আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ভাড় বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
ভাড় বাংলাদেশের পেশাজীবী
ভারতীয় উপমহাদেশে ‘ভাড়’ শব্দটি বিশেষভাবে পরিচিত। সম্ভবত মোগল শাসন আমল থেকে ভাড়দের উৎপত্তি। মোগল শাসকগণ রাজকার্য পরিচালনায় অনেক ক্ষেত্রে ভাড়দের উপস্থিতি এবং পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের পরামর্শের ইঙ্গিত গ্রহণ লক্ষ্য করা যায়।
রাজা-সভাসদ নিয়ে শাসনকার্য পরিচালনার সময় ভাড়দের সাহায্য-সহযোগিতা নিতেন। রাজার পরামর্শ সভায় বা বিচার সভায় পরামর্শ বিষয়ে বা বিচার বিষয়ে ভাড়রা অনেক সময় পরোক্ষ ইঙ্গিত প্রদান করতো। এতে রাজার পক্ষে প্রকৃত ঘটনা অনুধাবন করা সম্ভব হতো।
ভাড় হাস্য-পরিহাস-ব্যাঙ্গাত্মক উক্তির মাধ্যমে রাজা বা সভাসদদিগকে আনন্দ দিতেন। ভাড় সাধারণত নিম্নসম্প্রদায়ভুক্ত। এরা অল্পশিক্ষিত হয়ে থাকে। ভাড়দের প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব এবং বাকচাতুর্য সর্বজন বিদিত। ভাড়দের স্বভাব–পোশাক-পরিচ্ছদ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে।

ভাড়গণ সুপরিচিত এবং সকলের প্রিয়ভাজন। রাজদরবারে বা জমিদারদের সভায় ভাড়গণ বিশেষভাবে সমাদৃত হন। অনেক সময় ভাড়গণ রাজাকে কোনো সমস্যার সমাধান দেয়ার জন্য ব্যক্তিগত সহযোগিতা করে থাকে। রাজা বা জমিদারদের আনন্দ দেয়া তাঁদেরকে মুগ্ধ করাই ভাড়দের প্রধান কাজ।
ভাড়রা রাজাদের আনন্দ বা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার জন্য নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। ভারতচন্দ্রের অন্নদা মঙ্গল কাব্যে ভাড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। গোপাল ভাড়ের নাম সর্বজন বিদিত। এছাড়া নাসির উদ্দিন হুজ্জার হাস্য-রস ও ব্যঙ্গাত্মক গল্প সকলের কাছেই জনপ্রিয়।
তাদের পোশাক-পরিচ্ছদে একটু স্বাতন্ত্র্য দেখা যায়। তাদের বাচন ও অঙ্গভঙ্গিতে বিশেষ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এরা রাজা বা জমিদারের কাছ থেকে মাসহারা বা জীবন নির্বাহের খরচাদি পেয়ে থাকে। জমিদার বা রাজা সম্প্রদায় এরা বসবাস করতো অনেক সময় রাজা বা জমিদারগণ তাদের কৃতকর্মের জন্য পুরস্কার বা তিরস্কারও করে থাকেন। বর্তমানে সমাজে ভাড়া প্রথা বিলুপ্তি হয়েছে।
আরও দেখুনঃ