আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পতিতা বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
পতিতা বাংলাদেশের পেশাজীবী
প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে মধ্যযুগ ও বর্তমান সময়েও সমাজে নারীরা ভোগের সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজে উপপত্নী/রক্ষিতা ইত্যাদি নামে প্রকারান্তে দেহপসারিণীদের পরিচয় পাওয়া যায়।
সে সময় জমিদার ভূ-স্বামী-রাজ- রাজড়াদের মনরঞ্জন করত দেহপসারিণীরা। বিভিন্ন দেশে ও সমাজে নারী পতিতাবৃত্তিকে জীবনের অবলম্বন হিসেবে গণ্য করা হয়। জমিদার-ভূ-স্বামী-রাজ-রাজড়া, কুলীন, ব্রাহ্মণঅভিজাত শ্রেণী ছিল পতিতাদের আশ্রয়স্থল।
এই শ্রেণী পতিতা নিয়ে নাচ-গান-মদ্যপান করে আনন্দ-ফূর্তি করত। মধ্যযুগের মঙ্গল কাব্যে নারীর পতিতাবৃত্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। পতিতাদের অবস্থান সম্পর্কে বলা হয়েছে—পুরীর প্রান্তরে বেশ্যা থরে থরে ,অন্ত্যজ জাতি অপার
পেশাদার বারবনিতা ছাড়াও সাধারণ গৃহস্থ ঘরের মেয়েরাও এসব পেশায় প্রবেশ করার কথা বলেছেন ঘনরাম চক্রবর্তী তাঁর কাব্যে-
নটী দারী নহে সব গৃহস্থের মেয়ে।
লাজ খেয়ে নগরে নাগরে বুলে চেয়ে।
না যাব জামতি যায় যুবতী প্রবলা ।
পথিক পুরুষ পেলে যায় পদ্মমালা ।।

সাধারণ অন্ত্যজ ঘরের যুবতী মেয়েরাও এসব পেশার সাথে জড়িত ছিল। যৌবন থেকে শুরু করে একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত এরা পুরুষদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হতো। পুরুষরাও তাদের যৌন বাসনা চরিতার্থ করার জন্য অর্থের বিনিময়ে এইসব নীচতলার রমণীদের উপভোগ করতো। বেশ্যারা কিভাবে অর্থ উপার্জন করত তার একটি বর্ণনা পাওয়া যায় বিষ্ণুপাল কর্তৃক রচিত ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে—
হেদে লো বেউশ্যা ছুড়ি। তুমি তো পরের খাও কড়ি।
ভিনদেশী লাগি পাও—ডাক্যা লয়া ঘর যাও,তুই মাগি জন্ম বেছড়ি।
অস্পৃশ্য বেশ্যাদের এই বৃত্তিটিকে আপাত স্বাধীন এবং নিরুপদ্রব বলে মনে হলেও সমাজের এক শ্রেণীর লম্পট পুরুষ রয়েছে—যারা এই বেশ্যাদের উপার্জন থেকেও অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। অথচ এই লম্পট পুরুষরাই আবার পতিতাশ্রেণীর খুব বেশী প্রয়োজন মুকুন্দরাম এই সব লম্পট এবং বারবধূদের সহঅবস্থানে কথা চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে উল্লেখ করেছেন—
লম্পট পুরুষ আশে বারবধূগণ বৈশে ,একভিতে তার অধিষ্ঠান।
এছাড়া সেকালের সমাজে ‘জায়াজীবী’ কামিল সম্প্রদায়ের উল্লেখ পাওয়া যায় কামিলারা স্ত্রীকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করিয়ে অর্থ উপার্জন করত। এছাড়া বেদে সম্প্রদায়ের মেয়েরাও দেহ-ব্যবসায়ে লিপ্ত থাকতো।
বাংলা মঙ্গল কাব্যধারার খুব কম কবির রচনাইরয়েছে—যেখানে বারবধূ/ [/বারবনিতা/দেহপসারিণীদের উল্লেখ নেই। প্রাচীন ও মধ্যযুগের সমাজ ব্যবস্থায় বেশ্যাদের একটি বিশেষ অবস্থান ছিল।
আরও দেখুনঃ