সংযোগ স্থাপন ও ক্যারিয়া

সংযোগ স্থাপন ও ক্যারিয়া আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “ক্যারিয়ার গঠনে সংযোগ স্থাপন ও আচরণ” ইউনিট ৩ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

সংযোগ স্থাপন ও ক্যারিয়া

মানুষ যখন চাকরি চায় অথবা তা পায়, দুই ক্ষেত্রেই পরবর্তী উন্নয়নের প্রসঙ্গটি চলে আসে। চাকরি যদি চায় তাহলে নিজেকে সেজন্য প্রস্তুত করে তুলতে হয় এবং চাকরি যদি পায় তবে সেক্ষেত্রে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করা ও পরবর্তী পর্যায়ে উন্নতি করা সব কিছুর জন্যই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক স্থাপন এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার নামান্তর।

অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রেই মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা অত্যাবশ্যক। মানুষ সামাজিক জীব। তার অন্যতম কারণ জীবনে বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মুহুর্তে মানুষকে একে অপরের উপর নির্ভর করতে হয়। পেশাগত জীবনে মানুষ ক্ষুদ্র কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে অবস্থান ও জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করে। এখানেও প্রতি পদক্ষেপে এবং অগ্রযাত্রায় তাকে পারস্পারিক সম্পর্ক রচনা ও রক্ষা করতে হয়। এভাবে দেখা যায় সামাজিক জীবনের যে স্তরই হোক না। কেন পারস্পারিক সংযোগ স্থাপন একটি অন্যতম শর্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যাকে আমরা কোন কারণেই এড়িয়ে যেতে পারি না।

 

ক্যারিয়ার ও এর বিকাশ 1 সংযোগ স্থাপন ও ক্যারিয়া

 

কাজ – এক

নিচের এ কাজটি করলে আপনি অন্য কোন ব্যক্তি বা কোন পরিস্থিতির সাথে কতটা সংযোগ রক্ষা করে চলতে পারেন তা যাচাই করতে পারবেন। নিচের বাক্যগুলোর মধ্যে কোনটি আপনার জন্য প্রযোজ্য টিক (√) চিহ্ন দিন।

কাজ এক 1 সংযোগ স্থাপন ও ক্যারিয়া

সংযোগ কী ?

সংযোগ হল একজন ব্যক্তির সাথে অন্য আর একজন ব্যক্তির বা একটি দলের সাথে অন্য আর এক দলের সম্পর্ক গড়ে তোলা। এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপনকে আমরা এক কথায় জনসংযোগও বলতে পারি। পেশাগত ক্ষেত্রে এ সম্পর্কের মাধ্যমে দুয়ের মধ্যে আদান-প্রদান ঘটে। যেমন, তথ্য বা ভাব বিনিময়, একে অপরকে পেশাগত কোন সাহায্য করা বা পেশাগত কোন উপাদান বিনিময় ইত্যাদি। এর ফলে দুইজন বা বহু ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের জাল বিন্যস্ত হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোন ক্ষেত্রে পারস্পারিক সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সুষম ব্যবস্থা তৈরি হয় যেখানে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী পরস্পরের উপর নির্ভর করে ও নিশ্চিন্তে অবস্থান করে ।

পারস্পারিক সংযোগের প্রয়োজনীয়তা

সাধারণত ব্যক্তি বা দলের স্বার্থে পারস্পারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির বা দলের অথবা দলের সাথে দলের বা ব্যক্তির সম্পর্ক গড়ে ওঠার পিছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে। আসুন এসব কারণের মধ্যে পেশাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ কী তা দেখি ।

• চাকরি খোঁজা ও পাওয়ার জন্য: একজন ব্যক্তি যখন চাকরি পাওয়ার ইচ্ছা রাখে তখন তাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হয়। বিশেষ করে ব্যক্তির যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সুবিধাজনক চাকরি কোথায় আছে তা জানতে হলে প্রতিষ্ঠানে কোন শূন্য পদ আছে কিনা তা খোঁজ করতে হয়। অথবা সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যক্তি এ ধরনের শূন্য পদের সন্ধান পেতে পারে। তবে আপনি যদি এ পদ সম্পর্কে জানতে চান আপনাকে জনসংযোগের আশ্রয় নিতে হবে। আবার চাকরি পাওয়ার জন্য ঐ পদের প্রয়োজনীয় চাহিদা ও যোগ্যতা সম্মন্ধে খোঁজখবর করতে এক বা একাধিক ব্যক্তির সাথে সংযোগ স্থাপন করতে হয়।

• চাকরি সম্বন্ধে খোঁজখবর করার জন্য : পূর্বেই বলেছি নিজেকে কোন শূন্য পদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য সেই পদ সম্পর্কে খোঁজখবর করতে হয়। এজন্য ঐ প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে সংযোগ স্থাপন করা প্রয়োজন । সংযোগ স্থাপনের সাহায্যে শুধু নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা যায় তা নয়; রবং নিজের ভিতরে ঐসব যোগ্যতা কতটা আছে তা বোঝা যায়। ফলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং পূর্ণ উদ্যোম নিয়ে চাকরি পাওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়া যায়।

• চাকরিক্ষেত্রে উৎকর্ষ ও উন্নতিলাভের জন্য: চাকরি পাওয়ার পর ঐ পদে উৎকর্ষ লাভ করার জন্য আপনাকে নিয়ত চেষ্টা করতে হবে। এর জন্য প্রতিষ্ঠানের নিচু পদ থেকে উঁচু পদ সকল ব্যক্তিবর্গের সাথে সংযোগ রক্ষা করতে হবে। এই পদের বা এর থেকে উঁচু পদের যোগ্য হয়ে উঠতে কী কী দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন, কী ধরনের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন এবং কোন কোন দ্রব্যসামগ্রী দরকার হবে তা জানার জন্য অবশ্যই জনসংযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। এমনকি এর জন্য কোন এক বা একাধিক ব্যক্তির সাহায্য ও সহযোগিতা প্রয়োজন হলে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তা লাভ করা যায়। আবার নিজের উন্নতির জন্য অনেক সময় ভিন্ন কোন প্রতিষ্ঠানের সাহায্যও প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রেও জনসংযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

সংযোগ স্থাপন ও ক্যারিয়া

 

সংযোগ স্থাপনের পূর্বে কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন ?

আপনি যদি কোন ব্যক্তি বা দলের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে চান তাহলে পূর্বে আত্মানুসন্ধান করতে হবে। এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আত্মানুসন্ধানের ফলে নিজেকে জানা যায় এবং নিজেকে মূল্যায়ন করে আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায়। অন্যের সাথে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ও গুণাগুণ আপনার মধ্যে আছে কিনা তা জানার জন্য যেসব পদক্ষেপ আপনাকে অনুসরণ করতে হবে তা হল :

• আত্মপ্রতিফলন: নিজের ভিতর কী ধরনের গুণাগুণ আছে তা যাচাই-বাছাই করে সামনে আনাই এ পদক্ষেপের প্রাথমিক কাজ। এর ফলে নির্দিষ্ট পদের জন্য আপনি কতটা যোগ্য তা বুঝতে পারবেন এবং সেইমত নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন।

• আপনি কী জানতে চান: নির্দিষ্ট পদের জন্য আবেদন করতে বা প্রতিযোগিতা করতে আপনাকে কী কী বিষয় সম্মন্ধে জানতে হবে সে সম্পর্কে আপনাকে স্থির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিষয়সমূহ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারলেই আপনার পক্ষে প্রস্তুতি নেয়া অনেক সহজ হবে।

• শক্তিশালী দিক: আপনার ভিতর যা আছে তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কোনটি তা খুঁজে বের করুন। এটির উপস্থিতি ও চর্চা আপনাকে আত্মমর্যাদাশীল ও আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে সাহায্য করবে।

• প্রস্তুতি: নিজেকে প্রস্তুত করতে হলে পর্যাপ্ত সময় দিন এবং নিজের প্রয়োজনসমূহ খুঁজে বের করতে মনোযোগী হন।

• চিহ্নিত করুন: সংযোগ স্থাপনের পূর্বে কার সাথে সংযোগ স্থাপন করতে হবে এবং কীভাবে তা করতে হবে স্থির করুন। আপনার সামর্থ্য ও যোগ্যতা সম্বন্ধে আপনি নিশ্চিত হলে সংযোগ স্থাপন সহজ হবে।

কীভাবে সংযোগ স্থাপন করা যায় ?

সংযোগ স্থাপন করতে আপনি বিভিন্ন প্রকার মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন। তবে আপনার ইচ্ছাই সব থেকে বড় কথা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি বা দল তার নিজ বা দলের প্রয়োজনে অন্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় তাকে নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে স্থির করতে হবে কোন কারণে সংযোগ স্থাপন করা দরকার এবং কী প্রকারে তা করা সম্ভব। সংযোগ স্থাপনের বিভিন্ন মাধ্যম আছে। যেমন:

সাক্ষাৎ করা: এক বা একাধিক ব্যক্তির সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। এটি একটি শক্তিশালী মাধ্যম। কারণ ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সরাসরি দেখা হলে উভয়ের চাক্ষুস মিলন হয় এবং সেইসাথে দুজনের কাছে দুজনের অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটে। ফলে তারা একে অপরের মনের ভাব বা ইচ্ছা সম্পূর্ণ জানতে পারে। সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয় ।

দূরালাপনী বা ফোন করা: সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছে নিয়ে একজন অপর জনের সাথে ফোনে কথা বলতে পারে। এ ব্যবস্থার সুবিধা এই যে, ব্যক্তি স্থানচ্যুত না হয়ে নিজের জায়গায় বসেই কথা বলতে পারেন। এতে সময়ও অনেক কম লাগে। তবে দীর্ঘ আলোচনার জন্য দূরালাপনী ব্যবস্থা তেমন সুবিধাজনক নয় ।

চিঠিপত্রের মাধ্যমে: সংযোগ স্থাপনের জন্য চিঠিপত্র বিনিময়ও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। চিঠি পোস্ট করে, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বা ব্যক্তির হাতে প্রেরণ করা যায়। চিঠিতে বক্তব্যের ভাব অনেক বিস্তৃতভাবে প্রকাশ করা যায় বটে তবে এ ব্যবস্থা অনেক সময় সাপেক্ষ। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির দূরত্ব যদি কম হয় তবে হাতে হাতে চিঠি পাঠান একটি উত্তম ব্যবস্থা ।

ই-মেইল করে: ই-মেইল সংযোগ স্থাপনের জন্য এক ধরনের ইলেকট্রনিক মেইল প্রক্রিয়া। ১৯৯৩ সাল থেকে এ প্রক্রিয়ার প্রচলন হয়েছে। এ ব্যবস্থায় একজন প্রেরক ও এক বা একাধিক গ্রাহকের মধ্যে ডিজিটাল তথ্যের আদান- প্রদান ঘটে। আধুনিক ই-মেইল প্রক্রিয়ায় তথ্য ইন্টারনেট মাধ্যমে চলাচল করে। এ প্রক্রিয়ায় আপনি যদি কোথাও ই- মেইল পাঠাতে চান তবে প্রথমে আপনার তথ্য টাইপ করে কম্পিউটারে লিখতে হবে এবং নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠাতে হবে। এ তথ্য ইন্টানেটের মাধ্যমে গ্রাহকের ঠিকানায় সংরক্ষিত হয়। গ্রাহক তার সুবিধামত সময়ে নিজ একাউন্ট খুলে এ তথ্য পড়তে পারেন এবং একই প্রক্রিয়ায় প্রেরকের কাছে তার উত্তর পাঠাতে পারেন।

কাজ – দুই

চাকরি ক্ষেত্রে আপনার অবস্থান ও আপনার যোগ্যতা এ দুয়ের অসামঞ্জস্যের প্রতি অসন্তুস্টি জানিয়ে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি লিখুন। অথবা আপনার যোগ্যতার বিচারে কোন প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে আপনাকে বহাল করার আবেদন জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি পত্র লিখুন।

 

Google news logo সংযোগ স্থাপন ও ক্যারিয়া
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

সারসংক্ষেপ

পেশাগত জীবনে প্রবেশ থেকে শুরু করে ক্রমশ: উত্তরণ পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই সংযোগ স্থাপন একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয় এবং সারাজীবন প্রয়োজনীয় গুণাবলির অনুশীলন করতে হয়। সংযোগ স্থাপন একটি অবিরত প্রক্রিয়া। ব্যক্তি কোন এক সময় তার নিজ প্রয়োজনে সংযোগ স্থাপন করল এবং পরবর্তীতে সে সম্পর্কের কোন খোঁজখবর করল না, এমন হলে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। পুণরায় সংযোগ স্থাপন করা খুবই দূরূহ কাজ। বিশেষ কিছু গুণাগুণের মাধ্যমে সংযোগ রক্ষা চলমান করতে হয়।

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment