নাগরিকতা ও সুনাগরিকের গুণাবলি

নাগরিকতা ও সুনাগরিকের গুণাবলি আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

নাগরিকতা ও সুনাগরিকের গুণাবলি

রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে কোন ব্যক্তির পদমর্যাদাই নাগরিকতা। নাগরিকতা জন্মসূত্র ও অনুমোদসূত্র উভয়ভাবে অর্জন করা যায়। নাগরিকতা যেভাবেই অর্জিত হোক না কেন সুনাগরিকগণ রাষ্ট্রের সম্পদ। সুনাগরিকগণ রাষ্ট্রের অধিকার ভোগের পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রতি যথাযথভাবে তার কর্তব্য পালন করেন। সেজন্য সুনাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যগুলো সবারই জানা থাকা প্রয়োজন। এই পাঠে নাগরিক ও নাগরিকতা, নাগরিকতা লাভের পদ্ধতি এবং সুনাগরিকের গুণাবলি আলোচনা করা হবে।

পাঠ-ক: নাগরিক ও নাগরিকতার ধারণা সংজ্ঞায়িতকরণ

শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনারা আপনাদের নিজের নোট খাতায় ছকটি লিখে চিন্তা করতে থাকুন।

সুনাগরিকের গুণাবলি

 

এবার রাষ্ট্রের কাছ থেকে আপনি কী কী সুবিধা ভোগ করেন তা গভীরভাবে চিন্তা করে নিচের ছকটি পূরণ করুন।

69 নাগরিকতা ও সুনাগরিকের গুণাবলি

63 নাগরিকতা ও সুনাগরিকের গুণাবলি

 

নাগরিক ও নাগরিকতা

সাধারণ ভাবে নগরের অধিবাসীকে নাগরিক বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায় নগর রাষ্ট্রের শাসন কার্যে যারা অংগ্রহণ করত তাদেরকে নাগরিক বলা হয়। তবে রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে কোন ব্যক্তির পদ মর্যাদাই তার নাগরিকতা। নাগরিকতা নাগরিকের গুণাবলিকে বুঝায় যা ব্যক্তিকে অর্জন করতে হয়। অধ্যাপক লাস্কির মতে, সার্বজনীন কল্যাণের জন্য ব্যক্তির বিচার বুদ্ধির সুষ্ঠু ব্যবহারের সুযোগই নাগরিকতা। কোন রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সম্পদ রাষ্ট্রের বুদ্ধিমান নাগরিক।

নাগরিকতার বৈশিষ্ট্যগুলো হলো : (১) রাষ্ট্রের সদস্য হওয়া (২) রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা (৩) রাষ্ট্র থেকে সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করা (৪) রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা।

পর্ব খ- নাগরিকত্ব লাভের নিয়ম

নাগরিকত্ব হলো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়। এটি দুইভাবে লাভ করা যায়। যেমন- ১। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব ২। অনুমোদনসূত্রে নাগরিকত্ব

ক)জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব লাভ

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব লাভ ক্ষেত্রে দু’টি প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো:

১। জন্ম নীতি ২। জন্মস্থান নীতি

১। জন্ম নীতি: এই নীতি অনুযায়ী পিতা মাতার নাগরিকতা অনুযায়ী সন্তানের নাগরিকতা নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সন্তান যে দেশে বা স্থানেই ভূমিষ্ট হোক না কেন তার পিতা-মাতা যে দেশের নাগরিক সেও সে দেশের নাগরিক হবে। যেমন, বাংলাদেশী কোন দম্পতির সন্তান যদি জাপানে জন্মগ্রহণ করে তবে সেই সন্তান বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশ, জাপান, ইতালী, ফ্রান্স প্রভৃতি রাষ্ট্র জন্ম নীতি মেনে চলে ।

২। জন্মস্থান নীতি: এ নীতি অনুযায়ী পিতা মাতা যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেন সন্তান যে রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করবে সে সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হবে। যেমন, বাংলাদেশেী কোন দম্পতির সন্তান যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অথবা মার্কিন জাহাজ কিংবা দূতাবাসে ভূমিষ্ট হয় তবে সে সন্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে গণ্য হবে। বৃটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি অনুসরণ করে।

খ) অনুমোদসূত্রে নাগরিকত্ব লাভ

ব্যক্তির অনুমোদসূত্রে নাগরিকত্ব লাভের ক্ষেত্রে নিচের এক বা একাধিক শর্ত পূরণ করতে হয়। যথা:

১। রাষ্ট্রের কোনো নাগরিককে বিয়ে করতে হয়

২। ঐ রাষ্ট্রের সম্পত্তি ক্রয় করতে হয়

৩। ঐ রাষ্ট্রে সরকারি চাকরি করতে হয়।

৪। ঐ দেশের ভাষা জানতে হয়

৫। ঐ রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে চাকরি গ্রহণ করতে হয়।

৬। নির্দিষ্ট সময় বসবাস করতে হয়।

উপরোক্ত শর্তগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদন মঞ্জুর হলে সে অনুমোদনসূত্রে নাগরিকে পরিণত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা প্রভৃতি রাষ্ট্রে অনুমোদনসূত্রে নাগরিকত্ব অর্জন সহজ। তাছাড়া মানবিক কারণেও নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। কোন ব্যক্তি যদি কোন রাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে বা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে কোন রাষ্ট্রে আশ্রয় নেয় তবে সে ব্যক্তি উক্ত রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকত্বের আবেদন জানালে ঔ রাষ্ট্র তাকে অনুমোদনসূত্রে নাগরিকত্ব দিতে পারে ।

নাগরিকের দায়িত্ব ও কতর্ব্য

নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব ও কতর্ব্য রয়েছে। যেমন

রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকা: নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। আমরা রাষ্ট্রের শাসন মেনে চলব। দেশের স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে গুরুত্ব দিব।

আইন মেনে চলা: দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিভিন্ন আইনকানুন আছে। এছাড়াও সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে। এসব আইন মেনে চলা নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য। কোনভাবেই এসব আইন আমরা অমান্য করব না। কারণ আমরা জানি যে, আইন অমান্য করলে শাস্তি ভোগ করতে হয়।

নিয়মিত কর প্রদান: রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং নাগরিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্য এ অর্থ প্রয়োজন হয়। নাগরিকদের দেয়া কর থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সরকার এসব কাজ করে। তাই নিয়মিত কর দেয়া নাগরিকের কর্তব্য।

ভোটদান: আমাদের দেশের নাগরিকগণ ১৮ বছর হলে ভোট দিতে পারে। এর মাধ্যমে নাগরিকগণ রাষ্ট্রের শাসনকাজে অংশগ্রহণ করে। ভোট দেয়া সব নাগরিকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়া উচিত।

রাষ্ট্রের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে সহায়তা করা: রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো সরকারের এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করা। এ জন্য আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা ।

 

Google news logo নাগরিকতা ও সুনাগরিকের গুণাবলি
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

শিক্ষা লাভ: দেশের উন্নয়নের জন্য শিক্ষিত নাগরিক অত্যন্ত প্রয়োজন। সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা প্রত্যেক মা- বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর মনোযোগের সাথে লেখাপড়া করে শিক্ষিত হওয়া আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এছাড়াও সুনাগরিক হিসাবে আমাদের আরো অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যেমন-

  • রাস্তায় চলার নিয়ম কানুন মেনে চলা উচিত।
  • ওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হওয়া উচিত।
  • রাস্তার মাঝখান দিয়ে না হেটে ফুটপাত দিয়ে হাঁটা দরকার ।
  • বাড়িতে/বাসায় সতর্কতার সাথে বিদ্যুৎ/ গ্যাস/ পানি অপচয় রোধ করা উচিত।
  • বাড়ি/ রাস্তা/ বিদ্যালয়ে ও খেলার মাঠের নিয়ম কানুন যথাযথভাবে মেনে চলা উচিত।

পর্ব-০৩ঃ সুনাগরিকের গুণাবলি

সুনাগরিক বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য চিন্তা করেন এবং প্রয়োজনীয় কর্তব্য পালন করেন। লর্ড ব্রাইস বলেন, “সেই ব্যক্তি সুনাগরিক যে বুদ্ধি, আত্মসংযম ও বিবেক এই তিনটি গুণের অধিকারী। সাধারণভাবে একজন সুনাগরিকের নিম্নরূপ গুণগুলো থাকা প্রয়োজন:

১. বিবেকবান হওয়া ।

২.বুদ্ধিদীপ্ত ও সৎচরিত্রবান হওয়া।

৩.রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বপরায়ণ থাকা ।

৪. ভোটপ্রদান করে যোগ্যপ্রার্থী নির্বাচন করবেন।

৫.কর প্রদান করবেন।

৬. গণতন্ত্রমনা ও কল্যাণকামী হওয়া।

৭. সুদক্ষ হবেন।

৮.নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন হবেন।

৯. তিনি দেশের স্বার্থে কাজ করবেন।

সারসংক্ষেপ

সাধারণভাবে নগরের অধিবাসীকে নাগরিক বলা হয়। সুদুর অতীতে গ্রিসের নগর রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের শাসন কার্যে যারা অংশগ্রহণ করত তাদেরকে নাগরিক বলা হতো। আধুনিককালে নাগরিক হচ্ছে সেই ব্যক্তি যিনি একটি রাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা, রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত, রাষ্ট্রের নিকট থেকে অধিকার ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করেন। জন্মসূত্র ও অনুমোদসূত্র উভয়ভাবে নাগরিকতা লাভ করা যায়। তবে অনুমোদন সূত্রে নাগরিকতা অর্জন করতে গেলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। সুনাগরিকগণ রাষ্ট্রের সম্পদ। সুনাগরিককে বিবেকবান, বুদ্ধিদীপ্ত, সৎচরিত্রবান, রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বপরায়ণ, ভোটপ্রদান করে যোগ্যপ্রার্থী নির্বাচন, কর প্রদান করা, গণতন্ত্রমনা, কল্যাণকামী, নৈতিক গুণাবলির অধিকারী ইত্যাদি গুণের অধিকারী হতে হয়।

 

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment