আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ব্রাহ্মণ বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
ব্রাহ্মণ বাংলাদেশের পেশাজীবী
হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মণ সুপরিচিত সম্প্রদায়। ব্রাহ্মণ উচ্চবর্ণের। সমাজ অধিপতি। শিক্ষা— আভিজাত্য-কুলীনশ্রেণী ব্রাহ্মণ সমাজ। হিন্দু সমাজে এরা পুজনীয়। ভারতীয় উপমহাদেশে আর্যদের আগমনের সাথে এদেশে বাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্ণপ্রথা ও তাদের সামাজিক স্তর নির্ধারণ শুরু হয়।
সামাজিক স্তর ও বর্ণ অনুযায়ী পেশাও নির্ধারণ করা হয়। প্রাচীন ধর্মসূত্র ও গ্রন্থ থেকে জানা যায় প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক হিন্দু সমাজ বর্ণশ্রম প্রথার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মণগণ বর্ণশ্রেষ্ঠ। ব্রাহ্মণদের মধ্যে মুখোপাধ্যায়, ব্যানার্জী, চট্টোপাধ্যায়, গাঙ্গুলি প্রভৃতি কুলশ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। কবি কঙ্কন মুকুন্দ তার ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যে বলেছেন—
কুলে শীলে নহে নিন্দ মুখটী চট্টতি বন্দ্য
কাঞ্জিলাল গাঙ্গলি ঘোষাল
ব্রাহ্মণরা শিক্ষিত এবং সামাজিকভাবে উচ্চবর্ণ হিসেবে স্বীকৃত। ভারত চন্দ্রের ‘অন্নদা মঙ্গল’ কাব্যে ব্রাহ্মণ শ্রেণী বেদপাঠ, ব্যাকরণ-অলঙ্করণ শাস্ত্র ও স্মৃতিশাস্ত্র পাঠের পরিচয় পাওয়া যায়।
ব্রাহ্মণ মণ্ডলে দেখ বেদ অধ্যায়ন
ব্যাকরণ-অলঙ্কার স্মৃতি দরশন
অশিক্ষিত বিপ্রগণ যজন যাজন পেশায় নিয়োজিত থাকত। এরা বিভিন্ন প্রকার সামাজিক আচারাদি সম্পন্ন করত। পূজা-পার্বণ, দেবার্চনা, বিবাহ, শ্রাদ্ধদিতে অংশগ্রহণ করে থাকে।

বিভিন্ন শ্রেণীর ব্রাহ্মণদের মধ্যে ‘ঘটক ব্রাহ্মণ’, জ্যোতিষ-আচার্যদের উল্লেখ পাওয়া যায়। মধ্যযুগে সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিবাহ সম্বন্ধ নির্ণয় করার কাজটি চিহ্নিত ব্ৰাহ্মণ ঘটকরাই সম্পন্ন করত। গ্রহ-নক্ষত্র পর্যালোচনা করে মানুষের ভাল-মন্দ নির্ধারণের কাজটি করত জ্যোতিষ-আচার্য।
একশ্রেণীর ব্রাহ্মণ জ্যোতিষি গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায় এবং মানুষের ভাগ্য গণনা করে তাদের জীবিকা অর্জন করত। তারা ছেলেমেয়েদের কুষ্ঠি গণনা করে থাকে। কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তার চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে ব্রাহ্মণ সমাজের একটি চিত্র দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘একটি মহল্লাকে বলা হয় কুলস্থান যেখানে রাঢ় ব্রাহ্মণগণ তাদের মন্দির ও টোল নিয়ে জীবন যাপন করতেন।
অশিক্ষিত ব্রাহ্মণরাও এখানে বসবাস করে। তারা পুরোহিত হিসেবে কাজ করে এবং পূজার আচার অনুষ্ঠানাদি শিক্ষা দেয়। তারা তাদের কপালের অগ্রভাগে চন্দন ফোঁটা বা তিলক চিহ্ন দেয়। তারা পুতুল পুজা করে এবং কাপড়ের আচলে ভিক্ষাপ্রাপ্ত চালের পুটলি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে।
তারা মিষ্টি বিক্রেতার বাড়িতে এক পয়সা মূল্যের মিষ্টি ও গোয়ালার বাড়ি থেকে পুরা একপাত্র দুধ পায়।তারা কারো কারো বাড়ি থেকে তাদের মাসিক কড়ি ও অন্যদের থেকে শুকনা মরিচ পেয়ে থাকে। পুরোহিত সে অঞ্চলের শ্রাদ্ধে বা মৃতের সৎকারে আচার-অনুষ্ঠানের কাজ করে।
আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে এখন আর বাংলায় বার মাসে তের পার্বণ অনুষ্ঠিত হয় না। আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের ফলে ধর্ম বিশ্বাসে শিথিলতা এসেছে। ফলে ব্রাহ্মণদের কাজ হ্রাস পেয়েছে।
আরও দেখুনঃ