আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আবেগ নিয়ন্ত্রণ
Table of Contents
আবেগ নিয়ন্ত্রণ
আবেগ
প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আবেগ আছে । মানুষ কখনো খুব খুশি হয়, আনন্দে লাফিয়ে ওঠে; কখনো ক্ষুব্ধ হয়, কখনো বিষণ্ণ হয় । মানুষের এই আনন্দ-বেদনা প্রকাশের যে উপায় এগুলোই হচ্ছে আবেগ। আবেগ মানুষের বিশেষ মানসিক অবস্থা । মানুষের অনুভূতি মিশ্রিত মানসিক অবস্থাকে আবেগ বলে ।
আমাদের দেশকে যে আমরা গভীরভাবে ভালোবাসি, এটি এক ধরনের আবেগ । আবার কোনো কিছু আমরা পছন্দ করি বা অপছন্দ করি সেটাও এক ধরনের আবেগ। আমাদের স্বকীয়তা টিকিয়ে রাখতে আবেগ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ । আবেগ আমাদের বাস্তব জীবনে চারপাশের মানুষের সাথে সম্পর্ক ও মিথষ্ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে । আবেগ সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে ।
তবে কোনো বিষয় যদি বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত হয়, কিংবা কোনো দর্শন-নির্ভর হয়, সেক্ষেত্রে ঐ বিষয় সংক্রান্ত আবেগ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে । আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক আবেগের সাথে সম্পর্কিত। আমাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু কিংবা সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক কেমন তা অনেকটাই নির্ভর করে তাদের প্রতি আমাদের আবেগিক দৃষ্টিভঙ্গি কেমন তার উপর।
কর্মক্ষেত্রে আবেগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষত যখন দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হয়। কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মানবোধ, সহমর্মিতা, বিশ্বাস, আস্থা ইত্যাদি আবেগিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল ।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ
আবেগের ভালো মন্দ দিক দুটোই আছে। ইতিবাচক আবেগ যেমন মানুষকে বিকশিত করতে সাহায্য করে, তেমনি নেতিবাচক আবেগ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে। তাই আবেগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে। আবেগ-আপ্লুত অবস্থায় মানুষ কোনো যুক্তি মানতে চায় না। ভালো-মন্দ বিচার-বিশ্লেষণ করে যৌক্তিকভাবে নিজের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করাই আবেগ নিয়ন্ত্রণ। অর্থাৎ আবেগে ভেসে না গিয়ে যৌক্তিকভাবে আচরণ করাকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ বলে ।
আবেগ নিয়ন্ত্রণের উপায়
জীবনে উন্নতি করতে বা প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে অবশ্যই আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ভয়, রাগ, হিংসা, ঈর্ষা, হতাশা ইত্যাদি ক্ষতিকর আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস ও ক্রমাগত অনুশীলন । কখনও বিষণ্ণ থাকা চলবে না। মনে রাখতে হবে বাল্যকাল ও কৈশোর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। এসময় কোন ভারী দায়িত্ব থাকে না। সুতরাং লেখাপড়ায় ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে হবে ।
সময় পেলে পাঠ্যবই ছাড়াও ভালো ভালো বই পড়তে হবে, বেড়াতে যেতে হবে, খেলাধুলা করতে হবে। মা-বাবার কাছে বিপদ বা সমস্যার বিষয়ে সব খুলে বলতে হবে। ক্রোধ, ঈর্ষা, ভয়, হতাশা এগুলো আবেগের বিভিন্ন রূপ বা প্রকাশ । এ ধরনের নেতিবাচক বা ক্ষতিকর আবেগ নিয়ন্ত্রণের উপায় হচ্ছে :
১. ক্রোধ, ভয় বা হতাশার সঠিক কারণ চিহ্নিত করা;
২. কারণটি/কারণগুলো দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া;
৩. নির্ভরযোগ্য আত্মীয়, নিকটজন, শিক্ষক, বন্ধু এদের সাথে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা;
৪. নির্ভরযোগ্য এবং নিজেকে ভালোবাসেন এমন ব্যক্তির দেওয়া পরামর্শ মেনে চলা;
৫. ভয় বা হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করা;
৬. রাগী বা ক্রুদ্ধ মানুষকে কেউ পছন্দ করে না, এ কথা সবসময় মনে রাখা ।
নিয়ন্ত্রিত আবেগ জীবনকে সুন্দর করে, উপভোগ্য করে । অতিরিক্ত আবেগ দ্বারা চালিত হলে নানা রকম ক্ষতি হতে পারে । তাই আবেগ সামলে চলা ও নিয়ন্ত্রণে রাখা একান্ত প্রয়োজন ।

অনুভূতি
আবেগের চেয়ে অনুভূতি তুলনামূলক দীর্ঘস্থায়ী । কোনো বিষয়, কোনো ঘটনা আমাদের মনের গভীরে বা হৃদয়ের গহীনে যে ভাব তৈরি করে, তাই হলো অনুভূতি । আবেগ আমাদের মনে অনুভূতির জন্ম দেয় । যেমন আমাদের আপনজনদের প্রতি আমাদের স্থায়ী ভালোবাসার অনুভূতি রয়েছে।
কোনো কাজ যখন আমাদের ভালো লাগে, তখন সেই কাজের প্রতি আমাদের ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয়, যা আমাদের ওই কাজে লেগে থাকতে বা ঐ কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। কোনো নতুন বিষয় যখন আমাদের সামনে আসে, কোনো নতুন ঘটনা যখন আমাদের সামনে ঘটে তখন সেই বিষয় বা ঘটনার প্রতি তাৎক্ষণিক অনুভূতি আমাদের মধ্যে এক ধরনের আবেগের জন্ম দেয়।
কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে অনুভূতির গুরুত্ব অনেক । আমরা যখন কোনো চাকরি পাওয়ার জন্য কোনো ধরনের মৌখিক পরীক্ষা দেই, তখন যারা পরীক্ষক হিসেবে আমাদের সামনে উপস্থিত থাকেন, আমাদের আচার-আচরণ, আবেগ-অনুভূতি ইত্যাদি তাদের মনেও এক ধরনের অনুভূতির জন্ম দেয় । তারা যখন কোনো প্রার্থীকে চাকরির জন্য নির্বাচন করেন, তখন তাদের সেই অনভূতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ ভূমিকা পালন করে ।
মনোভাব
কোনো বিষয়, ঘটনা বা মতবাদ সম্পর্কে আবেগ ও অনুভূতির ফলে আমাদের মনে যে ভাবের সৃষ্টি হয় তাই হলো মনোভাব । কোনো বিষয় সম্পর্কে আমাদের মনোভাব দুই রকম হতে পারে- ইতিবাচক মনোভাব ও নেতিবাচক মনোভাব । ইতিবাচক মনোভাব যেমন সাফল্যকে ত্বরান্বিত করে তেমনি নেতিবাচক মনোভাব সাফল্যকে করে বাধাগ্রস্ত। নেতিবাচকের চেয়ে ইতিবাচক কর্মকাণ্ড ও মনোভাব সবার কাছেই বেশি গ্রহণযোগ্য ।
কেউ যদি সত্যিই সফল হতে চান সেক্ষেত্রে তার প্রথম কাজ হবে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা । একটি গল্প হয়তো আমাদের অনেকের জানা। কোনো জুতা কোম্পানির দুজন বিক্রেতাকে পৃথকভাবে পাঠানো হয়েছিল এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে জুতার সম্ভাব্য বাজার নির্ধারণ করতে। একজন এসে বলেন যে, ওখানে জুতার কোনো বাজারই নেই। পাঁচ হাজার লোকের বসবাস সেখানে কিন্তু কেউ জুতা পায়ে দেয় না।
অপরজন বলেন যে, ওখানে জুতার বাজারের বিপুল সম্ভাবনা কারণ পাঁচ হাজার লোকের কেউই জুতা পায়ে দেয় না । তোমরা কি বলতে পারো, এই দুজনের মধ্যে কার মনোভাব ইতিবাচক আর কার নেতিবাচক ?
একজন নিরাশাবাদী মানুষ অনেক সম্ভাবনার মধ্যেও সমস্যা খুঁজে বের করতে পারেন। আর একজন আশাবাদী মানুষ অনেক সমস্যার মধ্যেও খুঁজে বের করতে পারেন সম্ভাবনা । যখন তুমি কোনো কাজে নেতৃত্ব দেবে তখন ইতিবাচক মনোভাব না থাকলেও হয়তো কাজটি সম্পন্ন হবে কিন্তু তোমার ইতিবাচক মনোভাব সবাইকে তার নিজের সবচেয়ে ভালো কাজটুকু করতে উৎসাহিত করবে।
ইতিবাচক মনোভাব কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য খুবই দরকার । তাই আমরা কী করে আরও বেশি ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হতে পারি, এসো সেই উপায়গুলো জেনে নিই :
লক্ষ্যের সাথে সংগতি রেখে কাজ করা
কোনো কাজ শুরু করার আগে ভাবো এটি কীভাবে তোমাকে তোমার লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। যদি তোমার কাজ আর লক্ষ্যের মধ্যে মিল না থাকে তবে তা না করাই ভালো । উদ্দেশ্যহীন কাজ শুধু তোমার সময় আর শক্তিই নষ্ট করবে।
লক্ষ্যে অবিচল থাকা
সাধারণত জীবনের নানা ক্ষেত্রে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং মানুষ যেমন ফলাফল চায় সে অনুযায়ী তাকে পরিকল্পনা করতে হয়। কিন্তু আগে থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ফল আশা করা একধরনের বোকামি । কোনো কারণে প্রত্যাশিত ফল অর্জন না হলে তা হতাশার জন্ম দেয় । নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা চালাতে হবে । যদি সফলতা একবারে না আসে, তবে বার বার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ।
আরও দেখুন :