সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ
ইংরেজিতে বলা হয়, Life is not a bed of roses অর্থাৎ জীবন পুষ্প শয্যা নয়। মানুষকে তাই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এসব সমস্যায় দুমড়ে-মুচড়ে গেলে জীবনে সফল হওয়া যায় না। মনে রাখতে হবে সমস্যা থাকবেই এবং তার সমাধানও আছে। এজন্য সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামর্থ্য সবারই থাকা প্রয়োজন। বন্ধুরা এ অধ্যায়ে আমরা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।।
সমস্যা সমাধান
জীবন চলার পথে অনেক সমস্যা আসে। এসব সমস্যা সমাধানের সামর্থ্য সবারই অজর্ন করা প্রয়োজন। এসব সমস্যা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন: পারিবারিক সমস্যা, সামাজিক সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যা এবং রাজনৈতিক সমস্যা। আবার কখনোবা দেখা দিতে পারে কর্মক্ষেত্রে সমস্যা। এসব সমস্যায় ভেঙ্গে পড়লে ক্যারিয়ার গঠন সম্ভব নয়। সমস্যায় পড়লে নিরসনের পথ খুঁজতে হবে। ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে কোন সমস্যা থেকে উত্তোরণের উপায় বের করাই হল সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ।
জীবন চলার পথে যে বাধাই আসুক না কেন ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, Fortune favours the brave. অর্থাৎ ভাগ্য সাহসী ব্যক্তির পক্ষেই থাকে। কোন কাজে কোন সমস্যা দেখা দিলে প্রথমেই কোথায় কি সমস্যা তা সনাক্ত করা প্রয়োজন। এরপর সমস্যাটি বিশ্লেষণ করত: কেন ঘটছে, কীভাবে এর সমাধান করা যায় সে বিষয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা করে সমাধানের একাধিক উপায় বের করতে হয়। এর মধ্য থেকে সঠিক ও অধিক কার্যকর সমাধানটি চিহ্নিত করে দ্রুত কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
সিদ্ধান্তের ধারণা
সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি মানসিক ও কৌশলগত প্রক্রিয়া। একটি বিশেষ অবস্থায় কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে তা স্থির করাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলে। সিদ্ধান্তকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: একক ও প্রতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত, প্রথাগত ও মৌলিক সিদ্ধান্ত এবং অংশীদারী সিদ্ধান্ত।
(ক) একক ও প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত
প্রতিষ্ঠানের কোন সদস্য নিজ প্রয়োজনে নিজে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সংগঠনের প্রয়োজনে একক বা সমষ্টিগতভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত। যেমন, সংগঠনের কোন সদস্য যদি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তবে তা হবে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। পক্ষান্তরে তার স্থলাভিষিক্ত করার লক্ষে অন্য কাউকে নিয়োগ প্রদানের জন্য একক বা সমষ্টিগতভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা হবে প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত। প্রাতিষ্ঠান প্রধান অন্য কারও সঙ্গে মতবিনিময়, আলাপ- আলোচনা ছাড়া যখন প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেন তখন তা একক সিদ্ধান্ত। কিন্তু যদি একাধিক ব্যক্তি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমতের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নেন তখন তা হয় সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত ।
(খ) প্রথাগত ও মৌলিক সিদ্ধান্ত
রুটিন মাফিক দায়িত্ব পালনের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাকে প্রথাগত সিদ্ধান্ত বলে। বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য নতুনভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের স্থান নির্বাচন হলো একটি মৌলিক সিদ্ধান্ত এবং কর্মকর্তার অফিস পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রথাগত সিদ্ধান্ত ।
(গ) অংশীদারী সিদ্ধান্ত
কোন জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনায় বসে সকলের পরামর্শক্রমে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাকে অংশীদারিত্ব সিদ্ধান্ত বলে। সকলের সাথে কোন সমস্যা সম্পর্কে পরামর্শ করলে অনেক সময় সমস্যার নতুন নতুন বিকল্প সমাধানের সন্ধান পাওয়া যায় যা থেকে একটা উত্তম সমাধান গ্রহণ করা সম্ভব হয়। অংশীদারী সিদ্ধান্তের সুবিধাসমূহ:
* সিদ্ধান্তটা চাপিয়ে দেয়া হয়নি এবং সিদ্ধান্তটি গ্রহণে অধঃস্তনদের ভূমিকা রয়েছে-এ বোধ প্রশাসনের সাথে তাঁদের একাত্বতা সৃষ্টি করে এবং এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজ হয়।
* সিদ্ধান্তটি গ্রহণে সহকর্মীদের ভূমিকা রয়েছে- এ বোধ ব্যবস্থাপকের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং তাঁর পক্ষে নির্দেশ দেওয়া সহজ হয়।
* প্রয়োজনে সহকর্মীদের পরামর্শক্রমে সহজে কোন সিদ্ধান্ত পরিমার্জন বা সংশোধন করা যায়।
* প্রশাসনে গণতান্ত্রিক আবহাওয়ার সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানে কাজের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে।
* মুক্তভাবে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ফলে প্রতিষ্ঠানের সকলের জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
খ) অংশীদারী সিদ্ধান্তের অসুবিধাসমূহ
* সাহসিকতার সাথে ঝুঁকিপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ক্রমশঃ লোপ পায় । * ব্যবস্থাপক পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েন এবং তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।
৩.৩ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিবেচ্য বিষয়
একজন ব্যবস্থাপককে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার প্রয়োজনে প্রতিনিয়তই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে নিম্নের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন:
- শান্ত ও নিরুদ্বিগ্ন মনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
- একই সময়ে একাধিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রচেষ্টা না করা বাঞ্চনীয়।
- উদ্ভূত সমস্যাটির প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত।
- সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত সময় নেয়া প্রয়োজন।
- সময়মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
- প্রথাগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব অধঃস্তনদের ওপর ন্যস্ত করা ভালো।
- সমস্যার গুরুত্ব অনুসারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
- সমস্যার সমাধানে একাধিক বিকল্প সিদ্ধান্ত বিবেচনা করা প্রয়োজন ।
- সিদ্ধান্ত গ্রহণে নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করা দরকার।

সারসংক্ষেপ
মানব জীবনে সমস্যার অন্ত নাই। একের পর এক সমস্যা আসতেই থাকে। এসব সমস্যা সমাধানের দক্ষতা সবারই অর্জন করা প্রয়োজন । ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে কোন সমস্যা থেকে উত্তোরণের উপায় বের করাই হল সমস্যা সমাধানের দক্ষতা । কোন সমস্যা দেখা দিলে সমস্যাটি বিশ্লেষণ করতঃ সমাধানের সঠিক উপায় বের করতে হয় এবং দ্রুত কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি মানসিক ও কৌশলগত প্রক্রিয়া। একটি বিশেষ অবস্থায় কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে তা স্থির করাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলে।
সিদ্ধান্তকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: একক ও প্রতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত, প্রথাগত ও মৌলিক সিদ্ধান্ত এবং অংশীদারী সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে শান্ত ও নিরুদ্বিগ্ন মনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে পর্যাপ্ত সময় গ্রহণ, উদ্ভূত সমস্যাটির প্রতি মনোযোগী হওয়া, সময়মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করা, সমস্যার গুরুত্ব অনুসারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন….