বৈদ্য বাংলাদেশের পেশাজীবী

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বৈদ্য বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।

বৈদ্য বাংলাদেশের পেশাজীবী

প্রাচীন বাংলায় বৈদ্যরা সুপরিচিত। বাংলার প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় বৈদ্য/বদ্যিদের অবদান স্মরণীয়। প্রাচীনকালে যখন বাংলায় অ্যালোপেথিক বা হোমিওপেথিক চিকিৎসা বিস্তার লাভকরেনি তখন বদ্যিদের চিকিৎসাই এদেশের মানুষের প্রধান অবলম্বন ছিল। প্রাচীন বাংলার সেন-পাল-মোগল-ব্রিটিশ শাসন আমল পর্যন্ত বৈদ্যদের চিকিৎসা গ্রাম বাংলায় ব্যাপক বিস্তার লাভ করে।

 

বৈদ্য বাংলাদেশের পেশাজীবী

সে সময় রাজা-বাদশা-জমিদার সুবেদার জায়গীরদের চিকিৎসার জন্য বৈদ্যের ডাক পড়ত। বাংলা সাহিত্যে রাজবৈদ্যের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য বৈদ্যদের স্মরণাপন্ন হত। অনেক সময় বৈদ্যরা দিনের পর দিন রোগীর বাসস্থানে অবস্থান করে চিকিৎসাকার্য সম্পাদন করত।

রাজা-বাদশা- জমিদারদের সফল চিকিৎসা সম্পন্ন করতে পারলে রাজবৈদ্যদের ভাগ্যে জুটত উপঢৌকন। বৈদ্যদের কাজ রোগীর রোগ নির্ণয় করা এবং উপসর্গ বুঝে ঔষধ প্রদান করা। বৈদ্য উচ্চবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। বৈদ্যদের পেশা কবিরাজী চিকিৎসা করান। মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বৈদ্যদের সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন –

বৈদ্যক জনের তত্ত্ব গুপসেন দাসদত্ত,কর আদি বৈসে কলস্থান

মুনিকায় করে যশ কেহো প্রয়োগের বশ, নানা তন্ত্র করয়ে বাখান।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

রামনন্দ যতি তাঁর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যে এবং ঘনরাম চক্রবর্তীর ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্যে বৈদ্য শ্রেণীর উল্লেখ করেছেন। ভারত চন্দ্রের রচিত ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে বৈদ্যদের পেশার পরিচয় পাওয়া যায়।

বৈদ্য দেখে নাড়ী ধরি কহে ব্যধিভেদ

চিকিৎসা করয়ে পড়ে কাব্য আয়ুর্বেদ।

‘বাঙালির ইতিহাস’ গ্রন্থে নীহার রঞ্জন রায় বৈদ্যদের সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন –

পাল আমলের সুদীর্ঘ চারিশত বৎসরের মধ্যে ভারতবর্ষের অন্যত্র বৈদ্যবংশও পৃথক উপবর্ণ হিসেবে গড়িয়া উঠিয়াছে। প্রাচীন স্মৃতি গ্রন্থাদিতে বর্ণ হিসাবে বৈদ্যের উল্লেখ নাই ; অর্বচীন স্মৃতি গ্রন্থে চিকিৎসা বৃত্তিধারী লোকদের বলা হইয়াছে বৈদ্যক। বৃহদ্ধম পুরানে বৈদ্য ও অন্বষ্ঠ সমার্থক বলিয়া ধরা হয়েছে।

মুকুন্দরাম সবচেয়ে চমকপ্রদ বর্ণনা দিয়েছেন বৈদ্যদের সম্পর্কে। তিনি বলেন, “তারা ছিল গুপ্ত, সেন, দাস, দত্ত প্রভৃতি। তারা নগরের কুলস্থানের একপ্রান্তে বসবাস করেন। তাদের কেহ কেহ মন্ত্র চিকিৎসায় খ্যাতি অর্জন করেছেন। তারা প্রভাতে ঘুম থেকে উঠেন এবং কপালের অগ্রভাগে তিলক আঁকেন।

তারা মাথার চতুষ্পার্শ্ব একখণ্ড কাপড় দিয়ে ঢাকেন এবং চিকন ধুতি পরিধান করেন ও বোগলে পুঁথি (তালপাতার গ্রন্থ) নিয়ে নগরের বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে বেড়ান। রোগ যদি নিরাময়যোগ্য হয়, তাহলে বৈদ্য রোগ আরোগ্যের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু রোগ দীর্ঘ চিকিৎসার পরও যদি নিরারোগ্য হয় তাহলে তিনি প্রস্থানের মতলব আটেন এবং নানা ছলছুতায় চলে যাবার অনুমতি চান।

 

বৈদ্য বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

বৈদ্যরা তাদের পেশার উন্নতি করেন এবং চিকিৎসার খ্যাতি অর্জন করেন। ফলে তারা মুসলমান শাসক ও অভিজাত ব্যক্তিদের দ্বারা চিকিৎসা কার্যে নিয়োজিত হন। বৈদ্য অনন্তসেন ও মুকুন্দদাস যথাক্রমে বারবকশাহ ও হোসেন শাহের রাজ চিকিৎসক ছিলেন।

মীর্জা নাথনের পিতার পীড়ায় সকল চিকিৎসক ব্যর্থ হলে একজন বৈদ্য তাঁকে নিরাময় করেন। আধুনিক চিকিৎসা প্রবর্তনের ফলে বৈদ্যদের চিকিৎসা বিলুপ্তির পথে। শিক্ষার অগ্রগতির সাথে মানুষ এখন আধুনিক অ্যালোপেথিক চিকিৎসা অবলম্বন করছে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment