সময় ব্যবস্থাপনা (ঞরসব গধহধমবসবহঃ)

সময় ব্যবস্থাপনা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

সময় ব্যবস্থাপনা

সময় কি? (What is Time)

কোন কাজের সার্বিক সফলতা সম্পর্কে যখন আমরা চিন্তা করি, তখন সময়কে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। সময়ের কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সময় সুনির্দিষ্ট এবং সীমাবদ্ধ। অন্য সম্পদের প্রাপ্যতার হ্রাস-বৃদ্ধি আছে কিন্তু সময়ের নেই। অন্য সম্পদ সংরক্ষণ করা যায়, সময় সংরক্ষণ করা যায় না। এমনকি অগ্রিম ব্যয়ও করা যায় না। সময় অনন্ত প্রবাহমান। মানুষ তাকে কাজের প্রয়োজনে বিভক্ত করেছে ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড ও ন্যানো সেকেন্ডে। প্রাকৃতিক নিয়মে সময় বিভক্ত হয় সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা ইত্যাদি ভাবে। সময় মেনেই গ্রহ-উপগ্রহ আবর্তিত হয় এবং পরিভ্রমণ করে কক্ষ পথে। সময় মেনেই আসে ঋতুচক্র, তৈরি হয় বর্ষপঞ্জী। এক কথায় সবকিছুই সময়ের সূত্রে গাঁথা।

সময় অমূল্য সম্পদ, সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। অনেকেই সময় ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা না করেই কাজ করে থাকেন। ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে হয়। আবার অনেক তুচ্ছ বা অকিঞ্চিৎকর কাজের জন্য প্রচুর সময় ব্যয় করা হয়। আধুনিক যুগে সময় ব্যবস্থাপনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠু ও কার্যকর করতে হলে সময় ব্যবস্থাপনার উপর অবশ্যই গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

 

Office Desk 3 সময় ব্যবস্থাপনা (ঞরসব গধহধমবসবহঃ)

 

সময় ব্যবস্থাপনা কি (What is Time Management)?

সময়কে সুষ্ঠু এবং যথাযথভাবে ব্যয় করাই সময় ব্যবস্থাপনা। বাজেটের অর্থ যেমন খাতওয়ারী বরাদ্দ করা হয় তেমনি কাজের প্রকৃতি বিবেচনায় এ সময়কে বিভাজন, বরাদ্দ ও সেই অনুসারে কর্মসম্পাদন করাই হলো সময় ব্যবস্থাপনা ।

সময় ব্যবস্থাপনা প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Time Management)

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কম গুরুত্বপূর্ণ, তুচ্ছ বা সামান্য অর্জনের জন্য অধিক সময় আবার বৃহত্তর অর্জনের জন্য খুব অল্প সময় ব্যয় করা হয়। পরিকল্পনা মাফিক সময়ের যথাযথ ব্যবহারে অক্ষমতাই এর জন্য দায়ী। সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে না পারলে কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে তা একাডেমিকই হোক বা প্রশাসনিকই হোক, সময়ের নির্দিষ্টতার উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। এমনকি দৈনন্দিন সময়কে ভাগ করে নিয়েই ক্লাস রুটিন প্রস্তুত করা উচিত।

তাছাড়াও দাপ্তরিক কাজকর্ম, উন্নয়নমূলক প্রকল্পসমূহ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অতীব জরুরী। ব্যক্তিগত জীবনে যেমন সুষ্ঠু ও যথাযথ সময় ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ দরকার, কর্মজীবনেও তা একইভাবে প্রযোজ্য। সময় ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন বহুলাংশে ব্যাহত হয়। তাই অন্যান্য সম্পদের মত সময়ের সুষ্ঠু ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন ।

 

সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল (Techniques of Time Management)

যথাযথভাবে সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে চাইলে কাজকে নিম্নলিখিতভাবে বিভাজন করে নেওয়া যেতে পারে-

গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী (Important and Urgent): যে কাজ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত জরুরী তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ধরা যাক, বোর্ডে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করে পাঠাবার শেষ তারিখ সামনে। এই কাজটি প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সবচেয়ে আগে করতে হবে। দেরী করলে চলবে না। কারণ এ কাজটি একাধারে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জরুরী।

গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জরুরী নয় ( Important but not Urgent): অনেক কাজ খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এলাকার সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সভাপতি করা হয়েছে। সম্মতির জন্য সামনে অপেক্ষমান ব্যক্তিকে সেই মুহুর্তেই জানাতে হবে, তিনি সেই অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন কি না। কাজটি খুব একটা গুরুত্ব বহন না করলেও সেই মূহুর্তে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। কাজেই এ কাজটি তিনি জরুরী হিসেবে বিবেচনা করবেন। অনেক সময় উপরিউক্ত তিন ধরনের কাজের মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ করতে সক্ষম হই না। যার ফলে সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়ে উঠেনা

 

সময় ব্যবস্থাপনা

 

৩.৫ সময় ব্যবস্থাপনায় নিপুণতা ও ফলপ্রসূতা (Efficiency and Effectiveness of Time Management)

কোন একটি কাজ সুনিপুণভাবে সম্পন্ন করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সম্পাদিত কাজটির ফলপ্রসূতা যাচাই করা। বর্তমানকালে কাজের ফলপ্রসূতা এবং কার্যকারিতা উভয়ের উপরই জোর দেওয়া হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কোন কাজ দু’ঘন্টায় শেষ করলে খুব ভালো হয়তো হবে না, কিন্তু তা হয়তো কোন কাজে আসবে। সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তাই কর্যকারিতার স্থান নিপুণতার আগে। তবে নিপুণতা ও কার্যকারিতার সমন্বয় ঘটাতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনায় আনা দরকার:

  • দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া, কর্মবিবরণী পড়া, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা ।
  • কর্মক্ষেত্রে বিজ্ঞ সহকর্মীদের সাথে পরামর্শ করে ইতিবাচক কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করা।
  • গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা এবং অপরিহার্যতার দিক থেকে কাজগুলোকে তালিকাভুক্ত করা।
  • কাজের প্রয়োজনে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
  • বার্ষিক পরিকল্পনা, মাসিক পরিকল্পনা ও দৈনিক কর্মসূচি তৈরি করা।
  • কর্ম সম্পাদনের চিন্তা করা এবং ঠিক সময়ে কাজটি হয়েছে কি না তা মূল্যায়ন করা।
  • সময় অনুযায়ী কাজটি মূল্যায়ন করা ও মান নিরূপণ করা ।
Google news logo সময় ব্যবস্থাপনা (ঞরসব গধহধমবসবহঃ)
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

সারসংক্ষেপ

সময়কে সুষ্ঠু এবং যথাযথভাবে ব্যয় করাই সময় ব্যবস্থাপনা। সময় অমূল্য সম্পদ, সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না । তাই প্রতিটা মুহূর্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। অনেকেই সময় ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা না করেই কাজ করে থাকেন। ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে হয়। আবার অনেক তুচ্ছ বা অকিঞ্চিৎকর কাজের জন্য প্রচুর সময় ব্যয় করা হয়। এতে কাজের গুণগত মান রক্ষা করা সম্ভব হয় না; আসল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। তাই ক্যারিয়ার গঠনে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সময় ব্যবস্থপনা অনুযায়ী কাজ করা অত্যন্ত জরুরী।

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment