আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় গোয়ালা বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
গোয়ালা বাংলাদেশের পেশাজীবী
গোয়ালাদের প্রধান ব্যবসা দুধ উৎপাদন ও বিক্রি করা। দুধ, দৈ, মাখন, ঘি, ঘোল ইত্যাদি তৈরি এবং বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতো। সমাজে গোয়ালারা গো-পালক/গোয়ালা বা গোপ হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে।
‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।’ বাঙালির এ আকুতি চিরদিনের। বাংলার কৃষকের বাড়িতে গোয়াল ভরা গরু ছিল। দুধভাত ছিল বাঙালি সন্তানদের প্রিয় খাদ্য। প্রাচীনকাল থেকে বাংলায় গোয়ালা পেশার অস্তিত্ব ছিল। গোয়ালা নিচু জাতের হিন্দু- সম্প্রদায়ের লোক। সদ্গোপ গোয়ালা, আহিরু গোয়ালাদের বিবরণ পাওয়া যায় কোম্পানি আমলে ঢাকা গ্রন্থে। আহিরু গোয়ালারা গরুর চিকিৎসা করে থাকে।
গরু মহিষাদির মচকানি, ঘা, বাতরোগ ইত্যাদি উপশমের জন্য আকুপাংচার পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতো। ক্ষতস্থানে উত্তপ্ত লৌহ শলাকা দিয়ে পোড়ান হতো। গোয়ালারা গাছ-গাছালির তৈরি ঔষধ দিত রোগ আক্রান্ত গরুর নিরাময়ের জন্য।

গোয়ালা দুধ থেকে দৈ, ঘি, মাখন, ছানা, ঘোল প্রভৃতি তৈরি করতো। গ্রামে গোয়ালা পাড়া খুব পরিচিত ছিল। আগেকার দিনে গ্রামের বিয়েতে, জিয়াফতে গোয়ালাদের দৈ ছিল মুখরোচক। গ্রামের উৎসব-অনুষ্ঠানাদিতে গোয়ালা ‘দৈ’ সরবরাহ করতো।
বাংলা সাহিত্যে গোয়ালাদের বর্ণনা পাওয়া যায়। সদ্গোপ গোয়ালা প্রাচীন ঢাকা শহরে প্রচুর ছিল। তারা গ্রামের প্রজাদের কাছ থেকে দুধ কিনতো। শহরের পার্শ্ববর্তী গ্রামে তারা গাইগরু লালনপালন করতো। এরা ঘি তৈরি করতো এবং বিক্রি করতো। প্রাচীনকালে বাংলাদেশ থেকে ঘি রপ্তানি হতো।
বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল কাব্যে গোয়ালাদের বর্ণনা পাওয়া যায় এভাবে—
দধি লবা দধি লবা বলে গোয়ালিনী।
দধি দেখে ছয়ে কুমার করে কানাকানি।
মুকুন্দরাম চক্রবর্তীও গোয়ালাদের সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন—
চৌদিকে হুলুই ধ্বনি কেহ জালে গৃহমণি
দধি দধি ডাকে গোয়ালিনী’
মানিকরাম গাঙ্গুলির ধর্মমঙ্গল কাব্যে ‘গুয়ালা’ শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। ঘনরাম চক্রবর্তী গোয়ালা সম্প্রদায়কে ‘গোপ’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বর্তমান ভেটারনারী চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রচলনে গোয়ালাদের অস্তিত্ব বিলুপ্তি প্রায়। দুধ, দৈ, মাঠা, পনির এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন হচ্ছে।
আরও দেখুনঃ