অনুভূতি, মনোভাব ও আচরণ এবং ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন

অনুভূতি, মনোভাব ও আচরণ এবং ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “ক্যারিয়ার গঠনে সংযোগ স্থাপন ও আচরণ” ইউনিট ৩ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

অনুভূতি, মনোভাব ও আচরণ এবং ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন

 

প্রত্যেক মানুষই চায় সার্থক জীবনের অধিকারী হতে। তাই সে ক্যারিয়ার গঠন করতে চায়। মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, তার চাকরি ও পেশা এবং পারিপার্শ্বিক অন্যান্য বহুক্ষেত্র থেকে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা ইত্যাদির সমন্বয়ে একটি সাধারণ উৎকর্ষ ও উন্নত অবস্থা বা রূপকে ক্যারিয়ার বলে। অনেকে মনে করেন উপযুক্ত যোগ্যতা ও দক্ষতার বিনিময়ে একটি চাকরি জোগাড় করে, ধাপে ধাপে উত্তোরত্তর পদোন্নতি হলেই জীবনের সার্থকতা আসে।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পেশাগত জীবনে ব্যক্তির সার্থকতা তো বটেই, সেইসাথে ব্যক্তি জীবনে সঞ্চিত তার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, তার দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব, তার আচরণ তার সার্থক ক্যারিয়ারসম্পন্ন জীবন গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ব্যক্তির জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে তার দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব ও আচরণ। সে অনুযায়ী অভ্যাস গড়ে ওঠে। ব্যক্তির মনোভাব, উপলদ্ধি ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে তার আচরণ গড়ে ওঠে। তাই দেখা যায়, আচরণই হল শেষ কথা। অর্থাৎ সকল কিছুর বিনিময়ে সে সুন্দর আচরণ লাভ করে। সুতরাং সুদৃঢ় ক্যারিয়ার গঠনের জন্য মানুষকে উন্নত অভ্যাস ও আচরণ গঠনে মনোযোগী হতে হয়।

 

কাজ – এক

নিচের মনোভাব ও উপলব্ধিগুলো কিরূপ আচরণ গড়ে তুলবে লিখুন।

ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন

0 অনুভূতি, মনোভাব ও আচরণ এবং ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন

অনুভূতি

অনুভূতি প্রাণীর শরীরবৃত্তীয় একটি ক্ষমতা। এই ক্ষমতা প্রাণীকে উপলব্ধি করতে সক্ষম করে। অনুভূতি এবং তার কার্যকারিতা বা ক্রিয়া, শ্রেণীভেদ এবং তার তত্ত্বীয় দিক ইত্যাদি একে অপরের সাথে বেশ ঘনিষ্টভাবে যুক্ত। আমরা এই বিষয়গুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করি যেমন, স্নায়ুবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের জ্ঞানীয় অংশ এবং উপলব্ধির দর্শন ইত্যাদি। স্নায়ুতন্ত্রের একটি বিশেষ শাখা বা অঙ্গ হল ইন্দ্ৰিয়তন্ত্র বা সংবেদনশীলতন্ত্র। প্রাণীদেহে এই তন্ত্র প্রত্যেক অনুভূতির জন্য কাজ করে। মানুষের বিভিন্নরকম অনুভূতি আছে।

এর মধ্যে দৃষ্টি, শ্রবণ, স্বাদ, গন্ধ ও স্পর্শ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের এই পাঁচটি অনুভূতিকে খুব সহজেই বাহ্যিকভাবে চিহ্নিত করা যায়। অন্যান্য অনুভূতির মধ্যে তাপমাত্রা, ব্যথা, ভারসাম্য, নড়াচড়া এবং দেহের অভ্যন্তরীণ অন্যান্য সংবেদনশীলতা বা অনুভূতিকে উল্লেখ করা যায়। অনুভূতিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, ‘অনুভূতি এক ধরনের প্রক্রিয়া যেখানে একগুচ্ছ সংবেদনশীল কোষ শারীরিক কোন বিশেষ অবস্থায় সাড়া দেয় এবং তারপর মস্তিষ্কের কোন বিশেষ অংশ বা অংশসমূহের সাথে যোগাযোগ করে। এরপর মস্তিষ্ক শারীরিক ঐ বিশেষ অবস্থার প্রতি কী প্রতিক্রিয়া হবে তা ঐ একগুচ্ছ কোষকে জানিয়ে দেয়।’

যেমন, আপনার আঙ্গুলে যদি খোঁচা লাগে তবে ব্যথা অনুভূত হয়। এটি ঘটে যখন আপনার আঙুলের স্নায়ুকোষগুচ্ছ খোঁচার বার্তা বয়ে নিয়ে মস্তিষ্কে যায় এবং মস্তিষ্ক ব্যথার অনুভূতির কথা স্নায়ুকোষকে জানিয়ে দেয়। প্রক্রিয়াটি মুহুর্তের মধ্যে ঘটে। এর ফলে আপনি ব্যথা অনুভব করেন। নিচে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের পাঁচটি অনভূতি ব্যাখ্যা করা হল ।

দৰ্শন বা দৃষ্টি

দর্শন হল চোখের ফোকাস করার ক্ষমতা। এখানে ফোকাস করা বলতে বস্তুর একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে আলো ফেলা, যেখানে আলো পড়লে বস্তুটি দেখা যাবে। কোন বস্তুর উপর যখন আলো পড়ে এবং মানুষ যদি ঐ বস্তুর দিকে তাকায়, তখন বস্তুর একটি প্রতিবিম্ব দুই চোখের রেটিনা নামক অঙ্গে তৈরি হয়। সেখানে স্নায়ুকোষ বস্তুর আকার, রং ও উজ্জলতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। এই ক্রিয়াকে আমরা দৰ্শন বলি।

দৰ্শন বা দৃষ্টি অনুভূতি, মনোভাব ও আচরণ এবং ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন

চোখ যখন দেখতে পায় না তখন আমরা তাকে অন্ধত্ব বলি। চোখের গোলকটি বিশেষ করে রেটিনা যদি নষ্ট হয়ে যায় তবে অন্ধত্ব দেখা দেয়। আবার চোখের স্নায়ুকোষ যা দর্শন অনভূতি নিয়ে মস্তিষ্কের সাথে যোগাযোগ করে, তা যদি শুকিয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তাতেও অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে ।

 

শ্রবণ বা শোনা

23 অনুভূতি, মনোভাব ও আচরণ এবং ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন

শব্দের অনুভূতিকে আমরা শ্রবণ বলি। বস্তুর কম্পন হলে বা বস্তু কাঁপলে আমরা সেই কম্পনের শব্দ শুনতে পাই। শোনা এক ধরনের যান্ত্রিক প্রক্রিয়া। বস্তু যখন কাঁপে তখন বাতাসের মাধ্যম হয়ে সেই কম্পন আমাদের কানে পৌঁছায়। আমাদের কানের অভ্যন্তরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কতগুলো হাড় পরপর সাজানো আছে। বস্তুর কম্পন আমাদের কানের পর্দাকে আঘাত করে পরে উক্ত হাড়গুলোর মধ্য দিয়ে কম্পন পরিবাহিত হয়। এর ফলে অন্তকর্ণের স্নায়ুকোষ মস্তিষ্কে বার্তা কম্পন পাঠায়। তখন আমরা শুনতে পাই।

স্বাদ

স্বাদ অনুভূতি, মনোভাব ও আচরণ এবং ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন

আমরা জিহ্বার সাহায্যে স্বাদ গ্রহণ করি। জিহ্বা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের একটি ইন্দ্রিয়। এই অনুভূতিটির বৈশিষ্ট্য হল এর সাহায্যে কোন পদার্থের স্বাদ গ্রহণ করা হয়। যেমন: খাদ্য, কোন খনিজ পদার্থ বা বিষাক্ত পদার্থ ইত্যাদি। জিহ্বার উপরিভাগে ছোট ছোট দানার মত এক ধরনের সংবেদনশীল অঙ্গ দেখা যায় যাকে স্বাদ মুকুল বা test bud বলা হয়। মানুষ এই অঙ্গের মাধ্যমেই স্বাদ গ্রহণ করে।

গন্ধ

গন্ধ অনুভূতি, মনোভাব ও আচরণ এবং ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন

গন্ধ এক প্রকার রাসায়নিক অনুভূতি। নাকের সাহায্যে আমরা গন্ধ পাই। নাকের মধ্যে শত শত স্নায়ুবিক তন্তু থাকে। এই তন্তুগুলো একটি আণুবীক্ষণিক পদার্থের সাথে আটকানো থাকে। বিভিন্ন পদার্থ থেকে যে গন্ধ বের হয় তা কম বেশি হয়ে এই স্নায়ুবিক তন্তুতে পৌছায়। গন্ধ সম্বন্ধনীয় তথ্য স্নায়ুবিক তন্ত্র হয়ে মস্তিষ্কে পৌছায়। মস্তিষ্ক যখন নির্দেশ দেয় তখন আমরা গন্ধ পাই।

স্পর্শ

ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন

আমরা শুধু গায়ের চামড়া ও লোমের সাহায্যে স্পর্শ অনুভব করি না, জিহ্বা ও গলার ভিতরেও এই অনুভূতি আছে। চামড়ায় ও জিহ্বায় স্নায়ুবিক তন্ত্র আছে। এর কার্যকারিতায় আমরা স্পর্শ অনুভব করি। আমাদের শরীরে যে চুলকানি বা পোকার কামড়ে যে চুলকানি হয় তা চামড়ার নিচে বিশেষ ধরনের স্নায়ুকোষের মাধ্যমে আমরা অনুভব করি। কেউ যদি খুব জোরে হাত ধরে তাহলে আমরা ব্যথা অনুভব করি, এর কারণ হল যত জোরে চাপ দেয়া হবে ভিতরে গভীরে তত বেশি স্নায়ুবিক তন্ত্র আলোড়িত হবে বা চাপ অনুভব করবে।

 

মনোভাব ও আচরণ

কোন বিষয় যেমন- কোন ব্যক্তি, ঘটনা, স্থান, বস্তু ইত্যাদি সম্পর্কে মানুষ যখন পক্ষে বা বিপক্ষে মতামত দেয় তখন তার মনোভাব সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অর্থাৎ মানুষ যখন কোন বিষয় সম্পর্কে তার মূল্যায়ন প্রকাশ করে তখন তার মনোভাব বোঝা যায়। এই মনোভাব ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে। যদি ইতিবাচক হয় তবে সেই মনোভাবের দ্বারা তাড়িত হয়ে কোন কাজ করে বা জীবন নির্বাহ করে।

অন্যদিকে কোন বিষয়ের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব থাকলে মানুষ বিষয়টিকে এড়িয়ে চলে। এভাবে দেখা যায়, মানুষের আচরণ গড়ে ওঠে তার মনোভাবের উপর নির্ভর করে। কেউ যদি মনে করে যে জ্ঞানী ব্যক্তি সমাজে মর্যাদাশীল, তবে নিজে সে জ্ঞানী হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করবে অর্থাৎ বেশি করে বই পড়বে ও জ্ঞান সংগ্রহ করার জন্য বা জানার জন্য সে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাবে।

কোন কোন বিষয়ের উপর মানুষের খুব জোরালো ইতিবাচক বা নেতিবাচক মনোভাব থাকতে পারে। এমন ক্ষেত্রে সে বিষয়টিকে জীবনের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত করে বা নেতিবাচক মনোভাব হলে জীবন থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়। যেমন, আপনি যদি ধূমপানকে অপছন্দ করেন তবে ধূমপান তো নিজে ত্যাগ করবেনই সেই সাথে অন্যের ধূমপানও অপছন্দ করবেন। সুতরাং ইতিবাচক মনোভাব বিষয়ের প্রতি মানুষকে মনোযোগী করে তোলে। অন্য কথায় বলা যায যে ব্যক্তিকে কোন বিষয়ে মনোযোগী করে তুলতে হলে তার প্রতি তার ইতিবাচক মনোভাব জোরালোভাবে গড়ে তুলতে হবে।

অনেক সময় মানুষ কোন কিছুর উপর তার মনোভাব ব্যাখ্যা করতে পারে না বা ঠিক বলতে পারে না। এ অবস্থায় তার আচরণ দেখে পছন্দ,আগ্রহ, মনোযোগ বা অপছন্দ পরিমাপ করা যায়। মনোভাবের তিনটি দিক দেখা যায়:

  • জ্ঞানীয়
  • আবেগিক ও
  • আচরণিক

জ্ঞানীয় মনোভাব: কোন কিছু সম্বন্ধে ব্যক্তির বিশ্বাস ও চিন্তাকে মনোভাবের জ্ঞানীয় প্রকাশ বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির মনোভাব তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক ধারণার উপর নির্ভর করে।

আবেগিক মনোভাব: কোন কিছুর উপর অনভূতি বা আবেগ মানুষ বিভিন্নভাবে প্রকাশ করে। যেমন, আপনি যদি মাকড়সাকে ভয় পান তবে মাকড়সা গায়ে উঠলে আপনি চিৎকার করে উঠবেন। চিৎকার করে ওঠা আপনার আবেগের বহিঃপ্রকাশ ।

আচরণিক মনোভাব: আমরা আগেই শুনেছি কোন বিষয়ের উপর মানুষের মনোভাব তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গঠনে সাহায্য করে। যেমন, আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন হন বা সুগঠিত স্বাস্থ্যের প্রতি অনুরাগী হন তবে আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করবেন, হাঁটবেন বা সুন্দর স্বাস্থ্য গড়ে ওঠে এমন কাজ করবেন। কিন্তু স্বাস্থ্য নষ্ট হয় এমন কাজ কখনই করবেন না। অতএব স্বাস্থ্য সচেতনতা আপনার আচরণ ও কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। এভাবে মানুষ তার মনোভাব অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়ন করে এবং প্রয়োগ করে ।

ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন

ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জানার পূর্বে ক্যারিয়ার কী তা জানা বিশেষ প্রয়োজন। আমরা ইউনিট এক এ ক্যারিয়ার সম্বন্ধে আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা জানতে পেরেছি যে, মানুষ তার ক্যারিয়ার জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে তোলে । শুধু কর্মক্ষেত্র এবং পেশাক্ষেত্র থেকে অর্জনের মধ্য দিয়েই নয়, মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের অর্জনের সমন্বিত রূপ ক্যারিয়ারের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ মানুষ সারা জীবনে যা অর্জন করে কর্ম ও পেশাজীবন এবং দৈনন্দিন জীবনেও তার প্রভাব প্রতিফলিত হয়। এভাবেই সে ধীরে ধীরে একজন ক্যারিয়ারসম্পন্ন ব্যক্তি হয়ে ওঠে।

সুতরাং দেখা যায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তির আচরণ তার কর্মকে প্রভাবান্বিত করে। সে কারণে ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তির আচরণ উন্নয়ন অত্যাবশ্যক । পেশাক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য বা চাকরি পাওয়ার জন্য মানুষের নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়। যথেষ্ট যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলে চাকরিতে বহাল থাকা যায়, এমন কি অনেক সময় পদোন্নতিও ঘটে। কিন্তু চাকরিক্ষেত্রে সুনাম বৃদ্ধি এবং উৎকর্ষ লাভের জন্য তার যোগ্যতাই যথেষ্ট নয়, তার আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশেষ ভূমিকা রাখে। কাজের ক্ষেত্রে ব্যক্তির আচরণ তার কাজের পরিবেশ তৈরি করে।

এমন পরিবেশ যেখানে সে নিজে এবং তার সহকর্মী সকলেই কাজে আনন্দ পায় ও স্বাচ্ছন্দ্য থাকতে পারে। সে কারণে পেশাক্ষেত্রে একজন কর্মীর উন্নত আচরণ বিশেষভাবে সমাদৃত হয়। আচরণ উন্নয়ন এক ধরনের মনোস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি তার পরিবেশের সাথে শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে ও আবেগিকভাবে সরাসরি ক্রিয়া করতে শেখে। এই পরিবেশ ব্যক্তির জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য। একজন ক্যারিয়ারসম্পন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ক্রিয়ার মাধ্যমে তার পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে পারে। আসুন, আমরা দেখি মানুষ কী উপায়ে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য তার আচরণ উন্নয়ন করতে পারে।

একজন আদর্শ ক্যারিয়ারসম্পন্ন ব্যক্তিকে অনুসরণ – আপনার চারপাশের জগতে একজন ক্যারিয়ারসম্পন্ন ব্যক্তির অনুসন্ধান করুন। তার সাথে অন্তরঙ্গ হওয়ার চেষ্টা করুন। তার কথাবার্তা, কথা বলার কৌশল, তার চলন, ভাবনা-চিন্তা, তার কর্ম ও কর্মকৌশল, তার মনোভাব, পছন্দ ও অপছন্দ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করুন ও অনুসরণ করুন। দেখবেন ধীরে ধীরে ক্যারিয়ার গঠনের দিকে আপনি এগিয়ে চলেছেন।

সময় সচেতনতা: একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে যে, “সময় কারও জন্যে অপেক্ষা করে না।” বাস্তবক্ষেত্রে কথাটি নি:সন্দেহে সত্য। সময় প্রতিনিয়ত গড়িয়ে চলছে, কেউ তার ব্যবহার করুক আর না করুক। কেউ যদি সময়মতো কোন কাজ না করে, পরে করবে বলে ফেলে রাখে, তবে দেখা যায় কাজ জমে কাজের পরিমাণ অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এত কাজ একসাথে করতে যেয়ে কাজের মান খারাপ হয়ে যায়। অথচ ঐ কাজ সময়ে করলে ধীরেসুস্থে ভালভাবে সম্পন্ন করা যায়। এজন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সময়মতো কোন কাজ করা একটি উত্তম অভ্যাস। ক্যারিয়ার গঠনের জন্য এ অভ্যাসটি গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন ।

আত্মবিশ্লেষণ: নিজেকে বিশ্লেষণ করুন। প্রতিনিয়ত নিজের কথাবার্তা, চালচলন, কর্মকৌশল নিজে খুব সন্তর্পণে পর্যবেক্ষণ করুন। আপনার দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করুন এবং সংশোধন করতে করতে সামনে এগিয়ে চলুন। একজন সার্থক মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য আত্মবিশ্লেষণের কোন বিকল্প নাই। নিজের ত্রুটি খুঁজে বের করা খুবই কঠিন কাজ। এ কাজ যে করতে পারে তার সম্ভাবনা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে সুঅভ্যাস গড়ে তোলা যায় এবং সুঅভ্যাস ক্যারিয়ার গঠনের অন্যতম শর্ত ।

দায়িত্বসম্পন্নতা ও কর্তব্যপরায়ণতা: মানুষের জীবনের সবক্ষেত্রেই কিছু না কিছু কাজ নির্ধারিত থাকে। সেসব কাজ সময়মতো দায়িত্ব নিয়ে করা একটি বিশেষ যোগ্যতা। যিনি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন তার কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তিনি জ্ঞানগর্ভ এবং কর্মকুশলী। জীবন চলার পথে তার সহকর্মী ও সতীর্থরা তাকে অনুসরণ করে। শুধু কাজই নয়, একজন দায়িত্বসম্পন্ন ব্যক্তি যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেন। এর অর্থ হল, তিনি যা বলেন তা সত্য এবং নির্ভরযোগ্য। আপনি যদি তার কথা মেনে চলেন তবে ভাল ফল লাভ করবেন।

দায়িত্বসম্পন্ন ব্যক্তি তার করণীয় কাজ সম্পর্কে সচেতন থাকেন। অর্থাৎ উপযুক্ত সময়ে কোন কাজটি তাকে করতে হবে এ ব্যাপারে তিনি সদা সতর্ক। দেখা যায়, মানুষ তার বিপদে আপদে কর্তব্যপরায়ণ কোন ব্যক্তির শরনাপন্ন হয়। এর কারণ হল, তিনি জানেন কখন, কী তাকে করতে হবে এবং কী উপায়ে তা করতে হবে।

পরিশ্রম করুনঃ কোন কাজকেই ছোট করে দেখা উচিত নয়। যখনই যে কাজ হাতের কাছে পাবেন, দায়িত্ব নিয়ে সে কাজটি করবেন। আপনি একা না পারেন অভিজ্ঞ ও দক্ষতাসম্পন্ন একজনের সাহায্য নিতে পারেন। তবে কাজটি অবশ্যই করবেন। এড়িয়ে যাবেন না বা পাশ কাটিয়ে যাবেন না। অর্থাৎ নিজেকে কর্মপরায়ণ ও কর্মকুশলী করে গড়ে তুলতে হবে। অলসভাবে সময় কাটাবেন না বা কোন কাজ করতে গড়িমসি করবেন না। যিনি পরিশ্রমী তার কাজ কখনও পড়ে থাকে না। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারেন বলে জীবনে তিনি সার্থক ও প্রতিষ্ঠিত হন।

কাজ – দুই

ক্যারিয়ার গঠনের জন্য ১০টি আচরণ চিহ্নিত করুন। এ আচরণগুলো কীভাবে নিজের মধ্যে গড়ে তুলবেন তা বিস্তারিত লিখুন।

 

Google news logo অনুভূতি, মনোভাব ও আচরণ এবং ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ উন্নয়ন
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

 

সারসংক্ষেপ

মানুষের মনোভাব ও অনভূতির সমন্বয়ে তার আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয়। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের যে সংবেদনশীলতা তাকে অনুভূতি বলে। সকল মানুষই এই অনুভূতিসম্পন্ন হয়, তবে মানুষের মানসিক সামর্থ বা ইচ্ছা অনুযায়ী সে দেখে, শোনে বা স্বাদ গ্রহণ করে। একই বিষয় বা বস্তু মানুষ কীভাবে দেখবে বা শুনবে তা তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ সে ইচ্ছা করলে নিজের অনুভূতি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একইভাবে মনোভাবও মানুষের পছন্দ ও মানসিক ক্ষমতার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রেও সে তার ইচ্ছা অনুযায়ী মনোভাব গড়ে তুলতে পারে। এ দুয়ের প্রভাবে ব্যক্তির আচরণ গড়ে ওঠে।

ব্যক্তি যদি তার মধ্যে ইতিবাচক আচরণ গড়ে তুলতে পারে তবে তার মধ্যে সুঅভ্যাসসমূহ জন্ম নেবে। সুঅভ্যাস বা এইসব আচরণ তাকে ক্যারিয়ারসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে। ক্যারিয়ার মানুষের সুদীর্ঘ জীবনের অর্জন ও ফসল। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে যখন তার ইতিবাচক আচরণ প্রয়োগ করে, প্রতিটি ক্ষেত্রে সে সফল হয়। ছোট ছোট সফলতা তার জীবনকে মহিমান্বিত করে তোলে। ফলে সুস্থ ও সুন্দর জীবন পরিচালনার মাধ্যমে সে ক্যারিয়ার গঠন করে।

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment