সহমর্মিতা, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও আস্থা স্থাপন আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর “ক্যারিয়ার গঠনে সংযোগ স্থাপন ও আচরণ” ইউনিট ৩ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
সহমর্মিতা, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও আস্থা স্থাপন
প্রাণিকুলের মধ্যে মানুষ সবচেয়ে সফলভাবে সমাজ গড়ে তুলেছে। সফল বলা হয় এ কারণে যে, সমাজে মানুষের সাথে মানুষের ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিরাজ করে। এ সম্পর্ক এমনি এমনি গড়ে ওঠে না। তার জন্য মানুষের ভিতর পারস্পারিক প্রেম ও ভালবাসা যেমন থাকতে হয় তেমনই একে অপরের উপর নির্ভরশীলতা থাকতে হয়। দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ নানা ধরনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ প্রয়োজন মেটাতে মানুষ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। নিজ কর্মক্ষমতা অনুযায়ী একে অপরকে সাহায্য করে।
এভাবে উভয়ে উভয়ের উপর নির্ভর করতে শেখে, একে অপরকে ঘনিষ্টভাবে চিনতে পারে, উভয়ের মধ্যে ভালবাসা ও মমতা গড়ে ওঠে। ফলে পরস্পর পরস্পরকে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নেয় । আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যোগাযোগ রাখছে। গড়ে উঠছে সম্প্রীতি, সৌহার্দ। সমাজকে এখন অনেক বৃহত্তর পরিমাপে ধারণা করা হয়। অর্থাৎ এ কথা বলা হয় পৃথিবীর সকল মানুষ এখন একটি সমাজের অন্তর্ভুক্ত। । দূর প্রান্তে বসেও মানুষ একে অপরের উপর নির্ভর করে এবং বিশ্বাস করে ।
কাজ – এক
এ কাজটি করে আপনি সমর্মিতা, পারস্পারিক নির্ভরশীলতা ও আস্থা স্থাপন সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল হতে কী বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন হয় তা জানবেন । আপনার পারিপার্শিকতার মধ্যে নির্ভর করতে পারেন এবং আস্থা রাখতে পারেন এমন একজন বন্ধু বা আত্মীয়ের খোঁজ করুন। এবার নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন।
১. নির্ভর করতে পারছেন এমন একজনের সাথে আপনার সম্পর্ক কী?
২. তার পাঁচটি সাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লিখুন।
৩. আপনি পছন্দ করছেন এমন তিনটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লিখুন।
৪. এ বৈশিষ্ট্যগুলো কীভাবে আপনাকে তার উপর নির্ভর করতে ও আস্থা স্থাপন করতে সাহায্য করবে?
৫. এবার আপনার চারটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লিখুন, যা আপনার বন্ধু বা আত্মীয়কে আপনার উপর নির্ভর করতে সাহায্য করবে বলে আপনার মনে হয়।
সহমর্মিতা
সহমর্মিতা উপলব্ধি করার একটি বিষয়। মানুষ যখন দুঃখ পায়, বিপদে পড়ে বা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে তখন তার প্রতি আমরা সহমর্মিতা দেখাই। সহমর্মিতার সমার্থক আরও শব্দ হল সমবেদনা, সমব্যাথী, সহানুভূতি ইত্যাদি। মানুষের মনে তখনই সমবেদনা জাগে যখন অন্যের মনের দুঃখজনক অনুভূতি তার মন দিয়ে সে অনুভব করে। শুধু অনুভবই করে না, সে এতটাই দুঃখ পায় যে দুঃখীজনকে সমবেদনা জানানোর জন্যে সে তার কাছে ছুটে যায় অথবা কাছে যাওয়া সম্ভব না হলে দূর থেকে তার দুঃখে সে ভেঙে পড়ে।
তবে সহমর্মিতা যে সব সময় দুখীজনের জন্য হবে তা নয় বরং যে বিপদে পড়েছে বা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে তার জন্যেও হয়ে থাকে। যে কারণেই হোক না কেন সহমর্মিতা মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শক্তি যোগায়। মেরিয়েন ওয়েবস্টার সহমর্মিতাকে এভাবে সঙ্গায়িত করেছেন, সহমর্মিতা এক ধরনের অনুভূতি যা আমরা হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারি এবং দুঃখীজন বা সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের পাশে থেকে তার অভিজ্ঞতা ও বেদনাভরা অনুভূতি আমরা ভাগ করে নিই । সাধারণত আমরা যে মানুষকে পছন্দ করি বা যে আমাদের আত্মীয়, পরিবার-পরিজন বা বন্ধু স্থানীয় লোক তার প্রতি আমরা সহমর্মিতা প্রকাশ করি।
তবে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার যে আত্মীয়, পরিজন বা বন্ধু ছাড়া যে মানুষটি কল্যাণময়ী, দরদী বা পরোপকারী তার জন্যেই মানুষ সহমর্মিতা প্রকাশ করে। মানুষের মনে সহমর্মিতার বোধ জাগে বিভিন্নভাবে। নিচে এর কারণ উল্লেখ করা হলো ।
সহমর্মিতার কারণ: মানুষ যখন অন্যের দুরবস্থার কারণ খুব গভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে অনুভব করে এবং দুরবস্থার কারণ খুঁজে বের করতে পারে তখনই সে সহমর্মিতা অনুভব করে। এখানে সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি আমাদের মনোযোগী হওয়া খুব জরুরী। ব্যক্তি ও তার সমস্যার প্রতি পূর্ণ ও গভীর মনোযোগ আমাদের সহমর্মিতার বোধকে জাগিয়ে তোলে। যেমন, আপনার পাশের বাড়ির ছেলেটি রাস্তায় এ্যাকসিডেন্ট করে তার পা ভেঙে ফেলল। এ অবস্থায় ছেলেটির প্রতি আপনার সহানভূতি জাগবেকি? অবশ্যই জাগবে।
দেখা যায়, দুঃখ বা সমস্যার গভীরতার উপর সহমর্মিতার গভীরতাও নির্ভর করে। আবার নিকট জনের ব্যথা থেকে দূরের জনের ব্যথা আমরা কম অনুভব করি। আপনার নিজের সন্তান যদি কোন বিপদে পড়ে তবে অন্য যে কারও দুঃখ/কষ্ট থেকে আপনার সন্তানের কষ্ট আপনাকে অনেক বেশি সহানুভূশীল করে তুলবে। তার কষ্ট দূর করার জন্য আপনি প্রাণপাত চেষ্টা করবেন। আবার কোন মানুষ টাকা হারিয়ে ফেললে তার জন্যে আপনার যত সমবেদনা হবে, এ্যাকসিডেন্ট করে যার অঙ্গহানি হয়েছে তার প্রতি আপনার সমবেদনা অনেক বেশি হবে।
যোগাযোগ: সহমর্মিতা দেখানোর সবচেয়ে সহজ ও স্পষ্ট উপায় হলো যার প্রতি সহানুভূতি দেখান হচ্ছে তার সাথে কথা বলা। অর্থাৎ কথার মাধ্যমে সহমর্মিতা দেখানো। সহানভূতি দেখানোর সময় নানা ধরনের আবেগতাড়িত শব্দ ব্যবহার করে দুঃখবোধের গভীরতা বোঝানো হয়। যেমন, আহা, আহা রে, ওহ! ইত্যাদি। এসব শব্দ ব্যবহার ছাড়াও দুঃখের বা বিপদের কারণ বা পরিস্থিতি সম্পর্কে কোন আবেগতাড়িত কথা বলেও সমবেদনার মাত্রা বোঝানো যায়। যেমন, বাপ রে বাপ! কী ভয়ংকর! কী নিষ্ঠুর! কত মারাত্মক! ইত্যাদি।
কথা না বলে শুধুই কণ্ঠস্বরের ওঠানামা দিয়ে অন্যের দুঃখের প্রতি সমব্যাথা জানানো যায়। যেমন, আঃ—-হ এভাবে সহমর্মিতা প্রকাশ করা যায়। অথবা মৌখিক অভিব্যক্তি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়িয়ে বা বিভিন্নভাবে শারীরিক স্পর্শ দ্বারাও সহমর্মিতা প্রকাশ করা যায়।
বিভিন্ন প্রকার মৌখিক অভিব্যক্তি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ইশারা শুধু মানুষের আবেগ প্রকাশ করে না, সেই সাথে তার মতামত, তার বোধগম্যতা, তার ক্লন্তি বা অবসাদও প্রকাশ করে। তবে সহমর্মিতা বোঝানোর জন্য সাধারণত মৌখিক অভিব্যক্তি বেশি ব্যবহৃত হয়। সহানভূতি প্রকাশের এই অভিব্যক্তিগুলো সব দেশে মানুষের প্রায় একই রকম। সমব্যাথি যে হয় তার সহমর্মিতা প্রকাশভঙ্গি অনেকক্ষেত্রে তার নিজস্বতার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ সে যেমন বোধ করে তেমনই প্রকাশ করে।
পারস্পারিক নির্ভরশীলতা
পারস্পারিক নির্ভরশীলতা ঘটে তখনই যখন দুজন মানুষ একে অপরের উপর ঘনিষ্টভাবে নির্ভর করে। তাদের মধ্যে সম্পর্কটি এত ঘনিষ্ট হয় যে, মনে হয় তারা কখনই একজন অন্যজনকে ছেড়ে একা থাকতে পারবে না। তারা শারীরিকভাবে ভিন্ন থাকলেও মনের দিক থেকে একটি ঘনিষ্ট বন্ধন তৈরি করে। যেমন, প্রতিবেশীর সাথে ঘনিষ্টতা বা কর্মক্ষেত্রে কোন সহকর্মীর উপর নির্ভরশীলতা। কখনও কখনও প্রতিবেশির সাথে প্রতিবেশির এমনভাবে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে যে, সাংসারিক ও সামাজিক সব ব্যাপারে তারা একসাথে কাজ করেন। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে পারিবারিক ব্যাপারে উভয়ে পারস্পারিক আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে ব্যক্তিগত কোন সমস্যার সমাধান করেন বা সাংসারিক কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে চাকরিক্ষেত্রেও এক সহকর্মী অপর সহকর্মীর উপর এমনভাবে নির্ভর করেন যে, মনে হয় তারা একে অপরকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না। কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত যে কোন কাজে তারা একে অপরকে সাহায্য করেন, কর্মক্ষেত্রে যে কোন আনুষ্ঠানিক আয়োজনে তারা একসাথে থাকার চেষ্টা করেন, দুপুরের খাবার একসাথে খান, একসাথে যাতায়াত করার ব্যাপারেও তারা আগ্রহবোধ করেন, এমনিভাবে সব ব্যাপারে তারা একে অপরের পাশে থাকেন। সর্বোপরি এ কথা বলা যায়, তারা পরস্পরের মধ্যে বন্ধুস্থানীয় সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
সমাজের অন্যান্যক্ষেত্রেও এ ধরনের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে যদি দুজনের একে অপরের প্রতি ভালবাসা ও সহমর্মিতা থাকে। আমাদের সমাজে পারস্পারিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক গড়ে ওঠা খুবই প্রয়োজন। এর ফলে পারস্পারিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে এবং একইসাথে মানুষে মানুষে হিংসা, আক্রোশ কমে সমাজে শান্তি বিরাজ করবে।
পারস্পারিক নির্ভরশীলতার কারণ: মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। তাই সে জন্মগতভাবে পরনির্ভরশীল এবং প্রয়োজনের বশবর্তী। এ ছাড়া মনুষ্য সমাজে সভ্যতা জন্মের আগে মানুষ পশুর মতই জীবনযাপন করত। তারা খাদ্য অন্বেষণে ঘুরত এবং ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে শিকার খুঁজে বেড়াত। এই দলগুলোর মধ্যে তারা পরস্পরের নির্ভরশীল হয়ে পড়ত। কারণ ভয়ংকর সব পশুদের আক্রমন থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য একে অপরের সাহায্যের প্রয়োজন হত। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য একে অপরকে সাহায্য করত।
সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে মানুষের স্বভাব ও অভ্যাসের পরিবর্তন হয় বটে, কিন্তু দলীয়করণ বা সম্প্রদায়ভূক্ত হওয়ার যে প্রবণতা তা রয়েই যায়। দেখা যায় একই জাতীয় কাজ করতে আগ্রহী ও করতে পারে এমন মানুষরা একটি সম্প্রদায়ভুক্ত হয়। এভাবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্ম হয় এবং এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের উপর বিভিন্নভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কারণ বেঁচে থাকা ও জীবন পরিচালনার জন্য একই প্রকার কাজ করলে চলে না। বিভিন্ন প্রকার কাজের মধ্য দিয়ে জীবনের উপাদান সংগ্রহ করতে হয়। এটাই মানুষের সমাজবদ্ধতার ইতিহাস।
একে অপরকে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে পরস্পরের জন্য মমতা সৃষ্টি হয় এবং সহমর্মিতা মানুষকে মানুষের সাথে অদৃশ্য বন্ধনে বেঁধে রাখে । শিশু জন্মের পর থেকে মা-বাবার উপর নির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠে। এই নির্ভরশীলতা এতটাই জোরালো যে মায়ের অনুপস্থিতিতে শিশুর গড়ে ওঠা স্বাভাবিক হয় না। শিশুকে মা যে স্নেহমমতা দিয়ে লালন করেন সেখানেও মা শিশুর উপর নির্ভরশীল। শিশু না থাকলে মায়ের স্নেহ ব্যর্থ হয়। শিশু ধীরে ধীরে বড় হয়। সে নিজে হাঁটতে শেখে, অনুভব করতে শেখে, বলতে শেখে, এভাবে সে একজন পৃথক ও স্বতন্ত্র মানুষ তৈরি হয়। তখন বেঁচে থাকার জন্য মায়ের সাহায্য না হলেও চলে।
কিন্তু পারস্পারিক স্নেহমমতা, সহমর্মিতা ও ভালবাসা দুজনকে কাছাকাছি রাখে, পরস্পর এক নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। লক্ষ্য করে দেখুন, পারস্পারিক নির্ভরশীলতার অন্যতম কারণ হল সহমর্মিতা। এর কারণে মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় এবং সুস্থ ও স্বস্তিময় সমাজ গড়ে ওঠে। সমাজের বিভিন্নক্ষেত্রে পারস্পারিক নির্ভরশীলতা পাওয়া যায়। যেমন, বন্ধু বন্ধুর উপর নির্ভরশীল, ছাত্র শিক্ষকের উপর বা শিক্ষক ছাত্রের উপর নির্ভরশীল, স্বামী স্ত্রীর উপর বা স্ত্রী স্বামীর উপর নির্ভরশীল। পারস্পারিক নির্ভরশীলতা সমাজে শান্তি স্থাপনের এক বিরাট উপাদান। নির্ভরশীলতার কারণে একের প্রতি অন্যের প্রেম ও ভালবাসা জোরালো হয়। উভয়ের মধ্যে সহজ সম্পর্ক বিরাজ করে । ধীরে ধীরে এ সম্পর্ক সমাজের সর্ব স্তরে ছড়িয়ে পড়ে।
আস্থা স্থাপন: আস্থা স্থাপনের অন্য নাম হল নির্ভর করা বা নির্ভরশীল হওয়া। এর অন্যতম শর্ত হলো বিশ্বাস স্থাপন পারস্পারিক বিশ্বাস না থাকলে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। পারস্পারিক নির্ভরশীলতায় উভয়ের মধ্যে সুস্থ ও সহজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে একথা ঠিক, কিন্তু সে সম্পর্কের মূলে রয়েছে বিশ্বাস। একে অপরকে বিশ্বাস করে বলেই তারা কাছাকাছি আসে, পরস্পর পরস্পরের কাছ থেকে সাহায্য নেয় এবং উভয় উভয়ের জীবনকে সুন্দর করে তোলে । আপনি কোন মানুষকে বিশ্বাস করবেন তখন, যখন আপনি তার ভাল দিকটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করবেন।
তার মূল্যবোধ, তার কাজকর্ম অর্থাৎ সে কী কাজ করতে ভালবাসে, কাজটি সে কী উপায়ে করে ইত্যাদি সম্পর্কে আপনার জানা থাকবে। তার ইতিবাচক দিকটির প্রতি আপনি ঝুঁকে পড়বেন এবং তাকে ভালবাসবেন। এই ভালবাসাই আপনাকে বিশ্বাস স্থাপনে সক্ষম করে তুলবে। ফলে আপনি তার উপর আস্থা রাখতে পারবেন। চাকরি ক্ষেত্রে আপনি আপনার সহকর্মীর উপর বা বড়কর্তার উপর বা স্কুলে প্রধান শিক্ষকের উপর আস্থা রাখতে পারবেন যদি আপনি জানেন তিনি কেমন ধরনের মানুষ। সে কারণে একজন মানুষকে বিশেষভাবে চেনা আস্থা স্থাপনের অন্য আর একটি শর্ত।
এমন যদি হয় যে তিনি সৎ, উদার ও উন্নত নৈতিক চরিত্রসম্পন্ন মানুষ, কিন্তু তিনি হঠাৎ রেগে যান এবং তার ক্রোধ অত্যন্ত ভয়ংকর। এ অবস্থায় তার ক্রোধ আপনাকে তার থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। তার প্রতি আস্থা স্থাপন তো দূরের কথা, তার কাছে যেতে আপনি ভয় পাবেন। উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে পারস্পারিক সহমর্মিতা যেমন প্রয়োজন, একে অপরের উপর আস্থা স্থাপনও প্রয়োজন। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা বিরাজ করবে, একে অপরের উপর নির্ভরশীল হবে ও পরস্পর পরস্পরের উপর আস্থা স্থাপন করতে পারবে, আসুন এমন সমাজ গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করি ও প্রতিজ্ঞা করি।
কাজ-দুই
এ কাজটি করে আপনি সমাজে সমর্মিতা, পারস্পারিক নির্ভরশীলতা ও আস্থা স্থাপনের বাস্তব ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে পারবেন এবং নিজ জীবনে তা প্রয়োগ করতে পারবেন। কাজটি করতে আপনার ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে।
উপরে চিত্র অনুসারে হলুদ বর্ণের একটি বড় পোস্টার পেপার নিন। হলুদ বর্ণ ছাড়া তিনটি ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের ছোট কাগজ নিন। পৃথক তিনটি কাগজে সমর্মিতা, পারস্পারিক নির্ভরশীলতা ও আস্থা স্থাপন লিখুন (চিত্র অনুযায়ী)। এবার কাগজ তিনটি পোস্টার পেপারের উপর আঁঠা দিয়ে পাশাপাশি লাগান। ১৫ থেকে ২০ দিন সময় নিয়ে আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে উপরের তিনটি বিষয়ের বাস্তব উদাহরণ খোঁজ করুন। প্রত্যেকটি উদাহরণ পোস্টার পেপারে লাগানো তিনটি বিষয়ের নিচে চিত্রানুযায়ী লিখুন। সম্পূর্ণ কাজটি এবার আপনার শিক্ষক ও সহপাঠিদের দেখান ।

সারসংক্ষেপ
মূল শিখনীয় বিষয়
সমাজে বসবাস করতে হলে মানুষকে মানুষের উপর নির্ভর করতে হয়। একে অপরের প্রয়োজন মেটাতে, চাহিদা মেটাতে, পরস্পরের বিপদে বা আনন্দে মানুষ পাশাপাশি আসে এবং একে অপরকে চিনতে পারে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা, সহমর্মিতা ও বন্ধুত্ব জন্ম নেয়। তখন তারা একে অপরের উপর আস্থা স্থাপন করে এবং সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য উভয় উভয়কে সাহায্য করে। পারস্পারিক সহমর্মিতা ও নির্ভরশীলতা গড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন
- একে অপরের উপর বিশ্বাস
- পরস্পরের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা
- আত্মসচেতনতা
- অপরকে চিনবার ইচ্ছা
- সামাজিক হয়ে ওঠা।
আরও পড়ুন….