শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা

Health is wealth

অর্থাৎ স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে কোন কিছুই ভাল লাগে না । তাই বলা হয় স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্যকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য। উভয় প্রকার স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজন। শিক্ষার্থী বন্ধুরা, এই পাঠে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কীভাবে সচেতন থাকা যায় সে বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হল।

 

Office Woman 1 শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা

 

১. শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ধারণা

স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। মূলত স্বাস্থ্যকে সম্পদের চেয়ে বেশি মূল্যবান মনে করেন অনেক মনীষীগণ। কারণ স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে কোন কিছুই ভাল লাগে না। উক্ত স্বাস্থ্যকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। একটিকে বলা হয় শারীরিক স্বাস্থ্য অন্যটি হল মানসিক স্বাস্থ্য। মানুষের সকল সচেতনতার মূলে থাকা উচিত তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। স্বাস্থ্যহীন মানুষের পক্ষে দেহ ও মন নিয়ে কখনোই স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবন-যাপন করা সম্ভব নয়। কারণ শারীরিক সুস্থতার সাথে মানসিক সুস্থতার একটি সুসম্পর্ক রয়েছে।

সুতরাং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করাই হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা। প্রতিটি সচেতন মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিধি-নিষেধগুলো জেনে অতঃপর নিজের স্বাস্থ্য সুঠাম করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত। পক্ষান্তরে স্বাস্থ্যহীন মানুষ সমাজের বা পরিবারের বোঝা স্বরূপ। স্বাস্থ্যহীন মানুষকে অন্যেরা অনেকটা অবজ্ঞার চোখে দেখে থাকে। তাছাড়া স্বাস্থ্যহীন ব্যক্তি তার নিজ কাজ বা দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতেও পারেন না।

কারণ তার শরীর পুষ্টিহীনতার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে বটে। ফলে মনের দিক থেকেও সে দুর্বল মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই সারাক্ষণ তার মন খারাপ থাকে । আর আমাদের মনে রাখা উচিত যে, অসুস্থ মানুষের কর্মক্ষমতা ও সক্ষমতা দিন দিন কমে যেতে থাকে ।

২. শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নমূলক কাজের তালিকা কর্ম

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম করা উচিত যাতে আমরা প্রতিনিয়ত সুস্থ ও সুখী জীবন যাপন করতে পারি। নিচে এ ধরনের কাজের একটি তালিকা প্রদত্ত হলো:

 

শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যাবলি

১. নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ

২. প্রয়োজনীয় শারীরিক ব্যায়াম করা

৩. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা

৪. স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা

৫. সময় মতো ঘুমানো এবং সময় মতো জেগে উঠা

৬. প্রয়োজনে ডাক্তার দেখানো

৭. পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিচ্ছেদ পরিধান করা

৮. দিনে ২ বার দাঁত ব্রাশ করা (দিনে ও রাতে)

৯. মূলমূত্র ত্যাগের পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া

১০. নেশা জাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলা

 

মানসিক স্বাস্থ্য

 

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যাবলি

১. হাসিখুশি থাকা

২. পরিমিত বিশ্রাম নেয়া

৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা

৪. পারিবারিক সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকা

৫. পড়ার অভ্যাস তৈরি করা

৬. ধর্মচর্চা করা, সামাজিক অনুশাসনগুলো মেনে চলা

৭. বন্ধুত্ব, সুসম্পর্ক তৈরি করা

৮. ভালো আবেগগুলো অনুশীলন করা

৯. খারাপ আবেগগুলো নিয়ন্ত্রণ করা

১০. চাপ মুক্ত থাকা, ভ্রমণ করার অভ্যাস করা

 

৩. ক্যারিয়ার গঠনে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনার ভূমিকা

যে জাতি যত সুস্থ, সে জাতি তত উন্নত। একইভাবে যে সমাজ যত বেশি সুস্থ ও স্বাভাবিক সে সমাজ তত এগিয়ে আছে। কারণ কোন কাজ সুন্দর ও সুষ্ঠু সুচারুরূপে করার বিকল্প নাই। তাই পারিবারিক কাজ, পড়ালেখা কিংবা চাকরি ক্ষেত্রে সর্বত্রই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকার বিশেষ গুরুত্ব অপরিহার্য। যারা ভগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী তাদের মন মেজাজ খিটখিটে থাকে, কোন কাজে তার মন বসে না, ধৈর্য্যের সাথে সে কোন কাজ সময়মত সম্পন্ন করতে পারে না । উদাহরণ স্বরূপ একজন শিক্ষার্থী যদি পরীক্ষার পূর্বে সুস্থ থাকতে পারে, তাহলে সে ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারে।

কোন মৌখিক (Viva) পরীক্ষার পূর্বে যদি কোন পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা তার অনেকাংশে কমে যায়। কারণ প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন বুঝে জবাব দিতে তার পক্ষে প্রায়ই সম্ভবপর হয়ে উঠে না। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে রুগ্ন বা স্বাস্থ্যহীন চাকরি প্রার্থীকে চাকরিই দেওয়া হয় না।

কারণ সেক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীর শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা (Suitability Test) যাচাই করে দেখা হয় যে, উক্ত প্রার্থী কাজটি করতে কতটুকু সক্ষম। সুতরাং ক্যারিয়ারে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য প্রচুর পরিশ্রম প্রয়োজন। এ সময় শরীর ও মন সুস্থ না থাকলে সকল পরিকল্পনা পণ্ডশ্রম হতে পারে। অতএব, এখন থেকেই আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অধিকতর যত্নবান ও সচেতন হওয়া উচিত।

 

কাজ-১ : আপনার এলাকায়/ মহল্লায়/ পরিবারে যারা নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মানে না- তাদের জন্য করণীয় কী? তা একটি পোস্টার কাগজে উপস্থাপন করুন।

 

Google news logo শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

সারসংক্ষেপ

স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে কোন কিছুই ভাল লাগে না। তাই বলা হয় স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্যকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য। মানুষের সকল সচেতনতার মূলে থাকা উচিত তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। স্বাস্থ্যহীন মানুষের পক্ষে দেহ ও মন নিয়ে কখনোই স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবন-যাপন করা সম্ভব নয়। কারণ শারীরিক সুস্থ্যতার সাথে মানসিক সুস্থতার একটি সুসম্পর্ক রয়েছে।

সুতরাং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করাই হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা। প্রতিটি সচেতন মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিধি-নিষেধগুলো জেনে অতঃপর নিজে স্বাস্থ্য সুঠাম করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত।

 

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment