শ্রদ্ধাবোধ, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও আন্ত:সম্পর্ক আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
শ্রদ্ধাবোধ, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও আন্ত:সম্পর্ক
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে বসবাস করে। কোন মানুষ একা চলতে পারে না। এখানে প্রতিনিয়ত মানুষ পারস্পরিক সহযোগিতা, শ্রদ্ধাবোধ, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ইত্যাদির বিনিময় করে থাকে। এসব গুণাবলি মানুষকে যেমন সভ্য হয়ে সমাজে বসবাসের উপযোগী করে তোলে তেমনি ব্যক্তির ক্যারিয়ার গঠনের পথ প্রশস্ত করে। এই পাঠে শ্রদ্ধাবোধ, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হবে।
শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আসুন শ্রদ্ধা কী এবং শ্রদ্ধাবান কে তার ধারণা ব্যক্ত করি।
শ্রদ্ধাবোধ কী?
শ্রদ্ধাবোধ একটি মানবিক গুণ। এটি মানুষকে অর্জন করতে হয়। সমাজের সব মানুষের প্রত্যাশিত ও গ্রহণযোগ্য একটি গুণ বৈশিষ্ট্যকে শ্রদ্ধাবোধ বলা হয়। শ্রদ্ধা একটি মূল্যবোধের মানদণ্ড। একটি সমাজে ছোটরা কীভাবে এবং কতটুকু সম্মান করে তা দিয়ে ঐ সমাজের মানদণ্ড নির্ণয় করা যায়। সমাজের প্রতিটি পেশার মানুষের সম্মান বা মর্যাদা রয়েছে। আবার বয়স অনুযায়ী এই মর্যাদাকে শ্রেণিবিভাজন করা হয়। যেমন- ছোটরা বড়দের ছালাম বা আদাব দেবে এবং বড়রাও ছোটদের স্নেহ, আদার, সোহাগ করবেন। এর মাধ্যমে সমাজে শ্রদ্ধাবোধ আচরণটির অনুশীলন চলবে। একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মনুষ্যত্ববোধ জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি এই শ্রদ্ধাবোধ বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
পারস্পরিক নির্ভশীলতা কী?
পারস্পরিক নির্ভরশীলতা অর্থ হলো একে অন্যের প্রতি কোন না কোন ভাবে নির্ভর করা। কেউই একা একা চলতে পারে না। যেমন, রোগ হলে আমরা ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হই, আবার ডাক্তারের রোগী না থাকলে চলবে না, অনুরূপভাবে ডাক্তারদের শিক্ষার জন্য স্কুল কলেজে পড়াশুনা করতে হয়, স্কুল কলেজকে আবার বই পুস্তক সংগ্রহের জন্য প্রকাশকদের নিকট ধর্ণা দিতে হয়। এভাবে এটা একটি চেইনের মত কাজ করে। এই পারস্পারিক নির্ভরশীলতা চলতে থাকে । এছাড়াও বলা যায় আমরা যেমন ভাত খাওয়ার জন্য কৃষকের উপর, তেমনি কৃষক অর্থের জন্য আমাদের উপর নির্ভরশীল। এভাবে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার মাধ্যমে সমাজ আরও সুন্দর ও সৌহার্দময় এবং প্রীতিময় হয়ে ওঠে।
আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক কী?
সম্পর্ক বজায় রেখে অন্যের সাথে যোগাযোগ করাকে আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্ক বলা হয়। এটি একটি দক্ষতাও বটে। অর্থাৎ মানুষকে বুঝিয়ে কথা বলার দক্ষতাকে আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্কের দক্ষতা বলা হয়। অন্যকে ইতিবাচকভাবে ‘না’ বলাকেও আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্কের দক্ষতা বলা হয়। সমাজে বা কর্মক্ষেত্রে চলতে হলে সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে হয়। সুতরাং মানুষের সাথে মানুষের যে পারস্পরিক সম্পর্ক ধরে রাখার কৌশল একেই আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্ক বলা হয়।
ক্যারিয়ার গঠনে শ্রদ্ধাবোধ, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের ভূমিকা :
কর্মজীবনে সফলতার চাবিকাঠি হলো শ্রদ্ধাবোধ ও অন্যের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো। বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের আদর স্নেহের মাধ্যমে অন্যের শ্রদ্ধার পাত্র হওয়া যায়। ক্যারিয়ার গঠনে এই শ্রদ্ধাবোধ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঊর্ধ্বতন ও অধীনস্থদের নিকট গ্রহণযোগ্য হওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে অন্যের প্রতি বিনয়ী ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া বা অন্যকে যথাযথভাবে মর্যাদা প্রদান করা। এর মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ আরও উন্নততর হয়। ভোক্তা আরও অধিকতর সেবা পায় ।
কথায় আছে, একা যে, বোকা সে। অর্থাৎ এক জনের পক্ষে একটি কাজ করা কঠিন হলেও অনেকে মিলে মিশে সে কাজ একসাথে করলে তা সহজ হয়, কষ্ট লাঘব হয়। তাই এ ধরনের কাজ করতে অন্যের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এটাই পারস্পরিক নির্ভরশীলতা। ধরুন, বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান হবে। এ কাজটি সফল করা কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়।
এজন্য অনেকের সহযোগিতা প্রয়োজন, তাই নয় কী? যেমন, কেউ নিমন্ত্রণ পত্র বিতরণ করবে, কেউ খেলাধুলা পরিচালনা করবে, কেউ আবার অতিথি আপ্যায়ন করবে, কেউ পুরষ্কার ক্রয় করবে ও বিতরণ করবে ইত্যাদি। সুতরাং ক্যারিয়ার গঠনে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার এই দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, যা ক্যারিয়ারের উন্নত শিখরে ব্যক্তিকে পৌঁছে দিতে সহায়তা করে।
এবার আসা যাক, আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্ক কীভাবে ক্যারিয়ার গঠনে ভূমিকা রাখে? ‘সম্পর্ক’ একটি বড় ধরনের বিনিয়োগ। বিনিয়োগ করে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হন তেমনি সমাজস্থ মানুষের সাথে সুসম্পর্কের কারণে ব্যক্তি তার জীবনের বড় ধরনের সমস্যা সহজে সমাধান করতে পারেন।

কাজেই, পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্ক সমস্যা সমাধানে ও উন্নয়নে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। ক্যারিয়ারকে বিকশিত করার জন্য আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্কের দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে, সহপাঠি, বন্ধু, শিক্ষক সহকর্মী ও অন্যদের নিকট থেকে বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনাসহ অনেক সহযোগিতাও পাওয়া যায়।
দলগত কাজ-১ : কী কী উপায়ে আপনার সহপাঠীদের সাথে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন।
সারসংক্ষেপ
সমাজে বসবাসের জন্য মানুষকে অপরিহার্য কতগুলো গুণ অর্জন করতে হয় যা ছাড়া সভ্য সমাজে টিকে থাকা যায় না। এগুলোর মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শ্রদ্ধাবোধ, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্ক এই তিনটি গুণের মাধ্যমে যেমন সমাজে শৃঙ্খলা, পরস্পরিক সহযোগিতা ও ভারসাম্য বজায় থাকে তেমনি ব্যক্তি জীবনে ক্যারিয়ারের বিকাশ ঘটে।
আরও পড়ুন….