শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস

শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস

 

শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস

 

আত্মবিশ্বাসী হলে সফলতা আসবে- সবাই এমনটিই বলে থাকেন। শিক্ষায় আত্মবিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দুটো বিষয়ের মধ্যেই রয়েছে গভীর অন্তর্নিহিত সম্পর্ক। পরিপূর্ণ শিক্ষিত মানুষ যেমন আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠে, তেমনি একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষও শিক্ষার বহুমাত্রিক উন্নয়ন ও বিকাশের বিষয়টিকে যথাযথ ধারণ ও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনকে অর্জন করতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হলে কী কী বৈশিষ্ট্য শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকবে এস তা আমরা জানার চেষ্টা করি।

আত্মবিশ্বাস মানে হলো নিজের প্রতি আস্থা। কাজেই একজন শিক্ষার্থীকে তার প্রতিটি কর্মকাণ্ডের মধ্যেই আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। যেমন: তোমাকে সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে তথা শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হতে হবে শ্রেণিকক্ষের প্রতিটি কার্যক্রমে (শিখন শেখানো) তোমাকে আস্থা ও দৃঢ়তার সাথে অংশগ্রহণ করতে হবে; একক ও দলীয় কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে, পাঠ মূল্যায়নে পরিস্কার ও স্পষ্টভাবে উত্তর প্রদান করতে হবে, শ্রেণির শৃঙ্খলা বজায় রাখা, যে কোনো জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায় শ্রেণি শিক্ষককে সহায়তায় অগ্রণী ও গাঠনিক ভূমিকা রাখতে হবে।

এছাড়া বাড়ির কাজ সঠিকভাবে যথাসময়ে সম্পন্ন করা ও জমাদানসহ শিক্ষামূলক কার্যক্রমে আস্থার সাথে অংশগ্রহণ করতে হবে। তবেই তোমার মধ্যে আস্থা তথা আত্মবিশ্বাস জন্ম নেবে। একই সাথে শিক্ষার বহুমাত্রিক বিকাশ ও ত্বরান্বিত হবে। একজন আত্মবিশ্বাসী শিক্ষার্থী শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, জীবনব্যাপী এই আত্মবিশ্বাসের নিরস্তর চর্চার মাধ্যমে সফল ও নান্দনিক জীবনযাপনে সক্ষম হবে। কর্মক্ষেত্রে মানুষের আত্মবিশ্বাসী হওয়া আরো বেশি প্রয়োজন। কাজের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী না হলে সফল হওয়া অসম্ভব।

কাজের মাধ্যমেই মানুষ পারে মানুষের মাঝে স্থান করে নিতে, পারে কালের গর্ভে বিলীন না হয়ে মহাকালের স্বর্ণপাতায় স্থান নিতে ।
কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে বা কর্মজগতে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার মানে কী? কীভাবে আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হতে পারি? যারা কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী তাদের বৈশিষ্ট্যগুলোই বা কী- এসব কিছুই আমরা জানার চেষ্টা করব। “নিজের প্রতি আস্থা”। নিজের প্রতি আস্থাবান না হলে ভালো কিছু করা যায় না।

নিজের প্রতি এই আস্থা অর্জিত হয় নিজের করা কাজ, দক্ষতা, ক্ষমতা, যোগ্যতার স্বীকৃতি পাওয়ার মাধ্যমে। মনে কর, স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তুমি “উপস্থিত বক্তৃতা’য় প্রথম হয়েছো। তাহলে নিজের প্রতি তোমার আস্থা জন্মাবে যে তুমি যেকোনো বিষয়ের উপর সবার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারবে। কিংবা মনে কর, তোমার লেখা গল্প জাতীয় পর্যায়ে গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেল। তখন তোমার নিজের উপর এই আস্থা তৈরি হবে যে তুমি গল্প লিখতে পারো ।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

আত্মবিশ্বাসের দ্বিতীয় উপাদান হলো সাহস। অনেকেই অনেক কিছু পারে । অনেক কিছু জানে কিন্তু সাহসের অভাবে বলতে বা করতে পারে না। আমরা এমনই সাহসের প্রমাণ পাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিশোর বয়সের একটি ঘটনা থেকে। তখন তিনি গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এসময় গোপালগঞ্জ সফরে আসেন স্বনামধন্য নেতা ও তৎকালীন মন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

তাঁরা মিশন স্কুল পরিদর্শনে গেলে তাঁদের পথ আগলিয়ে দাঁড়ান কিশোর মুজিব ও তাঁর সঙ্গীরা। প্রধানশিক্ষক ঘাবড়িয়ে যান এবং কিশোর মুজিবকে মন্ত্রীদের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু তিনি সরলেন না বরং তিনি মন্ত্রীদের কাছে হোস্টেলের ভাঙ্গা হাদ মেরামতের দাবী জানালেন। শেরেবাংলা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর ঐচ্ছিক তহবিল থেকে ছাদ মেরামতের জন্য অর্থ মঞ্জুর করলেন। এভাবে বঙ্গবন্ধু তাঁর সাহস ও আত্মবিশ্বাসের জোরেই হয়ে উঠেন এদেশের কোটি কোটি মানুষের মহান নেতা ও পঞ্চপ্রদর্শক।

আত্মবিশ্বাসের আরেকটি উপাদান হলো ‘সচেতনতা’। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ সবসময় তার নিজের এবং পারিপার্শ্বিকতার প্রতি সচেতন । একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ সবসম খেয়াল করেন তার চারপাশে কী হচ্ছে এবং তিনি কী করছেন। না জেনে, না বুঝে অন্ধবিশ্বাসী হওয়া যায়, আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায় না। আত্মবিশ্বাসী মানুষেরা সবসময় পরিকল্পনা করেই কাজে নামেন। তারা তাদের পরিকল্পনা ও কাজে দূরদর্শিতা এবং প্রজ্ঞার সমন্বয় ঘটান।

ফলে তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যারা দূরদর্শী নয় তারা আত্মবিশ্বাসী হতে পারে না। দূরদর্শিতার সাথে পরিকল্পনা না করলে কাজ করার সময় নানা অমূলক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ জানে কাজের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে কোনো কাজ দীর্ঘদিন ধরে করা যায় না।

 

শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস

 

তাই তারা এমন পেশা নির্বাচন করে না, যে পেশার প্রতি তাদের সত্যিকারের ভালোবাসা বা ভালোলাগা নেই। আমরা যদি আত্মবিশ্বাসী হতে চাই, বিশেষত কোনো কাজের ক্ষেত্রে, তবে আমাদের প্রথমেই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ভালো পরিকল্পনা করতে হবে। সাহসের সাথে পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যেতে হবে। পর্যবেক্ষণ থেকে শুরু করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন সকল ক্ষেত্রেই আমাদের নিজের প্রতি আস্থাশীল হতে হবে। তবেই আমরা সফল হতে পারব।

আরও দেখুন : 

Leave a Comment