আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কাঁথা শিল্পী বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
কাঁথা শিল্পী বাংলাদেশের পেশাজীবী
গ্রামীণ বাংলার নকশী কাঁথা একটি উল্লেখযোগ্য লোকশিল্প। নকশী কাঁথা বাংলাদেশের লোকশিল্পের ভুবনে বিশিষ্ট শিল্প নৈপুণ্যের স্বাক্ষর। হাজার বছর ধরে পল্লীবাংলার মহিলারা নকশী-কাঁথার কারুকাজ অব্যাহত রেখেছে। সাধারণত পুরাতন কাপড় সেলাই করে নকশী কাঁথা বানান হয়।
নকশী-কাঁথার বিভিন্ন মটিফ বা নকশার মধ্যে রয়েছে চক্র, ফুল, লতাপাতা, পশুপাখি, জ্যামিতিক খোপ, সংসার জীবনের চিত্র। ব্যবহারের বিভিন্নতা ও আকৃতি অনুযায়ী কাঁথার ভিন্ন ভিন্ন নাম। আসন কাঁথা, লেপ কাঁথা, সুজনী কাঁথা, শিশুর কাঁথা, চাদর কাঁথা, জায়নামাজ, পালঙ্কের কাঁথা, গিলাফ, আরশীলতা, দস্তরখান, বোনকা, পান প্যাচানী ইত্যাদি।
বাংলাদেশে নকশী কাঁথা সেলাইয়ের ক্ষেত্রে দু’টি প্রধান ধারার প্রচলন রয়েছে। একটি যশোরের নকশী কাঁথা অন্যটি রাজশাহীর। যশোরের নকশী-কাঁথা তিন শ্রেণীর চিত্রিত কাঁথা, মটিফ কাঁথা ও পাইড় কাঁথা। রাজশাহীতে সেলাই করা হয় চার ধরনের কাঁথা ধরনগুলো— লহরী কাঁথা, কার্পেট কাঁথা, সুজনী কাঁথা ও লীফ কাঁথা। যশোর অঞ্চলের কাঁথাকে শীর্ষস্থানীয় ধরা হয়।
যশোরের কাঁথার ফোড় অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং এতে ব্যবহৃত সুতার রং রুচিসম্মত। প্রাচীনকাল থেকেই নকশী-কাঁথা নিজেদের ব্যবহারের জন্য অথবা আপনজনদের উপহার দেয়ার জন্য তৈরি করা হতো। তবে গ্রামের মহিলারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাঁথা সেলাই করতো। বর্তমানে শহরের বিপণীগুলোতে কাঁথা পণ্য হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। নকশী-কাঁথা বর্তমানে দেশের বাইরে রপ্তানী করা হচ্ছে।

পাইড় কাঁথায় পুরাতন কাপড়ের উপর সুতা দিয়ে শাড়ির পাইড়ের মতো নকশা তোলা হয়। পাইড় কাঁথায় সাধারণত সুচ-সুতা দিয়ে কাপড়ে লম্বালম্বিভাবে শাড়ির পাড়ের নকশা তোলা হয়। আবার কোনো কোনো পাইড়-কাঁথায় ক্রমবর্ধমান আয়তাকারে নকশা তোলা হয়। তিন কোনা ভাজ করা নকশী-কাঁথা ব্যাগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
শিশুদের ব্যবহারের জন্য গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে বিভিন্ন আকার আকৃতির এবং মটিফের কাঁথা দেখা যায়। শিশুদের জন্য আরামদায়ক এবং দৃষ্টিনন্দনভাবে শিশু কাঁথা তৈরি করা হয়। শিশুর বিছানার জন্য, বালিশের উপর দেয়ার জন্য গ্রামের মহিলারা ছোট ছোট কাঁথা তৈরি করে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু কাঁথার বিভিন্ন মটিফের প্রচলন রয়েছে।
অঞ্চলভেদে মোচড়া ফুল, জিলাপী, গাঁদা ফুল, বাঘের পারা, সন্তানের মোচড়া, গোলাপধান্দা, ষষ্ঠীর চিহ্ন, মোচড়া গাধা, মাকড়সার জাল, মাকড়া ইত্যাদি নামে পরিচিত। আরশি লতা আয়না, চিরুনী ইত্যাদি জড়িয়ে রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়। সমাজের অগ্রগতির সাথে নকশী-কাঁথার ব্যবহার অনেক কমেছে।
কিন্তু নকশী-কাঁথা বর্তমানে রপ্তানিযোগ্য পণ্য হওয়ায় গ্রামীণ মহিলাদের আয়ের একটি উৎস হিসেবে দেখা দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নকশী-কাঁথা বিদেশে রপ্তানি করছে। ফলে সূক্ষ্ম কারুকার্যময় নকশী কাঁথার চাহিদা বেড়ে গেছে।
আরও দেখুনঃ