ডোম বাংলাদেশের পেশাজীবী

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ডোম বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।

ডোম বাংলাদেশের পেশাজীবী

মফস্বল শহরে, বড় বড় শহরে ডোম একটি পরিচিত নাম। আগেকার দিনে শহরের পায়খানার ময়লা, জীব-জন্তুর মৃতদেহ এবং লাশ কাটার কাজ যারা করতো তারাই ডোম/মেথর হিসেবে পরিচিত। শহরে মেথররা গরু টানা ড্রামযুক্ত ময়লার গাড়িতে ময়লা বহন করতো।

ডোম শহুরে পেশা. মফস্বল শহরে ডোম সবার পরিচিত। চর্যাপদে ডোম- ডোম্বীর উল্লেখ আছে। ডোমেরা সাধারণত নগরের বাইরে কুঁড়েতে বাস করতো। বাঁশের তাঁত ও চাঙারি তৈরি করে বিক্রি করতো। ব্রাহ্মণ স্পর্শ তাদের নিষেধ ছিল। ডোম পুরুষ ও নারী নৃত্যগীতে পটু ছিল।

 

ডোম বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

 

ডোম অন্ত্যজ অস্পৃশ্য পর্যায়ভুক্ত। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে ডোমদের বর্ণনা পাওয়া যায়। ডোমরা হাসপাতালের লাশ ঘরে কাজ করে। কোনো মৃতদেহ এলে তা’ লাশ ঘরে রাখা, মৃতদেহ লাশ ঘর থেকে বের করা, লাশ কাটা, লাশ সেলাই করা এদের কাজ।

আগে শহরের কুকুর মারার কাজ এরা করতো। ময়না তদন্তের জন্য কবর থেকে পচা লাশ তোলা এবং তা পুনরায় কবরস্থ করাও এদের কাজ। ডোমরা শ্মশানে মৃত দেহ দাহও করে থাকে। ডোমনীরা সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করে থাকে।

এরা বাঁশের কুলা, ডালা, চাটাই, ঢোল, চালনা ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। ডোমরা শুকর পালন করে থাকে। বাস করে শহরের বাইরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে। এরা বেশ আনন্দ-ফূর্তি করে। ডোম অত্যন্ত নিচু জাতি।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ডোমদের আদি পেশা কুলা, চালন, ডোলা, ডালা, সাজি, শলা, মাছ ধরার খালুই প্রভৃতি তৈরি করা। তালপাতা/খেজুর পাতা দিয়ে মউর/পাটিও তৈরি করে থাকে ডোম সম্প্রদায়। প্রাচীন চর্যাপদে ডোমদের উল্লেখ পাওয়া যায়—

নগর বাহিরি রে ডোম্বি তোহোরি কড়িয়া।

ছোট ছোট জালি বামহণ নাড়িআ ৷

ডোম অস্পৃশ্য সম্প্রদায়। নগরের বাইরে কুঁড়েঘরে তাদের বাস।

কবি জগজ্জীবন রচিত ‘মনসামঙ্গল’ কবে ডোম সম্প্রদায়ের ‘বিচন’ বা পাখা তৈরির কথা বলেছেন। মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ডোমদের কথা উল্লেখ করে লেখেন—

বিঅনি চালুনী ঝাঁটা ডোম গড়ে ছাতা না

কির্তি করে হরষিত চিতে।

ঘনরামচক্রবর্তী রচিত ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্যে থেকে জানা যায় কালু ডোমের নেতৃত্বে ডোমগণ বাঁশের ঝুড়ি, চাঙারি প্রভৃতি নির্মাণ করে জীবিকা নির্বাহ করত। ড. শম্ভুনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখায় ডোমদের সম্পর্কে পরিচয় পাওয়া যায়। তুর্কী বিজয়ের পর এদেশে রাজশক্তির পরিবর্তন, বৌদ্ধ ধর্মের গুরুত্ব হ্রাস পাওয়া ডোমরা বাঁশের কারুশিল্পের কাজ অবলম্বন করে।

 

ডোম বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

 

হিন্দু বর্ণ বিন্যাসে ডোম অস্পৃশ্য সম্প্রদায়, এরা পতিত জাতি, শ্মশানে সৎকারকারী একটি বর্ণ বিশেষে পরিণত হয়। ডোমরা কুলা-ডালা বুনে ধুচলি-চুপড়ি, ঝুড়ি প্রস্তুত করে। এরা হাঁস-পায়রা-কুকুর পুষে, এছাড়াও ডোমরা শুকর লালন-পালন করে। এ বিষয়ে বাংলা কাব্যে পাওয়া যায়—

ধর্মের শাসন সহী ময়না নগর

জাতি অনুসারে ডোম নিলেক শূকর ।

বর্তমানে আধুনিক পয়ঃপ্রণালী প্রবর্তন হওয়ায় শহরের মেথর/ডোমদের কাজ সীমিত হয়ে পড়েছে। শহরের মেথর/ ডোমেরা এখন ড্রেন/রাস্তা ঝাড়ু দেয়ার কাজ করে থাকে। ডোমেরা বর্তমানে লাশ কাটা/সেলাই করা/পচা লাশ কবর থেকে তোলা ইত্যাদি কাজ করে থাকে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment