আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ব্যক্তিত্ব ও পেশা নির্বাচন
Table of Contents
ব্যক্তিত্ব ও পেশা নির্বাচন
ব্যক্তিত্ব ও পেশা নির্বাচন
আমাদের ব্যক্তিত্ব হলো আমাদের আবেগ-অনুভূতি ও আচার-আচরণের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের একটি সামগ্রিক রূপ । কেউ বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকতে পছন্দ করে, এটি তার ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য। কেউ আবার পছন্দ করে বাইরে গিয়ে বন্ধু বান্ধবের সাথে হৈ-হুল্লোড় করতে, এটি তার ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য ।
ব্যক্তিত্ব ও কর্মসংস্থান
আদিবা একটি বিদ্যালয়ে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিয়ে বের হয়েছে । যারা সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারা মনে করছেন, যে কাজটির জন্য তারা নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন তার জন্য আদিবাই উপযুক্ত । আদিবা বেশ হাসি-খুশি, উচ্ছল এবং সবার সাথে কথা বলতে ভালোবাসে। স্কুলের ছোট্ট ছেলেমেয়েদের শিক্ষক হিসেবে এ রকম ব্যক্তিত্বের একজনকেই তারা খুঁজছেন। তাছাড়া ছোট শিশুদের পড়ানোর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাও আদিবার রয়েছে।
ব্যক্তিত্ব
এসো আজকে একটি খেলার মাধ্যমে একজন আরেকজন সম্পর্কে জানি। নিচের ছকটি পূরণ করো । এজন্য ক্লাসে নিচের তালিকার সাথে মিলিয়ে আরেকজনকে খুঁজে বের কর এবং তার নাম ও স্বাক্ষর সংগ্রহ করো ।
ব্যক্তিত্ব মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । একেক ব্যক্তিত্বের মানুষ একেক ধরনের কাজ পছন্দ করে । আবার একেক ব্যক্তিত্বের মানুষ একেক ধরনের কাজের জন্য উপযুক্ত । আদিবার ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য উচ্ছলতা । যা তার কর্মজীবন নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে । তোমার ব্যক্তিত্ব কেমন তা কি তুমি জানার চেষ্টা করেছ? এসো চেষ্টা করে দেখি ।
লোকজন
তথ্য
বস্তু/সামগ্রী
সৃজনশীলতা
আমাদের কাজের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো
শাকিল, জামিল আর মিলা তিন বন্ধু একসাথে এইচএসসি পর্যায়ে পড়ালেখা করেছিল । প্রায় ছয় বছর পর এক বন্ধুর বাসায় তাদের দেখা হলো। পাস করে শাকিল ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে পড়ে এখন একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে । জামিল মাষ্টার্স পাস করে একটি কলেজের শিক্ষক । মিলা অনার্স ও মাস্টার্স করে এখন ব্যবসা করছে। আজ তারা নিজের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে কথা বলছে। তারা সবাই একমত যে তারা, যে ধরনের কাজকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাই তারা করছে ।
শাকিল বলল: আমার ইচ্ছা ছিল আমি ভালো চাকরি করব, আমার গ্রামের উন্নয়ন করব। আমি তা করতে পেরেছি ।
জামিল বলল: মিলা, তোমার ভয় করে না, ব্যবসায় তো অনেক ঝুঁকি । মিলা বলল: নারে, আমার ঝুঁকি মোকাবেলা করতেই ভালোলাগে । তাইতো ব্যবসাটাই বেছে নিয়েছি। তোর তো মনে হয় এখনো অনেক লেখাপড়া করতে হয়, যেহেতু শিক্ষার্থীদের পড়াস । জামিল বলল: তা তো বটেই । আমার এটা ভালো লাগে। শিক্ষক হিসেবে সবাই আমাকে সম্মান করে ।
কর্মক্ষেত্রে আমরা যেসব বিষয়কে মূল্য দেই
মিলা, জামিল, শাকিল- এরা প্রত্যেকেই জানত পেশা থেকে তারা সবচেয়ে বেশি কী আশা করে । সে অনুযায়ী তারা তাদের পেশা পছন্দ করেছে। এসো তোমাদেরকে একজন সফল ব্যক্তির গল্প শুনাই যিনি তোমাদের পরিচিত। তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন । খুব ছেলেবেলা থেকেই তাঁর ভালো লাগতো নদী, অবারিত প্রকৃতি আর মানুষ । আর এসব কিছুই সে ফুটিয়ে তুলতো রং তুলিতে আঁকা চিত্রে । তাঁর আঁকা চিত্রে মানুষ আর প্রকৃতি জীবন্ত হয়ে উঠতো ।
ছেলেবেলা থেকে তিনি তাঁর আগ্রহ ও সামর্থ্যের সংযোগে নিজেকে প্রস্তুত করেন । তাঁর তীব্র মানসিক চাওয়া তাকে শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে । তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতিটি পর্যায়ে চিত্রকলাকেই প্রাধান্য দেন । যদিও সে সময়ে এদেশে চিত্রকলার জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ ছিল না । জয়নুল তার বন্ধু ও সহকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন আর্ট ইনস্টিটিউট । যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত।
শিশুকাল থেকে তাঁর আগ্রহ, সামর্থ্য ও লালিত স্বপ্নই তাঁকে চিত্রশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে । তাঁর খ্যাতি ও যোগ্যতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সর্বভারতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনীতে স্বর্ণপদক লাভ করেন । পরবর্তীতে এদেশের মানুষ তাকে শিল্পাচার্য্য উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি ভালোবেসে চিত্রকলাকে পেশা হিসাবে নির্বাচন করে এদেশে চিত্রকলা পেশার সূচনা করেন ।
নিচে কয়েকটি বিষয় আছে । এর মধ্যে কোনগুলো তোমার পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তা বের করতে হবে । তালিকার শেষে ২টি পয়েন্ট শূন্য রাখা আছে । ইচ্ছে করলে সেখানে তুমি আরও কিছু বিষয় লিখে নিতে পারো যা তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ । বিষয়গুলোর মধ্যে তোমার কাছে যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটিকে প্রথম স্থান দাও ৷ তারপর যেটি গুরুত্বপূর্ণ সেটিকে দ্বিতীয় স্থানে দাও । এভাবে যেটি সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ সেটিকে সর্বশেষ দশম স্থানে দাও ।

পেশা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
১. এডভেঞ্চার বা রোমাঞ্চ— এমন একটি পেশা যেখানে ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে ।
২. ক্ষমতা-ক্ষমতা অনুশীলন ও প্রয়োগের সুযোগ থাকা ।
৩. সৃজনশীলতা— কোনো কিছু করার নতুন পন্থা খুঁজে বের করা ।
৪. অন্যকে সাহায্য করা- অন্যদের সহযোগিতা ও সেবার জন্য কাজ করা ।
৫. অধিক আয়- অধিক উপার্জন করা ।
৬. বিভিন্ন দায়িত্বের সমন্বয় বিভিন্ন ধরনের কাজ করা ।
৭. স্বাধীনতা— নিজের কাজ কীভাবে করবে তা নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকা ।
৮. নেতৃত্বের চর্চা— কোনো কাজে নেতৃত্ব দেওয়া ।
৯.
১০.
এবারে তুমি তোমার বিবেচনায় গুরুত্বের ক্রম অনুযায়ী বিষয়গুলোকে তালিকাবদ্ধ করো ।
১.
২.
৩.
8.
৫.
৬.
৭.
৮.
৯.
১০.
কোন পেশা বেছে নেব?
আমরা আমাদের আগ্রহ, সামর্থ্য, ব্যক্তিত্ব, কাজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ বের করার চেষ্টা করেছি । এবারে সেগুলো একনজর দেখি। সাথে আরও কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তা করি-
সারসংক্ষেপ
১. আমার আগ্রহ মূলত যে বিষয়টিতে কেন্দ্রীভূত-
……………. লোকজন ……………. তথ্য ……………. বস্তুসামগ্রী ……………. সৃজনশীলতা
২. আমার দক্ষতা বা সামর্থ্য মূলত যে বিষয়টিতে কেন্দ্রীভূত-
লোকজন
তথ্য
বস্তুসামগ্রী
সৃজনশীলতা
৩. আমার ব্যক্তিত্বে যে বৈশিষ্ট্যের প্রাধান্য রয়েছে-
লোকজন
তথ্য
বস্তুসামগ্রী
সৃজনশীলতা
৪. উপরের প্রতিটি থেকে মোট-
……………. লোকজন ……………. তথ্য ……………. বস্তুসামগ্রী ……………. সৃজনশীলতা
৫. আমার পেশা নির্বাচনে যে ৩টি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—
ক. ………………………………………………………
খ. ………………………………………………………
গ. ………………………………………………………
৬. এসব কিছু বিবেচনায় আমার কাছে যে পেশা বা কাজগুলো সম্পর্কযুক্ত মনে হয় সেগুলো হলো (তালিকা থেকে নির্বাচন করা যেতে পারে) –
…………………….. …………………….. ………………………..
৭. বিদ্যালয়ের যে বিষয়গুলো (subject) আমার এ পেশা/কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ-
…………………….. …………………….. ………………………..
৮. এজন্য আমার যে সকল দক্ষতা অর্জন ও উন্নয়ন করা প্রয়োজন—
…………………….. …………………….. ………………………..
ভালো করে চিন্তা করে বের কর তোমার কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষার পথটি কেমন হবে । এজন্য নিচের ছবিটি ব্যবহার করতে পারো।
প্রয়োজন হলে একাধিক স্বপ্নের পেশা নির্বাচন করে একাধিক পথের নকশা তৈরি করতে পারো। এটিও তোমার পোর্টফোলিওতে যুক্ত করো।
আরও দেখুন :