ক্যারিয়ার গঠনে সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা: ভূমিকা ও কৌশল আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
ক্যারিয়ার গঠনে সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা: ভূমিকা ও কৌশল
নিজের ক্ষমতা দ্বারা কোন কিছু তৈরি করাই হল সৃজনশীলতা। এটি মানুষের একটি বড় গুণ। সৃজনশীল মানুষ মাত্রই আত্মনির্ভরশীল। সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ অন্যের পথ বা মতের উপর নির্ভর করে না; বরং অন্যকে পথ দেখান। তারা নিজের ব্যক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রত্যেক মানুষকে সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতার অধিকারী হওয়া অত্যন্ত জরুরী। এই পাঠে সৃজনশীলতা কী, সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা কী, ক্যারিয়ার গঠনে সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতার ভূমিকা এবং সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা সম্পন্ন কর্মী হওয়ার কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
সৃজনশীলতা কী ?
আপনারা নিশ্চয়ই কুমোরের কাজ দেখেছেন? কুমোর কাদা মাটি দিয়ে কত নিপুণভাবে হাড়ি, পাতিল, কলসি, ঘটি, বদনা এবং অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করেন এবং নানা রকমের ডিজাইন বা নক্সা আঁকেন। আমাদের কাছে সেগুলো খুবই সুন্দর দেখায়। আমরা দাম দিয়ে কিনে ঘরে ব্যবহার করি ও সংরক্ষণ করি। নতুন নতুন জিনিস বানানোর এই যে কাজ, একে বলা হয় সৃজনশীলতা। অনুরূপভাবে রাজমিস্ত্রি, কাঠ মিস্ত্রি ও দর্জি এরা সবাইকে সৃজনশীল মানুষ বলা যায়। এরা শিল্পীও বটে। শিল্পীরাও তার হাতের বং তুলির ছোঁয়াতে নতুন কিছু তৈরি করে। যারাই নতুন কিছু তৈরি করে তারা সবাই সৃজনশীল মানুষ ।
২। সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা কী ?
বুদ্ধি খাটিয়ে কোন ঘটনা বা কোন বিষয়ে নিজের মত করে যুক্তি বা মতামত দেয়ার ক্ষমতাই হল সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা, যা নতুন ধারণা সৃষ্টি করে। কর্মক্ষেত্রে কর্ম সম্পাদনের নতুন পদ্ধতি বানানোর সক্ষমতাই হলো সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা। আপনারাও কোন সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন পথ আবিষ্কার করে সৃজনশীল দক্ষতাসম্পন্ন মানুষ হয়ে উঠতে পারেন। তবে কাজটি এক দিনে হবে না, এর জন্য বহু প্রচেষ্টা ও অনুশীলন দরকার ।
৩। ক্যারিয়ার গঠনে সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতার ভূমিকা
ক্যারিয়ার গঠনে সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতার ভূমিকা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। আর সৃজনশীল হতে হলে কোন বিষয়, ঘটনাকে বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অভ্যাস করতে হবে। গতানুগতিক ভাবধারার বাইরে চিন্তা করতে হবে। শিক্ষা জীবন থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সঠিক ও যথাথভাবে বিশ্লেষণ করে নিজের মতামত প্রদান করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে কোন কাজ বা সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
সে ক্ষেত্রে ও ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশা করে তার অধীনস্থ কর্মী নিজস্ব চিন্তাভাবনা করে বা বুদ্ধি খাটিয়ে নতুনভাবে কাজটি/ সমস্যাটি সমাধান করুক। যারা সৃজনশীল উপায়ে বুদ্ধি খাটাতে পারে তাদের কাছে যে কোন কাজ খুব সহজ এবং অনায়াসে তা করে দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিল গেটস্ এর একটি উক্তি তুলে ধরা হলো। তিনি বলেছেন “আমি যে কোন কঠিন কাজ করার জন্য অলস লোকদের নির্বাচন করি কারণ তারা অতিসহজেই কাজটি করার জন্য বুদ্ধি খাটিয়ে কঠিন কাজটি সমাধান করেন।”
তাহলে লক্ষ কর, বুদ্ধি খাটানো হচ্ছে সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা। সুতারাং কর্মক্ষেত্রে যারা অধিক সৃজনশীল চিন্তা করতে পারবে তারাই সফলকাম হবে। কারণ এর মাধ্যমে সহজেই উপরের সিঁড়িতে পা রাখা যায়।
৪। সৃজনশীল চিন্তাসম্পন্ন কর্মী হওয়ার কৌশল
ক) নিজ নিজ ক্যারিয়ারের বিধিবিধান সম্পর্কে প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে।
খ) গতানুগতিকের বাইরে কিছু করা বা চিন্তা-ভাবনা করা ।
গ) দৈনিক সংবাদপত্রসমূহ ম্যাগাজিন, জার্নাল পড়ার অভ্যাস করা ।
ঘ) সুযোগমত নতুন ভাবনাগুলো সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করা ।
ঙ) নতুন কোন লেখা, উপস্থাপনা ও বস্তু তৈরি করে প্রদর্শন করা।
চ) সম্পাদিত কাজ ও আরো অধিকতর ভালোভাবে নিপুণতার সাথে করার চেষ্টা করা ।
ছ) নতুনভাবে যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করা ।
জ) নিজ কর্মক্ষেত্রে কার্য সম্পাদনে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা।
ঝ) প্রতিষ্ঠানের সংকটকালীন সময়ে বহু বিকল্প পথে সমস্যা সমাধান করা ।
ঞ) সহকর্মী, সহপাঠী ও ঊর্ধ্বতন অফিসিয়ালদের যুক্তভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা।
ট) তথ্য ও উপাত্ত বিন্যস্তকরণের প্রক্রিয়া ও কৌশল জানা ।

সারসংক্ষেপ
সৃজনশীলতা মানুষের একটি বড় গুণ। নিজের ক্ষমতা দ্বারা কোন কিছু তৈরি করাই হল সৃজনশীলতা। সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ অন্যের পথ বা মতের উপর নির্ভর করে না; বরং অন্যকে পথ দেখান। তারা নিজের ব্যক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রত্যেক মানুষকে সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতার অধিকারী হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
এজন্য প্রচুর পড়াশুনার পাশাপাশি গতানুগতিকের বাইরে কিছু করা বা চিন্তা- ভাবনা করা, নতুনভাবে যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করা, তথ্য ও উপাত্ত বিন্যস্তকরণের প্রক্রিয়া ও কৌশল জানা, প্রতিষ্ঠানের সংকটকালীন সময়ে বহু বিকল্প পথে সমস্যা সমাধান করা, সম্পাদিত কাজ ও আরো অধিকতর ভালোভাবে নিপুণতার সাথে করার চেষ্টা করা প্রয়েজন। তাহলেই একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন….