আগামীর স্বপ্ন

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় – আগামীর স্বপ্ন

আগামীর স্বপ্ন

আগামীর স্বপ্ন

 

আগামীর স্বপ্ন

 

তোমরা বিশ্বখ্যাত রাইট ব্রাদার্স নামে পরিচিত উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট নামের দুই ভাইয়ের কথা শুনেছ নিশ্চয়। এই দুই ভাই ১৯০৩ সালে পৃথিবীর আকাশে প্রথম মানুষ বহনযোগ্য উড়োজাহাজ ওড়ান। মজার বিষয় হলো, এই উড়োজাহাজ বানাতে গিয়ে তারা বিখ্যাত চিত্রকর লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির বহুকাল (১৪৮৫ সাল) আগে আঁকা ছবি ‘অর্নিথপ্টার’ (Ornithopter) নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছিলেন।

প্রায় ৫০০ বছর আগে ভিঞ্চির কল্পনার পাখার বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন এই দুই প্রকৌশলী। তাই এমন তো হতে পারে, আজ আমরা যা আগামীর বলে স্বপ্ন দেখছি, খুব শিগগির তা হয়ে উঠতে পারে বাস্তব ও বর্তমান। বর্তমানে আমরা এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বার প্রান্তে অবস্থান করছি। এই প্রযুক্তিগত বিপ্লব আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতি, আমাদের কাজের পদ্ধতি এবং মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের উপায়কে ভীষণভাবে প্রভাবিত করবে।

ভাবতে অবাক লাগে, কিছুদিন আগেও আমরা থ্রিডি প্রিন্টারের কথা কল্পনায় দেখতাম। কিন্তু এখন সেটা আমাদের সামনেই উপস্থিত। রোবটের নানা কাহিনি তো আমাদের অতীত কল্পনাকেও হার মানাতে যাচ্ছে। আরও কত কী যে আসবে ক’দিন পরা মানুষের জায়গায় রাজত্ব করবে মানুষের হাতে তৈরি রোবট! কারও চাকুরি থাকবে, কারো থাকবে না। ভবিষ্যৎ দুনিয়ায় নিজের জায়গা করে নিতে হলে লাগবে অনেক বুদ্ধি, অনেক দক্ষতা আর নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা।

ভিঞ্চি শত শত বছর আগে তাঁর কল্পনায় উড়ার ছবিতে ভরিয়ে তুলেছিলেন The codex on th flight of bird নামের খাতা। উড্ডয়ন সম্পর্কিত এমন দূরদর্শী চিন্তাভাবনা অন্যদের দিয়েছে স্বপ্ন জোড়ার কাঁচামাল। আমাদেরও অজানা ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে দূরদর্শী ও বিচক্ষণ হতে হবে। এসো, আমরা এবার কিছু নতুন বিস্ময়ের সঙ্গে পরিচিত হই।

ভবিষ্যতের গল্প

২০৬২ এর এক দিন

ইলমা ঘুমানোর আগেই ঠিক করে নিলো যে আগামীকাল সে কোনোভাবেই স্কুলে যেতে দেরি করবে না; কাল বেশ মজার একটা ক্লাস হওয়ার কথা। ইলমা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে: আগামীকাল হলো ২৭ আগস্ট, ২০৬২।

ঠিক সকাল সাতটায় তার অ্যালার্মওয়ালা বালিশ আস্তে আস্তে নড়া শুরু করল। ইলমা চট করেই উঠে পরল; হাতের ইশারায় ঘরের পর্দা নিজে নিজেই খুলে গেল; বিছানাও নিজে নিজে গুছিয়ে গেল। বাইরের আবহাওয়া চমৎকার, নীল আকাশ, খুব একটা গরমও না, হাল্কা হাল্কা বাতাস, বাইরের দৃশ্য একদম সবুজ, গোল গোল বাড়ি, কিছু উড়ন্ত গাড়িও দেখা যাচ্ছে। উড়ন্ত গাড়ী হওয়ার পর রাস্তার কোনো দরকার ছিল না বলে ইলমার মনে পড়ল এই জন্য আজকাল সব সবুজই হয়ে থাকে।

 

আগামীর স্বপ্ন

চিত্র – ইলমাদের বাসা !

ইলমা বাথরুমে গিয়ে আয়নার স্ক্রিনের সামনে ইশারা দিল এবং টিপ দিয়ে ঠিক করল আজ কোন ধরনের টুথপেস্ট ব্যবহার করবে; আপনা আপনি এক চিকন কল দিয়ে টুথপেস্ট বের হয়ে আসল টুথব্রাশের ওপর। দাঁত ব্রাশ করতে করতে আয়নায় দেখে নিল আজকের দিনের রুটিন কী।

গত রাতে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলো থ্রিডি মাইক্রোওয়েবে কী কি নাস্তা তৈরি হবে; টেবিলে গিয়ে দেখে তাদের অনেক দিনের বিশ্বস্ত রোবট, তাঁরা ৩.০, নাস্তা সাজিয়ে রেখেছে। রোবট তাঁরা ৩.০ বলল, “ইলমা, সকাল থেকেই তোমার শিক্ষা ড্রোন, বল্টু ৫.১, রোদে চার্জ নিচ্ছিল: বল্টু এখন প্রস্তুত।” ইলমা বলল, “ঠিক আছে, নাশতা খেয়েই বের হচ্ছি।”

“আজ তোমার সেই ইন্টারপ্ল্যানেটোরি ক্লাস না?” মা খাওয়ার টেবিলেই দৈনিক অগমেন্টেড খবর দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল ইলমাকে। খবরের বিভিন্ন চরিত্র হলোগ্রাফিকভাবে টেবিলের ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাবা আরও জানাল, “আজ সকালের খবরেও এই নতুন ক্লাসের কথা বলা হয়েছে। সাবধান থেকো কিন্তু নতুন প্রযুক্তি যেহেতু!”

মা তখন বললেন, ‘কী আর হবে? এই প্রযুক্তি নিয়ে তো আমরা বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করে ফেলেছি । মা আসলে আন্তঃগ্রহ সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ, তিনি দুই গ্রহের মধ্যে যা যা হচ্ছে উন্নয়ন, প্রযুক্তি, ব্যবসাবাণিজ্য, রাজনীতি, ইত্যাদি খেয়াল রাখেন। তবে বাবা আবার মঙ্গল গ্রহের গণস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন।

বাবা বললেন, ‘তা হোক, কিন্তু স্কুলে তো এই প্রথম। ইলমা, কয়েক মাস আগে তো আমরা ঘুরে এলাম, খেয়াল রেখো যে মঙ্গল গ্রহের যেদিকে তোমরা নামবে, ওখানে শীত পড়ে গেছে। শীতের কাপড় নিয়েছ তো?” ইলমা বললো, ‘বাবা, আমি তো আমার হয় ঋতুর ডিজিটাল কাপড় পরে আছি। তাপ অনুযায়ী কাপড়ের ধরন বদলায়। দরকার হলে ওখানে গিয়ে আরেকটা কিনে ফেলব, ওখানে তো জিনিসপত্রের দাম এখনও কম।”

 

আগামীর স্বপ্ন

চিত্র – বল্টুর সাথে ইলমা!

তাঁরা ৩.০ তখন তাদের জানালো, ‘ইলমা, তোমার উড়ন্ত বাসের স্কুল চলে আসবে পনেরো মিনিটে। আরেকটু খেয়ে ইলমা বেরিয়ে পড়ল বাসের উদ্দেশে। তার উপরে উপরে বল্টু ৫.১ তার সঙ্গে সঙ্গে এগোতে থাকল। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি বল্টু এমনিতে খুব একটা বড় না; ইলমার দুই মুঠোর সমান, কিন্তু ইলমা যেখানেই যায় সেখানেই সে উড়তে থাকে। ইলমা তার শিক্ষা ড্রোনকে জিজ্ঞেস করল, ‘বল্টু বল তো, আজকে আমাদের কী নিয়ে ক্লাস হবে এবং কী বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে বলেছিল?”

বল্টুর থেকে প্রজেক্টরের মতন আলো বের হলো। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি এখন মাটির দিকে আলো, বললেই সে যে কোনো জায়গাতেই আলো দিতে পারে। ইলমা পড়ে বুঝল যে, আজ তাদের মঙ্গল গ্রহের মানুষের বিভিন্ন পেশা নিয়ে অনুসন্ধান করতে
হবে।
বাসে বসে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে একটু কথা বলে ইলমা তার ডান হাতের মুঠো খুলে বাম হাত দিয়ে ইশারা করে রাশেদকে কল দিল। রাশেদের হলোগ্রাফিক চিত্র ইলমার মুঠোর ওপর চলে এল। রাশেদ তার উড়ন্ত হুইল চেয়ারে।

‘রাশেদ, তুমি প্রস্তুত?”

‘হ্যাঁ, ইলমা, বাসে বসে মঙ্গল গ্রহ নিয়ে আমাদের ম্যাডামের বক্তব্য শুনছি। কেমন লাগছে তোমার?”

‘এইতো, ভাবতেই একটু ভয় লাগছে যে এই কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন কীভাবে কাজ করবে। আমরা এক দিকে পৃথিবীতে নাই হয়ে যাব আর অন্য দিকে মঙ্গল গ্রহে ফুটে বের হবো?”

‘তাই তো, বক্তব্য শুনে যা বুঝলাম, তুমি টেরই পাবে না’।

 

আগামীর স্বপ্ন

চিত্র – মঙ্গল ভ্রমণের পথে!

“ঠিক আছে, রাশেদ, তুমি তাহলে বক্তব্য শুনতে থাকো। আমি বরং আমাদের প্রজেক্টের কাজ একটু এগিয়ে রাখি; মঙ্গল গ্রহের পেশা আর পৃথিবীর কিছু পেশা নিয়ে একটা তালিকা বানিয়ে ফেলি ।

রাশেদের হলোগ্রাম মুঠো থেকে চলে গেল। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি বল্টুকে ইশারা দিয়েই ইলমা কাজ করতে থাকল দলের গবেষণার বিষয় নিয়ে। বাসে যেতে যেতেই ইলমা দেখল, জানালার বাইরে বিভিন্ন রোবট ও মানুষ বিভিন্ন রকমের কাজ করছে। মানুষের কাজ দেখে তাদের পেশা অনুমান করতে পারছে।

“বন্টু, বাইরের দৃশ্য সমানে স্ক্যান করতে থাকো তো, আর আমাকে বলো, কী কী পেশার মানুষ তুমি দেখতে পারছ।’

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

শিক্ষা ড্রোন তার আলো তখন ইলমার সামনের সিটের পিছনে ছুড়ে মারলো এবং ইলমা দেখল যে বল্টু তাৎক্ষণিকভাবেই ১৪টি পেশার তালিকা তৈরি করে ফেলেছে। জানালার বাইরে তাকিয়ে ইলমা নিশ্চিত করল কয়েকটি পেশা- এলাকার বিভিন্ন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রোবট ঠিক করে দেওয়ার জন্য দুই তিন জন পরিচ্ছন্নতা রোবট শিল্পী, পুলিশ টাওয়ার থেকে এলাকার বিভিন্ন পুলিশ রোবটের কাজ তদারক করছে একজন, কন্ট্রোল টাওয়ারে বসে ‘ঢাকা টু মঙ্গল’ বাসের যাতায়াত মনিটর করছেন বাসের সুপারভাইজার ইত্যাদি।

বাস উড়তে উড়তে পৌঁছাল এক সবুজ মাঠের ওপরে। মাঠের মাঝখানে তিনটি বড় বড় গর্ত; গর্তের চারপাশে বাসের ভিড়, এর ভেতর দিয়েই বাসসহ সবাই যাবে মাল গ্রহে।

ক) গল্পটি কেমন লাগল?

খ) গল্পটি কি সম্ভব না অসম্ভব?

গ) গল্পের সবচেয়ে বেশি বিস্ময়কর অংশ কোনটি?

তোমার এলাকা এখন যেমন আছে, ৪০ বছর পরেও নিশ্চয়ই সেরকম থাকবে না। অনেক কিছুই বদলে যাবে। হয়তো অনেক কিছুই যন্ত্রের দখলে চলে যেতে পারে। অথবা এমনটি না-ও হতে পারে। ৪০ বছর পরে তোমার এলাকার প্রত্যাশিত ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে একটি গল্প লেখ বা ছবি আঁকো।

এলাকার ঠিকানা :

সাল :

 

আগামীর স্বপ্ন

বক্স – আমাদের এলাকার ৪০ বছর পরের চিত্র

ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি ও পেশা

মানুষের মতো দেখতে যে রোবট

 

আগামীর স্বপ্ন

 

এটি দেখতে মানুষের মতো মনে হলেও আসলে একটি রোবট। এরা কথা বলতে পারে, নাচতে পারে, অভিব্যক্তিও দিতে পারে। দেখতে পুরোপুরি মানুষের মতন, কিন্তু মানুষ না। তবে, মানুষের মতন চিন্তা করতে পারে তার উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে। তবে এই ধরনের রোবট কোন কোন কাজ করবে তা সাধারণত মানুষই প্রোগ্রাম করে ঠিক করে দেয়।

থ্রিডি প্রিন্টার

 

আগামীর স্বপ্ন

 

কম্পিউটারের প্রিন্টার যেমন কমান্ড পেলে লেখা বা ছবি প্রিন্ট করে দেয়; তেমনি থ্রিডি প্রিন্টার বস্তু প্রিন্ট করে দিবে। ধরো, তোমার একটা মগ লাগবে; তুমি সেটির ডিজাইন এবং কী দিয়ে বানাতে চাও তা প্রোগ্রাম করে কমান্ড দিলে, ব্যস! মগটি প্রিন্ট হয়ে আসবে অর্থাৎ পুরো মগটি তৈরি হয়ে বের হয়ে আসবে। কোনো বস্তুর ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরির এই প্রযুক্তিই হলো থ্রিডি প্রিন্টার।

ভরেস টেকনোলজি

 

আগামীর স্বপ্ন

 

ভয়েস রিকগনিশন বলতে একটি নির্দিষ্ট ডিভাইসের কথা নির্দেশাবলী গ্রহণ এবং ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা বোঝায়। সহজভাবে বললে, ভয়েস রিকগনিশন প্রযুক্তি মানুষের আদেশে যোগাযোগ করতে এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। ফোনে ভয়েস প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কণ্ঠস্বর চিনতে পারে এবং এভাবে ফোনকে বিভিন্ন কাজ করতে বলতে পারে।

বায়োম্যাট্রিকস

 

আগামীর স্বপ্ন

 

বন্ধ দরজা খুলতে চাও? তুমি গিয়ে দাঁড়িয়েছো, খুলবে না, কিন্তু বাড়ির মালিক এসে দাঁড়ানো মাত্র খুলে গেল! এই প্রযুক্তি তার প্রোগামে দেয়া তথ্য থেকে আসল ব্যক্তিকে চিনে নেয়। নিরাপত্তা, উপস্থিতি ইত্যাদির ক্ষেত্রে বায়োম্যাট্রিকস প্রযুক্তি মানুষের শরীরের নির্দিষ্ট অংশ (যেমন আঙুলের ছাপ, চেহারা, চোখ ইত্যাদি) স্ক্যান করে মানুষকে চিহ্নিত করতে পারে।

মঙ্গল এক্সপ্রেস

 

আগামীর স্বপ্ন

 

ভবিষ্যতে হয়তো মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসতি তৈরি হবে। তখন মঙ্গল এক্সপ্রেসের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহে নিয়মিত যাতায়াত করতে পারবে।

উপরের যে প্রযুক্তি সম্পর্কে তোমরা কিছুটা জেনেছ, কিছুদিন আগেও এই প্রযুক্তি ছিল স্বপ্নের মতো। বর্তমানে। এসব প্রযুক্তি বাস্তবে রূপ নেওয়া শুরু করেছে। এই ধরনের প্রযুক্তি যখন বাস্তবে সাধারণ মানুষের আওতায় চলে আসবে তা আমাদের ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন ও পেশাগত জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। এমন একটি প্রযুক্তি হলো চালকবিহীন গাড়ী। চালকবিহীন গাড়ী যখন পুরোপুরি চালু হবে, তখন কী হতে পারে, চলো একবার ভেবে দেখি!

 

আগামীর স্বপ্ন

চিত্র – ভবিষ্যৎ চক্র: চালকবিহীন গাড়ি

আরও দেখুন :

Leave a Comment