আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আত্মকর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রমের কয়েকটি ক্ষেত্র
Table of Contents
আত্মকর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রমের কয়েকটি ক্ষেত্র
আত্মকর্মসংস্থান
আত্মকর্মসংস্থান বলতে আমরা কী বুঝি? নিজের কর্মসংস্থান বা কাজের সুযোগ নিজেই সৃষ্টি করা? ব্যবসায় করা? হ্যাঁ, দুটোই ঠিক। আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যারা অন্যের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান না । আবার অনেকে অনেক চেষ্টা করেও চাকরি জোগাড় করতে পারছেন না। কিংবা এমনও হয় যে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দুর্লভ হয়ে পড়ছে।
অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত আয়ের অভাবে পরিবার ও নিজের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হয় না । নিজের আয়ের ব্যবস্থা নিজে করতে পারার নামই আত্মকর্মসংস্থান। শুধু তাই নয়, নিজের কাজের সুযোগ নিজে সৃষ্টি করলে আত্মতৃপ্তি লাভের পাশাপাশি অন্য লোকের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। আত্মকর্মসংস্থান গ্রাম এবং শহরের প্রেক্ষাপটে ভিন্ন হতে পারে ।
গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে কৃষি, খামার এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে যে-কেউ আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে । এর আওতায় বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব । যেমন-
১. নিজস্ব জমি বা জমি ইজারা নিয়ে ফসল, ফলমূল এবং সবজির চাষ;
২. হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের খামার তৈরি;
৩. নিজেদের পুকুরে বা স্থানীয় জলাধার ইজারা নিয়ে মাছ চাষ;
8. তৈরি পোশাক, পোশাকের নকশা তৈরি, স্ক্রিন প্রিন্ট, বুটিক প্রভৃতি ক্ষুদ্র পোশাক শিল্প স্থাপন ।
৫. মৃৎশিল্প, তৈজসপত্র তৈরি, হস্তশিল্পের মতো ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপন;
৬. প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান দেওয়া ইত্যাদি ।
এ বিষয়ে আরও অনেক তথ্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সাথে যোগাযোগ করলে পাওয়া সম্ভব ।
আত্মকর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রমের কয়েকটি ক্ষেত্র
ফসল চাষ :
আত্মকর্মসংস্থানমূলক এ সকল কাজে সরকারি সুবিধা পাওয়া যায় । ফসল, মৌসুমি সবজি কিংবা ফলের চাষ করতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সেখানে বিনামূল্যে কৃষি বিষয়ক তথ্য, চাষ পদ্ধতি, অধিক ফলন পদ্ধতি, সার ও কীটনাশক ব্যবহারের নিয়ম-এ সকল বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে । কৃষি ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েও ফসল ও সবজি চাষ শুরু করা যায় ।
গবাদিপশু পালন :
গবাদিপশুর খামার দেওয়ার মাধ্যমে মাংস ও দুধের ব্যবসায় করা যায়। একই সাথে পশু বিক্রির মাধ্যমে ভালো আয় করা সম্ভব। অনেক পশু খামারি কোরবানির সময় নিয়মিত পশু সরবরাহ করে থাকেন । এতে ভালো আয় হয় । স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে পশুপালন সম্পর্কে সকল সহায়তা পাওয়া যেতে পারে।মৎস্য চাষ মৎস্য চাষ করে বহু তরুণ আত্মনির্ভর হয়েছেন।
সচ্ছল জীবনযাপন করছেন। মাছ হলো আমাদের আমিষের প্রধান উৎস। আমাদের দেশে প্রচুর নদীনালা, খালবিল রয়েছে। মৎস্য চাষ করতে হলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকে স্থানীয় মৎস্য অফিস। কোথা থেকে মাছের পোনা সংগ্রহ করতে হয়, মাছকে কী খাবার দিতে হয় এসব বিষয়ে তারা তথ্য প্রদান করে। মৎস্য চাষের পাশাপাশি হ্যাচারি বা পোনা উৎপাদন ব্যবসায়ও করা যায় । সেক্ষেত্রে পোনা উৎপাদন করে অন্য মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা যায় ।
ক্ষুদ্র ও কুটির এবং পোশাক শিল্প :
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করে পোশাক তৈরি, নকশা করা, হস্ত ও মৃৎশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। সেজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেদের বাসার কোনো কক্ষ ব্যবহার করা যায়, আলাদা জায়গা ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
পরে ব্যবসায় বড় হলে আলাদা জায়গা নেওয়া যেতে পারে। যেকোনো ধরনের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকে। নারীদের জন্য সেলাই ও পোশাকের নকশার উপর বহু উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করে ।
ক্ষুদ্র ব্যবসার :
নিজে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসায় করতে চাইলে স্থানীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনকারী বা বড় বড় কোম্পানির ডিলারদের সাথে যোগাযোগ করে পণ্য সংগ্রহ করে দোকান সাজানো যেতে পারে । এমন স্থান দোকান দেওয়ার জন্য বেছে নিতে হবে যেখানে জনসমাগম হয়, মানুষের যাতায়াতের পথে পড়ে এবং সেখানে পৌঁছানো সহজ। ডিলারদের থেকে পণ্য না নিয়ে সরাসরি উৎপাদকদের থেকে পণ্য নিতে পারলে কম দামে তা কেনা সম্ভব ।
বুটিক শপ :
আত্মকর্মসংস্থানে একটি উদাহরণ হলো বুটিক শপ। বর্তমানে শহরগুলোতে বুটিক শপের চাহিদা ব্যাপক । নিত্য-নতুন ডিজাইনের পোশাক সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং সৃজনশীল ডিজাইনের পোশাক বিক্রি করতে পারলে এ ব্যবসায় অনেক লাভ হয়। এ ব্যবসায় প্রধান ক্রেতা হলেন নারী। সেজন্য নারীবান্ধব পরিবেশ প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত করতে হবে। ছেলেদের টি-শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবির ব্যবসায়ও অত্যন্ত লাভজনক।
খাবারের দোকান :
বর্তমানে অনেকেই ব্যবসায়ের জন্য খাবারের দোকান দিতে পারে। খাবার হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিছন্ন পরিবেশে তৈরি। সুস্বাদু খাবার ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে দাম রেখে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। কারণ, খাবার মানুষের প্রধান চাহিদা। তবে খাবারের দোকান দিতে হলে দোকানের অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি শেখার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নেওয়া যেতে পারে ।
ফোন-ফ্যাক্স-প্রিন্টের দোকান :
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি এ ব্যবসায় করে থাকেন। অনেকে মূল পেশা হিসেবেই এ ধরনের দোকান দিয়ে থাকেন। স্বল্প বিনিয়োগে এ ব্যবসায়ে আত্মনির্ভর হওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে । তাছাড়া এ ব্যবসায়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপকার করা সম্ভব । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সন্নিকটে এ ধরনের দোকান অধিক উপযোগী। এছাড়া অফিসপাড়াতেও এর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ফোন-ফ্যাক্সের দোকানে মোবাইলে রিচার্জ ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং-এর সুযোগও রয়েছে ।
তাই একই ছাদের নিচে বহু ধরনের ব্যবসায় করা সম্ভব ।সকল ব্যবসায়ের জন্য ট্রেড লাইসেন্স আবশ্যক। গ্রাম হলে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌর শহর হলে পৌরসভা এবং সিটি হলে সিটি করপোরেশন থেকে এ লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়। ব্যবসায় থেকে আয়ের উপর ঠিকমতো কর প্রদান করা সকল নাগরিকের কর্তব্য।
আরও দেখুন :