ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব

ক্যারিয়ার গঠনের অন্যতম উপাদান হল ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। জীবনে উন্নতির শিখরে পৌছাতে চাইলে বা সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার গঠন করতে চাইলে প্রথম প্রয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন লোক কখনও সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে না বা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই ক্যারিয়ার গঠনে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব গঠন করা অত্যাবশ্যক ।

বন্ধুরা, আসুন প্রথমে আমরা দৃষ্টিভঙ্গির সাথে অনুরাগের পার্থক্য কতটুকু তা জেনে নেই। সাধারণ অর্থে আমরা অনেক সময় দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুরাগকে একই অর্থে ব্যবহার করি। কিন্তু দুয়ের মধ্যে সুক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। অনুরাগকে আমরা সব সময় ধনাত্মক (Positive) বলতে পারি। অর্থাৎ কোন বিশেষ বস্তুর প্রতি বা ব্যক্তির অনুরাগ আছে বলতে, তাকে আমি পছন্দ করি: এটা বোঝাতে চাই। কিন্তু মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি ধনাত্মক বা ঋনাত্মক দুই-ই হতে পারে। এখানে আমরা দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক দিক বা ধনাত্মক দিক আলোচনা করবো।

যেমনঃ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ভাল মনোভাব থাকতে পারে, এর পেছনে শিক্ষকদের আদর, ভালবাসা, স্নেহ মায়া ও সহযোগিতা আছে- তাই নয় কী? সুতরাং শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীর এই মনোভাব বা চিন্তা খুবই সুখকর। এটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি যে কাজই করুন না কেন, তার প্রতি আপনার আন্তরিকতা বা দরদ থাকতে হবে। সেটা হবে ক্যারিয়ারের প্রতি আপনার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ।

চলুন বন্ধুরা, এবার প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে আলোচনা করি। প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই আমাদেরকে চাকুরি জগতে টিকে থাকতে হবে এবং সেই প্রতিযোগিতা হবে ইতিবাচক। যারা ইতিবাচক প্রতিযোগিতা ও অন্যের প্রতি সহযোগিতামূলক আচরণ করবে তারাই ভবিষ্যত জীবনে সুন্দর জীবন যাপন করবে এবং সুন্দর ক্যারিয়ার গঠন করে সুখ-সমৃদ্ধি লাভ করবে। তাহলে বন্ধুরা বলুনতো, প্রতিযোগিতা বলতে আমরা কী বুঝি ? আর সহযোগিতা বলতেই বা কী বুঝি? প্রতিযোগিতা বলতে বোঝায় অন্যের সাথে পাল্লা দেয়া। এই পাল্লাতে কেউ হারবে কেউ বা জিতবে। এমন পরিস্থিতিকে বলা হয় প্রতিযোগিতা ।

 

Google news logo ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

 

যেমন ধরুন, আপনি আর আপনার বন্ধু রুহি এক সাথে পড়াশোনা করেন। পড়াশুনার সাথে দুই জনের মধ্যে মনে মনে একটি প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। আপনি চান পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করবেন বা ফাস্ট হবেন। রুহিও চায় সে ফাস্ট হবে। মনে মনে এ আশা পোষণ করে দু’জনে রাত-দিন অধ্যয়নে রত থাকাই হলো ইতিবাচক প্রতিযোগিতা। তাহলে সহযোগিতা কী ? ধরুন, আপনার বন্ধু রুহি আপনার কাছে একটা গ্রামার বই ধার চাইল, আপনি তাকে বইটা দিলেন, এটা হলো বন্ধুর প্রতি বন্ধুর সহযোগিতা। অন্য সময় বন্ধু রুহি আপনাকে পেন্সিল বা কলম দিয়ে সাহায্য করলো বা টিফিন দুজনে ভাগাভাগি করে খেলেন এগুলো হলো সহযোগিতামুলক আচরণ। বন্ধুর বিপদে বন্ধু এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক- এটাই হলো সহযোগিতামুলক মনোভাবের উদাহরণ।

বন্ধুরা, আপনারা বড় হয়ে যখন ক্যারিয়ারের জগতে প্রবেশ করবেন তখন এ ধরনের ইতিবাচক প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামুলক মনোভাব ধারণ করবেন। তাতে সমাজে ও কর্মক্ষেত্রে অন্যদের শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও আস্থা সহজেই অর্জন করতে পারবেন। ফলশ্রুতিতে আপনি হয়ে উঠবেন একজন দক্ষ ক্যারিয়ার সম্পন্ন স্বনামধন্য একজন কর্মজীবী মানুষ। যাকে তার অধীনস্থ বা অন্যান্যরা শ্রদ্ধায় ও ভালবাসায় সিক্ত করবে। কর্ম পরিবেশ হয়ে উঠবে আরও অধিকতর মনোমুগ্ধকর ও আরামদায়ক। আর একটা উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আপনাদের নিকট আরও পরিস্কার করে তুলে ধরা যায়।

 

অভিজ্ঞতা ছাড়াই এসিআইতে চাকরির সুযোগ

 

বন্ধুরা, ধরুন বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় আপনি বাংলাদেশের পক্ষে খেলছেন। আপনার প্রতিপক্ষ দেশ হচ্ছে ভারত। আকস্মিকভাবে দ্রুতগতিতে আসা বলের আঘাতে আপনার প্রতিপক্ষ ক্রিকেটার আঘাতপ্রাপ্ত হলো। আপনি পাশে ছিলেন, এবার আপনি কী করবেন? নিশ্চয়ই আপনি তাকে গিয়ে ধরবেন, তার পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন, তাঁকে প্রয়োজনীয় জিনিস বা উপদেশ দিয়ে তাৎক্ষণিক সাহায্য করার প্রচেষ্টা চালাবেন। এটাই হলো সহযোগিতামূলক আচরণ। মনে রাখবেন, যে কেউই ‘, বিপদে পড়লে বা অসুবিধায় পড়লে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করাটাই হলো সহযোগিতামূলক মনোভাব।

প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতা আপাত দৃষ্টিতে একই মনে হলেও শব্দ দু’টির মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। প্রথমটি হলো কাজ করে প্রমাণ করা, বস্তু বা সামগ্রী বা অর্থ দিয়ে সাহায্য করা এবং অন্যটি হলো মৌখিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করা- দ্বিতীয়টাতে আবেগ রয়েছে এবং প্রথমটাতে আবেগ এর মাঝে কাজের মাধ্যমে সহযোগিতা রয়েছে; বুঝলেন বন্ধুরা?

 

সহযোগিতামূলক মনোভাব

 

সারসংক্ষেপ

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বলতে ব্যক্তির কোন বিশেষ বস্তু বা ধারণার প্রতি বিশেষ প্রতিক্রিয়াকে বুঝানো হয়। প্রত্যেক দৃষ্টিভঙ্গির একটি বস্তুগত দিক আছে। বিশেষভাবে বলতে গেলে কোন বস্তু ব্যক্তি বা ধারণা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাবে ধনাত্নক (Perfectly positive) থেকে পুরোপুরি ঋনাত্মক (Perfectly negative) পর্যন্ত হতে পারে। এ দৃষ্টিভঙ্গি আবার প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামূলকও হতে পারে। ক্যারিয়ার গঠনে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাবও গঠন করতে হবে।

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment