নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি : গুরুত্ব ও উপায়

নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি : গুরুত্ব ও উপায় আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি : গুরুত্ব ও উপায়

 

মানুষ সুন্দরের পূজারি। মানুষের চোখ সর্বদাই সুন্দরের দিকে আকৃষ্ট হয়। তাই প্রাত্যহিক প্রতিটি কাজ এমন সুন্দরভাবে গুছিয়ে করা প্রয়োজন যা নিজেকে এবং অন্যকে আনন্দ দেয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে মশারী ভাজ করা থেকে শুরু করে, খাওয়া- দাওয়া, দাঁত ব্রাশ, লেখাপড়া, ঘর গেছানো, সঙ্গীত চর্চা, আবৃত্তি অনুশীলন করা ইত্যাদি প্রতিটি কাজ সুন্দর করে করার মত নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যেকেরই গঠন করা প্রয়োজন। আর এ নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি ক্যারিয়ার গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বন্ধুরা, আসুন আমরা প্রথমেই জেনে নেই নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি কী? একটি উদাহরণ দিয়ে আলোচ্য বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরা যাক। ধরুন আপনি সিলেটের জাফলং বেড়াতে গেলেন, সেখানে কী দেখলেন? দেখলেন খর স্রোতা নদী, নদী থেকে পাথর তোলার দৃশ্য, সিলেটের চা বাগান, জাফলং নদী পার হয়েও দেখলেন আদিবাসীদের জীবন-যাপন, দেখলে অনতিদূরেই ভারতের মেঘালয় পাহাড় যেন ঘুমিয়ে আছে- এসব প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার কাছে মনোমুগ্ধকর লাগলো, তাই- না? নতুন কিছু দেখা, নতুন জায়গায় বেড়ানো সবারই ভাল লাগে। এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।

ছবি দেখলে ভাল লাগে, গান শুনলে ভাল লাগে, মিষ্টি ফুল দেখলে ভাল লাগে, ঝরণার রিনিঝিনি শব্দ শুনে আমরা মুগ্ধ হই। এসব আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা। জীবনের কোন না কোন সময়ে আমরা এই আনন্দ অনুভব করি। আর ‘আনন্দ’ থেকেই ‘নন্দন’ কথাটির উদ্ভব হয়েছে। এটি জার্মান শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। ১৯৩৪ সালে জার্মান দার্শনিক আলেকজান্ডার গটলিয়েব বামগার্টেন সৌন্দর্য্যবিদ্যার জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করেন। নন্দন এর আধুনিক ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Aesthetics, যা জার্মান থেকে এসেছে।

 

Office Girl 6 নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি : গুরুত্ব ও উপায়

 

সুতরাং ‘নন্দন’ শব্দের অর্থ দাড়ায় যা থেকে আনন্দ পাওয়া যায় বা যা সৌন্দর্য্য বর্ধন করে। অন্যভাবে বলা যায়, যে কোন কাজ করার ক্ষেত্রে তা সুন্দর করে করা, গুছিয়ে করা, যা চোখে দেখলেই সুন্দর মনে হয়, তাকেই নান্দনিকতা বলে। এই নান্দনিকতা হতে পারে শিল্পের ক্ষেত্রে; তেমনি হতে পারে কাব্য চর্চার ক্ষেত্রে। এমনকি প্রাত্যহিক জীবনের ছোটখাট কাজ যেমন ঘর গুছানো, সুন্দর করে কাপড় পরিধান করা, একটু সাজুগুজু করা, চুলের খোপাতে ফুল গুজে দেয়া, সুন্দর নক্শা রচিত পিঠা তৈরি করা ইত্যাদি নান্দনিক কাজের উদাহরণ। সুন্দর করে কথা বলা, সুন্দর হস্তাক্ষর, বা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করায় যে উপলদ্ধিবোধ (Feelings) বা মনোভাব, রুচিবোধ তাকে নান্দনিকতা দৃষ্টিভঙ্গি বলা হয় ।

 

নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব

শিল্পরসের আস্বাদনের আকুতিটুকু থাকলে মানুষের মনে শিল্পের সহানুভূতির বোধন ঘটে। আমরা পীড়াবোধ করি। এটি একটি ‘মহৎ ক্ষুধা’। এই মহতী ক্ষুধার তাড়নায় কবি, সাহিত্যক, শিল্পীগণ সৃষ্টি চঞ্চল হয়ে উঠেন- রচিত হয় মহাকাব্য, আমরা আনন্দিত হই, আর উপভোগ করি তার স্বাদ। বাংলা নববর্ষে যেভাবে সাজানো হয়; এদেশের রাস্তাঘাট, দোকানপাট, জ্বলজ্বল করে বৈদ্যুতিক বাতি এসবই নন্দন বর্ধনের জন্য করা হয়। মানুষের মধ্যে যারা সুন্দরের চর্চা করেন তাদের জীবনবোধ, রুচিবোধ (Stylish এবং Fashionable) মার্জিত এবং সর্বজন নন্দিত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে পরিচিত হন। সেজন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নন্দন চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি

 

ক্যারিয়ার গঠনে নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গির সম্পন্ন হওয়ার উপায়

ফুটন্ত ফুলকে সবাই ভালবাসে কারণ ফুলের সুবাস আছে। ঠিক তেমনি সুন্দর কাজকে সবাই পছন্দ করে। ধরুন, আপনার বন্ধু রুবাবের হাতের লেখা খুবই সুন্দর এবং পরিপাটি; তার উপস্থাপনা আরও সুন্দর। তাহলে শিক্ষক তাকে একটু অন্যরকমভাবে মূল্যায়ন করবেনই। ঐশি তার সুন্দর হস্তাক্ষরের জন্য অন্যদের চেয়ে একটু বেশি নম্বর পাবেই, তাই নয় কি? তাহলে লক্ষ করুন যে, ক্যারিয়ার গঠনে নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি কতটা সহায়ক। নিচে নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন হয়ে ওঠার কতিপয় উপায় দেওয়া হল:

  • সব সময় কথাগুলো গুচ্ছিয়ে বলা।
  • অর্পিত কাজ ও দায়িত্বগুলো সুন্দরভাবে
  • সহপাঠীদের সাথে ভাল আচরণ করা। করা ।
  • রুচিশীল পোষাক-পরিচ্ছেদ পরিধান করা
  • নিয়মিত চুল ছাটানো এবং নখ ও ত্বকের যত্ন নেওয়া
  • সৌন্দর্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিকে অনুকরণ করা।
  • নিজের পড়ার টেবিল-বইপত্র, বিছানাও ব্যক্তিগত কাপড়-চোপড় আলনাতে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা।
  • কর্মক্ষেত্রে ফাইলপত্র সুন্দরভাবে উপস্থাপন ও সংরক্ষণ।
  • ‘চারু ও কারু’- এর কাজ করা সঙ্গীত, সাহিত্য ও আবৃত্তি অনুশীলন করা ।
  • বুদ্ধিদ্বীপ্ত ও সৃজনশীল কাজে আগ্রহ থাকা ।

 

Google news logo নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি : গুরুত্ব ও উপায়
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

সারসংক্ষেপ

আর ‘আনন্দ’ থেকেই ‘নন্দন’ কথাটির উদ্ভব হয়েছে। সুতরাং ‘নন্দন’ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় যা থেকে আনন্দ পাওয়া যায় বা যা সৌন্দর্য্য বর্ধন করে। অন্যভাবে বলা যায়, যে কোন কাজ করার ক্ষেত্রে তা সুন্দর করে করা, গুছিয়ে করা, যা চোখে দেখলেই সুন্দর মনে হয়, তাকেই নান্দনিকতা বলে। এই নান্দনিকতা হতে পারে শিল্পের ক্ষেত্রে; তেমনি হতে পারে কাব্য চর্চার ক্ষেত্রে। এমনকি প্রাত্যহিক জীবনের ছোটখাট কাজ যেমন ঘর গুছানো, সুন্দর করে কাপড় পরিধান করা, একটু সাজু গুজু করা, চুলের খোপাতে ফুল গুজে দেয়া, সুন্দর নক্শা রচিত পিঠা তৈরি করা ইত্যাদি নান্দনিক কাজের উদাহরণ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নন্দন চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি ক্যারিয়ারের বিকাশে বিশেষভাবে সহযোগিতা করে থাকে ।

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment