আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় জুম চাষী বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
জুম চাষী বাংলাদেশের পেশাজীবী
পাহাড়ের গায়ে বিশেষ পদ্ধতি চাষবাস করা এবং ফসল উৎপাদন করাকেই জুম চাষ বলে। যারা জুম চাষ করে তারাই জুম চাষী। পাহাড়-টিলা আর বন-বাদড়ের দেশ বাংলাদেশে। বাংলাদেশে রয়েছে পাহাড়ী বনাঞ্চল। দক্ষিণে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়া ছড়ি অঞ্চলে পাহাড় ঘেরা বনাঞ্চল রয়েছে। সিলেট, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর অঞ্চলেও উঁচু টিলা ও পাহাড়ী ভূমি দেখা যায়।
বাংলাদেশের এসব অঞ্চলে বাস করে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর পাহাড়ীরা। চাকমা, খাসিয়া মারমা, মুরং, জয়ন্তী, মনিপুরী, গারো, খাস, রাক্ষাইন প্রভৃতি জাতি-গোষ্ঠী বাস করে এসব অঞ্চলে। পাহাড়ের গায়ে এ সমস্ত উপজাতির জীবন নির্বাহের জন্য এক ধরনের চাষ করে। পাহাড়ী জনগোষ্ঠী তাদের দৈনন্দিন ফলফলারি, সবজি, ধান ইত্যাদি।
দি ঝুম চাষ করে পেয়ে থাকে। জুম চাষই পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা।
পাহাড়ী লোকদের মধ্যে বিশেষ কৃষিপদ্ধতিতে চাষ করার নাম জুম/ঝুম চাষ। এর প্রচলিত অর্থ স্থান পরিবর্তন করে চাষ করা। পৌষ-মাঘ মাসে সুবিধাজনক সময়ে চাষের জন্য জমি নির্বাচন করা হয়। পাহাড়ের গায়ে ঢালু ছোট ছোট জঙ্গলঘেরা জমির জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়। বড় বড় গাছ থাকলে গাছের নীচের জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়।
জঙ্গল কাটার পর জঙ্গল রোদে শুকিয়ে পুড়ান হয়। এতে করে শুকিয়ে যাওয়া গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই সাথে জমির ওপরের স্তরের মাটিও কিছুটা পুড়ে যায়। ছাই ও পোড়া মাটি মিলে জমিতে উর্বরতা সৃষ্টি করে। এরপর বৃষ্টি হলে জমি ভিজে মাটি নরম হয়ে যায়।

তারপর জুম চাষের কাজ শুরু হয়। চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষের বিজু অনুষ্ঠানের পর জমিতে ফসল বোনার উৎসব শুরু হয়। ধান, তুলা, শসা, ঢেড়শ, কুমড়া, তরমুজ, তিল, সর্ষে, মারকা প্রভৃতি বীজ একসাথে মিশিয়ে ঝুম চাষের বীজ বপন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এ বপন পদ্ধতি আদিম। বাঁ হাতে দা-এর মাথা দিয়ে মাটি ফাঁকা গর্ত করা হয়। তারপর একত্রে মেশান বীজ ডান হাত দিয়ে গর্তের মধ্যে ঢেলে দেয়া হয়। অতঃপর দা-তুলে নিলে বীজগুলো মাটিতে ঢেকে যায়। জুম চাষের বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসল ও তরকারী পাওয়া যায়। বছরের শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ধান পাওয়া যায়।
পর্যায়ক্রমে ঢেড়শ, মারকা, চিনার, শসা পাওয়া যায়। অতঃপর কুমড়া ও তরমুজ পাওয়া যায়। সর্বশেষে সংগ্রহ করা হয় তিল ও সর্ষে। এভাবে সারা বছর একই জমি থেকে বিভিন্ন ফসল পাওয়া যায় জুম চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত পরিশ্রমের। ঝুম চাষে কৃষকরা সারা বছরই চাষ প্রক্রিয়া যত্ন নিতে হয়।
ধান কাটার সময় গর্তের অন্যান্য ফসলের চারার প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। চাষীদের বড় শত্রু ইঁদুর। ইঁদুরের আক্রমণে ফসল বিনষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। জুম ফসল বপন ও ফসল তোলার সময় পাহাড়ীরা নাচে-গায় আনন্দ উৎসব করে। জুম চাষ পদ্ধতিতে এক জমিতে তিন/চার বছর চাষের পর সে জমি পরিত্যক্ত হয়। আবার নতুন জমির সন্ধান চলে। নতুন জমি পরিষ্কার করে একই পদ্ধতিতে পুনরায় চাষাবাদ করা হয়।
আরও দেখুনঃ