কামার বাংলাদেশের পেশাজীবী

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কামার বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।

কামার বাংলাদেশের পেশাজীবী

বাংলাদেশে কামার সম্প্রদায় এবং এদের পেশা সবার পরিচিত। কামারের কাজ অনেক আগে থেকেই এদেশে প্রচলিত ছিল। বাংলার প্রাচীন ইতিহাসে ব্রঞ্জ যুগ ও লৌহ যুগের বর্ণনা পাওয়া যায়। কাজেই প্রাচীনকালে বাংলাদেশে ধাতুর ব্যবহার এবং কামার সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।দু’এক গ্রাম বাদেই কামারদের বসবাস ছিল। কামার নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক।

 

কামার বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

কামার বাড়ির লোহা পিটানোর শব্দ এখনও কানে ভাসে। কামাররা লোহাকে আগুনে তাতিয়ে সে লোহাকে নেহাইর উপর রেখে পিটিয়ে। নকসা অনুযায়ী দ্রব্যাদি গড়ে তোলে।আমাদের সংসারের কত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লাগে। গ্রামের গৃহস্থালী কাজের জন্য প্রয়োজন হরেক রকমের লৌহজাত জিনিসপত্রের। দা, বটি, খুন্তা, কোদাল, কুড়াল এগুলো নিত্যদিনের দরকারী।

কামার লোহাকে উত্তপ্ত করে পিটিয়ে দা, কুড়াল, খুন্তা, কোদাল, বটি, শাবল প্রভৃতি তৈরি করে দেয়।কৃষিযুগের থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে কামারের তৈরি লাঙ্গলের ফলা ছাড়া কৃষকের পক্ষে জমি চাষ করা সম্ভব হতো না। কামারের কাস্তে ছাড়া কৃষকের ধান-পাট কাটা চলে না।নিড়ানি ছাড়া জমির আগাছা পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কামারের কাস্তে, কামারের তৈরি লাঙ্গলের ফালা, কাচি, নিড়ানি, টেঙ্গি, আচড়া, কৃষকের নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষি দ্রব্যাদি। গ্রামে কামাররা টাকা-পয়সা, ধান-চাল ইত্যাদির বিনিময়ে কাজ করে থাকে। কামাররা গ্রামের হাটে-বাজারে,মেলায় নিজেদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে।হাতুড়ি, নেহাইর চিমটা, কাঠ কয়লা, চামড়ার হাপর, পানি, বালতি, ছোট হাতুড়ি, ইত্যাদি জিনিস কামাররা তাদের কাজের জন্য ব্যবহার করে থাকে।

কর্মকার বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কামার হিসেবে পরিচিত। কৃষিকাজের ব্যবহৃত লোহার জিনিসপত্র ছাড়াও কামাররা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জিনিসপত্র তৈরি করে থাকে। তারা দা, কুড়াল, বটি, শাবল প্রভৃতি তৈরি করে। কামাররা গজাল, পেরেক, জালের কাঠি, রামদা, বল্লব, লেজা, সড়কি, সরতা প্রভৃতি তৈরি করে থাকে।

 

কামার বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

সুতারের কাজের জন্য কামার বাসাইল, বাটাল, রান্দা, ফলা তৈরি করে। বাংলা মঙ্গলকাব্যের প্রায় সমস্ত কবি কর্মকার সম্প্রদায়ের উল্লেখ করেছেন। বিজয়গুপ্তের ‘মনসামঙ্গলে’ কর্মকারের বিরাট ভূমিকা। মনসার কোপানল থেকে লখিন্দরকে বাঁচানোর জন্য চাঁদ সওদাগর চৌদ্দশ’ কর্মকার নিয়োগ করে লোহার বাসর ঘর তৈরি করেছিলেন।

বিপরীত কার্য্য করিতে চান্দো ভালো জানে।

চৌদ্দশত কামার তবে ডাক দিয়া আনে৷

বিজয়গুপ্ত কামার সম্প্রদায়ের চেহারার প্রতিকৃতি তুলে ধরেছেন—

লড়ে লড়ে আইল কামার সবের উদলাচুল।

ডান হাতে লোহার হাতুড় বাম হাতে তুল পরিধান কাল বস্ত্র ভেঙ্গুর কাকলি।

নাকে মুখে পড়িয়াছে আগুনের ছালি।

লক্ষ্যে গোপ দাড়ি দেখিতে বিকট।

হাত সাথে কামার সব আসিল নিকট।

সদাগর বলে শোন কর্ম্মকার ভাইয়া।

যেবা কাৰ্য্য বলি আমি শোন মন দিয়া।।

মধ্যযুগের কামারদের বর্ণনা পাওয়া যায় মুকুন্দরামের কাব্যে—

কামার পাতিয়া শাল কুঠারি কোদাল ফাল

গড়ে টাঙ্গি অঙ্গ রখি সেল ৷

বৈসে যথ কর্ম্মকার করে অস্ত্র দা কোদাল।

গ্রাম বাংলায় এখনও কামারের উৎপাদিত জিনিসপত্র গৃহস্থালীর কাজের অবলম্বন। গ্রামের হাটে ও মেলায় কামারদের তৈরি জিনিসপত্র বেচাকেনা হয়ে থাকে। সমাজ পরিবর্তনের সাথে কর্মকারদের উৎপাদিত দ্রব্যাদির চাহিদা কমেছে।

 

আরও দেখুনঃ

কাপালী বাংলাদেশের পেশাজীবী

Leave a Comment