কাহার বাংলাদেশের পেশাজীবী

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কাহার বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।

কাহার বাংলাদেশের পেশাজীবী

কাহার আরবী শব্দ। ফারসী ভাষায়ও শব্দটি গ্রহণ করা হয়েছে। কাহার শব্দের আভিধানিক অর্থ জবরদস্তকারী, জুলুমবাজ। কাহার নিচুজাতের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। কথিত আছে কাহারদের আদি পুরুষ ছিল বাংলার শেষ পাঠান বাদশাহর সৈনিক।

 

কাহার বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

মোগল বাহিনীর সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আত্মগোপন করে এবং বাংলার নিম্ন বর্ণের হিন্দু চাড়াল বেহারা জাতীয় ডুলি–পাল্কী বাহকদের নিকট আশ্রয় ও সাহায্য পায়। এরা পরষ্পর বিয়ে-শাদীতে আবদ্ধ হয়। পরবর্তীকালে তারাও ডুলী-পাল্কী বহন করার পেশা গ্রহণ করে। চট্টগ্রামের কাহারা খেউল্লালী বাদ্য, ছড়িখেলা ও খটক নৃত্য করতো। কাহাররা নিজস্ব উপভাষায় কাঁথা বলে।

শিক্ষা-দীক্ষায় তারা পশ্চাদপদ। বাংলাদেশে পালকির আগে মহাপার প্রচলন ছিল। মহাপারের উপরের কাঠামো খোলা। নিচের দিকে বসার জন্য তক্তার পাটাতন থাকতো। একটা বাঁশের দণ্ডের সাহায্যে কাহাররা মহাপা বহন করতো। প্রাচীন বাংলায় পালকির প্রচলন ছিল। প্রচলন ছিল পাককি জাতীয় ডুলি, শিবিকার। পালকি কাঠের তৈরি। বিভিন্ন আকৃতির পালকি হতে পারে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বাঙালির ইতিহাস আদিপর্ব নিহাররঞ্জন রায় প্রণীত গ্রন্থে কাহাররা পালকি বহন করতো এ বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে পালকির কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। একজন সর্বোচ্চ দু’জন পালকিতে চড়তে পারে। তৎকালে জমিদার-ভূস্বামী—তালুকদার শ্রেণীর জন্য বিশেষ কারুকার্যমণ্ডিত পালকি ছিল। জমিদার/সুবেদারদের বহনের জন্য কারুকার্য মণ্ডিত পালকি ব্যবহার করা হতো।

জমিদার- ভূ-স্বামী তালুকদারগণ পালকিতে ভ্রমণ করতো। যারা পালকি বহন করে তারা বেহারা বা কাহার হিসেবে পরিচিত। পালকির দু’দিকে মোটা কাঠের লম্বা দণ্ড থাকে। কাহাররা বা বেহারা কাঠের এই অংশ কাঁধে নিয়ে পালকি বহন করে। দুই জন, চার জন, ছয় জন, আট জন, বার জন, ষোল জন বেহারা পালকি বইতো।

 

কাহার বাংলাদেশের পেশাজীবী 2

 

 

বেহারারা বিভিন্ন ‘বোল’ বা ‘হাক’ দিয়ে পালকি বইতো। সম্ভ্রান্ত ও সম্পন্ন পল্লীর পরিবারে বিয়ে/শাদীতে পালকির ব্যবহার ছিল অপরিহার্য। বিয়ের পালকি বহনকারী বেহারাদের বখশিস দিতে হতো। বেহারারা পালকি নিয়ে যেতো দূর-দূরান্তে।

পালকি, দোল, রথ ইত্যাদির বর্ণনা তখনকার সাহিত্য থেকে আমরা পেয়ে থাকি। আজকাল রাস্তা-ঘাট হওয়ায় এবং আধুনিক যানবাহন চালু হওয়ায় পালকি প্রায় লোপ পেয়েছে। সেই সাথে বেহারাদের পেশাও বহুলাংশে বিলুপ্তির পথে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment