আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বাঁধাইকার বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
বাঁধাইকার বাংলাদেশের পেশাজীবী
ছাপাখানা-মুদ্রণশিল্প-বাঁধাইকার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ছাপানোর পর বাঁধাইকারের পরিপাটি বাঁধাই শেষে বই আমাদের হাতে আসে। মুদ্রণ শিল্পের প্রচলনের সাথে বাঁধাইকার পেশার উদ্ভব। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে আবিষ্কার হয় ছাপাখানার। ছাপার জন্য প্রথমে কাঠের হরফ পরে শিশার হরফ আবিষ্কার হয়। যতদূর জানা যায় কাগজ ও ছাপাখানা প্রথমে চীন দেশেই সূচনা হয়।
মুদ্রণ শিল্পের ইতিহাসে প্রথমে লেটার প্রেস, হাইডেলবার্গ প্রেস অতপর অফসেট প্রেসের আবির্ভাব ঘটে। হ্যান্ড কম্পোজ, মনো কম্পোজ, কম্পিটার কম্পোজ প্রচলিত হয়। মুদ্রণের কর্মকাণ্ড দ্রুত প্রসারের সাথে সাথে বই প্রকাশ ও বাঁধাইয়ের কাজও সমানতালে চলতে থাকে।
বাঁধাইকারগণ সাধারণ স্বল্পশিক্ষিত শ্রেণীর হয়ে থাকে। বাঁধাইখানায় দুই/একজন প্রধান ও প্রবীণ বাঁধাইকার থাকে। বাকীরা বয়সে কিশোর। বাঁধাইকারগণ সাধারণত বই/খাতাবাঁধাইকারের কাজ করে থাকে। ছাপার কাজ শেষ হওয়ার পর বাঁধাইয়ের কাজ শুরু হয়।
প্রথমে ফর্মা ভাজাই করা হয়। অতঃপর ইন্টারলিক বা মেসেল করা হয়। এরপর বাঁধাইয়ের মান অনুসারে জুস সেলাই/টিস সেলাই পদ্ধতিতে সেলাই করা হয়। অতঃপর জেলবাইন্ডিং বা লিমবাইন্ডিং বা টানা কভার পদ্ধতিতে বাঁধাইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। বাঁধাইয়ের কাজে সুই, সুতা, সোয়া, হাতুড়ি আইকা, ময়দা, চামড়া, বোর্ড, তুত ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

টিস সেলাইয়ে সাধারণত মোটা সুতা, জুস সেলাইয়ের চিকন সুতা, লৌহপেটা সেলাই ব্যবহার করা হয়। অতঃপর হট মেশিন অথবা পেজি দিয়ে ওপরে চাপা দেয়া হয়। ভাজানর পর পুস্তানি লাগানো হয়। পুস্তানির পর ইন্টারলিম করা হয়। অতঃপর আস্তর করে সেরোজা দেয়া হয়। পরবর্তীতে মেশিনে কাটিং করা হয়। এরপর গোল দেয়া হয়। এরপর পেচ মেশিনে বই চড়ান হয়।
পরে সেরেজা লাগানো হয়। এরপর পুট মোড়ান হয়। জেল ধরান হয়। পরে বই কভারে ভরা হয় ও পুস্তানি পিলান হয় এবং হট প্রেসে কসা দেয়া হয় এবং শেষে বোর্ড/জ্যাকেট দেয়া হয় । বাঁধাইকার কখনও ফর্মাভিত্তিতে কাজ করে। কখন মাস বা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করে থাকে। বাঁধাইকারগণকে দিন-রাত্রি পরিশ্রম করতে হয়। এরা নোংরা পরিবেশে বাস করে।
মালিকের মর্জির ওপর এদের চাকরী নির্ভর করে। ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ সময় অনেক মৌসুম কাজ। বাংলাদেশে সারা বছর এ কাজের যোগান থাকে না। বছরের শুরুতে স্কুল/কলেজে পাঠ্যবই সরবরাহের সময় পাঠ্যবই ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ চলে। সে-সময় বাঁধাইকারগণ দিন-রাত্রি কাজ করে। মৌসুম শেষ হলে বাঁধাইকারগণ তাদের আবাসস্থলে ফিরে যায়।
পুনরায় মৌসুম শুরু হলে তারা কাজে যোগদান করে। বাংলাদেশে মানিকগঞ্জ, ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী প্রভৃতি জেলায় বাঁধাইকার পেশার লোকজন বাস করে। বাঁধাইকারগণ দৈনিকভিত্তিক. ফর্মাচুক্তি বা মাসিক বেতনে কাজ করে থাকে। আধুনিক যান্ত্রিক বাঁধাই যন্ত্র আমদানির ফলে বাংলাদেশে এখন হাতে বাঁধাই কাজ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
আরও দেখুনঃ