আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ধোপা বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
ধোপা বাংলাদেশের পেশাজীবী
ধোপা বা রজক নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়। ‘রজক’ বৃহদ্ধর্ম পুরানে মধ্যম সংকর উপবর্ণের অন্তর্গত। ব্রহ্মকৈবর্তপুরাণে রজক অসৎশুদ্র পর্যায়ভুক্ত বলে উল্লেখ রয়েছে। ভবদেব ভট্ট রজকদের অন্ত্যজ পর্যায়ে বলে উল্লেখ করেছেন।
বাংলা মঙ্গল কাব্যধারায় ধোপা শ্রমজীবী সম্প্রদায়ভুক্ত। বিজয়গুপ্তের ‘মনসা মঙ্গল’ কাব্য এবং ভারতচন্দ্র বা রামপ্রসাদ সেনের ‘কালিকমঙ্গল’ কাব্যে ধোপার বর্ণনা পাওয়া যায়। ধোপা সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষ উভয়ই এ কাজে নিয়োজিত। কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের লেখাতে পাওয়া যায়—
ধোপানী কাপড় কাচে ক্ষার আর খোলে।
বেহুলা কাপড় কাচে শুধু গঙ্গা জলে ।।
কবি কঙ্কন মুকুন্দের ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যে নগরের মাঝখানে ধোপাদের বাস উল্লেখ রয়েছে। ধোপারা কাপড় ধোলাই এবং ইস্ত্রিও করে থাকে। সাধারণ মানুষেরা ধোপা দিয়ে কাপড় ধোলাই করে না। মধ্যযুগে জমিদারি তথা সামন্ত প্রথা প্রচলনের পরই ধোপাদের কদর বাড়তে থাকে।
প্রাচীন কাল থেকেই বাংলায় ধোপাদের অস্তিত্ব ছিল। প্রাচীন কালে বাংলার তৈরি মসলিন ধোয়ার কাজ করতো ধোপারা। আগেকার দিনে জমিদার শ্রেণীদের কাপড়-চোপড় ধোপারা পরিষ্কার করতো। সে সময় ধোপার কাজের এত ব্যাপক প্রচলন হয়নি।

মুসলমান শাসন আমলের পূর্বে শেরওয়ানি, আচকান, পাজামা, দোপট্টা, কুর্তা ইত্যাদি পোশাকের প্রচলন হয়। তখন ধোপাদের কাজ কিছুটা বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ শাসন আমলে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটে। উদ্ভব হয় মধ্যবিত্ত শিক্ষিত চাকুরীজীবী শ্রেণীর প্রচলিত হয় আধুনিক পোশাক পরিচ্ছদ। সার্ট, কোর্ট, প্যান্ট ইত্যাদির প্রসার ঘটে। প্রসার ঘটে ধোপা শ্রেণীর।
আগেকার দিনে মফস্বল শহরে ধোপারা বাড়ি বাড়ি যেয়ে পরিষ্কার করার মতো কাপড় সংগ্রহ করে আনতো এবং পরিষ্কার করে সেগুলো পুনরায় ফেরত দিয়ে আসতো।
এখন শহরগুলোতে বড় বড় অটোমেটিক ড্রাই ক্লিনার্স প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ধোপারা অনেকে এখন লন্ড্রির কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। এ কাজ এখন একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
শুধুমাত্র ধোপা সম্প্রদায়ের মধ্যে এ কাজ এখন আর সীমাবদ্ধ নেই। মফস্বল শহরে ধোপা পাড়া আলাদা থাকতো। আগেকার দিনে ধোপারা নির্দিষ্ট স্থানে বাস করতো। ধোপাদের ব্যবসা এখন হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
আরও দেখুনঃ