শিক্ষকতা ও আইন সংক্রান্ত পেশা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর “কর্মক্ষেত্র নির্বাচন এবং ক্যারিয়ার উন্নয়ন” ইউনিট ৪ এর অন্তর্ভুক্ত।
শিক্ষকতা ও আইন সংক্রান্ত পেশা
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশা শিক্ষকতা। আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের জন্য অন্যতম হাতিয়ার শিক্ষাকে মানুষের কাছে আন্তরিকতা দিয়ে যাঁরা পৌঁছিয়ে দেন তাঁরাই শিক্ষক। এ পেশায় সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা সহজ। মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার মন্ত্র দেন শিক্ষক। অতএব এ পেশা সমাজে শ্রদ্ধার সাথে সমাদৃত হয়। অপর দিকে আইন পেশা মানুষের সুখে দুঃখে পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য একটি অন্যতম সুযোগ। এ পেশা মানুষের জন্য সেবার দ্বারকে উন্মচিত করে। এ ক্ষেত্রেও আপনারা যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারেন। সমাজে এ পেশার কদরও কোন অংশে কম নয়।
শিক্ষকতা: আলোর কথা যাঁরা বলেন, আলোর ভাষা যাঁরা বুঝেন, আলোকবর্তিকা নিয়ে যাঁরা পথ চলেন তাঁরাই শিক্ষক। একমাত্র শিক্ষক তাঁরই মতো সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের সন্তানদের বয়স, চাহিদা, সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা দেখে নিজের বিজ্ঞতা দিয়ে কখনো অ-তে অজগর, আ-তে আম, আবার কখনো ভোর হলো দোর খোল খুকু মনি উঠরে, কখনো তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয় অথবা এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে এই পংক্তিগুলো উপস্থাপন করেন।
এ পেশায় তাঁরাই আসেন যাঁরা সৃষ্টির সেরাজীবদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করার বিরল গৌরব অর্জন করতে চান। এ পেশায় আসতে হলে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যে কোন স্তরের শিক্ষক হতে পারেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য মেয়েদের এস.এস.সি ও ছেলেদের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হয়।
বেসরকরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, মাদ্রাসা বা কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পাশাপাশি নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তবে পেশাগত প্রশিক্ষণ বি.এড ও এম.এড ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে চাইলে পি.এস.সির নিয়মানুযায়ী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিয়োগ পেতে হবে।
সরকারী কলেজের শিক্ষকতার জন্য বি.সি.এস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে হবে। এতে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী নিয়োগ লাভের সুযোগ রয়েছে। তবে সকল স্তরের জন্য বেশ পড়ালেখা করতে হবে। এ কথা সত্য আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ পেশায় রয়েছে প্রচুর সম্মান ও মর্যাদা। তাই সুশীল সমাজ গঠনের হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষককেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, শিক্ষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেও শিক্ষকতাসহ অন্যান্য পেশায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। জন্মই যার সৃষ্টির জন্য তিনিই শিক্ষক। মানব সন্তানকে প্রকৃত অর্থে মানুষ করার দায়িত্ব তাঁর হাতেই অর্পণ করা হয়েছে। তিনি পরম মমতায় নিজের সব কিছু উজাড় করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। গড়ে তুলেন আগামীর সমৃদ্ধ দেশ।
আইন পেশা: সমাজে শান্তি ও শৃংখলা বজায় রাখার জন্য আইন পেশার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ পেশায় পড়ালেখা করে বার কাউন্সিলের অনুমতি সাপেক্ষে বাদী-বিবাদীকে আইনি সহায়তা প্রদান, প্রয়োজনীয় স্থানে আইনি পরামর্শ প্রদান, আদালতকে বিচারিক কাজে সহায়তা প্রদান এবং সর্বোপরি আইন বিষয়ক বিবিধ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকে জীবিকা অর্জনের পথ হিসেবে বেছে নেয়াই আইন পেশা।
আইন পেশায় আসতে হলে যা যা করণীয় তা হলো- কোন সরকারি বা বেসরকারি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি পাশ বা সম্মান ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। এ ডিগ্রি লাভের পর আইনজীবী থেকে নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য আবেদন করতে হবে। বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার জন্য কমপক্ষে ছয় মাস অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আইনজীবীর অধীনে শিক্ষানবীশ হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
অতঃপর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল ভালো হলে বার কাউন্সিল কর্তৃক আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে এবং আইনজীবী সনদ প্রদান করা হবে। এই পেশায় আসতে হলে এইচ.এস.সি পাশের পর আইন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান কোর্সে ভর্তি হতে হবে অথবা ডিগ্রি পাশ করার পর কোনো অনুমোদিত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এল.এল.বি-তে ভর্তি হতে হবে এবং উত্তীর্ণ হতে হবে।

সারসংক্ষেপ
শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। কারিগর হয়ে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। অন্যদিকে সমাজে শান্তি ও শৃংখলা বজায় রাখার জন্য আইন পেশার প্রয়োজনীয়তাও অপরিসীম। মানুষের সকল ন্যায্য পাওনা ও অধিকার ভোগ করার জন্য আইনজীবীরা সহযোগিতা করে থাকেন। এটা একধরনের সেবা। সুতরাং উভয় পেশাই সমাজের জন্য অনেক দরকারী। আপনারা প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে শিক্ষকতা ও আইন পেশার যে কোন একটি নির্বাচন করে আপন ক্যারিয়ার গঠন করতঃ দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন….