আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় কেন প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজ নিজে করব
Table of Contents
কেন প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজ নিজে করব
আমাদের প্রত্যেকের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজ থাকে। সাধারণত আমরা নিজেরাই এ কাজগুলো করে থাকি । তবে অনেকেই আছে যারা নিজের কাজ নিজে করে না বা করতে চায় না। অথচ তোমরা একটু ভেবে দেখলে বুঝবে কাজ করার মধ্যে অনেক আনন্দ । বিখ্যাত ব্যক্তিরাও তাদের নিজেদের কাজ নিজেরাই করতেন। অন্যেরা করে দিতে চাইলেও তারা তা করতে দিতেন না । নিজের কাজ নিজে করলে গুছিয়ে কাজ করা যায়, সময় বাঁচে, অর্থের সাশ্রয় হয় ও কাজ সুন্দর হয় ।
নিজের কাজ অন্যে করলে তার গুরুত্ব কমে যায়। তাছাড়া কাজ করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। আমরা যদি প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজ নিজেই করি তাহলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন :
কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়ে
প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজটি নিজে করলে কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও আগ্রহ বেড়ে যাবে । নিজের কাজ নিজে করতে করতে কাজগুলোর প্রতি তোমার এক ধরনের ভালোলাগা তৈরি হবে। এর মাধ্যমে কাজ বা অন্যদের কাজের প্রতি তোমার শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে । তখন আর কোনো কাজকে হীন বলে মনে হবে না ।
আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায়
নিজের কাজ নিজে করলে কাজ করতে করতে একসময় কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে নিজের প্রতি তোমার আত্মবিশ্বাস জন্মাবে এবং যেকোনো কাজে আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে। অন্যকে দিয়ে কাজ করালে তুমি এই সুযোগ পাবে না এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে ।
কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পায়
নিজের কাজ নিজে করলে কাজের প্রতি ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হবে এবং নিজেকে পরিবার বা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একজন বলে মনে হবে । তুমি যখন নিজেই নিজের কাজ করবে তখন নিজের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের প্রতি কর্তব্য পালন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে তোমার আগ্রহ তৈরি হবে ।
সমস্যা সমাধান করা যায়
মাঝে মাঝে দেখা যায় হঠাৎ কোনো সমস্যার কারণে পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকতে পারেন না । তখন নিজের কাজসহ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করার প্রয়োজন হয় । সবসময় নিজের কাজ নিজে করার অভিজ্ঞতা থাকলে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করতে কোনো অসুবিধা হয় না এবং যেকোনো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয় ।
নেতৃত্বের গুণ বৃদ্ধি পায়
নিজের কাজ নিজে করতে করতে একসময় নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হবে । যখন তুমি নিজের কাজ নিজে করবে তখন কাজ করার বিভিন্ন কৌশল তোমার জানা থাকবে এবং এর মাধ্যমে তুমি প্রয়োজনীয় মুহূর্তে অন্যকে দিয়ে কাজ করাতে পারবে। তাছাড়া বিভিন্ন কাজ করার ক্ষেত্রে ছোট ভাই-বোনসহ অন্যদেরকেও তোমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পরামর্শ দিতে পারবে ।
শরীর ও মন ভালো থাকে
কাজ করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে । কারণ কাজ করার মাধ্যমে শরীরের মাংসপেশিগুলোর সঞ্চালন হয় ও শরীরের ব্যায়াম হয়। প্রতিদিন কাজ করার কারণে শরীর ভালো থাকলে খোশমেজাজে কাজ করা সম্ভব হয়, তখন মনও প্রফুল্ল থাকে । নিজের কাজ নিজে করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো রাখা সম্ভব হয় ।
সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটে
কাজ করতে করতে মানুষ সময় বাঁচিয়ে কম পরিশ্রমে কাজ করার অনেক উপায় খুঁজে বের করে । সবসময় চেষ্টা করে নতুন কিছু উদ্ভাবন করার । যেমন: অধিকতর সহজ ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে কাজ করা, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করার নিত্য-নতুন পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবন করা এবং অতিরিক্ত, বাতিলকৃত ও ফেলনা জিনিস দিয়ে ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করা ইত্যাদি । নিজের কাজ নিজে করলে নতুন কিছু করার স্পৃহা তৈরি হবে এবং এর মাধ্যমে তোমার সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটবে ।

সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়
যেকোনো কাজ করার ক্ষেত্রে সহনশীলতা ও ধৈর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারলে, কাজের ফলাফল নিজের অনুকূলে না এলে অথবা কাজে ভুল হলে অনেক সময় মেজাজ বিগড়ে যায় । অনেকে সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । অথচ কাজে সফল হওয়ার জন্য সহনশীল হওয়া অনেক জরুরি । নিয়মিত কাজ করলে কাজের অভ্যাস, ভুল, বারবার চেষ্টা করা এবং কাজের প্রাপ্তির মাধ্যমে মানুষ সহনশীলতার শিক্ষা পায় । সুতরাং দেখা যাচ্ছে নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে সহনশীলতার শক্তি অর্জন করা সম্ভব ।
অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়
কাজ করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মূল্য অনেক । সমাজে যে যত বেশি অভিজ্ঞ এবং দক্ষ সে তত নিপুণভাবে কাজ সম্পাদন করতে পারে । শুধুমাত্র কাজ করার মাধ্যমেই অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন সম্ভব এবং যে যত বেশি কাজ করে সে তত বেশি অভিজ্ঞ ও দক্ষ হয়ে উঠে । নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে তোমার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং যেকোনো কাজ দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে সক্ষম হবে ।
মননশীলতা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে
জন্মের পর থেকেই প্রত্যেক মানুষ এক-একটি আলাদা সত্তা হিসেবে গড়ে উঠে। প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও মনোবৃত্তি আছে । বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ব্যক্তিসত্তা ও মনন পরিবর্তিত এবং পরিশীলিত হতে থাকে । মানুষের কাজের মধ্যে তার ব্যক্তিত্ব, মননশীলতা ও রুচিবোধের পরিচয় পাওয়া যায় । নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে মননশীলতা ও ব্যক্তিসত্তার বিকাশ অধিকতর সহজ হয় ।
কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায় ও কর্মঠ হওয়া যায়
কাজ করতে করতে কাজের প্রতি মানুষের প্রবল আগ্রহ জন্মায় । কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা তৈরি হওয়ায় যেকোনো কাজ তারা দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে ফেলে। কাজের প্রতি আগ্রহ থাকলে সবসময় কর্মচঞ্চল ও যেকোনো কাজে সদা তৎপর থাকা সম্ভব হয় । নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে কর্মঠ ও কর্মতৎপর হওয়া যায় ।
অলসতা দূর হয়
কাজ করার মাধ্যমে মানুষের অলসতা দূর হয় । অলসতা একধরনের রোগ, যা মানুষকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে, মনোবলকে নিঃশেষ করে দেয় । কাজ না করার কারণে মানুষের উপর আলস্য ভর করে এবং একান্ত প্রয়োজনীয় মুহূর্তেও তারা কোনো কাজ করতে সক্ষম হয় না বা করতে পারে না । নিজের কাজ নিজে করলে অলসতা দূর হয় এবং কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায় ।
ভয়, লজ্জা ও হীনমন্যতা দূর হয়
কাজ করার মাধ্যমে কাজের প্রতি মানুষের ভয়, লজ্জা ও হীনমন্যতা দূর হয় । এমন অনেক মানুষ আছে যারা কাজ করতে ভয় পায় এবং লজ্জা পায় । আবার অনেকে আছে যারা কাজ করতে গিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে, তাদের মধ্যে সারাক্ষণ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এই মনোভাব কাজ করে। নিজের কাজ নিজে করলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় ।
কাজের প্রতি যদি কারো কোনোরূপ ভীতি থেকে থাকে কাজ করার মাধ্যমে সেই ভীতি দূর হয়ে যায় । এছাড়াও নিজের কাজ নিজে করাতে অসম্মানের কিছু নেই বরং তা গৌরবের । সেজন্য নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে লজ্জা এবং হীনমন্যতাও দূর হয় ।
আরও দেখুন :