সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা বোধগঠন

সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা বোধগঠন আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “ক্যারিয়ার গঠনে সংযোগ স্থাপন ও আচরণ” ইউনিট ৩ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা বোধগঠন

মানুষ নিয়ম মেনে চলতে পছন্দ করে। কারণ যে কোন কাজে নিয়ম অনুসরণ করলে কাজটি সহজ ও পরিচিত হয়ে যায়। তখন সে সেই পরিচিত পথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। অজানাকে সবাই ভয় পায়। যাকিছু অচেনা, দুর্বোধ্য, জটিল তা মানুষ গ্রহণ করে না। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমতে যাওয়া পর্যন্ত সব কাজেই মানুষ ঘড়ি ধরে নিয়ম মেনে চলতে ভালবাসে। এভাবেই সে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন অভ্যাস গড়ে তোলে। কিন্তু সব সময় মানুষ সময় মেনে বা নিয়ম মেনে চলতে পারে না। প্রাত্যহিক জীবনের নানা ধরনের প্রতিকূলতা তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে থাকতে বাধা দেয়।

তখন যদি সে পিছিয়ে পড়ে বা অনিয়মের অভ্যাস করে তবে জীবনে অনেক জটিলতা দেখা দেয়, যা তার সুস্থ ও সাবলীল জীবনের প্রতি হুমকি স্বরূপ। সে কারণে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন পরিচালনা প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য।

 

কাজ – এক

আপনি কী নিজেকে শৃঙ্খলাবোধসম্পন্ন একজন নাগরিক মনে করেন? উত্তর যদি হাঁ হয় তবে আপনার কোন কোন গুণাবলি আপনাকে শৃঙ্খলাবোধসম্পন্ন হতে সাহায্য করেছে, নিচের তালিকা থেকে তা নির্বাচন করুন। তালিকার অতিরিক্ত কোন গুণ থাকলে তা লিখুন । উত্তর যদি না হয় তবে শৃঙ্খলাবোধসম্পন্ন একজন নাগরিক হয়ে ওঠার জন্য আপনি কীভাবে প্রচেষ্টা করবেন তা বিস্তারিত লিখুন এবং কোন কোন গুণাবলি আপনাকে এমন একজন নাগরিক হয়ে উঠতে সাহায্য করবে তার একটি তালিকা তৈরি করুন।

শৃঙ্খলাবোধসম্পন্ন নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় গুণাগুণের তালিকাঃ

কাজ এক 33 সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা বোধগঠন

সময়ানুবর্তিতা কী?

কোন কাজ সময়ের মধ্যে শুরু করা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করাকে সময়ানুবর্তিতা বলে। সময়ানুবর্তিতা এক ধরনের অভ্যাস। সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে করার অভ্যাস যদি একবার কোন মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে দেখা যায় সে সব সময় সব কাজেই সময় মেনে চলছে। যেমন, কেউ যদি কারও সাথে দেখা করতে যাওয়ার জন্যে সময় স্থির করে দেয় তবে সে ঐ সময়েই দেখা করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে।

প্রয়োজন হলে সে জন্য সে সময়ের অনেক আগে যেয়ে বসে থাকে, তবু সময় ঠিকমত অনুসরণ করে। সময়ের কাজ সময়ে করা বা সময়ানুবর্তিতা মেনে চলা একটি উন্নত ও আধুনিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্য মানুষকে অনেক সুখী ও সমৃদ্ধশালী করে তুলতে পারে।

সময়ানুবর্তিতা প্রয়োজন কেন?

সময়ানুবর্তিতা সততাকে শক্তিশালী করে। যদি আপনি কাউকে কথা দেন যে, আপনি তার সাথে বেলা ৩টায় দেখা করবেন। তার মানে আপনি তার সাথে ৩টায় দেখা করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করলেন। কিন্তু যদি আপনি ৩:১৫টায় তার সাথে দেখা করতে যান, তবে আপনি আপনার কথা রাখতে পারলেন না। অর্থাৎ প্রতিজ্ঞা ভাঙলেন। কিন্তু যদি সঠিক সময়ে দেখা করতেন, তবে তিনি মনে করতেন যে, ”না, ভদ্রলোক তার কথা রেখেছেন, তার কথার দাম আছে, তার কথার উপর আস্থা রাখা যায়।”

এটা কী আপনার সম্মান অনেক বাড়িয়ে দেয় না? সময়ানুবর্তিতা মানুষকে নির্ভরযোগ্য করে তোলে। জীবনের সব ক্ষেত্রে আপনি সময়ের কাজটি যদি সময়ে করেন মানুষ আপনার উপর নির্ভর করবে। আপনি যদি বলেন যে, অমুক সময়ে আপনি কাজটি শেষ করে রাখবেন তবে লোকে আপনার কাছে ঐ সময়েই যাবে কাজটি নেয়ার জন্যে। কারণ তারা জানে আপনার কথার মূল্য আছে। সময়ানুবর্তিতা মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। সময় মেনে চললে শুধুই যে অন্য মানুষ আপনার উপর নির্ভর করবে তা নয়, আপনি নিজেও আপনার নিজের উপর নির্ভর করতে শিখবেন।

অর্থাৎ আপনার নিজের উপর বিশ্বাস বেড়ে যাবে। কোন কাজ হাতে নিয়ে আপনি বলে দিতে পারবেন যে, কাজটি করতে আপনার কত সময় লাগবে বা কত সময় আপনি নেবেন । সময়ানুবর্তিতা নিজেকে চিনতে সাহায্য করে। মনে করুন আপনার নিজের জন্য কিছু সময় দরকার। নির্দিষ্ট কোন কাজ শেষে আপনি পর্যাপ্ত সময় নিজের জন্যে রাখতে পারবেন, যদি সময়ের কাজটি সময়ে করেন। অর্থাৎ আপনি পূর্ব থেকে বলে দিতে পারেন যে, অমুক সময়টি আপনি নিজের জন্য রাখবেন । সময়ানুবর্তিতা মানুষকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে তোলে। সময়ানুবর্তী মানুষ প্রতি কাজেই সময় মেপে চলে।

নির্ধারিত সময়ে তার কাজ শেষ হয়ে যায়। ফলে বাকী কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে থাকে। সুশৃঙ্খলভাবে সে প্রতিটি কাজ করতে পারে । তাড়াহুড়োর প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া তাড়াহুড়োয় কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সময়ানুবর্তিতা মানুষকে বিনয়ী করে তোলে। মানুষ যখন কাজের চাপে নিজেকে বিশৃঙ্খল করে রাখে তখনই সে অন্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু সুশৃঙ্খল মানুষ শান্তিপ্রিয় হয়, অন্যের সাথে সে ভাল ব্যবহার করে । কথায় বলে সময় অর্থের সমতুল্য। হাতে যদি পর্যাপ্ত সময় থাকে তবে আরও বেশি অর্থোপার্জনে সে সময় ব্যয় করা যায়।

যেমন, আপনি আপনার অফিসের কাজ যথাসময়ে শেষ করলেন এবং নির্ধারিত সময়ে মুক্তমনে বাড়ি ফিরে এলেন। এ সময় আপনার মানসিক কোন চাপ নেই। আপনি ঘরে বসে অন্য কোন কাজ করে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এভাবে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনে সুখী ও সুস্থ একটি পরিবার গড়ে তুলতে পারেন।

 

Office Workers 4 সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা বোধগঠন

 

সময়ানুবর্তী হবেন কীভাবে ?

অফিসে বা কাজের কোন জায়গায় দেরী করে উপিস্থিত হলে অন্যের নানারকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কেন দেরী হল? কী হয়েছে? কোথায় গিয়েছিলেন? ইত্যাদি। তা আপনার জন্যে লজ্জার বিষয়। কিন্তু সময়ানুবর্তী হওয়া সহজ কথা না । তার জন্য রীতিমত প্রচেষ্টা চালাতে হয়। যদি আপনি প্রতিনিয়ত আপনার স্বভাব বা অভ্যাসের পরিবর্তন আনেন এবং সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে করার চেষ্টা করতে থাকেন তবে আপনি সফল হবেনই। আসুন দেখি, কী উপায়ে সময়ানুবর্তী হওয়া যায়।

  • সকালে কাজে বের হওয়ার সময় সাথে যা কিছু নেয়া প্রয়োজন হবে যেমন, আপনার মোবাইল ফোন, ঘড়ি, চাবি, ব্যাগ বা অন্য আর কিছু অথবা আপনার পোশাক যা আপনি পরে বেরোবেন, তা আগের দিন রাতে গুছিয়ে হাতের কাছে রাখুন ।
  • কাউকে কোন কথা বলার হলে বা সকালে কোন কাজ করতে হলে সে কাজ করতে সময় কত লাগবে তা মেপে নিয়ে ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠুন, যেন পর্যাপ্ত সময় হাতে পাওয়া যায়।
  • সকালে কী খাবেন বা কাকে কী খেতে দেবেন, তা আগের দিন রাতে ভাবুন। প্রয়োজন হলে খাবার তৈরি করে রাখুন। ফ্রিজে রাখুন বা সকালে গরম করে নিন।
  • ঘরের সকল জিনিস নির্দিষ্ট জায়গায় রাখুন। যেমন: কলম, বইখাতা, জুতো, জামাকাপড়, ব্যাগ, রান্নাঘরের জিনিসপত্র, তোয়ালে বা গামছা, আপনার বা পরিবারের অন্যান্যদের কাপড়চোপড় ইত্যাদি। যেন সেখানে হাত দিলেই নির্দিষ্ট জিনিসটি পাওয়া যায়। সারা ঘর ভরে বিভিন্ন জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখবেন না।
  • কাজের জায়গায় পৌছে যেন কৈফিয়ত দিতে না হয়, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম ছিল বা সকালে বৃষ্টি হচ্ছিল, বের হতে পারিনি ইত্যাদি। এ জন্য যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে বের হবেন। সব সময় ভাববেন ট্রাফিক জ্যাম থাকবেই বা বৃষ্টি হতেই পারে, এগুলো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, তার জন্য আপনার যেন দেরী না হয়ে যায়।
  • নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে কোন জায়গায় আপনি নির্ধারিত সময়ের অন্তত ১৫ মিনিট আগে উপস্থিত হবেন, তা সে যতই বাধা আসুক না কেন। সেইমত নিজেকে প্রস্তুত করুন এবং কাজ করুন।
  • অনেক সময় নতুন কোন জায়গায় যেতে কত সময় লাগবে তা ধারণায় থাকে না। সেক্ষেত্রে পূর্বে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন কত সময় লাগবে বা কীভাবে যাবেন ইত্যাদি।
  • ইংরেজীতে একটি কথা আছে, Early to bed and early to rise, Makes a man healthy, wealthy and wise. অনেকেই আছেন যারা অনেক রাতে ঘুমাতে যান, ফলে সকালে উঠতে দেরী হয়ে যায়। সুস্থ ও সুন্দর জীবন যদি চান তবে অবশ্যই রাতে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘুমুতে যাবেন এবং যত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা সম্ভব ও প্রয়োজন উঠবেন।
  • আপনার চারপাশের অনেকেই হয়তো দেরী করে তাদের কাজ শুরু করেন। যেমন, শিক্ষকদের ক্লাসে দেরী করে আসা, শিক্ষার্থীদের দেরী করে ক্লাসে ঢোকা, কর্তা মহোদয়ের কোন মিটিং দেরী করে শুরু করা, নির্ধারিত সময়ের অনেক দেরীতে বাস ছাড়া ইত্যাদি। আপনি এসব দিকে মনোযোগ দেবেন না। আপনার সময় আপনি রক্ষা করুন এবং আপনার যিনি সহযাত্রী বা সহকর্মী তাকেও সময়ানুবর্তিতা মেনে চলায় উদ্বুদ্ধ করুন।

সময়ানুবর্তিতাকে আপনি আপনার জীবনে একটি মূল্যবোধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন। আপনার পরিবারের সকলের মধ্যে এই মূল্যবোধ গড়ে তোলার জন্য প্রত্যেককে উদ্বুদ্ধ করুন।

 

শৃঙ্খলা বোধগঠন

 

নিয়মানুবর্তিতা

দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা বা মেনে চলাকে নিয়মানুবর্তিতা বলে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মেনে চলা মানুষের জীবনে এক ধরনের মূল্যবোধ। কোন প্রতিষ্ঠানে বা ঘরে প্রচলিত নিয়ম যদি সবাই একসাথে মেনে চলে তবে প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠু নিয়মে চলবে এবং তার ফলাফল হবে প্রত্যাশিত। প্রতিষ্ঠান যদি সুষ্ঠু নিয়মে চলে তবে প্রতিষ্ঠানেরই শুধু লাভ নয়, তার সাথে যারা সংশ্লিষ্ট অর্থাৎ সেখানে যারা কাজ করেন তাদের জীবনও সুখ ও ঐশ্বর্যে ভরে উঠবে।

শিশুকালে পরিবার থেকেই নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস করতে হয়। পরে মানুষ যত বড় হয় নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিষ্ঠানের মত একটি পরিবারেও যদি সবাই পারিবারিক নিয়মনীতি মেনে চলে তবে সে পরিবার সুখী ও সমৃদ্ধিশালী হয়ে ওঠে।

 

নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োজন কেন?

নিয়মানুবর্তিতা মানুষকে নিজের প্রতি আস্থাবান করে তোলে। মনে করুন, একজন লোক যেখানেই যান তিনি নিয়ম মেনে চলেন। তিনি যখন বাসে ওঠেন তখন লাইন দিয়ে দাঁড়ান, তাতে তিনি বিরক্ত হন না, বরং স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। ফলে অযথা হুড়োহুড়ি না করে নির্বিঘ্নে বাসে উঠতে পারেন এবং বসার জন্য একটি জায়গাও পান। এভাবে তিনি দেখেছেন নিয়ম মেনে চললে যা তিনি চান তা পাওয়া যায়।

নিয়মানুবর্তিতা মানুষের ভিতরে শৃঙ্খলাবোধ প্রতিষ্ঠিত করে। প্রকৃতপক্ষে নিয়মানুবর্তিতার অপর নাম শৃঙ্খলা। যে ব্যক্তি নিয়ম মেনে চলে তার জীবন সুশৃঙ্খল হয়ে উঠবেই। কারণ নিয়ম অনুসারে তিনি ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করেন। দুপুরে খাওয়ার আগে গোসল করেন, কখনই খেয়ে উঠে গোসল করেন না। সুতরাং খাদ্য হজমে তার কখনও কোন গোলমাল হয় না । যিনি নিয়ম মেনে চলেন তিনি স্বার্থহীন উদার ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন। নিয়মের বশবর্তী মানুষ নিজের সুবিধার কথা ভাবেন না। নিয়ম মেনে চলার পর তিনি যেটুকু পান সেটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকেন।

অন্যের সাথে ভাগ বাটোয়ারা করে চলার নিয়মে তিনি অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এভাবে তার চরিত্রে স্বার্থহীনতা গড়ে ওঠে। নিয়মানুবর্তী মানুষ অন্যের মুখাপেক্ষী হন না। নিয়মানুবর্তী মানুষ সময়ানুবর্তীও বটে। যেমন, একজন মানুষ যিনি প্রতিদিন সকাল ৬:০০টায় ঘুম থকে ওঠেন এবং রাত সাড়ে ১০:০০টায় ঘুমতে যান। এখানে একইসাথে তিনি নিয়ম ও সময় দুটোই মেনে চলছেন। সময় মেনে চলা নিয়মের একটি অঙ্গ। যিনি নিয়ম ও সময় দুটোই মেনে চলেন তিনি নিজের কাজ নিজেই করতে পারেন। অন্যে কখন করে দেবে সে জন্য তাকে বসে থাকতে হয় না। এভাবে তিনি সাবলম্বী হন।

নিয়মানুবর্তিতা মানুষকে সততার উপর নির্ভর করতে শেখায়। কোন কাজ নিয়মানুসারে সম্পন্ন করার অর্থ হল সততার অনুসরণ করা । কারণ কাজটি তিনি নিয়ম ভিন্ন অন্য কোন উপায়ে করেননি, যা অনিয়ম, অন্যায়। মনে করেন আপনার কর্ম প্রতিষ্ঠানে একটি নিয়ম হল প্রতিদিন সকাল ৯:০০টার মধ্যে উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা। আপনার একজন সহকর্মী প্রতিদিন দু/এক ঘণ্টা দেরী করে আসেন এবং হাজিরা খাতায় ৯:০০টার ঘরেই স্বাক্ষর করেন। তিনি শুধু অনিয়মই করেন না, অন্যায়ও করেন । দৈনন্দিন কাজে যথাযথ নিয়ম মেনে চললে কাজটি সুসম্পন্ন হয়।

কাজটি ফেলে রাখার বা জটিল অবস্থায় চলে যাওয়ার কোন ভয় থাকে না। কোন কাজে যদি অনিয়মে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়, তবে যিনি কাজটি করছেন তার মানসিক অবস্থাও জটিল ও অস্থির হয়ে ওঠে। তিনি কাজটি শেষ করার কোন পথ পান না। তখন ভিন্ন উপায়ে কোন মতে শেষ করতে হয়। এ অবস্থা তাকে স্বস্তি দেয় না। তাই সুখ ও শান্তি পেতে হলে নিয়ম অনুসরণ করা উত্তম।

সকলের মঙ্গলের জন্য নিয়ম পালন করুন। অনেক সময় দেখা যায় নিয়ম পালন করে কাজ করলে কাজে দেরী হয়ে যাচ্ছে। অনেকে সে জন্যে ভিন্ন পথে কাজ করেন। এ ব্যাপারটি কখনই প্রত্যাশিত না। কারণ সামান্য দেরী হলেও এক নিয়মে কাজ করলে সকলের মধ্যে একটি সুষম কর্মবিন্যাস তৈরি হয়। যার ফল সকলে সমানভাবে ভোগ করে। অর্থাৎ সবাই লাভবান হয় ।

 

নিয়মানুবর্তী হবেন কীভাবে ?

কোন কাজে নিয়মানুবর্তী হওয়ার পূর্বের কাজ হল কাজটির নিয়ম জানা। যেমন, আপনার অফিসে বা ব্যবসায় ক্ষেত্রে কাজ শুরু করার আগেই জেনে নিতে হবে এখানে কী কী নিয়ম ও বিধি প্রচলিত আছে। সেসব নিয়মনীতি জানুন ও অনুসরণ করুন। অথবা আপনার ঘরে শিশুদের শেখানোর জন্য ও নিয়ম পালনে অভ্যস্ত করে তোলার জন্য নিয়ম প্রবর্তন করুন।

এ ব্যাপারে গৃহের অন্যান্য সদস্য যেমন আপনার স্ত্রী/স্বামী, বয়স্ক কোন ব্যক্তি যেমন মা-বাবা বা অন্য কোন গুরুজন বা সদস্যদের সাথে মত বিনিময় করে নিয়মকানুন স্থির করুন। এমনভাবে নিয়ম প্রচলন করুন যেন প্রত্যেকেই তা পালন করতে পারে। নিয়ম পালনে কারও কোন প্রকার অসুবিধা না হয়। যেমন, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলে আপনার মায়ের শরীর খারাপ হয়। অতএব তার জন্য একটু দেরী করে ঘুম থেকে ওঠার নিয়ম প্রচলন করতে হবে।

ঘরে বা গৃহে বিভিন্ন জনের সুবিধা অনুযায়ী নিয়ম প্রচলন করা যায়, কিন্তু কর্ম প্রতিষ্ঠানে এটি সম্ভব না। এখানে সকলের জন্য এক নিয়ম প্রচলন করাই সুবিধাজনক। কর্ম প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য করা ঠিক না। এখানে সকলের জন্য এক নিয়ম থাকলে কারও মধ্যে অসন্তুষ্টি জন্ম নেয় না। বরং সকলের সাথে এক হয়ে নিয়ম পালন করার ঝোঁক দেখা যায়।

  • নিয়ম পালন করে কাজ করে নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাসটি গড়ে তুলুন।
  • নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করুন যতই অসুবিধা হোক না কেন নিয়মের বাইরে আপনি এক পাও চলবেন না ।
  • আপনার নিকটজনের মধ্যে অনেকেই আপনার সমালোচনা করতে পারেন। তাদের কথায় কান না দিয়ে, তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে আপনার পথটি সঠিক। এর ফলে আপনি যা পাবেন সেটাই আপনার লাভ। নিয়ম অনুসরণ না করলে সবটুকু ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সমাজের যেসব নিয়ম মানব কল্যাণ আনতে পারে সেদিকে নজর দিন। নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করার ফাঁকে জনসেবায় অংশ নিন ।

 

শৃঙ্খলা কী?

ব্যক্তির আচরণের নিয়ম ও বিধির অনুসরণকে শৃঙ্খলা বলে। অর্থাৎ আমরা এতক্ষণ যে নিয়মনীতি অনুসরণ নিয়ে আলোচনা করেছি তার অপর নাম শৃঙ্খলা। মানুষের মধ্যে এই শৃঙ্খলা সম্বন্ধে ধারণা জন্ম নেয়াকে শৃঙ্খলাবোধ বলে। শৃঙ্খলাবোধসম্পন্ন মানুষ নিজের আচরণ ও অনভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সে নিজের মধ্যে কোন দুর্বলতা বা অন্যায় কোন কাজকে গ্রাহ্য করে না। শৃঙ্খলাবিহীন জীবন অস্থির ও অশান্তিময়। সে কারণে শিশুকাল থেকেই মানুষকে শৃঙ্খলা শিক্ষা দেয়া দরকার।

শৃঙ্খলাবোধের প্রয়োজনীয়তা

জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ জন্ম নেয়ার প্রয়োজন আছে। ঘরে, অফিসে,মাঠে বা রাস্তায় যেখানেই আপনি থাকুন না কেন শৃঙ্খলাবোধ সব জায়গাতে কাজে লাগে। যেমন, রেফারি বাঁশি বাজালে খেলোয়াড়রা মাঠে নামে। কেউ যদি আগেই মাঠে নেমে পড়ে, তাহলে বলতে হবে তার শৃঙ্খলাবোধ নেই। অন্যদিকে অফিসের চেয়ারে পা তুলে বসা শুধু অভদ্রতাই নয়, শৃঙ্খলা বহির্ভুত কাজও বটে। আমরা দেখেছি ফুলের কুঁড়ি ফুঁটে সম্পূর্ণ ফুল হয়। প্রকৃতিতে এটা একটি শৃঙ্খলা। এভাবে সমাজে বা গৃহে সর্বত্র নির্দিষ্ট বিধি ও নিয়ম আছে যা মেনে চলতে হয়।

তবেই শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন পাওয়া যায় । নিয়মনীতির মত শৃঙ্খলাবোধও জন্ম নেয়ার জন্য শিশুকালই উৎকৃষ্ট সময়। এ সময় বাবামায়ের কাছ থেকে যে শৃঙ্খলা সে শিখবে তাই পরবর্তী বৃহৎ জীবনে তা কাজে লাগাবে। এ সময় সে শেখে পরিবারের বড়দের সম্মান করতে হয়, সব সময় সবার কাছে সত্যি কথা বলতে হয়, কোন খাবার সকলে সমান ভাগ করে খেতে হয়, সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করতে হয় ইত্যাদি। ভেবে দেখুন এ অভ্যাসগুলোই বড় হয়ে আমরা সকলে পালন করে চলি। এগুলোই শৃঙ্খলা, যা সমাজে প্রয়োগ করলে সর্বত্র শান্তি বিরাজ করতে থাকে ।

সুতরাং শান্তি কামনার প্রথম শর্ত হল শৃঙ্খলাবোধ জন্ম দেয়া। শৃঙ্খলাবোধের অভাবে মানুষ পশুর মত লক্ষ্যহীন জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। আমাদের দেশে ইদানিংকালে মানুষের ভিতর ভয়ানক অস্থিরতা কাজ করে। সর্ব স্তরের মানুষই অন্যায় ও অমঙ্গলের কাজ করতে দ্বিধা করে না, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি সবখানেই বিরাজ করছে। মানুষে মানুষে সংঘর্ষ, ঝগড়া, বিবাদ লেগেই আছে। এর প্রধান কারণ শৃঙ্খলাবোধের অভাব। শৃঙ্খলাবোধ থাকলে মানুষ নিয়ম ও নীতি মেনে সব কাজ করে। ফলে সবখানে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয় ।

 

শৃঙ্খলাবোধ জন্ম নেয়ার উপায়

অশিক্ষা শৃঙ্খলাবোধ জন্ম নেয়ার একটি প্রধান অন্তরায়। অশিক্ষিত পরিবারে কোন শৃঙ্খলা থাকে না, সেখানে শিশুরাও কোন শৃঙ্খলা শেখে না। এ ধরনের পরিবার থেকে অধিকাংশ শিশু বিদ্যালয় যায় না। ফলে বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং সেখানে যে শৃঙ্খলা শিক্ষা হয় তা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। এভাবে অধিকাংশ মানুষের যে সমাজ সেখানে শৃঙ্খলাবোধ জন্ম নেয়ার কোন সুযোগই থাকে না। তাই শৃঙ্খলাবোধ জন্ম দেয়ার জন্য মানুষকে যথার্থ শিক্ষা দিতে হবে। মানুষের যদি যথাযথ কাজ না থাকে তবে তার মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ দূর হয়ে যায়।

সে কারণে শৃঙ্খলাবোধ শুধু জন্ম নিলেই হয় না, তা প্রয়োগের জায়গা থাকতে হবে। যে শৃঙ্খলা মানুষ গৃহে বা বিদ্যালয়ে শিখবে তা ক্রমে বড় হয়ে সমাজে ও তার কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করবে। শৃঙ্খলাবোধ প্রয়োগের জায়গা না পেলে ব্যক্তি ক্রমশ: হতাশ হয়ে পড়ে এবং তার ভিতর অস্থিরতার জন্ম হয়। তখন সে ধংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়। সমাজ নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং মানুষের ভিতর শৃঙ্খলাবোধ জন্ম দিয়ে সুশৃঙ্খল সমাজ গঠন করতে হলে মানুষকে তার উপযুক্ত কাজ দিতে হবে। যা দিয়ে সে তার অমূল্য সময় কাটাবে এবং অর্থ উপার্জন করবে ও আনন্দ পাবে।

মানুষের ভিতর শৃঙ্খলাবোধ জন্মাতে হলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেশে জনসংখ্যা বেশি থাকলে স্কুল-কলেজ, হাটবাজার, অফিস আদালত সব জায়গাতেই মানুষের ভীড় লেগে থাকে। সবখানেই চীৎকার, চেঁচামেচি, হৈ হট্টোগোল শোনা যায়। কোন কাজ সুশৃঙ্খলভাবে করতে অসুবিধা হয়। দারিদ্র শৃঙ্খলাবোধ গঠনে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। মানুষ দারিদ্রের সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হলে তার মন সব সময় অস্থির থাকে। কোন কাজে শান্তি পায় না। সেখানে শৃঙ্খলা রক্ষার তো কোন প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া মানুষ দরিদ্র থাকলে শিক্ষা গ্রহণ ব্যহত হয়। আমরা আগেই জেনেছি অশিক্ষা শৃঙ্খলাহীনতার অন্যতম কারণ ।

কাজ – দুই

আপনি কীভাবে সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করে নিজের জীবনে শৃঙ্খলাবোধ গঠন করবেন তার একটি পরিকল্পনা করুন।

 

Google news logo সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা বোধগঠন
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

সারসংক্ষেপ

মানুষ যখন বৃহত্তর সমাজ তথা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে তখন তার সুঅভ্যাসগুলো কর্ম প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ এ সবই উন্নত চরিত্র গঠনের এক একটি শক্তিশালী উপাদান। এসব উপাদানের সমন্বয়ে যদি মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করা যায় তবে মানুষের দ্বারা এক সুখী সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সেখানে মানুষ নিজে সুখী হবে ও তার কর্মক্ষেত্রে শান্তি বিরাজ করবে।

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment