পটুয়া বাংলাদেশের পেশাজীবী

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পটুয়া বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।

পটুয়া বাংলাদেশের পেশাজীবী

পট চিত্র বাংলাদেশের প্রাচীনতম লোকশিল্প। পটচিত্র অংকন করে পট প্রদর্শনী, পটসঙ্গীত ও পটবিক্রি ইত্যাদি কাজ পটুয়ারা করত। পটুয়া পেশা এদেশের অনেক পুরাতন।

বর্তমান শতকের প্রথম দিকেও ঢাকা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, রাজশাহী প্রভৃতি জেলায় পটুয়া সঙ্গীতসহ পটচিত্র প্রদর্শন করা হতো। পনের শতকে সংস্কৃত সাহিত্য অবলম্বনে কবিরা কৃষ্ণলীলা, রামলীলা, পটের প্রচলন হয় বলে অনুমিত।

 

পটুয়া বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

পট অঙ্কিত হত কাপড়ের উপর। পরে কাপড়ের উপর কাগজ লাগিয়ে মানচিত্রের মত আঁকা হতো। কাপড়ের উপর কাদামাটি ও গোবর মিশিয়ে প্রলেপ দেয়া হতো। অতপর তেঁতুল বিচির আঠার প্রলেপ দিয়ে পট আকার জমিন তৈরি করা হতো।

পট আকার পর পট শিল্পী নিজে সঙ্গীত গাইয়ে পট প্রদর্শন করতো। বিক্রমপুর অঞ্চলে পট প্রদর্শনকে ‘পট নাচন’ বলা হয়।পটুয়ারা একই সাথে কবি, সাধক, গায়ক ও চিত্রশিল্পী। বিষয়বস্তু ও আকৃতির উপর পটের বিভাজন করা হয়।

ছোট আকৃতির একক চিত্র পটকে ‘চৌকাপট’, বহুচিত্র অংকিত পট, দীর্ঘপট বা ‘জড়ান পট’ হিসেবে পরিচিত। আধুনিক চিত্রকলা ও শিল্পের আবির্ভাবের ফলে পটুয়া পেশা বিলুপ্তির পথে। পটুয়ারা প্রথমে ছুতার পরে প্রতিমা শিল্পী পরবর্তীতে পটশিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হয়।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পটুয়াদের আঁকা পট শিল্প সস্তায় বিক্রি হতো। পটুয়ারা তাদের পেশা পরিবর্তন করে বর্তমানে অনেকে মূর্তি গড়ার পেশা অবলম্বন করে। বিষয় অনুসারে চণ্ডীপট, শক্তিপট, দশ অবতার পট, রামলীলা পট, কৃষ্ণলীলা পট, মনসাপট, যমপট ও গাজীর পট এ শ্রেণীতে বিভাজন করা হয়।

পট অনেক সময় বিগ্রহেরবিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হত। ব্যবসায়ীরা একসময় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পট ঝুলিয়ে রাখত। কালিঘাটে পটুয়া পাড়ায় কালিঘাটের পট নামে খ্যাত কাগজের উপর তুলির আচড়ে অঙ্কিত চৌকা পট সমাদৃত হয়।

ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও কারিকার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত লোক কারুশিল্পের জরিপ প্রকল্পে মোহনগঞ্জ থেকে নরসিংদীর গাজীর পট প্রদর্শনীতে সুধীর আচার্যের আক গাজীর পটের সন্ধান পাওয়া যায়। পটুয়া সঙ্গীতে চার ভাগ। প্রথম ভাগ গাজীর অলৌকিক শক্তি, দ্বিতীয় কিছু হিতোপদেশ, তৃতীয় কিছু রঙের কথা পরিশেষে যম।

 

পটুয়া বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

পটুয়ারা পট নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে পট দেখিয়ে পারিশ্রমিক হিসেবে ধান পেতো। এখন বলতে গেলে পট তৈরি একবারে হয় না। ধর্ম ও নীতিজ্ঞানভিত্তিক সমাজের অবক্ষয় পটের বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। এছাড়া পাশ্চাত্য শিল্পরীতির সাথে প্রতিযোগিতায় পটশিল্প টিকে থাকতে পারেনি। পট এককালে বিনোদনের মাধ্যম ছিল।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment