আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ
Table of Contents
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ
আমাদের অনেকেরই আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কেউ না কেউ আছেন যিনি দেশের বাইরে চাকরি করেন । বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা দেশে পরিবারের জন্য অর্থ পাঠান। এতে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ডলারের রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তাই বিদেশে চাকরির মাধ্যমে শুধু নিজের পরিবারের স্বচ্ছলতা আসে তা নয়, এতে দেশের অর্থনীতিও অনেক সমৃদ্ধ হয় ।
আমরা একটু চিন্তা করলেই অনেকগুলো দেশের নাম মনে করতে পারি যেখানে অনেক বাংলাদেশি কায়িক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বা মেধাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন । দেশের বাইরে রয়েছে কাজের অনেক সুযোগ । বিদেশে কর্মরত বহু বাংলাদেশি প্রতি বছর বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে পাঠান। এর মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনীতি সচল থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা নানা ধরনের পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে অনেক বেশি বাংলাদেশি কাজ করছেন মধ্যপ্রাচ্যে । ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে বহু সংখ্যক বাংলাদেশি কাজ করছেন শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিংবা শ্রমিক হিসেবে। কোনো কাজকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই । যিনি কায়িক শ্রম করেন তাকে আমরা শ্রমিক বলি। তার সম্মান কোনোভাবেই একজন শিক্ষক, চিকিৎসক বা প্রকৌশলীর চেয়ে কম নয়।
কেননা কেউ না কেউ এই কায়িক শ্রম না করলে আজ আমাদের সভ্যতা, সমাজ, রাষ্ট্র গড়ে উঠত না । তাই আমাদের যেকোনো পেশার মানুষকে সম্মান দেওয়া উচিত ।
এশিয়া
চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার অনেক দেশে প্রযুক্তিবিদ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় স্নাতকগণ সরাসরি চাকরি নিয়ে যেতে পারেন। মালয়েশিয়াতে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করেও উচ্চবেতনে কাজ পাওয়া সম্ভব । বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা করে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করে মালয়েশিয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাকরি লাভের সুযোগ রয়েছে । বহু বাংলাদেশি সেখানে শিক্ষক হিসেবে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন ।
বহুজাতিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে পদোন্নতি নিয়ে এশিয়ার এ দেশগুলোতে উচ্চবেতনে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে ব্যবসায় প্রশাসন ও প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের জন্য । যে কাজ করতে যাওয়া হবে সে কাজে অবশ্যই দক্ষতা থাকতে হবে । অন্যথায় বিদেশের মাটিতে অনেক সমস্যা হতে পারে । তবে কোনো প্রতিষ্ঠান ভুয়া চাকরি দেখিয়ে বিদেশে লোক পাঠাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে যাওয়া উচিত । সেক্ষেত্রে জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর সাথে যোগাযোগ করলে উপকৃত হওয়া যাবে ।
আরব দেশসমূহ
বিদেশে কাজের সবচেয়ে বেশি সুযোগ রয়েছে আরব দেশ তথা সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহারাইন প্রভৃতি দেশে। এ সকল দেশে বিভিন্ন কলকারখানা, রাস্তাঘাট নির্মাণে, ব্যবসায়-বাণিজ্য এমনকি সরকারি কাজে বিদেশ থেকে প্রচুর কর্মী প্রতি বছর নেওয়া হয়ে থাকে। আর তাদের মাঝে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো বাংলাদেশি।
সুউচ্চ ভবন, সড়ক ও সেতু নির্মাণ থেকে শুরু করে সরকারি প্রতিষ্ঠান তথা হাসপাতাল, বিমান-বন্দর, বিদ্যালয়, অফিস-আদালত ও শিল্প কারখানায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন । যে সকল বাংলাদেশি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত তারা উচ্চবেতনে রেফ্রিজারেশন, ওয়েল্ডিং, গ্লাস ও সিরামিক কারখানা, বিমান রক্ষণাবেক্ষণ, পোশাক তৈরি, অটোমোবাইল তৈরি, মেশিন চালনা, কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ, গাড়ি চালনাসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন।
এসকল কাজে দক্ষ ও ভাষাজ্ঞান জানা কর্মীর চাহিদা বেশি। আরব দেশে অন্যতম চাহিদা রয়েছে খনি শ্রমিকের। কেননা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক জ্বালানি পাওয়া যায় এ অঞ্চলের ভূ-অভ্যন্তরে। তাই তেল-গ্যাস উত্তোলন কাজে কারিগরি দক্ষতা থাকলে আরবদেশের যে কোনো দেশে কাজের সুযোগ পাওয়া যায় । বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সব সময় চেষ্টা করে দেশ থেকে দক্ষ শ্রমিকদের আরবদেশে কাজে পাঠানোর।
সরকারের জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো প্রত্যক্ষভাবে এ সেক্টরে কাজ করে । আর সরকার অনুমোদিত বেসরকারি কিছু এজেন্সি আরবদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি সংগ্রহ করে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিদেশে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। সেজন্য তারা নির্দিষ্ট হারে ফি গ্রহণ করে । তবে পুরো প্রক্রিয়া বাংলাদেশ সরকার তত্ত্বাবধান করে থাকে ।
জাতীয় দৈনিক, বিভিন্ন বৈদেশিক কর্মসংস্থান কাজে নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এবং অনলাইন চাকরির ওয়েবসাইটে বিদেশে চাকরির বিজ্ঞাপন প্রায়ই প্রকাশ করা হয়। এছাড়া জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো এবং বেসরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বায়রার অফিসে চাকরির খবর সরাসরি গিয়ে সংগ্রহ করা সম্ভব। আরবদেশে পেশাজীবী তথা চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষকগণের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
আরব রাষ্ট্রগুলো মূলত বিদেশি পেশাজীবীদের দিয়েই তাদের কাজ চালিয়ে থাকে। সে কারণে প্রতি বছর সম্মানজনক আয়ের আশায় বহু বাংলাদেশি চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি আরবদেশে যান। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করে এ সকল দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করলে চাকরির সন্ধান পাওয়া যায় । আরবদেশের দেশগুলোর বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইটে বিদেশি পেশাজীবী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি থাকে । অনলাইনে সার্চ করে তা পাওয়া সম্ভব ।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ
যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর কম্পিউটার প্রকৌশলী চাকরি নিয়ে যান। এক্ষেত্রে পাশের দেশ ভারত অনেক এগিয়ে । তবে দিন দিন বাংলাদেশি তরুণ কম্পিউটার প্রকৌশলীগণ তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি চাকরি নিয়ে যাচ্ছেন । কম্পিউটার প্রকৌশলীদের পাশাপাশি চিকিৎসকগণ যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল লাইসেন্স পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার্থে যাওয়া বহু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চাকরি নিয়ে স্থায়ীভাবে বাস করছেন। বৃটেন, সাইপ্রাস, ইটালি, ফ্রান্স ইত্যাদি ইউরোপীয় দেশে রাঁধুনি অর্থাৎ শেফদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে । দক্ষতা অর্জন করে ইউরোপের এসব দেশে অনেক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব । তোমাদের মধ্যে অনেকে নিশ্চয়ই উচ্চশিক্ষার্থে এসব দেশে যেতে চাও। এসব দেশে কাজ করে অনেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড
ব্যবসায় শিক্ষা শাখার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের অস্ট্রেলিয়াতে বিশেষ চাহিদা রয়েছে। তাই হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা স্কিল মাইগ্রেশনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি গ্রহণ করছেন । আইটি বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন এমন বাংলাদেশিদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় কাজের জন্য আবেদন করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে রন্ধনশিল্পীদের উচ্চবেতনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। দক্ষ শেফরা বড় বড় হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারেন ।
আরও দেখুন :