লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী কাজ করা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর “ক্যারিয়ার গঠনে সংযোগ স্থাপন ও আচরণ” ইউনিট ৩ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী কাজ করা
আধুনিক বিশ্ব পরিবর্তনের বিশ্ব। চাকরি বা কাজের ক্ষেত্র দিনে দিনে যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনই প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজের ধরনও বদলে যাচ্ছে। এখন দ্রুততার যুগ। মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে বহুদূর পথ পাড়ি দিতে পারে। পুরান ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন হচ্ছে। আগে মানুষ অল্প যোগ্যতা নিয়ে সুবিধে মত কোন পেশায় প্রবেশ করতে পারত কিন্তু আধুনিক যুগে যে কোন পেশায়ই প্রবেশ করতে চান না কেন আপনাকে অনেক বেশি যোগ্যতাধারী হয়ে উঠতে হবে। একদিকে যেমন প্রয়োজন হয় অনেক বেশি জ্ঞান তেমনই অনেক দক্ষতার প্রয়োজন হয়।
এর অন্যতম কারণ হল আধুনিক ও উন্নত দেশগুলোতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি ও কৌশল উদ্ভাবিত হচ্ছে, নতুন ব্যবসায় ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এসব পরিবর্তনের সাথে আপনি যদি খাপ খাওয়াতে চান তাহলে নিজেকে যোগ্য করতে হবে ও অল্প সময়ে কোন কাজ ভালভাবে করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাই মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি চিন্তা করতে হচ্ছে কী সে করবে এবং কেমন করে করবে। এসবের জন্য সবার আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
কাজ – এক
নিচের ছকটি পূরণ করলে আপনি আপনার অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হবেন। ফলে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে বা কী আপনি করতে চাচ্ছেন তা স্থির করতে সুবিধা হবে। প্রতিটি ঘরের প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তর লিখুন ।
লক্ষ্য নির্ধারণ
মানুষের জীবন কখনও লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যহীন হয়ে চলতে পারে না। যে কোন কাজে হাত দেয়ার আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়। লক্ষ্য স্থির না করে কোন কাজ শুরু করলে সহজেই দিকভ্রষ্ট হতে হয়। অর্থাৎ কোন পথে চলতে হবে বা কীভাবে কাজটি করতে হবে মানুষ তা বুঝে উঠতে পারে না। ফলে সম্পূর্ণ কাজটি ব্যর্থতায় পর্যবশিত। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে চাইলে আগেই লক্ষ্য স্থির করতে হবে।
আপনি চাকরি চান বা পদোন্নতি চান যেটাই হোক না কেন আপনার চাহিদা অনুযায়ী পথ চলতে হবে। চাহিদার উপর নির্ভর করে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, লিখুন কী আপনি হতে চান এবং তার জন্য আপনাকে কী করতে হবে । যেমন, আপনি যদি একজন স্কুল শিক্ষক হতে চান। তবে সেটাই হবে আপনার লক্ষ্য। এখন এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য ছোট ছোট উদ্দেশ্য লিখুন।
উদ্দেশ্য ১ – আমি ভালভাবে এস. এস. সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হব । –
উদ্দেশ্য ২ – আমি ভালভাবে এইচ. এস. সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হব ।
উদ্দেশ্য ৩ – আমি ডিগ্রি পাশ করব।
উদ্দেশ্য ৪ – আমি বি.এড ডিগ্রি নেব ইত্যাদি।
এভাবে একটি একটি করে উদ্দেশ্য পূরণ করে আপনাকে লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য আপনার সবল দিক ও দুর্বল দিক চিহ্নিত করুন এবং দুর্বল দিকগুলো সবল করে তোলার জন্য অনুশীলন করুন। যেমন, আপনার হাতের লেখা ভাল না বা আপনি মুখস্থ করতে পারেন না ইত্যাদি, এগুলো আপনার দুর্বল দিক। মনে করুন এস.এস.সি. পরীক্ষায় ভাল ফল করার জন্য আপনি আপনার হাতের লেখা ভাল করতে চান। সে জন্য একটি কর্ম পরিকল্পনা করুন । লিখুন ভাল ও সুন্দর হাতের লেখা অনুকরণের মাধ্যমে আমি আমার হাতের লেখা এক মাসের মধ্যে উন্নত করব। এবার নিচের ছক অনুযায়ী একটি রুটিন তৈরি করুন ।
এখানে নমুনা হিসেবে একটি রুটিনের অংশ দেয়া হল। আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী রুটিন তৈরি করবেন। যদি চাহিদার পরিবর্তন করতে চান তবে লক্ষ্যেরও পরিবর্তন করুন।
লক্ষ্য নির্ধারণে আত্মমূল্যায়ন
লক্ষ্য নির্ধারণ করার জন্য নিজেকে মূল্যায়ন করুন। শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবন পরিকল্পনা ও তা উন্নয়নের জন্য নিজেকে জানা ও বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নিজের পেশাক্ষেত্রে আপনার পছন্দ, রুচি, আগ্রহ, মূল্যবোধ, আপনার ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী সুবিধা অসুবিধা ইত্যাদি যত বেশি আপনি জানবেন পেশাক্ষেত্র, পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণগত প্রধান প্রধান ক্ষেত্র এবং আপনার নিজস্ব চিন্তাচেতনার সাথে শিক্ষার কোন কোন দিকের মিল আছে তত বেশি তা চিহ্নিত করতে পারবেন।
আপনার নিজস্ব গুণাগুণের বহিঃপ্রকাশ আপনাকে আত্মমূল্যায়ন করতে সহায়তা করে। যেমন:
- যে পেশার প্রতি আপনার আগ্রহ আছে সে পেশা সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ ও দায়িত্ব পালনে আপনি উৎসাহ বোধ করেন।
- কোন নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বা ব্যক্তিত্বের প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়ার উপর আপনার ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে। সেইসাথে কীভাবে আপনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বা কীভাবে আপনি তথ্য সংগঠিত করছেন বা সমস্যার সমাধান করছেন ইত্যাদি সব কিছুর উপর আপনার ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে।
- আপনার পছন্দ অপছন্দের উপর নির্ভর করে আপনার মূল্যবোধ। যেমন, আপনি অনেক অর্থ উপার্জন করতে চান এবং মানুষকে সাহায্য করতে চান, আপনি সৃজনশীল হতে চান, শিল্প পছন্দ করেন, নিরাপদ বোধ করবেন এবং নির্ভর করতে পারেন এমন একটি চাকরি আপনি চান ইত্যাদির মাধ্যমে বলা যায় আপনি মানুষটি কেমন ।
- আপনার প্রতিভা ও আপনার কর্মক্ষমতা আপনার দক্ষতাকে প্রকাশ করে ।
- যেসব কাজ করে আপনি আনন্দ পান অবসর সময়ে সেসব কাজই করেন ।
লক্ষ্য নির্বাচনে পেশা ছাড়া অন্যান্য কাজের প্রভাব নিয়ে ভাবুন
সাধারণত পেশাছাড়া প্রতিদিন আপনি অন্যান্য যেসব কাজ করেন, পেশাগত কাজের উপর তার প্রভাব পড়ে। ধরুন আপনি কোন একটি নির্দিষ্ট পেশায় প্রবেশ করবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ব্যক্তিগত জীবনে আপনি একদিকে যেমন একজন পেশাজীবী হবেন, অন্যদিকে তেমনই একজন পিতা ও একজন ছাত্র (কারণ আপনাকে পেশা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে) হয়ে আছেন। আবার আপনি সমাজের একজন প্রতিনিধিও বটে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন কাজ ও কর্তব্য পালন করতে হয়। সেক্ষেত্রে আপনি প্রধানত একজন পেশাজীবী ও পিতা।
কিন্তু বাস্তব জীবনে আপনাকে শুধুই পেশাজীবী ও পিতার ভূমিকা নয় অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের কাজের একটি সংমিশ্রণ অনুসরণ করে চলতে হয়। লক্ষ্য নির্ধারণ করার সময় আপনাকে অবশ্যই ভাবতে হবে এসব ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা কী ও কেমন। কোন পেশাগত কাজে এ ভূমিকার প্রভাব কতটা পড়বে এবং সে প্রভাব কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
অর্থাৎ জীবনের সমস্ত দায় ও কর্তব্য পালন করার পর যে পেশা আপনি নির্বাচন করতে চলেছেন সেখানে কাজ করার সুযোগ ও সুবিধা কতটুকু পাবেন। তাছাড়া সে পেশার বদৌলতে আপনি যা আয় করবেন তাতে আপনার সামাজিক জীবন নির্বাহ করতে পারবেন কিনা। বাস্তব জীবনে এটি একটি মূখ্য বিষয়।
লক্ষ্য নির্ধারণ অনুযায়ী কাজ করা
লক্ষ্য নির্ধারণ করার পর সে অনুযায়ী কাজ করতে হয় তবেই লক্ষ্য অর্জনের পথে চলা হয়। নিচে এ সংক্রান্ত কাজের বর্ণনা দেয়া হল ।
লক্ষ্য বাস্তবায়নে পরিকল্পনা করুন
আপনার পেশাগত জীবন গড়ে তুলতে সর্ব প্রথম আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে । লক্ষ্য অনুযায়ী পথ চলতে আগে পরিকল্পনা করুন। কোন পথে চলবেন, কী করবেন, কখন করবেন, এর ফলে কী পাবেন, এমন কি কোথায় কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে তাও পরিকল্পনায় রাখবেন।
পরিকল্পনায় আপনি লিখবেন কীভাবে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করতে চান, তার জন্য আপনার কী যোগ্যতা আছে, কী নেই, যা নেই তা আপনি কীভাবে অর্জন করবেন, অর্জন করতে হলে কোথায় যোগযোগ করতে হবে, অর্জন করতে কত সময় প্রয়োজন হবে, কত টাকা ব্যয় হবে, কেন আপনি এই নির্দিষ্ট পেশাটি পছন্দ করছেন (যদি কোন পেশায় প্রবেশ করবেন বলে স্থির করে থাকেন।
যেমন আপনি স্থির করেছেন আপনি শিক্ষক হবেন।), আর কোন বিকল্প আছে কিনা ইত্যাদি। পেশাগত পরিকল্পনার কাজটি সম্পূর্ণ আপনার নিজের। কারণ কোন কোন বিষয় এ পরিকল্পনায় থাকবে সে ব্যাপারটি আপনিই ভাল জানেন। এজন্য পরিকল্পনা আপনি নিজে করুন এবং পেশাগত জীবনে প্রবেশের জন্য কী কী শিক্ষাগত ও প্রশিক্ষণগত যোগ্যতা আপনার প্রয়োজন হবে তা পরিকল্পনায় রাখুন ।
এ ব্যাপারে একজন পরামর্শদাতা আপনাকে ভাল সাহায্য করতে পারবেন। পরামর্শদাতা বা একজন নির্দেশক আপনাকে যেসব বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন তা নিচে লেখা হল
- আপনি কীভাবে পরিকল্পনাটি করবেন সে সম্মন্ধে তিনি বলতে পারবেন।
- যেসব তথ্য আপনার প্রয়োজন তা আপনি কোথায় পাবেন তার নির্দেশনা তিনি দিতে পারবেন।
- কোথাও কোন বাধা আসলে তা কীভাবে লঙ্ঘন করবেন বা পার হবেন সে কথাও তিনি বলতে পারবেন।
- আপনার বর্তমান দীর্ঘ মেয়াদী শিক্ষা ও পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কীভাবে একসাথে বা পৃথকভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন তার দিকনির্দেশনা তিনি দিতে পারবেন।
মনে রাখবেন আপনার পেশাগত জীবনে প্রবেশ বা সে জীবন সম্বন্ধে অন্য যে কোন সিদ্ধান্ত সব সময় আপনাকেই নিতে হবে এবং লক্ষ্যে পৌছবার সকল উদ্যোগও আপনাকে নিতে হবে। আপনার লক্ষ্যকে সুনিয়ন্ত্রিত রাখা এবং তা সঠিক পথে পরিচালিত করা আপনার দায়িত্ব ।
প্রশিক্ষণ
সাধারণভাবে মানসম্মত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যকর ব্যবস্থা। কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ পদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ব্যক্তিগত, দলীয় বা সমন্বিত উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষক একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের মত। তিনি তার সহকর্মী বা অধস্তনদের উন্নতিতে সহায়তা করেন। আপনি কোন পেশায় প্রবেশ করতে যাচ্ছেন বা কোন পদের জন্য নিজেকে তৈরি করতে চাচ্ছেন তা আপনি স্থির করেছেন। আভিজ্ঞ পরামর্শদাতা আপনাকে বলতে পারবে আপনার কী কী বা কোন ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রয়োজন ।
সে অনুযায়ী আপনি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নির্বাচন করবেন। প্রশিক্ষক আপনার বর্তমান যোগ্যতা কোন ক্ষেত্রে কতটা আছে তা জেনে নেবেন এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। অর্থাৎ আপনার জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ দেবেন । প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর আপনি একজন যোগ্য প্রার্থী বলে বিবেচিত হবেন।
পেশাগত ও আনুসঙ্গিক কাজ
পেশাজীবনে প্রবেশ করার পূর্বে সাধারণত আমরা পেশার জন্য মূখ্য ও প্রয়োজনীয় কাজ অনুশীলন করে থাকি। অন্যদিকে পেশাক্ষেত্রে প্রবেশের পরেও যে কোন একটি পদের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করি। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট পেশায় বহু লোক বহু রকম কাজ করে। নির্দিষ্ট পেশার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় ঐসব কাজেও আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সেজন্য সবার আগে লক্ষ্য স্থির করা প্রযোজন। অর্থাৎ আপনি কোন পেশায় প্রবেশ করতে চান অথবা কোন পেশার অন্তর্ভুক্ত উচ্চতর কোন পদে উন্নীত হতে চান। যেটিই হোক না কেন ।
- পারিপার্শিক অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের কাজের প্রতি নজর দিতে হবে।
- এক ধরনের দক্ষতা থাকা কখনই কাম্য নয়। ঘুরে ঘুরে প্রতি কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ জন্মাতে হবে এবং সেকাজে দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
- আপনি আপনার ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) বা সুপারভাইজারের (তত্বাবধায়ক) সাথে কথা বলতে পারেন। আপনি তাকে আপনার আগ্রহের কথা জানাতে পারেন ।
- অন্য পদে যিনি আছেন তার কাছ থেকে কাজটি শিখতে তার শরণাপন্ন হতে পারেন ।
- সর্বোপরি যে যে কাজে দক্ষ আপনার নিজস্ব সময়ে আপনি তার কাছ থেকে সে কাজটি শেখার জন্য সচেষ্ট থাকবেন ।
পদের বা অবস্থানের সাময়িক পরিবর্তন
কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন লোক বিভিন্ন পদে কাজ করেন। পদ অনুযায়ী তাদের কাজের ধরনও ভিন্ন। নিজের যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে হলে যে কোন কর্মীকে বিভিন্নমুখী কাজের ধরন জানতে হবে এবং সেসব কাজে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ঐসব পদে অবস্থান পরিবর্তন করা। এ পরিবর্তন সাময়িক। শুধুই ঐ পদের কাজের সাথে পরিচিত হওয়া এবং সে কাজে দক্ষতা আনা। তবে নিজে নিজে তো আর পদ পরিবর্তন করা যায় না, সেজন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। এমন অবস্থায় আপনি আপনার ম্যানেজার বা সুপারভাইজারকে বলুন যে আপনি কোন নির্দিষ্ট পদের বা একাধিক পদের কাজ শিখতে চান। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।
এখানে একথা মনে রাখতে হবে যে, পদটি অবশ্যই আপনার পদের সমমানের হতে হবে, উচ্চ কোন পদ হলে চলবে না। কর্মী হিসেবে আপনি যদি বহু রকম কাজে পারদর্শী হন, বহু গুণে গুণান্বিত হন, তবে প্রতিষ্ঠান আপনাকে সমাদর করবে। কর্তৃপক্ষ আপনাকে মূল্যায়ন করবে। অর্থাৎ আপনাকে আর্থিকভাবে বা অন্য কোনভাবে উপকৃত করবে। অথবা অল্প সময়ে আপনার পদোন্নতি হবে। সুতরাং নিজেকে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে আপনাকে একদিকে যেমন মাথা খাটাতে হবে অন্যদিকে তেমন পরিশ্রমও করতে হবে।
দক্ষতার অনুশীলন
আপনি যে পেশাটি পছন্দ করেছেন তার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা আপনার আছে কিনা তা প্রথমে অনুসন্ধান করুন। যদি না থাকে তবে তা অর্জন করার জন্য আপনাকে চেষ্টা করতে হবে আর যদি থাকে তবে তা অনুশীলনের মাধ্যমে তার মাত্রা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। দক্ষতা অনুশীলনের অন্যতম ক্ষেত্র হল প্রশিক্ষণ। যারা এ ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। অন্যদিকে যদি আপনি কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন এমন অবস্থা হয় তবে পদোন্নতির জন্য আপনার সহকর্মীর কাছ থেকে কাজ শিখে নিতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে আগেই বলেছি পেশাগত ও আনুসাঙ্গিক কাজ করে, অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে বা পদের সাময়িক পরিবর্তনের মাধ্যমেও দক্ষতার অনুশীলন করা সম্ভব। প্রশিক্ষণ নিন বা কারও সাহায্য নিন আপনি বার বার যাচাই করবেন আপনার দক্ষতা পুরোপুরি অর্জন হল কিনা। তা না হলে আপনার লক্ষ্য অর্জন হবে না ।
অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নিন
আপনার উন্নতির পথে একজন অভিজ্ঞ কর্মী বিশ্বস্ততার সাথে ভাল নির্দেশনা দিতে পারেন। চলার পথে ভাল একজন নির্দেশক পাওয়া একটি মূল্যবান সম্পদ পাওয়ার মত। আপনি নিজের চেষ্টায় যতটা না এগিয়ে যেতে পারবেন, একজন অভিজ্ঞ কর্মীর নির্দেশনা আপনাকে অনেক বেশি এগিয়ে নিতে পারে।
অবশ্য আপনার কর্মক্ষেত্রে উন্নতির জন্য আপনাকে সঠিক পরামর্শ দেয়ার ব্যাপারে তিনি দায়বদ্ধ। তিনি যে শুধু এ ব্যাপারে আপনাকে জ্ঞান দেবেন তাই নয়, আপনার কর্মক্ষেত্র কীভাবে আপনাকে সাহায্য করবে ও গ্রহণ করবে সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেবেন। সম্ভব হলে যিনি বন্ধুর মত আপনাকে সাহায্য করবেন তার সাথে যোগাযোগ করুন ও পরামর্শ নিন।
কাজ – দুই
উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা ও সে অনুযায়ী কাজ করার জন্য আপনি প্রস্তুত হয়েছেন। এর জন্য প্রথমে আপনি আপনার যে কোন একটি দুর্বলতা অনুসন্ধান করুন এবং সেটি সবল করে তোলার জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন। এ ধরনের পরিকল্পনা অনুসরণ করলে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত পেশা বা পদের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

সারসংক্ষেপ
আমরা যে কাজ করার জন্যই ইচ্ছা প্রকাশ করি না কেন তার জন্য আমাদের আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। পরে সে লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। লক্ষ্য নির্বাচনের জন্য যেমন সে লক্ষ্য আপনার উপযোগী কিনা তা যাচাই করা প্রয়োজন। কীভাবে তা যাচাই করবেন? সেজন্য আপনি নিজে কোন ধরনের মানুষ তা মূল্যায়ন করুন।
যে কাজটি করতে চাচ্ছেন সেটি কী রকম তা দেখুন, এবং সবশেষে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। লক্ষ্যপথে এগিয়ে চলতে বহু রকম কাজের মোকাবেলা করতে হয়। যেমন, সূচনায় পরিকল্পনা করতে হয়, প্রশিক্ষণ নিতে হয়, পেশাগত ও আনুসাঙ্গিক কাজে দক্ষতা অর্জন করতে হয়, দক্ষতা অর্জনের জন্য পদের সাময়িক পরিবর্তন করা যায়, অর্জিত দক্ষতার অনুশীলন করতে হয় এবং সবশেষে কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেয়া যায়।
আরও পড়ুন….