ক্যারিয়ার গঠনে ইতিবাচক আবেগ ও চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল

ক্যারিয়ার গঠনে ইতিবাচক আবেগ ও চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

ক্যারিয়ার গঠনে ইতিবাচক আবেগ ও চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল

 

ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিকে জীবন পরিচালনায় ইতিবাচক আবেগগুলোর চর্চা করতে হয় এবং তার উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করতে হয়। ক্ষতিকর আবেগের প্রভাব কমিয়ে ভাল আবেগের উন্নয়ন ঘটালেই ব্যক্তিসত্ত্বার সুষম বিকাশ হবে। পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও ভালবাসার মাধ্যমে সবকিছুর মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। সুন্দরের প্রতি আসক্তি, মহত্তের প্রতি শ্রদ্ধা, দুস্থের প্রতি সহমর্মিতা এসবই শিক্ষার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। পারিপার্শ্বিক সুস্থ অবস্থা যেমন: ভালবাসা, নিরাপত্তা ইত্যাদি ব্যক্তির ভিতরে ইতিবাচক আবেগের প্রভাব ফেলে। এর ফলে তার ভিতর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক আবেগের বিকাশ ঘটে। সুতরাং সুস্থ পরিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলতে সে সক্ষম হয়।

কাজ – এক

নিচের তালিকা থেকে একজন ক্যারিয়ারসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ভাবমুর্তি গঠনের উদ্দেশ্যে আপনার আবেগকালীন আচরণ চিহ্নিত করুন।

চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল

 

ক্যারিয়ার গঠনে ইতিবাচক আবেগ

মানুষের জীবনে আবেগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আবেগ ব্যক্তির এমন এক অবস্থা যা তার আচরণকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ ব্যক্তির আচরণ আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আবেগ সব সময়ই কোন না কোন দৈহিক আচরণের সঙ্গে যুক্ত থাকে। যেমন, খুশীতে মানুষ হাসে। এখানে হাসা আচরণটি খুশীর আবেগের সঙ্গে যুক্ত। এটি একটি ইতিবাচক আবেগ। এ ধরনের আরও আবেগ হল আনন্দিত হওয়া, উৎফুল্ল হওয়া, ভাল কোন বিষয়ের প্রতি অনুরাগী হওয়া, আশা পূরণে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা, ভাল কোন সংবাদে অভিভূত হওয়া ইত্যাদি।

আমরা জানি মানুষের আবেগ সৃষ্টির জন্য উদ্দীপক বিশেষ ভূমিকা রাখে। আশা পূরণ, ভাল সংবাদ, সুন্দর কোন দৃশ্য ইত্যাদি হল উদ্দীপক। ব্যক্তি এসব উদ্দীপকের প্রতি প্রতিক্রিয়া করে এবং ইতিবাচক আবেগ প্রকাশ করে।

ক্যারিয়ার গঠনের জন্য মানুষকে বিচিত্র পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলতে হয়। কখনও তার আশা পূরণের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। এ সংগ্রামে তাকে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে হয়। এ সময় মানুষ অনেক দুঃখ পায়, হতাশ হয়, বিরক্ত হয়, দীর্ঘদিন ধরে তাকে বিষাদময় জীবন যাপন করতে হয়। ক্যারিয়ার গঠনের জন্য মানুষকে প্রচুর উৎকণ্ঠা নিয়ে পথ চলতে হয়। এ সময় নেতিবাচক উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়ায় মানুষের ভিতরে যে আবেগ সৃষ্টি হয় তা তাকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন করে। নেতিবাচক এসব আবেগের অভিজ্ঞতায় সে দুরকমভাবে প্রতিক্রিয়া করতে পারে।

সে হতাশ হয়ে পিছিয়ে যেতে পারে অথবা নতুন আশায় উদ্যোমী হয়ে উঠতে পারে। নতুনভাবে উদ্যোমী হওয়া ক্যারিয়ার গঠনের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ হতাশ হয়ে পিছিয়ে যাওয়া ক্যারিয়ার গঠনের জন্য অনুকূল নয়। তবে অনেকদিন ধরে তার ভিতর হতাশা বিরাজ করলে তা ক্যারিয়ার গঠনের জন্য হুমকিস্বরূপ। সে জন্য মানুষকে ছোটখাট খুশীর অনুভূতিতে সাড়া দিতে হয় এবং আনন্দিত হতে হয়। অর্থাৎ বৃহত্তর কল্যাণের উদ্দেশ্যে পথ চলতে হলে মনকে দুঃখে বা হতাশায় নিমজ্জিত করে রাখলে চলবে না। বরং দৈনন্দিন জীবনে যত ছোট প্রাপ্তিই ঘটুক না কেন তাতে খুশী থাকতে হবে এবং নিজের চারপাশের জগতকে হাসি আনন্দে ভরে তুলতে হবে।

ক্যারিয়ার গঠনের জন্য ব্যক্তিকে প্রতিযোগিতায় বসতে হয়। এ অবস্থায় সে দারুন উৎকণ্ঠায় সময় কাটায়। এ উৎকণ্ঠা তাকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে রাখে। এর ফলে দৈনন্দিন জীবন দূর্বিসহ হয়ে ওঠে। সে কারণে জীবনে প্রশান্তি আনতে মানুষকে সুখকর কোন উদ্দীপকের অনুসন্ধান করতে হয়। এ উদ্দেশ্যে সে বই পড়ে, সিনেমা দেখে, আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুর সাথে ভাব বিনিময় করে বা সুন্দর কোন জায়গায় বেড়াতে যায়। এর ফলে মনে সুখকর অনুভূতি হয় এবং ইতিবাচক আবেগ তাকে প্রভাবিত করে। ইতিবাচক আবেগ তাকে স্বস্তি দেয় এবং সে নতুন উদ্যোমে কাজ করার প্রেরণা পায়।

চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল

শিশুকাল থেকে মানুষের ব্যক্তিত্ব ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য আবেগের সুষম প্রকাশ প্রয়োজন। এই বিকাশ সুষ্ঠু, সুন্দর ও কার্যকর করার জন্য আবেগের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। আবেগের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ব্যক্তিজীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ হয় না। আবেগিক জীবনকে যথাযথভাবে পরিচালনা করলে দিনে দিনে ব্যক্তি আবেগিক পরিণতি লাভ করবে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ শিখবে। তার আচরণে সঙ্গতি থাকবে। আবেগিক আচরণ শিক্ষা দ্বারা ও অভিজ্ঞতা দ্বারা পরিবর্তন করা যায়।

 

চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল

 

আবেগিক জীবনে এমন কতগুলো আবেগ আছে যা সমাজ ও ব্যক্তি জীবনের জন্য খুবই উপকারী। যেমন, হাসি, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, ভক্তি, শ্রদ্ধা, স্নেহ, প্রেম, ভালবাসা ইত্যাদি। এদের প্রকাশ ব্যক্তি জীবন বিকাশে এবং সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়তা করে। আমরা জানি, এগুলো ইতিবাচক আবেগ। ইতিবাচক এসব আবেগ মানুষের জীবনকে শান্তিময় করে তোলে। এরজন্য মানুষ তার জীবন পরিচালনায় বিভিন্নভাবে পদক্ষেপ রাখতে পারে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলঃ

ছোটছোট খুশীর অনুভূতিতে সাড়া দেয়া: ব্যক্তি জীবন পরিচালনায় নানা ধরনের প্রতিকূলতা আসে এ কথা সত্যি। কিন্তু সেসব দূরাবস্থায় হতাশ হয়ে বা ভেঙে পড়লে চলবে না। জীবনের স্বাভাবিক অবস্থা হিসেবে তাকে মেনে নিতে হবে। ঘরে বা বাইরে নিজের বা নিকটজনের ছোটখাট যেসব প্রাপ্তি ঘটে সেগুলোকে অভিনন্দিত করতে হবে এবং খুশী হতে হবে।

ভাল কোন কাজে আগ্রহী হওয়া: সৃজনশীল ও ভাল কোন কাজে উৎসাহী হলে ব্যক্তির ভিতর উদ্যোম ও আনন্দ কাজ করে। আমরা জানি এ দুটোই ইতিবাচক আবেগ। এর প্রভাবে মানুষের মনের উৎকণ্ঠা ও হতাশাবোধ কমে যায়। প্রতিবেশী, বন্ধু বা আত্মীয়সজনের বিপদে এগিয়ে যাওয়া ও সাহায্যের হাত বাড়ানো, নিজ এলাকা বা পরিবেশের কোন দুরাবস্থা দূর করার কোন পদক্ষেপ নেয়া ইত্যাদি হল সৃজনশীল কাজ। এসব কাজ সম্পন্ন করলে ব্যক্তি গর্ববোধ করে এবং তার মনে প্রশান্তি আসে ।

যে কোন ভাল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা: ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তি মানসিক চাপের শিকার হয়। এটি নিঃসন্দেহে একটি দুরাবস্থা। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে ঘরে বা কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা একটি উত্তম উপায়। এর ফলে ব্যক্তি অসহনীয় পরিস্থিতি ভুলে থাকতে পারে এবং তার মানসিক চাপ কমে আসে।

বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তির সাথে ভাব বিনিময় করা: নিজের দুঃখ বা গ্লানিময় কাজ বা জীবনের কথা বন্ধুকে বললে মনকে অনেক হালকা করা যায়। অনেক সময় বন্ধু তার সমস্যা সমাধানে পরামর্শ দিতে পারে। কীভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে বা কোন কাজটি করলে বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এ ব্যাপারে সে নির্দেশনা দিতে পারে।

বেড়াতে যাওয়া: কারও বাড়িতে বা উল্লেখযোগ্য সুন্দর কোন জায়গায় বেড়াতে গেলে মনে স্নিগ্ধতা ও প্রশান্তি অসে। ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিকে প্রতিদিন নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললে তার জীবন অসহনীয় হয়ে ওঠে। ফলে এক ধরনের মানসিক চাপ সে অনুভব করে। এ চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মনে প্রশান্তি আনা বিশেষ প্রয়োজন।

জীবনভিত্তিক সিনেমা দেখা বা বই পড়া: কবি বলেছেন ”দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে”। জীবনভিত্তিক কোন কাহিনী ব্যক্তিতে দুঃখ ছাড়া সুখ লাভ হয় না এ শিক্ষা দেয়। প্রতিটি জীবনেই উত্থান-পতন আছে। সিনেমা বা বই ব্যক্তির সামনে প্রকৃত জীবন চিত্র তুলে ধরে। এর ফলে ব্যক্তি নিজের হতাশা বা দুঃখ অন্য চরিত্রের সাথে বিনিময় করে এবং তৃপ্তিলাভ করে ।

শিক্ষা লাভের মাধ্যমে: শিক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মানুষ শেখে কীভাবে দুঃখকে সরিয়ে দিয়ে জীবনকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে তোলা যায়। জ্ঞানী এবং শিক্ষিত ব্যক্তিই সাধারণত একজন ক্যারিয়ারসম্পন্ন ব্যক্তি হয়ে গড়ে ওঠেন। শিক্ষা তাকে জীবন উপলব্ধি ও উপভোগ করতে শিখিয়েছে। সে কারণে তিনি জানেন কীভাবে আনন্দ খুঁজে পেতে হয়।

যে কোন উপায় হোক না কেন উদ্দেশ্য নিজের ভিতর মানসিক চাপ হ্রাস করা। এ উদ্দেশ্যে বিভিন্নভাবে ব্যক্তি ক্ষতিকর আবেগ দূর করে তার চাপ কমিয়ে আনতে পারে। সেইসাথে যেসব আবেগ ব্যক্তিত্ব বিকাশে সাহায্য করে সেগুলো বাড়িয়ে তুলতে পারলেই আবেগ নিয়ন্ত্রিত হয়।

কাজ – দুই

নিচের এ কাজটি আপনাকে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে ইতিবাচক আবেগের ব্যবহার ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার পথনির্দেশ দেবে।

 

Google news logo ক্যারিয়ার গঠনে ইতিবাচক আবেগ ও চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

সমস্যা ১ ঃ মনে করুন, আপনার দুজন সহকর্মী আপনার মত একই যোগ্যতাধারী তারা। পদোন্নতি হলে আপনাদের তিনজনের একই সময়ে একইভাবে পদোন্নতি হওয়া কথা। এ উদ্দেশ্যে আপনারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল আপনি ছাড়া অন্য দুজনের সময়মত যথার্থভাবে পদোন্নতি হয়েছে, অথচ আপনার হয়নি। কীভাবে এ মানসিক চাপ সামলাবেন?

সমস্যা ২ : ভাবুন আপনার একজন সন্তান এস.এস.সি পাশের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যালয়ে লেখাপড়ায় মোটামুটি কৃতকার্য হয়েছে। আপনি নিজে যথাসম্ভব তার লেখাপড়ার খোঁজখবর করেছেন, তাকে উপযুক্ত শিক্ষকের কাছে পড়িয়েছেন অথচ এস. এস. সি ও রেজাল্ট তার আশাপ্রদ হল না। কী প্রকারে এ মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করবেন?

সমস্যা ৩ ঃ আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনি একজন বিভাগীয় কর্মকর্তা। আপনার উপর অনেক দায়িত্ব ন্যস্ত আছে। আগামীকাল আপনার কর্মক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী আসবেন এবং পরিদর্শন করবেন। গভীর রাতে খবর পেলেন গ্রামের বাড়িতে মায়ের শারীরিক অবস্থা বিপদজনক । আপনার মানসিক অবস্থা চরমে পৌঁছেছে। এমন একটি অবস্থায় আপনার কি করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?

সারসংক্ষেপ

সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য আবেগের সুষম বিকাশ প্রয়োজন। আবেগের নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত সুষম বিকাশের মাধ্যমে আবেগের পূর্ণতা লাভ করা যায় না। জীবনের উপর ক্ষতিকর আবেগের প্রভাব কমানো এবং সহায়ক আবেগের প্রভাব বাড়ানোই হচ্ছে আবেগ নিয়ন্ত্রণ। শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার দ্বারা ক্ষতিকর আবেগ যেমন: ভয়, রাগ, ঘৃণা, ঈর্ষা ইত্যাদির প্রভাব কমানো যায়। আবেগিক নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তির উদ্দেশ্য হল ইতিবাচক আবেগিক পূর্ণতা লাভ করা । বিভিন্নভাবে ব্যক্তি এ কাজে সফল হয়।

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment