আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় মনোযোগসহ প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজ নিজে করব
মনোযোগসহ প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজ নিজে করব
মনোযোগসহ প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজ নিজে করব
মুশফিকের বয়স ১৪ বছর । মুশফিক একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে । তারা দুই ভাই-বোন । বড় বোন উপজেলার কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। মুশফিকের বাবা একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার আর মা গৃহিনি । মুশফিক বিদ্যালয়ের একজন ভালো ছাত্র । শিক্ষকেরা সবাই তাকে অনেক আদর করেন । কিন্তু নিজের পড়ালেখা ছাড়া আর কোনো কাজে তার কোনো খেয়াল নেই ।
মশারি টাঙানো, বিছানা গোছানো, পড়ার টেবিল গোছানো, স্কুলব্যাগ গোছানো, জামা-কাপড় ধোয়া সব কাজই অন্যরা করে দেয় ।
মুশফিকের মামা একজন শিক্ষক । তার মামা তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন । মামা এসে দেখেন মুশফিকের মন খুব খারাপ । সে একদম চুপচাপ, কোনো কথাই বলছে না । অন্য সময় হলে মুশফিক খুশিতে সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়াত ।
মামা মনে করলেন, হয়ত কারো সাথে অভিমান করেছে । তিনি মুশফিকের কাছে বসে আদর করে তার মন খারাপ হওয়ার কারণ জানতে চাইলেন । মুশফিক বলল, মামা আজ স্কুলে স্যারের বকুনি খেয়েছি আবার সবার সামনে অনেক লজ্জাও পেয়েছি, তাই মন খারাপ । মামা তাকে ঘটনা খুলে বলতে বললেন । মুশফিক বলতে লাগল, সকালে স্কুলে গিয়ে দেখি সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে । আমার এক বন্ধু বলল আমার প্যান্টের পেছনে নাকি অনেক ময়লা, তাই দেখে সবাই হাসাহাসি করছে ।
লজ্জায় আমার তখন কান্না পাচ্ছিল । আজ আমাদের বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখি আমার ব্যাগে কোনো কলম নেই । সারা ব্যাগ তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো কলম পেলাম না ।

কলম না থাকায় স্যার আমাকে অনেক বকুনি দিলেন । এরপর বাড়িতে চলে এলাম । বিজ্ঞান বিষয়ের স্যার বাড়ির কাজ দিয়েছেন । বিকেলে বিজ্ঞান বই খুঁজতে গিয়ে দেখি সেটি জানালার পাশে এমনভাবে রাখা যে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে ।
তাই আর পড়তে পারলাম না । এসব কারণে আমার মন খুব খারাপ । আমি এখন কী করব মামা? মামা তার সব কথা শুনে বললেন তুমি প্যান্ট ধোয়ার সময় ভালোভাবে খেয়াল করোনি কেন? তাছাড়া স্কুলব্যাগ গোছানোর সময় পড়ার টেবিল গুছিয়ে ব্যাগে কলম নিলে না কেন? মুশফিক বলল, প্যান্ট তো ধুয়েছে রহিম (কাজের লোক) আর পড়ার টেবিল এবং স্কুলব্যাগও সেই গুছিয়েছে। মামা বুঝতে পারলেন আসল সমস্যাটি কোথায় ।
তিনি তার ভাগ্নেকে বললেন, শোন নিজের কাজ নিজে করলে এসব সমস্যা হতো না । কারণ তুমি নিজে করলে কাজটি আরও ভালোভাবে করতে পারতে । এখন থেকে তোমার কাজগুলো তুমিই করবে । তাহলে আর লজ্জাও পেতে হবে না, স্যারের বকুনিও শুনতে হবে না । এখন আর মন খারাপ করে কোনো লাভ নেই । চলো একটি বিজ্ঞান বই সংগ্রহ করি । যাওয়ার আগে তোমার প্যান্টটি সাবান দিয়ে ভিজিয়ে রাখো। বাড়িতে ফিরে প্যান্ট ভালো করে ধুয়ে ফেলবে।
মুশফিক তার নিজের সমস্যাগুলো উপলব্ধি করতে পারল । এরপর থেকে সে সবসময় তার নিজের কাজগুলো নিজেই করে এবং সে কারণে তাকে আর কখনো লজ্জাও পেতে হয়নি এবং বকুনিও শুনতে হয় না ।
আরও দেখুন :