নিজেকে উদ্ধুদ্ধ করা বা আত্মপ্রণোদন: কোন কাজ সম্পন্ন করতে আপনাকে যেন বার বার দেখিয়ে দিতে না হয়। চেষ্টা করবেন মনোযোগ দিয়ে একবারেই বুঝে নিতে। আপনার কী কাজ তা বুঝতে আপনার বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করুন। আগ্রহী হন এবং মনোযোগ দিন। দেখবেন, অল্প সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করে আপনি নিজেই সন্তুষ্ট হচ্ছেন ।
আত্মবিশ্বাস: চাকরিতে প্রতিষ্ঠালাভের একটি স্বাভাবিক ও সহজ শর্ত হল আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস যার নেই সে জীবনে সফল হতে পারে না, এ কথাটি সবাই স্বীকার করে। আত্মবিশ্বাসী মানুষ একদিকে যেমন অন্যদেরকে অনুপ্রেরণা দিতে পারে। অন্যদিকে নিজের জ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্য যে কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে ভয় পায় না। এ ধরনের মানুষ যেটা উচিত বলে মনে করে তা সে করবেই, কোন ভয় বা বিপদের পূর্বাভাস তাকে পিছু হটাতে পারে না। নিজের প্রতি বিশ্বাসই হল তার প্রথম ও প্রধান সম্পদ ।
পেশাদারিত্ব: যারা তাদের চাকরির খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করে এবং কোন কাজ সুসম্পন্ন করতে তার সর্বাত্মক চেষ্টা প্রয়োগ করে পেশাক্ষেত্রে তাদের সার্থকতা একশ ভাগ নিশ্চিত। তার আচরণ, কথাবার্তা, পোশাক-আশাক এসবকিছু দেখে তার পেশাগত পরিচয় বোঝা যায়। এটাই একজন মানুষের পেশাদারিত্ব। পেশাদারিত্ব সম্পন্ন পেশাজীবী নিজের কাজ ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সব সময় আশাবাদী থাকেন। আত্মবিশ্বাসও তার একটি প্রধান সম্পদ। উপরে উল্লিখিত এধরনের মূল্যবোধ কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করে একজন পেশাজীবী তার কর্মজীবনকে সার্থক করে তুলতে পারেন। এজন্য জীবনের প্রতিটি স্তরে মূল্যবোধ সম্বন্ধনীয় জ্ঞান আহরণ করতে হয় ও তার চর্চা করতে হয়।
মূল্যবোধ প্রয়োগে কর্মে সফলতা
আপনার মূল্যবোধ পেশা ক্ষেত্রে সার্থকতা অর্জনের ভিত হিসেবে কাজ করবে। পেশাজীবন অল্প সময়ের কোন ব্যাপার না । মানুষের দীর্ঘ জীবনের সাথে পেশাজীবন চলতে থাকে। অর্থাৎ যতদিন মানুষ কর্মক্ষম থাকে ততদিন তাকে পেশাজীবনে কাজ করতে হয়। তাই এ জীবনটি শক্ত করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ জীবনের মূল্যবোধ রচিত ভিত হবে এমন যে তা দিয়ে প্রতিষ্ঠান বা কোন সংস্থা উপকৃত হবে, মানুষের জীবন ধন্য হবে এবং সার্বিক পরিস্থিতি সফলতায় পূর্ণ হবে । মূল্যবোধ কীভাবে পেশা ক্ষেত্রকে সমুজ্জল করে তা জানার আগে আমাদের বুঝতে হবে পেশাজীবনে একজন মানুষের সুনাম খুব প্রয়োজন।
এই সুনাম শুধুই তার দক্ষতার সুনাম না বরং তার উন্নত চরিত্রেরও সুনাম। অনেকেই আছেন যারা অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর টাকা উপার্জন করতে চান ও খুব দ্রুত পদোন্নতি পেতে চান। তারা হয়তো পেয়েও থাকেন, কিন্তু জীবনের শেষে এসে তাদের আত্মতৃপ্তি থাকে না কারণ এতসব পাওয়ার জন্য সারাজীবনে তাদের হয়তো অনেক নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে বিসর্জন দিতে হয়েছে। সাধারণ বুদ্ধি, সরল মানসিকতা, আশাবাদ, প্রতিভা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, কঠোর পরিশ্রম, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদির ব্যবহার করে মানুষ তার ব্যক্তিগত ও পেশাজীবনের লম্বা পথ চলে।
কাজ করতে করতে কোন এক জায়গায় মানুষ তার অজ্ঞতার জন্য আটকে যেতে পারে এবং সে জন্য তার অন্য কারও সাহায্য নিতে হতে পারে, কিন্তু কাজটি সে করবে তার নিজের নীতি ও মূল্যবোধ দিয়ে। সেখানে সে একাই সিদ্ধান্ত নেবে, অন্য কারও সিদ্ধান্ত সে গ্রহণ করবে না। এটাই তার চারিত্রিক দৃঢ়তা। আমরা যেমন দেখেছি মূল্যবোধ মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গঠনে সাহায্য করে, তেমনই মূল্যবোধের প্রয়োগ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে দৃঢ়তা প্রদান করে ।
কাজ – দুই
এ কাজটি আপনাকে পেশাক্ষেত্রে মূল্যবোধ চিহ্নিতকরণের দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করবে এবং কীভাবে সে মূল্যবোধ পেশাগত উন্নয়নে অবদান রাখে তা লিখতে পারবেন।
নিচের গল্পটি পড়ুন এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন।
শাহীনূর একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। ব্যাংকের চাকুরিকে তিনি শুধুই পেশা হিসেবে দেখেন না। তার মনে হয় তার এ পেশার সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য আছে, তা হলো প্রতিষ্ঠানের সর্বাঙ্গিন বিকাশ তথা দেশ ও জাতির উন্নয়ন। ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে পেশাগত উন্নয়নকে তিনি খুব কঠিন কাজ মনে করেন না। কারণ উন্নয়নের জন্য তিনি সব সময় যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে অফিসে আসেন। শাহীনূর কাজ করতে আনন্দবোধ করেন। সকলের সাথে তিনি নম্র, ভদ্র ও মার্জিত ব্যবহার করেন। তার সাথে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা উৎসাহী, আগ্রহী ও প্রানবন্ত হয়ে একসাথে কাজ করতে ভালবাসেন।
সমস্যা সমাধান করতে তিনি পদ্ধতিমত সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, না পারলে খুব সহজ ও সৌজন্যমূলক আচরণ করে অন্যের সাহায্য চান। তার অমায়িক ব্যবহারে অফিসের সবাই তাকে সাহায্য করতে পারলে খুশি হয়। ব্যাংকিং সম্বন্ধে যে কোন নতুন তথ্য তাকে আকৃষ্ট করে। নতুন তথ্য কীভাবে কাজে লাগানো যায় তিনি চিন্তা-ভাবনা করতে শুরু করেন। এখানে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী তার প্রিয়পাত্র। নিজের ছাড়াও অন্যের প্রতি কোন দায়িত্ব পালনে তিনি সদা তৎপর থাকেন।
ব্যাংকের এ চাকুরি সম্বন্ধে তার ধারণা জীবনকে আনন্দময় ও অর্থপূর্ণ করে তোলার জন্য গভীর মনোযোগ ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যেতে হবে। অফিসের বাইরেও সমাজের সকলের সাথে তিনি সদ্ভাব রাখেন এবং কাউকে ছোট মনে করেন না।
১. শাহীনূর কেমন ধরনের মানুষ ?
২. তার মূল্যবোধগুলো লিখুন।
৩. এসব মূল্যবোধ তাকে পেশাগত উন্নয়নে কীভাবে সাহায্য করতে পারে লিখুন।

সারসংক্ষেপ
পেশাক্ষেত্রে ব্যক্তির কর্মদক্ষতার পাশাপাশি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়। কারণ সে যখন কাজ করে তখন শুধুই কর্মদক্ষতার সাহায্যে করে না, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও সেখানে প্রতিফলিত হয়। মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গড়ে ওঠে তার বিশ্বাস তথা মূল্যবোধের উপর। দক্ষতা অর্জনের সাথে সাথে তাকে মূল্যবোধও অর্জন করতে হয়। দৈনন্দিন জীবনে সকল কাজে যদি প্রত্যাশিত মূল্যবোধ চর্চা করা যায় তবে সে মূল্যবোধ তার ব্যক্তিগত চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়। তখন সে প্রাতিষ্ঠানিক সকল কাজে প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ প্রয়োগ করতে পারে।
এর ফলে ব্যক্তিগত উন্নতির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানিক উন্নতিও তার দ্বারা সম্ভব হয়। উন্নত চরিত্রের একজন মানুষকে সকলেই ভালবাসে। সে সকলের সাহায্য লাভ করে। ফলে সে সকল কাজে কৃতিত্বের ছাপ রাখে এবং একজন সুখী ও সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন….