নাপিত বাংলাদেশের পেশাজীবী

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় নাপিত বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।

নাপিত বাংলাদেশের পেশাজীবী

নাপিত আমাদের সবার পরিচিত। আর্যদের আগমনের পর এদেশে বর্ণভিত্তিক পেশা বিভাজন হয়। আর্যদের বর্ণ বিভাজনের একটি উপবর্ণ নাপিত বা ক্ষৌরকার। যাদের বৃত্তি ছিল মানুষের ক্ষৌরকাজ করা। নাপিতরা খুব চতুর বলে পরিচিত। নাপিতের চতুরতা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে উপাখ্যান আছে।

প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় নাপিতদের অস্তিত্ব ছিল। তবে কবে, কখন, কোথায় তারা তাঁদের পেশা শুরু করেছিল তার সঠিক বিবরণ পাওয়া যায় না। সম্ভবত আর্যদের আগমনের সাথেই এদেশে ক্ষৌরকার/নাপিত পেশার সূত্রপাত হয়।

 

নাপিত বাংলাদেশের পেশাজীবী

গ্রাম— বন্দর শহর গঞ্জ উভয় স্থানেই এদের বসবাস ছিল। গ্রামে নাপিত পাড়া আলাদাই ছিল। আগেকার দিনে সম্ভ্রান্ত ও স্বচ্ছল পরিবারে নবজাতকের মাথার চুল ও হাত পায়ের নখ নাপিত দিয়ে কাটানো হতো। নাপিত বাড়িতে এসে নবজাতকের চুল, নখ কেটে দিয়ে যেতো। বিনিময়ে নাপিত বখশিশ পেতো। গ্রামের অনেক বিয়েতে বরের বাড়ি গিয়ে নাপিত সুন্দর করে চুল কেটে দিতো। পেতো বখশিশ।

আগেকার দিনে নাপিত গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষৌরকাজ করতো। আবার হাটে বাজারে এদের দোকানও আছে। হাটে-বাজারে নাপিতরা খোলা জায়গায় একটা টুল বা চেয়ার বসিয়ে ক্ষৌর কাজ করে থাকে। নাপিতরা তাদের কাজে খুর, কেচি, ব্লেড, ফিটকিরি ইত্যাদি ব্যবহার করে।

বর্তমানে শহরগুলো ‘হেয়ার ড্রেসার’ দোকান প্রচলিত হয়েছে। শহরে চুলকাটা এখন একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। একাজ এখন শুধুই নাপিতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নাপিতরা এখন শহরের হেয়ার কাটিং সেলুনে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বড় বড় সহরগুলোতে এখন বিউটি পার্লার প্রচলিত হয়েছে। এ সমস্ত পার্লারে পুরুষ/নারী উভয়ের চুল কাটা হয়। শহরগুলোর পার্লারে পুরুষ/নারী উভয়ই এ জেলায় নিয়োজিত। নাপিত বাংলার গ্রামীণ সমাজে শীল/ক্ষৌরকার/প্রামাণিক হিসেবে পরিচিত। মানিকরাম গাঙ্গুলি ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্যে নাপিতকে নরসুন্দর বলেছেন।

নীহাররঞ্জন রায় রচিত ‘বাঙালীর ইতিহাস’ গ্রন্থে নাপিত শ্রেণীকে ‘উত্তম সংকর’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নির্মলকুমার বসু নাপিত সামাজিকভাবে ‘জলচল’ অর্থাৎ সমাজ সংগঠনে তথা সামাজিক মর্যাদায় অস্পৃশ্যশ্রেণীর উপরে। বাংলা মঙ্গল কাব্যধারায় অনেক কবি তাঁদের রচনায় নাপিত সম্প্রদায়ের উল্লেখ করেছেন।

মঙ্গলকাব্যের কবি বিজয়গুপ্ত উল্লেখ করেছেন—

জয়ে জয়ে হুড়াহুড়ি, মঙ্গল বাদ্যগীত।

করিলা খেউর কর্ম্ম সাধুর নাপিত ।

মঙ্গলকাব্যের অপর কবি কবিকঙ্কন চন্ডী নাপিতদের পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন-

নাপিত বইসে তথা কক্ষতলে করি কাতা

করে ধরি রসনা দর্পন।

মানিকরাম তাঁর কাব্যে নাপিতের উল্লেখ করেছেন—

লঘু কৈল নিয়োজিত নরাই নাপিতে

নাপিত লিখন লয়্যা লঘু গতি চলে।

 

নাপিত বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

ধর্মমঙ্গল কাব্যে উল্লেখ রয়েছে লাউ সেনের জন্ম সংবাদ নাপিত গৌড়েশ্বরের দরবারে পৌঁছায়। সংবাদ শুনে নৃপতি নাপিতকে নানা ধনে পুরস্কৃত করেন। মধ্যযুগের সমাজে নাপিতরা জন্ম-মৃত্যু- -বিবাহাদির সংবাদ বাহক হিসেবে কাজ করত। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে এখন চুল কাটার পেশায় নিয়োজিত। শহরগুলোতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হেয়ার কাটিং সেলুন। গ্রামীণ প্রথা এখনও সচল রয়েছে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment