ঋষি বাংলাদেশের পেশাজীবী

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ঋষি বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।

ঋষি বাংলাদেশের পেশাজীবী

বাংলার অনেক গ্রামেই ঋষিদের বাস। সাধারণত যে গ্রামে ঋষিদের বাস ছিল তারা গ্রামের এক প্রান্তে ঘরবাড়ি তৈরি করে বাস করত। ঋষিরা গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনযাপন করে। এদের বসবাস এলাকা ‘ঋষি পাড়া’ হিসেবে পরিচিত। ঋষিরা আদি কাল থেকে গরীব।

এদের ঘরবাড়ির তেমন চাকচিক্য ছিল না। সাধারণত ছনের ঘর, গোলপাতার ঘর, অনেকটা খুপড়ি ধরনের ঘর তৈরি করে এরা বাস করে। এদের দৈনন্দিন জীবন ততোটা চাকচিক্যের নয়। এরা খুবই সাধারণ খাবার খায়। ঋষিরা নোংরা কাপড় চোপড় পরে থাকে।

 

ঋষি বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

পুরুষেরা সাধারণত তপন জাতীয় এক ধরনের কাপড় পড়ে থাকে। মেয়েরা শাড়ি পরে। লেখা পড়ার প্রতি এদের আগ্রহ কম। পুরুষ ও মহিলা মিলে মিশে এরা কাজ করে। পুরুষ ও মহিলা উভয়ই বাঁশ-বেতের কাজ জানে।

বাংলাদেশ গ্রামের দেশ। এদেশ প্রায় প্রতিটি গ্রামেই একসময় বাঁশ বেতের ঝাড় ছিল। কোনো কোনো অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ বাশ ও বেত উৎপন্ন হতো। ঋষিরা বাঁশ ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে নানা ধরনের গৃহস্থালির সামগ্রী তৈরি করে থাকে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এরা বেত দিয়েও সংসারের নানা ধরনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করে। ঋষিরা সাধারণত বাঁশ ও বাশের কঞ্চি দিয়ে ঝুড়ি, ডালা, খারুই, চালিন, কুলা, ঘরের বেড়া দেয়ার চাঁচ, ধান রাখার ঢোল, গোলা, মুড়া প্রভৃতি তৈরি করে।

এছাড়া বেত দিয়ে এরা মোড়া, দোলনা, চেয়ার-টেবিল, ধামা, কাঠা, খুচি, পাল্লা ইত্যাদি সামগ্রী তৈরি করে থাকে। ঋষিদের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ও কদর ছিল। তখনকার মানুষ বাঁশ ও বেতের সামগ্রী প্রচুর ব্যবহার করতো। সে সময় ঋষিদের অবস্থা মোটামুটি সচ্ছল ছিল। বর্তমান কাঠ প্লাস্টিক তৈরি জিনিসপত্রের বহুল ব্যবহার শুরু হয়েছে। ফলে ঋষিদের তৈরি জিনিস পত্রের কদর কমে গেছে।

 

ঋষি বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

 

এছাড়া এখন বাঁশ ও বেত পাওয়া খুবই কষ্টের ব্যাপার। বাঁশের দামও অত্যন্ত চড়া। আজকাল ঋষি গোষ্ঠীর অনেক সদস্য নিজেদের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। পুরানো টায়ার কেটে রাইস মিলের বোল্ট, শ্যালো মেশিনের গ্যাসকেট, জুতার সোল এ সমস্ত জিনিস ঋষিরা তৈরি করছে।

অনেকে ক্ষেত-খামারে কাজ করে কেউ কেউ ছোট-খাটো ব্যবসা করছে। ঋষিদের কিশোর ছেলেমেয়েরাও আর্থিক স্বচ্ছলতার আশায় কাজের ধান্ধায় ছোটে। এরা শহরে—গঞ্জে জুতার কাজ করে। সমাজে ঋষি গোষ্ঠীর উৎপাদিত দ্রব্যাদির চাহিদা কমে গেছে। ঋষিরা এখন অনেকটা যাযাবর জীবন যাপন করছে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment