আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “কর্মক্ষেত্র নির্বাচন এবং ক্যারিয়ার উন্নয়ন” ইউনিট ৪ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ

 

আমাদের দেশের প্রতিটি গ্রামের কেউ না কেউ বিদেশে চাকরি করেন। কায়িক পরিশ্রম বা মেধা খাটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে পরিবারের জন্য পাঠান। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেড়ে যায় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই বাংলাদেশীরা বিভিন্ন পেশার সাথে সম্পৃক্ত আছেন। বিদেশে বাংলাদেশীদের কাজ করার প্রচুর ক্ষেত্র আছে। যে যার যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কাজে যোগদান করেন। একেক দেশে একেক রকম শ্রম বাজার রয়েছে। এশিয়া ছাড়াও আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশী বিভিন্ন পেশায় প্রযুক্তি, প্রকৌশল, শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী কিংবা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

ভৌগলিক বিচারে মধ্যপ্রাচ্যে যেমন- ইরান, সৌদি আরব, ইয়েমেন, ওমান, সিরিয়া, জর্ডান, প্রভৃতি দেশে আমাদের দেশের লোক বেশি। সকলের সম্মিলিত পরিশ্রম আমাদের একটি সুন্দর পৃথিবী। তাই কোনো পেশাকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সকল পেশার মানুষকে যথাযথ সম্মান দেখানো আমাদের একান্ত কর্তব্য।

 

মধ্য প্রাচ্যের মানচিত্র আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ

তোমরা নিশ্চয় জানো, তোমাদের আত্মীয় স্বজন বা পরিচিতদের মধ্যে অনেকে কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমান প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত আছে। বাসায় কাজ থেকে শুরু করে গাড়ি চালনা, কলকারখানা, রাস্তাঘাট মেরামত, ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ সরকারি বেসরকারি ও স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর অধিক সংখ্যক লোক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এর বেশির ভাগই বাংলাদেশী। মজার ব্যাপার হলো কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ জনগোষ্ঠীর কদর একটু বেশি। তবে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ প্রার্থীদের শিক্ষা ও দক্ষতা উভয় আছে বলে এসব দেশের চাকরির ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোসহ সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর বাজার চাহিদা বিবেচনা করে দক্ষ জনশক্তি প্রেরণ করে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি ব্যুরো প্রায়শই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিদেশে জনশক্তি নিয়োগের বিষয়টি প্রচার করে থাকে। তবে আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পরিচিত জন বা আত্মীয় স্বজনরা বিদেশের শ্রম বাজার যাচাই করে ভিসার ব্যবস্থা করে থাকেন। এতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ছাড়াও অনলাইনে সার্চ করেও বিদেশে চাকরি খুঁজে নেওয়া যায়।

আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াতেও প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি কাজে নিয়োজিত আছেন। তবে এদের বেশিরভাগাই কম্পিউটার প্রকৌশল বিদ্যা, চিকিৎসক, শিক্ষক, নার্সিং পেশায় কাজ করছেন। ভারত যদিও এসব পেশায় বেশ পারদর্শিতার সাথে কাজ করছে। বাংলাদেশীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। হোটেল ম্যানেজমেন্ট, রন্ধন শিল্পের উন্নত দেশগুলোতে বেশ কদর রয়েছে। আপনারা যদি এসব ক্ষেত্রে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চান তাহলে চেষ্টা করতে পারেন। তাছাড়া যারা বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা অর্জন শেষে বাইরের যে কোন দেশ থেকে এক/দুই বছরের সংশ্লিষ্ট কোর্স সমাপ্ত করতে পারেন তাদের কাজে যোগদানের জন্য সুযোগটা অনেকাংশে বেড়ে যায়।

 

কাজের সুযোগ

 

বিদেশে কাজের দক্ষতা অর্জন করে দেশেও মেধাকে কাজে লাগাতে পারেন। এতে ব্যক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নও ঘটবে। ব্যবসায় শাখার শিক্ষার্থীদের চাহিদা একটু বেশি নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াতে। এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন ও প্রশিক্ষণ শেষে ব্যাংক, বীমা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ভালো বেতনে চাকরি পেতে পারেন। আরেকটি বিষয় এড়িয়ে গেলে চলবে না, তা হলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে নাপিত ও শেফ বা রন্ধন শিল্পীদের কদর বেশ চড়া। এ দিকেও দক্ষ হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। মালয়েশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশীদের জন্য অনেকটা সহজ পথচলা।

দীর্ঘসময় ধরে আমাদের দেশের বিভিন্ন পেশায় দক্ষ মানুষগুলো ঐ সব দেশের নানান কাজের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছে। ব্যক্তিগত আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করার পেছনে এদের অবদান কোনো অংশে কম নয়। কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রায় ভরপুর করছে দেশের রিজার্ভ ফান্ড। এশিয়ার এ দেশগুলোতে বাংলাদেশী প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, চিকিৎসক উচ্চ শিক্ষায় গবেষণা করতে গিয়ে কাজে নিয়োজিত হয়ে যান। এসব দেশের শ্রমিক সংখ্যাও প্রচুর। তবে একটা কথা না বললেই নয়, এর জন্য যা দরকার তা হলো শিক্ষা ও ভাষা। ন্যূনতম শিক্ষা ছাড়া বিদেশে যাওয়া ঠিক না। ভাষাও রপ্ত করতে হবে সমান গুরুত্বে। নয়তো পদে পদে হোঁচট খেতে হবে।

অবশ্যই আপনারা যারা বিদেশে পাড়ি দিতে চান তারা ইংরেজি, আরবী, চীনা, কোরিয়ান, জাপানী, ফ্রেন্স ভাষা রপ্ত করতে পারলে অনেক বেশি সফলতার সাথে কাজ করতে পারবেন। তবে কারিগরি শিক্ষা অর্জন বিশেষ দক্ষতা হিসেবে দেখা হয়। বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে প্রতারিত না হন সেদিকে নজর রাখতে হবে। তাই সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত নিলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

 

Google news logo আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

সারসংক্ষেপ

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করে এবং দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে উন্নয়নের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করা সম্ভব। প্রয়োজন প্রশিক্ষণ ও ভাষা জ্ঞান। শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনারা যদি নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং যে দেশে যেতে চান সে দেশের ভাষা ভালোভাবে লিখতে ও বলতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনারা সফল হবেন।

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment