আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বেদে বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
বেদে বাংলাদেশের পেশাজীবী
বেদে একটি যাযাবর সম্প্রদায়। এদের ভাসমান সম্প্রদায়ও বলা হয়। প্রাচীন বাংলায় বেদে সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল। বর্তমানেও এঁদের শহরে-গ্রামে-গঞ্জে দেখা যায়। প্রাচীনকালে বাংলার নদী-নালা-বিল পানিতে ভরপুর থাকতো। নৌকায় বেদের দল এসব নদী-নালা- খাল-বিল বেয়ে বাংলার গ্রামে গ্রামে যেতো।
নৌকায় বেদেদের বাস নৌকাতেই তাদের ঘর সংসার। ভাসমান এদের জীবন। নৌকার বহর নিয়ে এরা এক অঞ্চল থেকে আর এক অঞ্চলে যেতে আস্তানা গাড়তো। এক এক অঞ্চলে কিছুদিন থেকে আবার ছুটতো অন্য অঞ্চলে। এরা এক স্থানে স্থায়ীভাবে বাস করে না। ঘাটে ঘাটে, বন্দরে, গঞ্জে এদের অবস্থান। নিম্ন ও অশুদ্ধ সম্প্রদায়ের লোক বেদেরা।
এরা নদীর দেবতা ‘বদরের’ পূজা করে। বেদেরা ঝাড়-ফুক করে। তাবিজ-কবজ দেয়। পুরুষ ও মেয়ে বেদে সাপুড়ে হিসেবেও কাজ করে। এরা বিভিন্ন অসুখের জন্য গাছ-গাছড়া, শিকড়, শিঙ্গা ইত্যাদি ব্যবহার করে।
এ বেদেরা বিশেষ পদ্ধতিতে বাতের চিকিৎসা করে। এরা শিঙ্গা লাগিয়ে কাপিং পদ্ধতিতে বাতের চিকিৎসা করে। বাতের স্থানের চামড়া ছিদ্র করার জন্য কাকিলা মাছের ধারাল দাঁত এবং গরুর শিং ব্যবহার করে। বেদেরা জনসাধারণকে বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির, কলা-কৌশল দেখায়। বানর—ভালুক নাচায়। বেদেরা শিকারে ও পাখি মারায় দক্ষ।

বেদেরা শহরের ও গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের কথা/বার্তা, ফন্দি-ফিকির এবং কলা-কৌশল দেখিয়ে অর্থ আদায় করে। অনেক সময় গ্রাম ও শহরের সাদাসিদে মহিলাদের ফাঁকি দিয়ে ফাঁক বুঝে বাসা বাড়ি থেকে চুরি-অপহরণও করে থাকে। এভাবে তারা তাদের রোজগার করে থাকে। নৌকায় এদের রান্না-বান্না, সন্তান প্রতিপালন ও ঘর গৃহস্থালীর কাজ হয়ে থাকে।
ডালায় চুড়ি, অলংকারের পসরা সাজিয়ে মাথায় নিয়ে গ্রাম-গ্রামান্তরে বিকিকিনি করে বেড়ায়। মেয়েরা শিশু সন্তানকে ঝোলায় বসিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে বহন করে। বেদেরা নিজ গোত্রে বিয়ে করে। নারী বেদেরা বেশি কর্মঠ। এদের দলে থাকে সর্দার।
দলের সর্দারকে সবাই মান্য করে। দলের সর্দারের নির্দেশে তাদের চলতে হয়। দলের সমস্যা দেখা দিলে সর্দার সে বিষয়ে মিমাংসা করে দেয়। বেদেদের দলগত কিছু রীতি-নীতি, নিয়ম- কানুন আছে। সবাইকে এ রীতি-নীতি, নিয়ম-কানুন মেলে চলতে হয়।
এ রীতি-নীতি অমান্য করলে তাকে দলচ্যুত করা হয় অথবা কঠিন শাস্তি দেয়া হয়। বেদেরা বেশ সাহসী হয়। সামাজিক বিবর্তন এবং শিক্ষা বিস্তারের ফলে গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলোকে বেদেরা আর ফাঁদে ফেলতে পারে না। ফলে, বেদেদের কাজ অনেকটা সীমিত হয়ে পড়ছে।
আরও দেখুনঃ