ক্যারিয়ারের বিকাশ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ক্যারিয়ারের বিকাশ

ক্যারিয়ারের বিকাশ

ক্যারিয়ারের বিকাশ

নিচে ক্যারিয়ারের কয়েকটি সংজ্ঞা দেওয়া হলো-

  • জীবনব্যাপী একজন ব্যক্তি মূলত তার পেশা সংক্রান্ত যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তাই তার ক্যারিয়ার । এটি বিভিন্ন চাকরি, পদ, কাজ, সম্মান ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় ।
  • ক্যারিয়ার হলো এক বা একাধিক ধরনের চাকরি যা পেশাগত কারণে একজন ব্যক্তির জীবনের অনেকটুকু সময় জুড়ে করে থাকে ।
  • জীবনের সুনির্দিষ্ট কর্মময় অংশই হলো ক্যারিয়ার ।

ক্যারিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারি যে, ব্যাপারটি স্থির কিছু নয়, বরং পরিবর্তনশীল ও বিকাশমান । কারণ ক্যারিয়ারের পরিবর্তন সুশৃঙ্খলভাবে, লক্ষ্য অনুযায়ী ধাপে ধাপে হওয়াই কাম্য । এজন্য আমাদের বিভিন্ন ধাপে ক্যারিয়ারের বিকাশকে এগিয়ে নিতে হবে ।

নিচে ক্যারিয়ার বিকাশের বিভিন্ন ধাপ বা পরিকল্পনার পর্যায়গুলো দেওয়া হলো :

নিজেকে জানা :

ক্যারিয়ারের পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । নিজের আগ্রহ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা, দক্ষতা বা যোগ্যতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে ও বুঝে প্রতিটি ধাপে অগ্রসর হতে হবে । যে কাজ আমরা করতে ভালোবাসি তেমন কাজ যদি জীবনের অধিকাংশ সময়ই করা যায় তাহলে ক্যারিয়ার আনন্দময় হয়ে ওঠে। আবার যে কাজে আমাদের আগ্রহ নেই সে কাজ করলে ভালো করার সম্ভাবনা কম থাকে ।

বিভিন্ন ধরনের পেশা, বৃত্তি ও চাকরি সম্পর্কে জানা :

শুধু নিজের সম্পর্কে ভালোভাবে জানলেই চলবে না । নিজের পছন্দ ও দক্ষতার সাথে মানানসই পেশা বা বৃত্তি খুঁজে বের করা ও এর জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলা ক্যারিয়ার গঠনের পূর্বশর্ত । এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয় জানাও জরুরি । জানতে হবে নির্দিষ্ট পেশা বা বৃত্তিতে কী ধরনের চাকরি রয়েছে, সেগুলোতে কী কী দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয় ইত্যাদি। সঠিক তথ্য আমাদের সঠিক পেশা বা চাকরি বাছাইয়ে সাহায্য করবে।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করা :

ক্যারিয়ার বিকাশে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ অপরিহার্য । নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকলে বৃত্তি বা পেশা নির্বাচনে এবং এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে সঠিক পরিকল্পনা করা যায় । ফলে ক্যারিয়ার গঠনে সফলতার সাথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। অনেক সময় যথেষ্ট যোগ্যতা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনার অভাবে ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মনে কর তুমি তোমার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করেছ।

এরপর সেই লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য তোমাকে কী করতে হবে? অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট পেশা বা বৃত্তির জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও দক্ষতার দরকার। তোমাকে সেগুলো অর্জন করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এগুলো অর্জন করা যায়।

এটি যে কোনো নির্দিষ্ট বৃত্তি বা পেশায় প্রবেশের জন্যই শুধু প্রয়োজন তা নয় । কোনো বৃত্তি বা পেশায় থাকাকালে সেই পেশা বা বৃত্তিতে সাফল্যের জন্য নতুন নতুন যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন হয় ।

চাকরি খোঁজা :

আমরা প্রায়ই শুনে থাকি কোনো ব্যক্তি চাকরি খুঁজছেন। আবার পত্রপত্রিকায় ও ইন্টারনেটেও বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। ব্যক্তি যখন চাকরি করতে চান তখন বিজ্ঞাপন দেখে যাচাই-বাছাই করে আবেদনপত্র জমা দেন । এজন্য যথেষ্ট মনোযোগ ও ধৈর্যের প্রয়োজন । নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা, আগ্রহ, মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয় লক্ষ রেখে সংশ্লিষ্ট চাকরির জন্য আবেদন করতে হয়।

নিজের শিক্ষাগত ও পেশাগত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে একজন ব্যক্তি তার জীবন বৃত্তান্ত (Curriculum Vitae বা CV) তৈরি করেন। এক্ষেত্রে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাকে তুলে ধরা আবশ্যক । সংশ্লিষ্ট চাকরিদাতা সংস্থা কখনো কখনো লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকে । সেক্ষেত্রেও যথেষ্ট প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়।

চাকরি পরিবর্তন :

বিভিন্ন কারণে মানুষ চাকরি পরিবর্তন করে থাকে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান কারণ হলো আরও ভালো কোনো চাকরির সুযোগ পাওয়া। আমরা জানি ক্যারিয়ার বলতে কোনো একটি নির্দিষ্ট চাকরি বা পেশা বোঝায় না বরং জীবনের পথে বিভিন্ন চাকরি ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়কে বোঝায় । তাই নিজের আগ্রহ, পছন্দ, দক্ষতা ইত্যাদি পরিবর্তনের পটভূমিতে নতুন চাকরির জন্য চেষ্টা করা ক্যারিয়ারেরই অংশ।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ক্যারিয়ারের বিকাশকে বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। যেমন-

রৈখিক বিকাশ :

ক্যারিয়ারের রৈখিক বিকাশ বলতে নিম্ন পদ থেকে ধীরে ধীরে উপরের পদে উন্নীত হওয়াকে বোঝায় । যেমন সহকারী সচিব পদে যোগ দেওয়ার পর ধীরে ধীরে সচিব পদে উন্নীত হওয়া ।

দক্ষতাভিত্তিক বিকাশ :

এক্ষেত্রে ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট কাজ বা বিষয়ে ক্রমাগত দক্ষ হওয়াকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় । যেমন একজন শিক্ষকের বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানোর ক্রমাগত চর্চার ফলে দক্ষতা বৃদ্ধি এক ধরনের দক্ষতাভিত্তিক বিকাশ ।

শঙ্খিল বিকাশ :

ক্যারিয়ারের শঙ্খিল বিকাশ বলতে সময়ের সাথে সাথে ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ক্রমবিকাশকে বোঝায় । এক্ষেত্রে ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন । এর বাইরেও তার নানা রকম কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে । ধরা যাক, একজন বিজ্ঞান শিক্ষক বিজ্ঞান ছাড়াও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিলেন।

এরপর তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে অন্য একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণকে প্রশিক্ষণ দেন। এভাবে তার ক্যারিয়ারের শঙ্খিল বিকাশ শুরু হয় ।

গতিময় বা চলমান বিকাশ :

এক্ষেত্রে ব্যক্তির ক্যারিয়ারে ক্রমাগত পরিবর্তন দেখা যায় । তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মক্ষেত্রে কাজ করে থাকেন। এ পরিবর্তন চলমান। ধরা যাক, সেই বিজ্ঞান শিক্ষক এবার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আরেকটি চাকরি নিলেন। সেটি পরিবর্তন করে কয়েক বছর পর গ্রন্থাগার বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করে একটি গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক হিসেবে নিযুক্ত হলেন।

এই যে তার ক্যারিয়ারের বিভিন্নমুখী পরিবর্তন, একেই বলে ক্যারিয়ারের গতিময় বা চলমান বিকাশ । মনে রাখা প্রয়োজন, একজন ব্যক্তির জীবনে ক্যারিয়ারের সব ধরনের বিকাশই সম্ভব । তবে কখনো কখনো একটি নির্দিষ্ট ধারা লক্ষ করা যায়।

ক্যারিয়ারের রূপরেখা বা মডেল

মনোবিজ্ঞানী ডোনাল্ড সুপার সময়ের সাথে সাথে এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের নিজের সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তনের ভিত্তিতে একটি মডেল তৈরি করেছেন। এটিকে Life Rainbow বলা হয়েছে কারণ এর ধাপগুলোকে রঙধনুর মতো ধাপে ধাপে সাজানো যায় ।

 

ক্যারিয়ারের বিকাশ

 

ক্যারিয়ারের বিকাশ

 

যদিও ডোনাল্ড সুপার তার পর্যায় বা ধাপগুলোকে বয়স অনুযায়ী ভাগ করেছেন, তবে এই ধাপ বিভাজন ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে ।

প্রজেক্ট

১. প্রত্যেকে এমন একজন ব্যক্তিকে প্রজেক্টের জন্য বেছে নেব যিনি কর্মক্ষেত্র থেকে অবসরে গেছেন বা খুব শ্রীঘ্রই যাবেন। এবার তার জন্মকাল থেকে এ পর্যন্ত জীবন ইতিহাস জানতে সাক্ষাৎকার নেব। প্রয়োজনে একাধিকবার সাক্ষাৎকার নিতে হবে ।

২. এবার তার একটি প্রোফাইল তৈরি করি। অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত তথ্য বৃহত্তর পরিসরে দিতে নাও পারেন । তাই আমরা ছদ্মনাম ব্যবহার করব । প্রোফাইলটিতে আমরা ব্যক্তির জীবনী বছর অনুযায়ী অথবা বিশেষ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সাজাতে পারি। এতে নিচের তথ্যগুলো যেন থাকে তা লক্ষ রাখতে হবে :

ব্যক্তির নাম (ছদ্মনাম)

  • লিঙ্গ
  • জন্মকাল ও জন্মস্থান
  • শিক্ষাজীবন
  • কর্মজীবন
  • ব্যক্তিগত জীবন
  • অবসরজীবন (যদি থাকে)
  • ক্যারিয়ারে কী কী ধাপ সফলভাবে পার করেছেন?
  • কী কী বিষয়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন? তা থেকে কীভাবে বেরিয়ে এসেছেন?
  • এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা অন্যরকম হলে ভালো হতো মনে করেন ?
  • অন্য কোন কোন বিষয় ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে?
  • অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

এবার ব্যক্তির জীবনটিকে মডেলের সাথে তুলনা করে দেখ। প্রয়োজন হলে তুমি তোমার মতো করে নতুনভাবে ধাপ নির্ধারণ করে তার জীবনধারা বর্ণনা করো ।প্রত্যেকে তাদের প্রজেক্টটি শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

আরও দেখুন : 

Leave a Comment