আত্ম-সচেতনতা ও আত্ম-বিশ্বাস: গুরুত্ব ও উন্নয়ন আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
আত্ম-সচেতনতা ও আত্ম-বিশ্বাস: গুরুত্ব ও উন্নয়ন
ক্যারিয়ার গঠনে আত্মসচেতনতা ও আত্মবিশ্বাসের ভুমিকা অনস্বীকার্য। আত্মসচেতনতা এমন একটি গুণ যা দ্বারা মানুষ নিজের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করে। আর আত্মবিশ্বাস ব্যক্তির এ আচরণ সংঘটনে প্রেরণা যোগায়। আত্মসচেতনতা ও আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোন কাজেই সফল হওয়া যায় না। ক্যারিয়ার গঠনে নিজেকে যেমন আত্মসচেতনতার পরিচয় দিতে হবে; তেমনি নিজের প্রতি গভীর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
কাজ: শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আসুন আমরা নিচের ছকে নিজের ১০টি সবল দিক ও ১০টি দুর্বল দিক উল্লেখ করি:
আত্মসচেতন হওয়ার গুরুত্ব
যে মানুষ নিজেই নিজের ভুলত্রুটির বিচার করতে সক্ষম সেই আত্মসচেতন মানুষ। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন – Know thyself –“নিজেকে জানো” । নিজেকে জানার অর্থ হলো নিজের গুণাবলি ও ত্রুটিপূর্ণ দিকসমূহ জানা এবং ত্রুটিসমূহ দূরীকরণের উপায়সমূহ জানা এবং নিজের উন্নয়নে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাওয়াকে বুঝায়। শুধু নিজের ভাল-মন্দ দিক জানলেই চলবে না, অন্যের ভাল-মন্দ বিবেচনায় রাখাও আত্মসচেতনতা।
নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং নিজের বিবেক-বুদ্ধি বিচার সম্পন্ন একজন আত্মসচেতন নারী। জগতের সকল সফল ব্যক্তিগণ ছিলেন আত্মসচেতন। এখানে একটা কথা বলে রাখা অনস্বীকার্য যে, যারা আত্মসচেতন, তারাই আত্মবিশ্বাসী ও আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন। তাদের মাধ্যমে সমাজে ক্ষতি হবার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই আত্মসচেতন থাকার গুরুত্ব অপরিসীম। আত্মসচেতন ব্যক্তি তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন, তারা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে অনুমান করতে পারেন।
ফলে তারা পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পান। আত্মসচেতন ব্যক্তিগণ যে কোন পরিবেশে পরিস্থিতি বুঝে ধীরে সুস্থে মোকাবেলা করতে পারেন। এখানে একটা উদারহণের অবতারণা করা যেতে পারে, সেটা হলো “ধূমপান” বিষয়ক। একজন ধূমপায়ী কখনও স্বার্থক উপায়ে আত্মসচেতন হতে পারেন না। একজন অসাধু ব্যবসায়ী কখনও ওজনের ও বস্তুর গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সচেতন নয়। তবে আদর্শ শিক্ষক তার ছাত্রের পাঠদানের বিষয়ে সচেতন। একজন আদর্শ ডাক্তার তার রোগী ও চিকিৎসার বিষয়ে সচেতন। একজন আদর্শ “মা” তার সন্তানের সকল বিষয়ে সচেতন এবং নিজের বিষয়ে সচেতন। সুতরাং আত্মসচেতন হওয়া ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আত্মসচেতন হওয়ার উপায়
শিক্ষার্থী বন্ধুরা, এবার আসুন আমরা নিচের ছক দু’টি পূরণ করি:
শিক্ষার্থী বন্ধুরা, অতি উত্তমের জন্য ৩, ভালোর জন্য ২, এবং অগ্রগতি প্রয়োজন ১ নম্বর দিতে পারেন। ১০টি আইটেমের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ এবং সর্বনিম্ন ১০ পেতে পারেন। উপরিউক্ত নম্বর সীমার জন্য নিচের গ্রেড প্রাপ্ত হলে, আপনি কোন গ্রেড পেলেন ? হিসাব করে বের করুন।
তাহলে শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনাকে আরও আত্মসচেতন হওয়ার জন্য আর কী কী করণীয় তা নিচের ছকে লিপিবদ্ধ করুন।
কাজ-২:
আত্মসচেতন হওয়ার ক্ষেত্রে সমসাময়িক ঘটনাবলি বা বিষয়াবলির দ্বারা আপনি কীভাবে প্রভাবিত হতে পারেন- দলগতভাবে আলোচনা করে উপস্থাপন করুন ?
ক্যারিয়ার গঠনে আত্মসচেতনার ভূমিকা
আত্মসচেতনতা একটি বড় গুণ। এই গুণের বলে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করতে পারে। ব্যক্তি তার লক্ষ্যের শীর্ষে পৌছার অবিরত প্রচেষ্টা চালায়। আর এ লক্ষ্যে পৌছার সিঁড়ি হিসেবে কাজ করে আত্মসচেতনতা। আত্মসচেতন ব্যক্তি সময়ের অপচয় করেন না। সময়কে মহা মূল্যবান মনে করেন জীবনের সমস্ত কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করে থাকেন এবং ক্যারিয়ারে প্রবেশের পূর্বে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এবার একটি দৃষ্টান্ত আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হলো। মনে করুন, ২০১৫ সালে প্রায় একই সাথে আপনার দু’টি চাকরি হয়েছে। একটি হলো প্রশাসন ক্যাডারে এবং অন্যটি হলো শিক্ষা ক্যাডারে। এবার আপনি কোনটিতে যোগদান করবেন এবং কেন করবেন-স্বপক্ষে যুক্তি দিন।
আত্মবিশ্বাস কী?
ইংরেজি Self-confidence এর বাংলা অর্থ আত্মবিশ্বাস। অর্থাৎ নিজের প্রতি নিজের দৃঢ় ধারণাই হলো আত্মবিশ্বাস । নিজের প্রতি নিজের ধারণা যদি স্পষ্টতর হয় যে, এই কাজটি করতে সক্ষম হবো তাহলে তাকে আত্মপ্রত্যয়ী বলা হয়। মুসা ইব্রাহমি আত্মপ্রত্যয়ী বা আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্যই হিমালয়ের মতো উঁচু পর্বতারোহী হিসাবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন।
আত্মবিশ্বাসী হওয়ার গুরুত্ব
আত্মবিশ্বাসী মানুষ আত্মবলীয়ান হয়। তাদের মধ্যে যে কোন কাজের বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকে না বরং তারা ইতিবাচক মানুষ হন। তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে দৃঢ বিশ্বাসের বলে তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আত্মবিশ্বাসীগণ সকলের আস্থা অর্জনে সক্ষম হন। উদাহরণ হিসাবে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাহাথীর মোহাম্মদ এবং মহাত্মা গান্ধীজীর নাম উল্লেখ করতে পারি। আত্মবিশ্বাসের বলেই তারা দেশ ও জাতির জন্য বড় ধরনের অবদান রাখতে পেরেছেন। সকলের কাছে তাইতো তাঁরা উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং অনুসরণীয় হয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবেন। “পাছে লোকে কিছু বলে”- এমন বিশ্বাসপ্রবণ লোক সাধারণত সন্দেহ প্রবণ হয়, এদের আত্ম-বিশ্বাস কম। এমন লোক জীবনে সফলকাম হতে পারে না। তাই বলা যায় সফলতার জন্য আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কাজ-১
শিক্ষার্থী বন্ধুরা, এবার আসুন আমরা আত্মবিশ্বাস উন্নয়নের উপায়সমূহ জেনে নেই-
আত্মবিশ্বাস উন্নয়নের উপায়সমূহ
সাফল্য নামের সুখ পাখিটাকে ধরতে গেলে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। শুধু ধৈর্য আর শ্রমের মাধ্যমে জীবনে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব হয় না। এর জন্য দরকার হয় নিজের আত্মবিশ্বাস। আবার অনেক সময় কেবল নিজের আত্মবিশ্বাসের জোরেই অনেক কাজে সফল হওয়া যায়। অন্যথায় জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কাজেই ধৈয্য ও শ্রমের পাশাপাশি নিজের আত্মবিশ্বাসও সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যারিয়ার গঠনে আত্মবিশ্বাসের ভূমিকা কী হবে ?
ক্যারিয়ার গঠনে আত্মবিশ্বাসের প্রভাব বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। কোন কাজ করতে গিয়ে ভুল হলে সেই ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা যায়। কেন ভুলটি হলো তার কারণ অনুসন্ধান করে চিহ্নিত করা যায়, যার ফলে পরবর্তীতে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটে না। তাছাড়া লক্ষ্যমুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা যে কাজই করি না কেন তার কিন্তু একটা অভিষ্ট লক্ষ্য থাকে। সুতরাং আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, আমরা আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত অবিরত প্রচেষ্টা বা চর্চা বা অনুশীলন চালিয়ে যাব।

আমি এ কাজ পারবো কিনা বা আমার দ্বারা এ কাজ হবে কিনা এমন হীনমন্যতাবোধ কাজে সফলতার পথে খুবই অন্তরায় বা বাধা স্বরূপ। শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমার বিশ্বাস আপনারা এ পাঠ শেষে নিজেরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। জানেন, যারা আত্মবিশ্বাসী তারা হীনমন্যতাকে সহজে দূরে ঠেলে দিতে পারেন। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সন্দেহ সংশয় বা হীনমন্যতা বাধা স্বরূপ। সুতরাং জীবনে যে কোন পর্যায়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে আপনারা জয়ী হবেন।
পিছুটান যাতে আপনাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেতিবাচক ভূমিকা না রাখতে পারে সেদিকেও সর্বদা সচেতন থাকবেন। মনে রাখবেন, যারা আত্মবিশ্বাসী তারা লক্ষ্য নির্ধারণে সবসময় অগ্রগামী থাকেন। ভয় ভীতিকে উপেক্ষা করে দৃঢ় মনোবলের সাথে তারা লক্ষ্য বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকেন ।
সারসংক্ষেপ
আত্মসচেতনতা হলো নিজের শারিরীক ও মানসিক সফলতা ও দুর্বলতা বিষয়ে সচেতনতা। অর্থাৎ নিজের ভালো-মন্দ সম্পর্কে জানা ও চর্চা করা। নিজের অধিকার, নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য, গুণাবলি ও ত্রুটিসমূহ প্রভৃতি বিষয়ে সুস্পষ্ট ও সঠিক চেতনা সৃষ্টির সামর্থ্য। আর নিজের প্রতি নিজের দৃঢ় ধারণাই হলো আত্মবিশ্বাস। আমি যা করছি বা বলছি, যা ভাবছি তা কী বুঝে শুনে ধীরে সুস্থে করছি বা বলছি। কাজটি করার ফলে আমার কী লাভ হবে। অন্যের কী লাভ হবে। অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হবে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক উপলব্ধি হলো আত্মসচেতনতা। ক্যারিয়ার গঠনে প্রত্যেককে যেমন আত্মসচেতন হতে হবে, তেমনি গভীর আত্মবিশ্বাসও রাখতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের উন্নয়নে আত্মসচেতনতা ও আত্মবিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন….