আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ধুনারী বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
ধুনারী বাংলাদেশের পেশাজীবী
শীতকাল আসলেই ধুনারীদের হাকডাক শোনা যায়। ধুনারীরা বাড়ি বাড়ি যেয়ে প্রয়োজনীয় লেপ-তোষক—গদি—জাজিম তৈরি করে দেয়। প্রাচীন কাল থেকে বাংলায় তুলোর ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে তখন তুলো দিয়ে কাপড় তৈরি হতো।
তুলো দিয়ে লেপ, তোষক, বালিশ, জাজিম, গদি ইত্যাদি কখন তৈরি শুরু হয়েছে তার সঠিক বৃত্তান্ত জানা যায় না। অনুমান করা যায় মুসলমান শাসন আমল থেকে এ সমস্ত দ্রব্যাদি প্রাচীন বাংলাদেশে এ সমস্ত দ্রব্যাদির ব্যবহার শুরু হয় এবং বিস্তার লাভ করে। লেপ, তোষক, বালিশ ইত্যাদি এখন আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস।
এ সমস্ত তৈরি হয় তুলা দিয়ে। যারা তুলা ধুনে লেপ, তোষক, বালিশ, গদি, জাজিম ইত্যাদি বানিয়ে দেয় তারাই ধুনারি। ধুনারিরা সাধারণত মুসলমান সম্প্রদায়ের লোক।

ধুনোট নামক একরকম যন্ত্র দিয়ে এরা তুলা ধুনে। ধুনোট কাঠ দিয়ে তৈরি। অনেকটা ধনুকের মতো। ধুনোটের তার গরুর রগ দিয়ে তৈরি। দুই হাতের মতো লম্বা গোলাকার কাঠ থাকে যার একাংশ অনেকটা ‘যাতী’র আকৃতির মতো তৈরি করা। এর সাথে সংযুক্ত থাকে গরুর রগ। ধুনোটের রগে ছোট কাঠের মুগর দিয়ে আঘাত করে তুলা ধুনা হয়।
ধুনারীরা তুলার ময়লা পরিষ্কার করা এবং জমাট তুলা আলগা করার জন্য তুলা ধনে থাকে। তুলা ধুলার সময় একটা বিশেষ আওয়াজ হয়। শীতকালে এদের কাজ বেশি থাকে। ধুনারীরা বাড়ি বাড়ি যেয়ে কাজ করে।
অনেক সময় এদের সাথে লেপ, তোষক, বালিশ বানানোর কাপড় থাকে। কিছু তুলাও থাকে। ধুনারিরা ধুনোট, ছোট কাঠের মুগুর, চিকন বাঁশের লাঠি, সুই, সুতা ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে।
বাংলাদেশের বিক্রমপুর, ফরিদপুর প্রভৃতি অঞ্চলের লোকেরা এ-কাজে নিয়োজিত। বর্তমানে ধুনারিরা লেপ-তোষক-জাজিম ব্যবসায়ির কর্মচারী হিসেবে কাজ করে থাকে।
আরও দেখুনঃ