নেতৃত্ব, নেতার গুণাবলি ও দায়িত্ব আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
নেতৃত্ব, নেতার গুণাবলি ও দায়িত্ব
নেতৃত্ব একটি গুণ । সমাজের প্রতিটা মানুষকে কোন না কোন ভাবে বা কোথাও নেতৃত্ব দিতে হয়। যেমন: কেউ পরিবারে, কেউ অফিসে, কেউ সমাজে, কেউ বিদ্যালয়ে, কেউ বা খেলার মাঠে নেতার ভূমিকায় অবতীর্ন হন । তাই প্রত্যেক মানুষকে নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করা এবং নেতা হিসেবে ভূমিকা পালনের মনোভাব গড়ে তোলা দরকার। সমাজে যারা ভাল নেতৃত্ব দিতে পারেন তারা ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছাতে পারেন।
নেতৃত্ব
নেতৃত্বকে ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ইংরেজিতে ‘লিডার’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো পথ প্রদর্শন করা, চালনা করা, নির্দেশ দেওয়া, কর্মীদের মধ্যে কর্মতৎপরতা সৃষ্টি করা ও অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করা। নেতৃত্ব কোন নির্বাহীর নির্দেশনা, পথ প্রদর্শন ও অন্যদের কাজের উপর প্রভাব বিস্তারকারী একটি উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া, যা ব্যক্তি ও সংগঠনের দ্বারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রযুক্ত হয় এবং এর ফলে ব্যক্তি ও সংগঠন উভয়ই চরম সন্তুষ্টির দিকে এগিয়ে যায়।
ব্যবস্থাপনা গবেষণায় গবেষকগণ নেতৃত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমনা Stogdill (১৯৫০) নেতৃত্ব সম্বন্ধে বলেছেন, “নেতৃত্ব হচ্ছে লক্ষ্য নির্ধারণ ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি সংঘবদ্ধ কর্মীদের কার্যাবলি প্রভাবিত করার প্রক্রিয়া”। Hollander (1978) –এর মতে, “নেতৃত্ব নেতা এবং তাঁর অনুসরণকারীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের একটি প্রক্রিয়া।”
Koontz O’Donnel (1984) নেতৃত্বের সংজ্ঞায়িত করে বলেছেন, “এটা জনগণ প্রভাবিত করার একটি কৌশল বা প্রক্রিয়া, যাতে জনগণ আগ্রহভরে যৌথ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সচেষ্ট হয়।” Rauch এবং Behling (1984) -এর মতে, “সংঘবদ্ধ দলের কার্যাবলিকে লক্ষ্য অর্জনের দিকে প্রভাবিত করার প্রক্রিয়াকে নেতৃত্ব আখ্যায়িত করা যেতে পারে।” অতএব সংগঠনে কর্মরত বিভিন্ন ব্যক্তির মন মানসিকতা, উদ্দেশ্য, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে মূল লক্ষ্য অর্জনের দিকে তাদের যাবতীয় ধ্যান ধারণা ও কর্ম প্রচেষ্টাকে নিয়োজিত করাই নেতৃত্বের কাজ ।
নেতার ক্ষমতার ভিত্তি
ফ্রেঞ্চ (French,R.P.) ও র্যাভেন (Raven) নেতৃত্বের প্রভাব বিস্তারকারী পাঁচটি ক্ষমতার উল্লেখ করেছেন। যেমন-পুরষ্কার প্রদানের ক্ষমতা, বাধ্য করার ক্ষমতা, বিধানিক ক্ষমতা, শ্রদ্ধাজনিত ক্ষমতা, বিশেষায়িত ক্ষমতা । এখানে উল্লেখ্য যে, উন্নয়নশীল দেশসমুহে রাজনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি বা প্রশাসনে নিয়োজিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা থেকে অদৃশ্য অনানুষ্ঠানিক ক্ষমতা অপরের আচার আচরণ পরিবর্তনে অধিকতর প্রভাব বিস্তার করে।
নেতৃত্বের ধারণা
সনাতন ধারণা: নেতৃত্বের সনাতন ধারণা মূলত একনায়কের ধারণা। এরিস্টটলের মতে আজও অনেকে মনে করেন যে, “কেউ কেউ শাসন করার জন্য এবং কেউ শাসিত হওয়ার জন্য জন্মগ্রহণ করেন।” নেতৃত্ব সম্পর্কে এ ধরনের “শ্রেষ্ঠ মানব” বা গুণগত উৎকর্ষ সম্পর্কিত ধারণা ১৯৪০- এর দশকে বহুল প্রচলিত ছিল। তাদের মতে নেতৃত্ব হচ্ছে কতগুলো দৈহিক, মানসিক ও ব্যক্তিক গুণাবলির সম্মিলিত ফল। নেতাদের বিশিষ্ট কতকগুলো গুণ তাঁদের অনুসারীদের থেকে আলাদা করে দেয়। এর অর্থ হলো নেতৃত্ব ব্যাপারটি জন্মসূত্রে প্রাপ্ত কতগুলো বিশেষ গুণের ফল। এই সহজাত শক্তির অভাব হলে সফল হওয়া যায় না। চেষ্টা বা সাধনার দ্বারা নেতা হওয়া চলে না। এ তত্ত্বের পরিবেশকগণ বলে থাকেন যে, বিশিষ্ট নেতাদের গুণাবলির হিসাব থেকেই এটা প্রতীয়মান হয়।
নেতৃত্বের সনাতন ধারণা অনুসারে নেতা তাঁর অধীনস্থদের উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। তিনি নির্দেশ দেন, অধীনস্থরা বিনা প্রতিবাদে তা মেনে নেন এবং সে নির্দেশ অনুসারে কাজ করেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা কর্ম পরিচালনায় তাঁদের কোন অধিকার থাকে না। সনাতন ধারণা অনুসারে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও নেতা এক এবং তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
নেতৃত্বের আধুনিক ধারণা
নেতৃত্বের উপর ক্রমাগত গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনার ফলে সনাতন ধারণাসমূহ ব্যর্থ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। গবেষকদের মতে, আধুনিক নেতা সাধারণত কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে থাকেন। তবে শুধু প্রতিষ্ঠান প্রধান হলেই নেতা হওয়া যায় না। নেতা হতে হলে তাঁকে নেতৃত্বের আধুনিক গুণাবলীর আচরণিক প্রকাশ ঘটাতে হবে। তিনি কোন ক্রমেই একনায়কের পরিচয় দেবেন না। তিনি তাঁর অধীনস্থদের সাথে আলোচনা করবেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাস্তবায়নে ক্ষমতা প্রয়োগ না করে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন।
এ ছাড়াও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ক্ষমতা প্রয়োগ না করে অধীনস্থদের এমনভাবে প্রভাবিত করবেন যাতে তাঁর ইচ্ছানুসারে কর্ম সম্পাদন করেন। তিনি অধীনস্থদের নিকট প্রয়োজন অনুসারে ক্ষমতা অর্পণ করবেন এবং তাঁদের সাথে সহকর্মী হিসেবে ব্যবহার করবেন। এক কথায় বলতে গেলে আধুনিক নেতৃত্বের ধারণা গণতান্ত্রিক। এ ছাড়া আরও কয়েক ধরনের নেতৃত্ব আছে -যেমন পিতৃসুলভ নেতৃত্ব, মুক্ত নেতৃত্ব, আধুনিক ও অনানুষ্ঠানিক নেতৃত্ব, গাঠনিক ও ব্যক্তিক নেতৃত্ব ও কর্মকেন্দ্রিক নেতৃত্ব ও কর্মীকেন্দ্রিক নেতৃত্ব । তবে এ কথাও সত্য যে, নেতৃত্বের আধুনিক ধারণা সনাতন ধারণাকে একেবারেই বাদ দেয় না। প্রতিষ্ঠানে এমন জরুরী অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, যখন প্রভাব খাটিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে কর্ম সম্পাদন সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় নেতৃত্বের সনাতন পদ্ধতি সর্বশেষ পন্থা হিসাবে কাজে লাগাতে হয় ।
নেতৃত্ব ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানের মধ্যে পার্থক্য
প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে একজনকে প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর মধ্যে নিযুক্ত সকল অনুসারীকে নেতৃত্ব দান করতে হয়। প্রতিষ্ঠান প্রধান বা আনুষ্ঠানিক নেতা হিসাবে তাঁরা নিজ পদের সাথে সংশ্লিষ্ট দায়-দায়িত্ব, কর্তব্য ও কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ভোগ করে থাকেন। এই ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি প্রয়োগ করে তাঁরা তাঁদের অধীনস্থ লোকদের কাজ এমনকি অনুভুতি ও আবেগ প্রভাবিত ও নির্দেশিত করতে পারেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসাবে অধীনস্থ কর্মীগণ তাঁদের কাজের জন্য প্রধানের কাছে দায়ী থাকেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজনবোধে অধীনস্থ কর্মীদের শাস্তি প্রদান বা পুরস্কৃত করতে পারেন ।
অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানের মধ্যে নেতৃত্ব সুলভ গুণাবলীর অভাব দেখা দেয়। কিন্তু তবুও চাকুরিতে জ্যেষ্ঠতার কারণে বা অন্য কোন কারণে প্রধান হিসেবে নিযুক্তি পেয়ে থাকেন এবং অধীনস্থদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। অধীনস্থদের শ্রদ্ধা না পেয়েও অনেকে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের ক্ষমতা দিয়েই এই পদে টিকে থাকেন। সততা ও ব্যক্তিত্ব নেতৃত্বের এই বিশেষ দুইটি গুণের অভাব থাকলেও প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে পদাধিকার বলে নেতৃত্ব প্রদান করেন। এই নেতৃত্ব প্রকৃতপক্ষে নেতৃত্ব নয়। তা প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান মাত্র।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, নেতৃত্বসুলভ গুণের অধিকারী না হয়েও একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে কাজ করতে পারেন, কিন্তু নেতা হতে পারেন না। নেতা হওয়ার জন্য নেতৃত্বের গুণাবলির আচরণিক প্রকাশ একান্ত প্রয়োজন। একজন প্রতিষ্ঠান প্রধানের মধ্যে নেতৃত্বসুলভ গুণাবলির আচরণিক প্রকাশ ঘটলে তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং একজন নেতা হিসাবে স্বীকৃতি পাবেন ।
নেতা হিসাবে টিকে থাকার জন্য অনুসারীদের স্বীকৃতি ও আনুগত্য অর্জন অপরিহার্য। নেতৃত্বসুলভ গুণের আচরণিক প্রকাশের মাধ্যমেই শুধু তাঁর পক্ষে এটা সম্ভব। এ জন্য এ ধরনের নেতাকে তাঁর কর্ম পরিস্থিতি ও নিজ আচরণ সম্পর্কে সব সময় সচেতন থাকতে হয় ।
নেতার গুণাবলি
এক কথায় নেতার গুণাবলি প্রকাশ করা কঠিন। কোন কোন গবেষক ও লেখকের মতে কম-বেশি প্রতিটি নেতার কারিগরি নৈপুণ্য, চিরন্তন নৈপুণ্য এবং আচরণিক নৈপুণ্যের অধিকারী হওয়া অপরিহার্য। এখানে শিক্ষা ক্ষেত্রে নেতৃত্বের কিছু বিবরণ দেওয়া হলো-
(১) দক্ষতার দৃষ্টিকোণ থেকে নেতার গুণাবলি
নেতৃত্বের আচরণের দৃষ্টিকোণ থেকে কোন নেতার গুণাবলিকে মোটামুটিভাবে তিন ধরনের দক্ষতায় ভাগ করা যেতে পারে যদিও এই গুণগুলো সম্পূর্ণভাবে পৃথক করা যায় না। যথা:
(ক) কারিগরি দক্ষতা (খ) মানবিক সম্পর্ক দক্ষতা (গ) সামগ্রিক পরিস্থিতি অনুধাবন ক্ষমতা
(ক) কারিগরি দক্ষতা
ব্যবস্থাপনার মধ্য পর্যায়ে বা নিম্ন পর্যায়ে এই ধরনের দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত কর্মক্ষেত্রে কোন হিসাবরক্ষণ অফিসার, প্রকৌশলী বা স্টেনোগ্রাফার ইত্যাদি পেশাদার ব্যক্তির অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা প্রভৃতি তাঁর কারিগরি দক্ষতা। কোন ব্যক্তির অন্যান্য কর্মীদের নেতৃত্ব দেবার ভিত্তি হলো এই কারিগরি জ্ঞান। তবে পদোন্নয়নের মাধ্যমে একজন ব্যবস্থাপক উত্তরোত্তর সংগঠনের যতই উপরের স্তরে উন্নীত হন ততই কারিগরি দক্ষতা তাঁর জন্য কম প্রয়োজন হবে এবং অন্যান্য দক্ষতার প্রয়োজন বৃদ্ধি পাবে।
(খ) মানবিক সম্পর্ক দক্ষতা
মানবিক সম্পর্ক দক্ষতা বলতে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল কর্মচারী, নির্বাহী ও ব্যবস্থাপকের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক অনুধাবনের ক্ষমতাকে বোঝায়। প্রতিষ্ঠানে টিম বিল্ডিং স্পিরিট গড়ে তোলার জন্য সকল ব্যক্তির মধ্যে ও ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রভাব ও মনোভাব ইত্যাদি যথাযথভাবে উপলব্ধি ব্যবস্থাপনা কাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।
সামগ্রিক পরিস্থিতি অনুধাবন ক্ষমতা
সামগ্রিক পরিস্থিতি অনুধাবন ক্ষমতা বলতে কোন প্রতিষ্ঠানের আদর্শগত, কাঠামোগত ও বৃহত্তর আঙ্গিকে সম্পর্কসমূহ এবং দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে বিচার-বিবেচনা করাকে বোঝায়। এই ধরনের ক্ষমতা ও ধারণা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ স্তরের ব্যবস্থাপকদের জন্যই সর্বাদিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারাই সংগঠনের মৌলিক নীতি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।
নেতার সামগ্রিক গুণাবলি
যে সকল গুণ বা বৈশিষ্ট্য সাধারণত নেতার মধ্যে থাকা আবশ্যক সেগুলো মোটামুটিভাবে নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
(ক) শারীরিক বৈশিষ্ট্য
নেতাকে কায়িক ও মানসিক উভয় প্রকার শ্রমদানের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করতে হয়। কাজেই নেতৃত্ব শ্রমসাধ্য কাজ। নেতাকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও কর্মোদ্যোগী হতে হবে। নেতাকে অদম্য উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে নিরলস পরিশ্রম করে যেতে হয়। ফলে তাঁকে যথেষ্ট শারীরিক ও মানসিক শক্তির অধিকারী হতে হয়। তা না হলে তাঁর পক্ষে উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভবপর হয় না ।
খ) সামাজিক পটভূমি
শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থান ঃ নেতাকে শিক্ষিত হতে হবে। উপযুক্ত শিক্ষা নেতার মধ্যে বিশ্লেষণ ক্ষমতা, আন্তরিকতাবোধ, অধ্যবসায়, আত্মসমালোচনা ও অনুসন্ধিৎসুমনা প্রভৃতি গুণের সমাবেশ ঘটাবে।
সামাজিক দিক থেকেও নেতাকে উপযুক্ত মর্যাদার অধিকারী হতে হবে। সামাজিক অবস্থানে নেতা যদি যথাযথ মর্যাদার অধিকারী না হন তবে তাঁর পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব হবে না ।

(গ) বুদ্ধিমত্তা ও যোগ্যতা
নেতাকে অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ হতে হবে এবং তাঁর বুদ্ধিদীপ্ততা ও বিচার ক্ষমতা থাকতে হবে। নেতার কর্মী নির্বাচন ও কর্মপন্থা অনুসরণে এর সকল গুণ থাকা একান্ত প্রয়োজন । বিচার-বিবেকহীন লোককে অধীনস্থরা মনে প্রাণে নেতা বলে গ্রহণ করতে পারে না। তা ছাড়াও তাঁর শিক্ষাদানের যোগ্যতা ও বাগ্মিতা থাকতে হবে। একজন উত্তম নেতা হলেন উত্তম শিক্ষক ।
(ঘ) মোহনীয় ব্যক্তিত্ব নেতার ব্যক্তিত্ব
হবে স্নেহ, গাম্ভীর্য ও কর্তৃত্ব মিশ্রিত অনন্যরূপে পরিস্ফুট। নেতার থাকতে হবে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা। তার জন্য নেতার পরিবেশ ও সংগঠন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে এবং মানব চরিত্র অনুধাবনের ক্ষমতা থাকতে হবে। নেতাকে সব কাজেই অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে হয়। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁকে ‘dashing and pushing’গুণের অধিকারী হতে হবে। নেতার সুদূর প্রসারী কল্পনা শক্তি থাকা আবশ্যক এবং তিনি হবেন ভবিষ্যত দ্রষ্টা।
সারসংক্ষেপ
নেতৃত্ব কোন নির্বাহীর নির্দেশনা, পথ প্রদর্শন ও অন্যদের কাজের উপর প্রভাব বিস্তারকারী একটি উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া, যা ব্যক্তি ও সংগঠনের দ্বারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রযুক্ত হয় এবং এর ফলে ব্যক্তি ও সংগঠন উভয়ই চরম সন্তুষ্টির দিকে এগিয়ে যায়। ফ্রেঞ্চ (French, R.P.) ও র্যাভেন (Raven) নেতৃত্বের প্রভাব বিস্তারকারী পাঁচটি ক্ষমতার উল্লেখ করেছেন। যেমন- পুরস্কার প্রদানের ক্ষমতা, বাধ্য করার ক্ষমতা, বিধানিক ক্ষমতা, শ্রদ্ধাজনিত ক্ষমতা, বিশেষজনিত ক্ষমতা। নেতাকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও কর্মোদ্যোগী, ন্যায়পরায়ণ, বুদ্ধিদীপ্ত, বিচার ক্ষমতা সম্পন্ন এবং মোহনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হয়।
আরও পড়ুন….